এ জার্নি বাই মাইক্রো টু ভার্সিটি...
(এক মিনিটের গল্প)
ফিডেল ডি সাংমা
গতকাল মাঝরাতে বেবীকে তার গালে একটা কিস্ দিয়ে গুড নাইট বলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ওয়াল ক্লকে এলার্ম শুনেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। রাতে ঘুম হলে শরীরটা খুব টায়ার্ড লাগে। তবুও নিজের অনিচ্ছার সাথে ফাইট করে উঠতে হল। বেডথেকে নেমে দেখি আমার ওয়াইফ তাড়াহুরা করে ব্রেকফাস্ট রেডি করছে। আজ হলি ডে। ভার্সিটিতে ভ্যালেন্টাইন ডে'র ফাংশান হবে। চার্মিং ব্যান্ড দল আসবে। দ্রুত বাথরুমে গিয়ে ব্রাশটা হাতে নিয়েই দেখি টুট পেষ্ট নেই। আজ বেবীর টুট পাওডার দিয়েই কাজ সারতে হবে। বেশ কয়েকদিন যাবত বাচ্চার মার জন্য ফেইস ওয়াশ আনতে হবে; তাও মনে থাকে না। স্যুট- টাই পড়ে হালকা ফ্লেভারের পারফিউমটা সারাটা শরীর স্প্রে করে নিলাম। আন্টিকে বাসার মেইন গেইট লক করতে বলে প্রায় দৌঁড়ে ফুটপাট ধরে হাঁটছি। মেইন রোড আজ খুব বিজি। রোড সাইডে হকাররা প্যাপার, ম্যাগাজিন ভাগাভাগি করছে। আজ ভাবছি- টেঙ্ক্যিাব বা স্কুটারে যাবো না। ইদানিং সিটিতে ভাড়ায় মাইক্রো পাওয়া যায়। তবে রেন্ট এ কার লেখা থাকে না। যাই হোক- টাইম কিল করার সময় নাই। প্রফেসর জন আর আমাকে সব দায়িত্ব না দিলেও পারত। আমরা যেন অল রাউন্ডার। সবাই আমাকে পেয়ে বসেছে, বউ-বাচ্চার জন্য সময় দিতে পারি না। আমার পুরো ভার্সিটির লাইফটাই খাটিয়ে মারল।
কালচারাল অনুষ্ঠানের টোটাল ম্যানেজমেন্ট কেমন হবে তা নিয়ে ভাবছি আর হাঁটছি। প্যান্টের পকেটথেকে বেরসিক মোবাইলটা বার বার রিং হচ্ছে। অমনি একটা রিক্সা বেল না বাজিয়ে বেক করতে গিয়ে আমার হ্যান্ড বেগের চেইনটা ছিঁড়ে দিল। ভেরী বেড লাক। রাগে ফায়ার হয়ে গেলাম। আজ প্রচন্ড রাগলেও প্রকাশ করা যাবে না। ফ্রেন্ডরা বলে, রাগলে না-কি আমাকে খুবই বিধ্বস্ত চেহারা লাগে, আনস্মার্ট লাগে...। - ওসব ফাল্টু কথা ভেবে লাভ নেই। শার্ট পকেটথেকে সান গ্লাসটা বের করে চোখে দিলাম। ফার্ম গেইটের ওভার ব্রিজ পেরিয়ে আবার মেজাজটা বিগড়ে গেল। আনন্দ সিনেমা হলের সামনেও প্রচন্ড জ্যাম। দাঁড়িয়ে কোন খালি গাড়ি আসলে হাত নেড়ে ডাকবে কিংবা চট্ করে গাড়িতে উঠে পড়বে- তারও উপায় নেই...। - সরকারের মহা মন্ত্রীরা জনগনের ইনকাম টেক্সের টাকা খেয়ে খেয়ে গদি আগলে বসে আছেন। দেশের কেন্দ্রস্থল রাজধানী ঢাকা সিটিকেই যারা শান্তিতে রাখতে পারেন না, তারাই দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেন। আর আর মেয়র সাহেব, উনি কি করেন.....,ক্ষোভটা যেন বেড়েই উঠছিল। হঠাৎ পেছনথেকে বোমা সাইজের ড্রাইভার বলে উঠল-
'স্যার যাইবেন..?'
হ্যাঁ- যাবো...
মনে মনে বলি- শালা ইডিয়েট! বেটা বলে কি, চৈত্রমাসের খরা রৌদ্রে রোডের উপর দাঁড়িয়ে আছি কি তামসা করার জন্যে... যাবো মানে- আমার বাপ-দাদা চৌদ্দগুষ্ঠি যাবে...।
'কই যাইবেন স্যার'
'ও হ্যাঁ, ভারসিটি যাবো, যাবেতো না-কি? '
'জী স্যার- যাবো'
'ভাড়া কত নেবে...?'
'তিনশো টাকা দিয়েন স্যার'
'আহ্ এতো কেনো, জিনিস-পাতির দামের সাথে তোমাদের ভাড়াও বেড়ে যায় নাকি...'
'ঈদতো আইসা গ্যালো স্যার, বোনাস দিবেন না....'
'আহ্ যে ভাবে বলছ- আমার মানি ব্যাগযে খালি করে দেবে। যাও, সব মিলিয়ে তোমাকে ২০০.০০ টাকা দেবো, চলবে....?'
'জ্বি স্যার....'
পাবলিক লাইব্রেরীতে ঢুকতে হবে। গতকাল সেক্রেটারীকে বলেছিলাম ওয়েটিং রুমের টেবিলের উপর পেপার ট্রে-তে লটারীর টিকিট আর লাঞ্চের টোকেনগুলো রাখতে। ওই বেটা সেভাবে রেখেছে কি-না কে জানে! এখন মেইনরোড একটু ফাঁকা হয়েছে। দুদিকথেকে ছোট, বড়, মাঝারী, লাল, নীল, বেগুনী, সবুজ, হলুদ ইত্যাদি বিভিন্ন সাইজ আর কালারের গাড়ী ছুটাছুটি করছে।
'খুব কেয়ারফুলি চালাবে, বুঝলে। রোডে এক্সিডেন্ট করে বসো না....'
'এক মিনিট স্যার, প্লিজ আপনি সিটে বসুন, আমি এসি-টা ছেড়ে দিচ্ছি। কন্ফেকশনারীথেকে একটা মিনারেল ওয়াটার নিয়ে আসি, লেইট হবে না।'
'ওকে গুড- যাও- তাড়াতাড়ি কর....'
সময় যত গড়িয়ে যাচ্ছে আমার টেনশান তার ডাবল হচ্ছে। সাইড লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে লেজি চালকের জন্য ওয়েট করছি। সামনের রেড লাইট অফ হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ হুইসেল দিয়ে হাত নাড়ছে। অবশেষে আমাদের মাইক্রো রিস্টার্ট দিয়ে রেইল ক্রসিং ওভারটেক করল.....।
সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ, আসুন আমরা এই গল্পে কতটা ইংলিশ ওয়ার্ড আছে, তা ভাবার আগে একবার নিজের সংস্কৃতি নিয়ে একবার ভাবি। আমরা কি নিজেদের মধ্যে নিজস্ব ভাষায় কথা বলি? নিজস্ব সংস্কৃতি ভুলে যাচ্ছি কি? আসুন আমরা আমাদের নিজস্ব জাতি-সংস্কৃতিকে ভালবাসা ও সম্মান দেই। ধন্যবাদ।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন