রবিবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

Poem- বাঁধা

বাঁধা

ফিডেল ডি সাংমা

অই আকাশ নীল ক্যান্‌ ছোঁব না, কবি
হিম শীতল মাটির সবুজ ছায়া
যদি ওঠে আকাশ আগুণ ঝর
সুখের গৃহত্যাগ; হাওয়ায় পুড়বে সবি।
অই আলো ক্যান্‌ ছুটে আসে প্রায়
ছাতক পায় না দূর্বাঘাসের ঘ্রাণ
আমি আঁখি বন্ধ করে দেখি- ঠোঁটে
শিশির ঝিলিক তোমার শোভা পায়।
আমার মতো সবাই; ক্যান্‌ স্বপ্নপুরেই বাঁধা
ভালোবাসার অপরাধে, স্তব্ধ শ্যামের রাধা।

শনিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

অনামিকার বিয়ে StorY


অনামিকার বিয়ে
.
ফিডেল ডি সাংমা
(মিতা- গল্পগ্রন্থথেকে)


সুবিরের বিয়ের বয়স হয়ে গেছে বেশ আগেই। ইন্টারমিডিয়েট পড়ার সময় কত বন্ধু বান্ধবীরা রঙ-ঢঙ, আড্ডা-টাড্ডা মারল, ওটাই নাকি প্রেম। কিন্তু সুবির পারল না। বন্ধুরা প্রায়ই খোঁচা মেরে কথা বলত, 'সুবির তুই কেমন পুরুষরে- ক্ষ্যাত একটা! মেয়েদের সায়া-ব্লাউজ চেয়ে পড়ে ঐখানে চুপ মেরে বসে থাকগে, যা। কাপুরুষ একটা। তোর পিছে ঘুর-ঘুর করে শেষ পর্যন্ত না পেয়ে সীমা তোফাজ্জলকে বিয়ে করল....'- তাতে আমার কি দোষ!- শুধু তোর জন্য...- চাপা মারিস্‌ না- চাপা বলে কথাটা উড়িয়ে দিতে চাস্‌? একটা মেয়ে আর কতকাল তোর পিছে ঘুরতে পারে বলত?- আমি আর কি করতে পারতাম বল...- এজন্য তোকেই দায় নেওয়া উচিত। আজ সত্যি করে বল সীমাকে তুই ভালবাসতিস না?


খুব গোপনে একটা দীর্ঘ-শ্বাস ছেড়ে সুবির বলে, 'এসব কথা এখন থাক...। 'সীমা দেখতে শুনতে মন্দ ছিল না। গায়ের রংটা শ্যামলা, মাঝারি গড়ন। কথা-বার্তায় চট-পটে, একেবারে আধুনিকা মেয়ে। প্রায় পাগলের মত ভালবাসত সুবিরকে। ভেতরে ভেতরে তারও সীমাকে অসম্ভব ভাল লেগে গিয়েছিল। কিন্তু তার অভাবের সংসারে এই আধুনিকা মেয়ের চাহিদা পূরণ করতে না পারার ভয় পেয়ে বসেছিল, তাই সেদিন তার ভালবাসার কথা প্রকাশ করতে পারেনি সে। অনেক আদিবাসি ছেলের প্রস্তাবে রাজি না হয়ে একদিন সীমা বলেছিল, 'তোকে না পেলে, আমি এ জীবনে আর বিয়েই করব না'।. কিন্তু এই কথা সে রাখতে পারেনি। কোন আদিবাসি ছেলেকে বিয়ে করলে সুবির খুশিই হত...।. থাক, যা হবার হয়েছে; তার খুশি-অখুশিতে কারোর কিছু আসবে যাবে না। বিষয়টাকে নিয়ে আর কিছু ভাবতে চায় না সে।কোন রকমে চলা আদিবাসি পরিবারে সুবির আর ছোট দুই ভাই-বোনের জন্ম। একেবারে না খেয়ে থাকতে হয়নি, তবে পড়া-শুনা, পোষাক-আষাক আর শখের বাসনাগুলো মেটাতে বাবার প্রাণান্ত চেষ্টা দেখতে দেখতে সুবির ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। বছরের পর বছর মাকে দুটি শাড়ীর বেশী পড়তে দেখেনি, বাবাও তাই। খোলা বাজারের পোষাক দিয়ে চালিয়েছে শৈশব-কৈশর বেলা। ম্যাট্রিক পরীক্ষার সময় মা তার একটা ছাগল বিμি করে পেন্ট-শার্ট বানিয়ে দিয়েছিলেন আর বাবা দিলেন জুতো কেনার টাকা।সুবিরের মনে পড়ে তৃতীয় শ্রেণীতে যখন ভাল রেজাল্ট করল, তখন মা বললেন- কি ভাল করেছিস বাবা?- মা আমি প্রথম হইছি- প্রথম মানেতো পয়লা। এইডা বলার কি আছে, ইস্কুলের লাইনে খাড়াইলেতো তোরে ছোট বইলা সামনেই রাখতো...- মা তুমি বুঝনাই, মানে আমি পরীক্ষা লেইখ্যা এখন আমার রোল নম্বর এক হইছে, বুঝছ?- বাবারে তুমি একবার কইছিলা, তোমার কেলাশে বত্রিশ জন ছাত্র পড়। আইজ যদি তোমার রোল নম্বর বত্রিশ হইত, তাইলে আমি খুশি হইতাম। তা না; হইছ অ্যাক্‌।লেখাপড়া না জানা সহজ সরল মাকে বুঝাতে না পেরে সুবির মন খারাপ করেছিল। কিন্তু সেদিন ওয়ার্ল্ড ভিশনের কর্মী বয়স্ক সাক্ষরতার জন্য সদস্য খুঁজতে এসে ছেলের পাশের বিষয়টা বুঝিয়ে বললে সবাইকে মুরগী মেরে খাওয়ালেন। বাবাতো অবাক! পরের দিন বাজারে ওটা বিμি করার কথা ছিল।- তাইলে তুমি শিক্ষা দলে ভর্তি হইবা?- হ, পোলাডার বিষয়ডা বুঝতে না পাইরা আমি বড় লইজ্জা পাইছি।- না, কইছিলাম কি আমি..- কওনা কি তুমি কি?- আমিও তো আমার নাম লেখাইয়া আইলাম- কি কইলা? তুমিও পড়বা?- হ, আমার শরম করতাছে।- শিক্ষা নেওয়ায় শরমের কিছু নাই; মূর্খ থাকাডাই শরম- ও সুবিরের মা, তুমি তো দেহি আইজ জ্ঞানীর মত কথা বলতাছ- হ, ওয়ার্ল্ড ভিশনের দিদি আমাকে শিখাইয়া রাইখা গেছে। এখন বুঝছি ওই দিদির কথাই ঠিক...।


মা-বাবা এখন বুঝেন পড়ালেখা জানার মূল্য কত! তাইতো অনেক কষ্ট করে তাকে আর ছোট ভাই-বোনকে লেখাপড়া করালেন। তা না হলে আজ হয়তবা অফিসের এই বড় চেয়ারটায় বসা হত না। তবে যুবক-তরুণদের মত এ জীবনে তার প্রেম করা হল না। তার আশা- বিয়ের পরই নাহয় প্রেম করা যাবে। তখন থাকবে না কোন বাঁধা, না কোন ভয়, না কোন দ্বিধা-সংকোচ। সেদিনের অপেক্ষায় আছে যেদিন তার জীবন-সংসার সাগরে ভাসবে প্রেমের তরী....।


আজ অফিসে সপ্তাহের প্রথম দিন। সুযোগ মত বড় কর্মকতা অফিসে আসেন মাসে একবার কি দু'বার; আজও আসার কথা। তিনি আসলে ছুটি নিয়ে নিবে দরখাস্ত্মটা লিখে রাখবে। হাতে কত কাজ পড়ে আছে। বন্ধু বান্ধবদের সবাইকে খবর দেওয়া হয়নি। বাবা-মা বিয়ের জন্য চাপা-চাপি করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। তাই এই বিয়েতে মত দেওয়ায় তারা খুব খুশি। অনেকদিন আগেথেকেই ছুটি নিতে বলেছিলেন; কিন্তু কাজের চাপে নেওয়া হল না। ছোট বোনকে বিয়ে দেয়ার পর বাড়ির সব কাজ যেমন সুচারূ রূপে করে রাখে তেমনি এই বিয়ের ব্যাপারেও সেই মহা উৎসাহ নিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। একদিন কোথাও দেখে অথবা শুনে এসে ছোট বোন বলেছিল, 'দাদা, একটা কথা বলি?- হ্যাঁ বল- আগে বল রাগ না করে ভেবে চিন্তে কথার উত্তর দিবে...- আচ্ছা- তুইই আগে বল, আমি কি খুব বেশী তোদের রাগ করি?- কথা ঘুড়িও না, অনুমতি যদি দাও তো বলি...- অভয় দিলাম। এবার বল...- দাদা, তোমার অনেক বয়স হয়েছে। অনেক কষ্ট করে আমাদের দুই ভাই-বোনের জন্য, এই সংসারের জন্য অনেক কিছু করলি। কিন্তু নিজের জন্য একবারও ভাবলে না...- নিমা, তুই বেশী সময় নিয়ে ফেলছিস্‌। ভনিতা না করে তাড়াতাড়ি বল। আমার অফিসের ম্যালা কাজ পড়ে আছে।- কথায় বাঁধা দিও না দাদা। আমাদের জন্য তুমি অনেক করেছ, আজ তোমার জন্য আমাদের কিছু করতে দাও
- ঠিক আছে দাও, কলের পাড়ে অনেকগুলো কাপড় ভিজিয়ে রেখেছি, আপাতত এখন ওগুলো ধুয়ে দিলেই চলবে- তোমার সেবা করার জন্যই ব্যবস্থা করতে চাইছি।- কি বলছিস্‌ ?- হ্যাঁ, এবার তুম না বললে আমরা আর শুনব না। দাদা, তোমাকে বিয়ে করতেই হবে। পাত্রী আমার পছন্দ হয়েছে। আমি মনে করি তোমারও পছন্দ হবে...- পাগলামি করিস নাতো, এবার যা, কাপড়গুলো ধুঁয়ে আমাকে রক্ষা কর।- আগে বল- তুমি রাজি?- আচ্ছা তোরা সবাই মিলে আমার পেছনে লাগলি কেন বলত?


বোনের আবদার আর করুণ মুখের চাহনি দেখে সুবির বলেছিল, 'যা ভেবে দেখব, এবার হলত?' চোখে-মুখে অবিশ্বাস নিয়ে ছোট বোন কলপাড়ে চলে গিয়েছিল ঠিক, তবে শেষ রক্ষা হল না রাতে-খাওয়ার সময়। বাবা-মা আর স্বামীকে নিয়ে বড় একটা দল পাকিয়ে পেছনে লেগে গেল ওরা। মা আর বোন কানড়বা-কাটি করে অনুরোধ করায় কিছুক্ষণ মুখে কুলুপ এঁটে চুপ-চাপ বসে থাকল। মুখে খাবারটা তোলা যাচ্ছে না। মা বললেন, 'নিজেকে এভাবে শেষ করে আমাদের মনে আর কষ্ট বাড়িও না বাবা। সারাদিন কষ্ট করে রাতের বেলা বই নিয়ে পড়ে থাক, তোমার পড়া-শুনা হোক আর না হোক তুমি যে ঘুমাতে পার না, অন্তত: কথা বলার জন্য একজন সঙ্গী লাগে-এটা বুঝি। মানুষতো আর সারা জীবন একা থাকতে পারে না। এবার তুমি আর না বলতে পারবে না বাবা।'- তুমি এই সংসারের জন্য তোমার সাধ্যমত করেছ। আমরা সবাই সন্তুষ্ট, তোমার জন্য আমাদের কিছু করতে দাও...- তোমার বাবা ঠিকই বলেছে, আর আমরাইবা কয়দিন বাঁচব, তা ছাড়া সমাজে গেলে তেমন মূল্য পাবে না। এখনই লোকজন আমাদের কথা শোনায়।


বাবা বললেন, 'সুবির, আমি বাবা হয়ে সংসারের জন্য যা করতে পারিনি, তুমি লেখা-পড়া ছেড়ে মাঝপথে সংসারের হাল ধরাতে পরিবার এখন ভালই চলছে। কিন্তু তোমার অবস্থার জন্য আমিই দায়ী ভেবে কষ্ট পাচ্ছি।' সবাই কিছুক্ষণ নিরব থাকার পর নিমা বলল, 'দাদা তুমি একটা কিছু বল...'ঠিক আছে তোমরা পাত্রী দেখ...' বলেই দীর্ঘ-শ্বাস ছাড়ে সুবির। সুবির আপাতত রাজি হয়েছে। কিন্তু এটুকুতেই সবাই আনন্দে আত্মহারা। খাওয়া-দাওয়া, হাসি আনন্দে মনে হল যেন ছোট-খাট একটা বিয়ে অনুষ্ঠান হয়ে গেল। কিন্তু সেদিনথেকে সুবির টেনশনে কোন কিছুতে মন বসাতে পারছিল না।বেশ ক'দিনে অতিরিক্ত কাজ এবং মানষিক চাপে ঠিকমত বিশ্রাম ও ঘুম না হওয়ায় অসুস্থ বোধ করছিল সুবির। রাতের খাবার দিতে দিতে ছোট বোন নিমা বলল, 'দাদা, কাল আমাকে ঔষধ আনতে হবে, আমাকে নিয়ে স্বাস্থ্য-ক্লিনিকে নিয়ে যাবে?'- আমার ভাল লাগছে না। তোর স্বামীকে অথবা মাকে নিয়ে যা-- না দাদা, তোমার স্বাস্থ্যও ভাল যাচ্ছে না, কাল ঐ বিদেশী ডাক্তার চেম্বারে বসবেন। তিনি বলেছেন তোমার রক্ত পরীক্ষা করিয়ে নিতে।- ঠিক আছে, তবে আমাদের অফিস হয়ে যেতে হবে- ভালই হবে, আমিও তোমার অফিসে যাবো। তোমাদের বস খুব ভালো, উনিই তোমাকে ম্যাডিকেল চেক-আপের পরামর্শ দিয়েছেন...।


পরের দিন যথা সময়ে স্বাস্থ্য-ক্লিনিকে পৌঁছে নিমা সুবিরকে বসিয়ে এদিক-ওদিক ছুটা-ছুটি করল। হঠাৎ কী নিয়ে তার ব্যস্ততা বেড়ে গেল সুবির বুঝতে পারছে না; শুধু প্রশড়ববোধক দৃষ্টিতে দেখে আর ভাবে।একসময় নিমা এসে বলল, 'দাদা- ডাক্তার আসতে নাকি একটু দেরী হবে, স্বাস্থ্যকর্মী দিদি বলেছে তোমার ইচ্ছে হলে রক্তটা দিয়ে রাখতে।' ভেবে দেখল, প্রস্তাবটা মন্দ না; তাকে আমাদের সময়টা একটু বাঁচবে। কিন্তু ভয় লাগছে তার, বাড়ির সবাই বিয়ের চাপা-চাপি করছে, এসময় বড় ধরণের কোন অসুখ লেগে যাবে নাতো? ভেতরে ভেতরে আগ্রহ থাকা সত্বেও বিয়ে নিয়ে আর কিছু জানার সাহসও হয়নি সুবিরের। নিমা দাদার হাত ধরে পরীক্ষাগারে ঢুকল। রুমটা বেশ ছিম-চাম, পরিপাটি; সুন্দর করে গোছানো। অ্যাপ্রোন গায়ে দেয়া স্বাস্থ্য-কর্মী মেয়েটি অভিনন্দন জানাল। মেয়েটিকে দেখে সুবিরের মনে হল সে অবিবাহিতা। গায়ের রং মোটামুটি ফর্সা আর মায়াবী চেহারা। সুবির ভাবে তার স্ত্রী হিসাবে এরকম একজন হলেও চলত। ঘোরের মধ্যে যাচ্ছিল সুবির কিন্তু তখনি তাকে অবাক করে দিয়ে মেয়েটি মিষ্টি শান্ত গলায় প্রশড়ব করে, 'দাদার নাম যেন কি...?' থতমত খায় সুবির। উত্তর দিতে দেরী করছে দেখে মজা পাওয়া ছোট্ট মেয়েটির মত নিমা বলে 'ও দাদা, দিদি তোমার নাম জানতে চাচ্ছে....,- তুমি বলে দাও- ও আপনি তাহলে কথা বলতে পারেন?
'সুবির সাংমা' নামটা বলতেই বিনিময়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে মেয়েটি বলে, 'ধন্যবাদ'।.


এই মিষ্টি মেয়ের নামটা জানতে পারলে ভাল হত। তবে এখন থাক, আপাতত: মনে মনে তার নাম না জানা মেয়েটির নাম দিয়েছে 'অনামিকা'।. সব কাজ শেষ করে ফেরার পথে যেতে যেতে ছোট বোন নিমার কাছে স্বাস্থ্য-কর্মী মেয়েটির নাম জিজ্ঞেস করতে মন চাইছিল সুবিরের। কিন্তু তখনই নিমা বলে, দাদা- কেমন দেখলে...- কি- মেয়েটিকে- কোন মেয়েটিকে- স্বাস্থ্য-কর্মী মেয়েটিকে। যে মেয়েটি তোমার রক্ত নিলো...- কেন, ভালইতো। বেশ ভদ্র-নম্র বলে মনে হল- আজ এখানে আসার উদ্দেশ্যই হচ্ছে তোমার জন্য এই মেয়েটিকে দেখানো- তা আগে বলবি তো...- আগে বললে তুমি যদি আসতে রাজি না হও, তাই...- কিন্তু মেয়ে কি বিষয়টা জানে?- না, জানে না, তাকেও কিছু জানানো হয়নি। তোমার পছন্দ এবং সম্মতি পেলেই তাকে জানানো হবে।- আচ্ছা, তার নামটা বললি নাতো-- তার নামটা তোমাকে আজ বলব না, পরে বলব।- আচ্ছা আর একদিন দেখি, সম্ভব হলে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আয়। আরও একবার দেখি, সেও আমাদের ঘর-বাড়ি দেখে যাক...।


ছোট বোন নিমা আর স্বাস্থ্য ক্লিনিকের কর্মীরা বুদ্ধি করে কমিউনিটি ক্লিনিকে জরুরী রোগীর চিকিৎসার কথা বলে আনল মেয়েটিকে। এসে বললেন, দেরী হওয়ায় রোগী ফিরে গেছে। এলাকায় স্বাস্থ্য কর্মীর আত্মীয় বাড়ির কথা বলে সুবিরের বাড়িতে এসে হাজির। অতি সাধারন ভাবে অথিতি আপ্যায়ণ হল; দুজনের মধ্যে টুক-টাক কথাও হল। কিন্তু তার অনামিকা ঘুণাক্ষরেও বুঝতে পারল না সুবিরের বোন নিমা আর সহকর্মীদের সুন্দর ষড়যন্ত্রের কথা। বিভিনড়ব ধরনের আলাপ-আলোচনা, আনন্দ-ফূর্তিতে একটি দিন কাটল ওদের। আবার দেখা হওয়ার আশ্বাস-বিশ্বাসের মাঝে বিদায় নিল ওরা। ফেরার পথে মেয়েটিকে সঙ্গীরা জিজ্ঞেস করল- সুবিরকে যেভাবে নিমা করেছে। 'কবিতা, কেমন দেখলি...- কিসের দেখা দাদা?- সুবিরকে- কেন?- সুবির এবং তার অভিভাবকদের আমন্ত্রণেই তোমাকে আমরা ওই বাড়ীতে নিয়ে গেছি, বুঝলি...- কি বললে? আমার বিরুদ্ধে তোমাদের এই ষড়যন্ত্র...- কেন সুবির খুবই ভাল ছেলে, তোমার মত সহজ-সরল মেয়ের জন্য ওরকম ছেলেই মানাবে। আর ওই বাড়ি-ঘর আর তাদের পরিবেশ তোমার পছন্দ হয়নি?


মুখে কিছু বলল না কবিতা। মাথা নিচু করে পথ চলতে থাকে। চলতে চলতে সে ভাবে, এই যে চলার পথ আর জীবন চলার পথ; দু'টো দুই জিনিস অথচ কোনটারই শেষ নেই, সমাপ্তি নেই। ছন্দময় জীবন আর সুদীর্ঘ পথ; এই চলার পথে কী কখনো সঙ্গী-বিহীন চলা যায়...।

বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

Poem- উপসংহার....


উপসংহার....
ফিডেল ডি সাংমা

তুমি আমাকে হারাবার মতো
আর ক’জনকে হারিয়েছো বলতো
কখন হয়েছিলো শুরু- আমাকে দিয়ে শেষ।

উফ ! কেমন প্রশ্ন তোমার...
ক’জন হারিয়েছি বলতে পারবো না আর
হারিয়েছি অনেক কুজন- যেমন তুমি ব্যস।

কুজন আমি সুজন হতাম, যদি কাছে আসতে
জনম ধরে আমার বুকে; সুখের হাসি হাসতে।

Poem- নেই


নেই

আজো নেই শব্দটা পিছু ছাড়ে না কিছুতেই
নান্দনিকতার বেড়াজালে বাঁধা মানুষ
এটা করতে নেই, ওরকম হতে নেই-
বিরক্তিকর নেই শব্দটা পিছু ছাড়ে না কিছুতেই।
কালের চাকায় নিষ্পেষিত বন্দি তৃষা
ভ্রুণ হতে শিশু, যৌবন পেরিয়ে পৌঢ়ত্বে
যা চেয়েছি; তার কিছু কি পেয়েছি কখনো?
সীমাহীন বাঁধা পেরিয়েও নিঃস্ব শুণ্য থলে
ছড়াছড়ি কুড়াতে যোগ্য কি হারিয়েছি কিছু?
যেমন ণিক বিলাসে স্বর্গীয় সুখের চন্দন মাটি
খালি হাতে এসে ফিরে যাবো খালি...
আজো নেই শব্দটা পিছু ছাড়ে না কিছুতেই।

Story- শমির ঢাকা শহর


শমির ঢাকা শহর

ফিডেল ডি সাংমা
শমীর আদিবাসী নাকের ফুটো দুটো দূর থেকেই দুই নালা বন্দুকের মত দেখা যায়। অনেকেই বলে- তার নাকটা নাকি দেখতে প্রায় অভিনেত্রী শমী কায়সারের নাকের মত। তাই শমী কায়সারের নামের সাথে মিল রেখেছে সে- শমী। ঢাকা শহরে শমী নামেই বেশী পরিচিত। মেক-আপটা ডানে বায়ে আলতো ভাবে ঘসে, হা করে আরেকবার হালকা লিপষ্টিক ঠোঁটে মেখে ভাল ভাবে নিজেকে দেখার চেষ্টা করে শমী। আই-লাইনারের কাজটা ভালো করতে পারেনি। ভ্রু-টা বেশ অনেকদিন আগে প−াগ করিয়েছিল সে। আদিবাসী ছোট চোখ দুটো ডাগর করার চেষ্টা করে। মেরুন রঙের ফিন্-ফিনে হালকা শাড়ীতে পেচানো থলথলে তার শরীরটা বেঢপ দেখাচ্ছে। মনকাড়া মুচ্কি হাসি দেওয়ার চেষ্টা করে। না, হচ্ছে না – হয় না। আয়নার প্রতিবিম্বটা উচ্ছ্বাস হওয়ার বদলে মায়া ভরা সজল চোখে তাকিয়ে থাকে। ভেতরে পাথর চাঁপা দেওয়া নিজের ওপর ক্ষোভ আর কানড়বা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। মক্ষিরানী সাজা অভ্যাস্ত হাতে আজ নিখুঁত তরুণী সাজা কখন যে অনভ্যাসে পরিনত হয়েছে। ইস্ বিউটি পার্লারে বিল দেওয়ার মত সামান্য টাকাও যদি থাকতো! নেইল-পলিশ আর মেহেদীর রঙে রাঙা হাতটি অল্পদামী চক্-চকে ভ্যানিটি ব্যাগে ঢুকিয়ে দেয় শমী। না টাকা খুব একটা নেই। বড় জোর সি.এন. জি-র ভাড়াটুকু হবে। বাসে যেতে পারলে কিছু টাকা বেঁচে যেত; কিন্তু আজ তারও উপায় নেই। আজকাল ঢাকা শহরে অনেক আদিবাসি উচ্চ শিক্ষার জন্য এসেছে; এরা আবার গল্প কবিতা লেখালেখিও করেন। করে কে দেখে আবার তাকেই নিয়ে গল্প ছাপিয়ে দেবে,তখন হাটে হাঁড়ি ভেঙ্গে যাবে। ইস্ সময়ও আর নেই! টিট্-টিট্-টিট্ করে থেকে থেকে মোবাইল ফোনটি বেজে চলেছে। আজ বেশ মালদার বাবুর ডাক। চট্ করে যেতে না পারলে লোকটা আবার মাইন্ড করে বসে। বড় লোকের ভিমরতি আর কি! একদিন এই লোকটা অভিমান করে বলেছিল- 
আগন্তুক আসেনি কাছে 
গো-ধূলি সন্ধায় একাকী বসে থেকে 
আশাহত- চলে গ্যাছি কতবার, 
অস্ত রবির আভায় 
যেন কে উঠে আসে- কাছে না আসতেই 
ফিরে যায়- এসেছিলো যতবার।
বাংলার সীমান্তে শমীদের গ্রাম। সেই আদিবাসী গ্রামে সারা বছরই পাহাড়ের র্শি-শিরে বাতাস। বর্ডারের নো-ম্যান ্স ল্যান্ডে শুকনো লাকড়ী আনতে গিয়ে সবুজে ঘেড়া গাছের ডালে, ঝোঁপ-ঝারে হরেক রকমের পাখির মধুর সুরের ডাক শুনতে শুনতে ঘুম এসে যেত তার। বৃদ্ধ বাবা মাঠে কাজ করার ফাঁকে গাছ থেকে শুকনো ডাল পেড়ে দিতেন। পাহাড়ী ঝর্ণার বেয়ে আসা শীতল জলে সড়বান শেষে বাড়িতে এসে শমী দেখতো সন্ধায় মা আর ছোট্ট বোনটি চুলোয় রানড়বা চড়িয়ে পুরানো ঐতিহ্যবাহী গ্রামীন কোন চলচিত্রের কাহিনীর রূপদান করছে। মাঝে শমীদের সংসার ছিল বেশ বড়-সড়। চার ভাই-পাঁচ বোন, বাবা এবং চির রোগিনী মা। ভাই বোনের হিসাব করলে শমীর নম্বর অষ্টম। বিয়ের পর ছয় ভাই বোন আলাদা সংসারী হওয়ার পর এক বোন এবং ছোট্ট একটা ভাই নিয়ে কোন রকম কষ্টে শিষ্টে ছোট্ট দুটি কুঁড়ে ঘরে সংসারটা চলছিল তাদের। মাত্র কয়েক’শ গজ দূরে প্রাইমারী স্কুল কাম গীর্জা ঘর। কোনদিন অসুস্থ হয়ে বিছানায় শুয়ে থেকেও স্কুলের সমস্ত লেখাপড়া তার অনায়াসে পড়া হয়ে যেত। গীর্জায় গাওয়া কোন গানই তার অজানা নয়। বাইবেলের অসংখ্য উপদেশ, ব্যাখ্যা আজও মনে গেঁথে আছে। শমীদের গ্রামে বিভিনড়ব ধর্মের; যেমন-হিন্দু, মুসলিম এবং খ্রিষ্টানদের বসবাস। দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আজান, সকাল-সন্ধ্যা পূজার উলুধ্বণী, শিশুদের পড়া মুখস্ত- পাখিদের কলরব, বাড়ির পাশে বাতাসে কলা পাতার ফর-মর করা শব্দ সব সময় গ্রামটাকে মাতিয়ে রাখত। অফুরন্ত হেসে খেলে কেটে যেত অতীতের সোনালী দিনগুলো। হতভাগী শমীর আত্মীয় স্বজনের অনিয়মিত সহযোগীতায় মাত্র দশম শ্রেণী পর্যস্ত পড়া শুনা। ক্লাশের অত্যন্ত দুঃখী অথচ মেধাবী ছ্ত্রাী। টেষ্টে ভাল রেজাল্ট করেও টাকার অভাবে ফরম ফিল-আপটা করাটা আর হয়ে ওঠেনি। বাবার মৃত্যুর পর তাকে পড়া শুনা একেবারেই ছেড়ে দিতে হল। তার সাথে সংসারের অভাবের যন্ত্রণা, ভাই-বোনদের আবদার, তাদের পড়াশুনার খরচ, কারোর অসুখ-বিসুখে ঔষধবিহীন ভাল থাকার ব্যর্থ চেষ্টা ইত্যাদি দেখতে দেখতে বিপর্যস্ত শমী চাকুরী করার কথা ভাবতে থাকে। তারপরই প্রতিবেশী বান্ধবীর করুণায় ঠাঁই হয়েছে এই অচেনা অজানা ঢাকা শহরে।
আজব এই ঢাকা শহর। বড় বড় দালান কোঠা। পনের বিশ তলা দালানগুলো হাজার হাজার একতলা দালান আর বস্তির ঝোপ-খুপঁড়িগুলোকে যেন উপহাস করে- অবজ্ঞার চোখে দেখে। উপর তলার বড় লোকেরা যেমনটি করে। দামী দামী সব খাবার
খেয়ে পায়খানা-প্রস্রাব করে পাইপ দিয়ে ছেড়ে দেয় তা নিচু তলায় দুর্গন্ধ ছড়ায় যা এয়ারকুলারের হাওয়া খাওয়া লোকজন কখনোও টের পায় না। পথে বের হলেই মনটা বিক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে শমির। শিসাযুক্ত বাতাস আর দূর্গন্ধে নিশ্বাস নেবার জো নেই। উঁচু তলার মানুষের খবর নিচু তলার কোন কিছুই বলতে পারে না; বোধ হয় তা চায়ও না। মনের মিল নেই; আছে শুধু প্রতিহিংসা আর ওপরে ওঠার নির্লজ্জ প্রতিযোগীতা। পাথরে গড়া দালানে বাস করে তারা বয়ে বেড়ায় পাথর হৃদয়। 
বে-রসিক মোবাইলটা আবার বাজছে। ‘ হ্যালো- হ্যাঁ। এই আসছি তো-।’ 
গতদিনের ডিউটিতে উপহার পাওয়া র্পাফিউমটা (আসলে চেয়ে নেওয়া) বগলে ফিচ্-ফিচ্ করে দিতে দিতে উত্তর দেয় শমী। শুদ্ধ বাংলায় কথা বলার চেষ্টা করে সে। আদিবাসী জিহ্বা তো, জড়তা কাটতে চায় না। ‘ঠিক আছে ডার্লিং, আমি এক্ষুনি আসছি…’
আদিবাসী ভাষায় গালিটা দিতে পারলে ভাল লাগত। বাংলায় মন ভরে না। শহরে এসে কিছুটা ইংরেজী শিখেছে। 
‘ শালা বাস্টার্ড …’ মনে মনে কষে গাল দেয় সে। ভ্যানিটি ব্যাগটা কাঁধে ঝুলিয়ে আয়নায় ঘুরে-ফিরে আর একবার নিজেকে দেখে নেয় শমী। বাধঁ ভাঙ্গা একটা দীর্ঘ-শ্বাস বেড়িয়ে আসে ভেতর থেকে। আজ যেখানে সে যাচ্ছে- তারা অনেক বড় লোক। স্ত্রী দীর্ঘ দিন শয্যাশায়ী। কখনো ইজি চেয়ারে সারাক্ষণ বসে থাকেন, কখনোবা জানালার গ্রীলটা ধরে বাইরে দূরের আকাশ দেখতে থাকেন। যেন কখনো তার জীবনে শাšিতর পরশ পায়নি; বিষাদ ভরা মুখ। অবশ্য শমীদের আদিবাসী মায়েরা এরকম অসুখ নিয়েও সারাদিন পরিশ্রম করে, স্বামী-সন্তানদের আহারের ব্যবস্থা করে। আর তার স্বামীটা আস্ত একটা বদমাশ। ক্ষুধার্ত শেয়াল কুকুরের মত সারাক্ষণ খাই খাই স্বভাব। উল−ুকটা আজ তার ড্রাইভারকে দিয়ে গাড়ীটা পাঠিয়ে দিলেই পারত- তা নয়, ঘন ঘন রিং দিচ্ছেন। ছোট লোক গরীব-দুঃখীদের দুঃখ-কষ্ট ওরা বুঝে না, বুঝতে চায় না। ওরা মনে করে কষ্টই যেন গরীবদের প্রাপ্য; না হলে- বড় লোকদের কাছে যেন অন্যায় করা হয়।
‘‘ ক্রুশের কাছে যাব যেন ক্ষমা পাই, মহাপাপীর তরেও সেথায় আছে ঠাঁই…’’ গীর্জার এই গানটা শুনে থমকে দাঁড়ায় শমী। গ্রামে থাকতে গানটা শুনে নি কখনও। ঢাকার গীর্জায় শুনেছে । আজ রবিবার। ঢাকা শহরে খ্রিষ্টান চাকুরী জীবিদের জন্য প্রত্যেক চার্চেই রবিবারে সন্ধ্যায় গীর্জার সুব্যবস্থা। আজকাল রবিবার কি সোমবার কিছুই মনে থাকে না শমীর। মনে পাপ নিয়ে সঠিকভাবে ধর্ম- কর্মে মন দেওয়া যায় না। গানটা শুনে মনটা কেমন কেমন করছে- ভেতরটা মোছর দিয়ে উঠছে। শাস্ত্র পাঠ হচ্ছে- 
‘‘তোমার হাত কিম্বা পা যদি তোমাকে পাপের পথে টানে তবে তা কেটে ফেলে দাও। দুই হাত ও দুই পা নিয়ে চিরকালের আগুনে পুড়বার চেয়ে বরং নুলা বা খোঁড়া হয়ে জীবনে ঢোকা তোমার পক্ষে ভাল । তোমার চোখ যদি তোমাকে পাপের পথে টানে তবে তা উপড়ে ফেলে দাও । দুই চোখ নিয়ে নরকের আগুনে পড়বার চেয়ে বরং কানা হয়ে জীবনে ঢোকা তোমার পক্ষে ভাল । 
…যা হারিয়ে গেছে তা উদ্ধার করবার জন্য মনুষ্যপুত্র এসেছেন । তোমরা কি মনে কর? ধর, একজন লোকের একশোটা ভেড়া আছে। সেগুলোর মধ্যে যদি একটা ভুল পথে চলে যায় তবে সে কি নিরানড়ববইটা পাহাড়ের ধারে রেখে সেই ভেড়াটা খুঁজতে যায় না? আমি তোমাদের সত্যিই বলছি, যদি সে সেটা পায় তবে যে নিরানব্বইটা ভুল পথে যায় নি, তাদের চেয়ে যেটা ভুল পথে চলে গিয়েছিল; তার জন্য সে আরও বেশী আনন্দ করে…” (মথি-১৮ঃ ০৮-১৩ পদ)।
বাইবেল ব্যাখ্যা শুনতে শুনতে কানড়বায় ভেঙ্গে পড়ে শমী। হারিয়ে যাওয়া ভেড়া আর কেউ নয়; অনেকদিনের ভুল পথে যাওয়া শমী। সীমান্তে হারিয়ে যাওয়া – শমী। কিন্তু তার কীইবা উপায় ছিল। ভাল একটা কাজের সন্ধানে যেখানেই গেছে, সেখানে কোন কাজতো জোটেইনি; বরং অনেকটা অপমানিত হয়ে ফিরে আসতে হয়েছে। ঢাকা শহরে এসে শমীর আসল পরিচয় যেমন ঢাকা পরে গেছে ঠিক তেমনি তার আজীবন লালিত সুখের স্বপড়ব, পৃথিবীর জন্য ভালবাসা, আশা-প্রত্যাশা সব কিছু শেষ হয়ে গেল। বান্ধবীর করুণায় অনেকদিন নির্লজ্জের মত খেয়েছে- পড়েছে; এ ভাবে আর কতদিন। বান্ধবীটির অনেক লোকের সাথে জানা পরিচয় আছে- তার হাত ধরেই কখন, কোথায় হারিয়ে গেছে শমী; নিজেও তা বুঝতে পারেনি। পেছনে প্রায় লেগে যাওয়া রিক্সার কলিং বেলের আওয়াজে সম্বিত ফিরে পায় শমী। বুঝতে পারে অনেক্ষণ ধরে সে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে। রিক্সা-ওয়ালার ঘাম মুছা মুখটা লাল হয়ে ঝক্-মক্ করছে। ডেব-ডেব করা সন্দিহান চোখে তাকিয়ে আছে শমীর দিকে।
‘আপা অনেক্ষণ ধইরা দাঁড়াইয়া আচেন, কোথাও যাইবেন-নি…? কোন উত্তর আসে না শমীর মুখথেকে। কানড়বায় নষ্ট হয়ে যাওয়া মেক্-আপটা মুছতে মুছতে রিক্সার হুডটা নামিয়ে উঠে পড়ে শমী। ক্রিং-ক্রিং; লক্কর-ঝক্কর আওয়াজ তুলে চলতে থাকে।
চলতে চলতে এক সময় রিক্সাটা অন্ধকার গলির ভেতর হারিয়ে যায়- সেই সাথে আদিবাসী শমী নিজেও …।

Story-জারাম্বং


জারাম্বং

ফিডেল ডি সাংমা
বড় দাদা সালসেং- এর যখন লৌকিক বিয়ে হয়, তখন জারাম্বং-এর বয়স কতইবা- বড় জোড় চার কি পাঁচ। ওইটুকুন বয়সে বিয়ের আনন্দময় অনুষ্ঠানের স্মৃতি আজও উপভোগ্য। দাদা আর বৌদিকে পাশাপাশি বসিয়ে ইয়া পাগড়ি ওয়ালা পুরোহিত আচ্চু ‘দঃবুক দক্কা (এক প্রকার বিয়ে)’ বিয়ে দেয়ার সময় ধুরুম করে পিঠে বসিয়ে বলেছিলেন, ‘ইয়া হৈ- সালসেং নামিং হৈ, জানিরা নামিং হৈ…’। কক্ কক্ করা দু’টো মোরগের মাথা ছিঁড়ে দিয়েছিলেন দাদা ও বৌদির সামনে। তাদেরকে দুটো চাপড় দিয়ে আস্ত একটা মোরগ খাওয়াবে ভেবে দুষ্টু জারাম্বং মায়ের কোল থেকে নেমে বায়না ধরেছিল, ‘মা! আমিও একটা মোরগ নেবো.. ..’। বুড়ো পুরোহিত বলেছিলেন, ‘তাহলে যে তোমাকেও একটা কিল খেতে হবে’। সেদিন বহু কান্নাকাটি পিড়াপিড়ি করে একটা চাপড় খেয়ে ছোট্ট একটা মুরগী পেয়েছিল, তা দিব্যি মনে আছে তার। পরিণত বয়সে জারাম্বং-এর বিয়ে হল।
মাঝে মাঝে মাঝ রাতে অকারণে জারাম্বং-এর ঘুম ভাঙ্গে। তখন বাঁশের চাটাই দিয়ে তৈরী জানালাটা খুলে দেয় সে। তখন শীতল বাতাস মনে এনে দেয় ভাল লাগার ছোঁয়া। স্ত্রী ফোঁস করে শ্বাস ছেড়ে একটু নড়চড়া করে আবার ঘুমিয়ে পড়ে। চাঁদমাখা স্ত্রীর মুখে চাঁদের আলো লুটোপুটি খায়। স্ত্রী বেশ-চঞ্চলা রূপবতী। শুভ্র দাঁতগুলো বের করে ঝরণার মত কল-কল করে হাসতে পারে। স্ত্রীর বলগাহীন, খোলামেলা ভালবাসাকে মনে হয় লুকোচুরি। এমন ভালবাসা জারাম্বং-এর পছন্দ নয়। ভালবাসতে দেখেছে তার বৌদিকে। কি সুন্দর করে বলত, ‘এই, এদিকে এসো-তো বা শুনে যাও…’। 
মাঝে মাঝে জারাম্বংকে বৌদি বলত, ‘আজ যা তোমাকে তোর নাম ধরে ডাকলাম, পরে কিন্তু আর ডাকব না’। ‘কেন-?’ শিশুসুলভ কন্ঠে জারাম্বং প্রশড়ব করে। 
- কেন আবার, তুইতো আমার ইয়ে। আমাদের বিয়ের সময় তোমার দাদার সাথে তোমাকেও আমার সাথে ‘দঃবুক দক্কা’ বিয়ে দিয়েছে না? আস্ত একটা মোরগ খেয়ে এসব ভুলে গেলে চলবে? 
- বেশ, তাহলে চল- কুয়ো থেকে আমার জন্য সড়বানের জল তুলে দেবে- 
- শুধু জল তুলে দেব না, ঢেলেও দেব..
দিগম্বর হলে কি হয়, তখন সে জ্ঞানটুকুও ছিল না তার। বৌদি কী সব বলতে বলতে সারা শরীর ঘসে দিত। সেদিনের এসব স্মৃতিগুলো মনে হলে লজ্জায় জারাম্বং-এর মুখ লাল হয়ে যায়, বৌদির সামনে থেকে পালিয়ে যেতে ইচ্ছে করে। জারাম্বং আজও সেই ছোট্টটি থেকে গেলে কার এমন কি ক্ষতি হত, তা বিধাতাই জানেন।
স্বামীহারা মা বারান্দার পিড়িতে একাকী বসে তামাক টানতে টানতে জ্যোৎস্নার আলোয় এক মুখ ধোঁয়া ছাড়েন। সালসেং, জারাম্বং আর মাকে নিয়ে তিনজনের ছোট্ট সুখের সংসার ছিল। স্বামীর নাম জাংখা মারাক। পছন্দ করেই বিয়ে হয়েছিল তাদের। হতভাগা জারাম্বং যেদিন পৃথিবীর মুখ দেখল তার আগের দিন জঙ্গলে শিকার করতে গিয়ে হারিয়ে গেলেন। শিকার সঙ্গীরা সবাই ফিরে এলেন, জারাম্বং এর বাবা এলেন না। তিনি বেঁচে কি মরে গেছেন তাও আজ পর্যন্ত কেউ বলতে পারল না। বাবা না থাকায় সালসেংকেই সংসারের হাল ধরতে হল। সালসেং-এর জন্য ছোট মামার মেয়ে নীলাকে পছন্দ করে রেখেছিলেন তার মা। কিন্তু সালসেং একদিন ওয়ানগালা উৎসবে পছন্দ করে জানিরা নামের মেয়েটিকে বাগিয়ে এনেছে। মা চাইলেন না ‘থু-নাপা (এক প্রকার বিয়ে)’ প্রথায় ছেলে সংসারী হোক। তাই সামাজিকতা রক্ষা করতেই ‘দঃবুক দক্কা’ বিয়ে দিলেন। মেয়ে নাই বলে এ বাড়িতে কন্যা হিসাবে তার স্থান হল।
গত পনের বছরে জানিরার জীবনেও অনেক ঘটন-অঘটন ঘটে গেল। ইদানিং সে খুব বেশী নিঃসঙ্গতায় ভুগে। যেন কোথাও কেউ নেই। খা খা করা শুন্যতার দৃষ্টি নিয়ে নিসীম আকাশের দিকে চেয়ে থাকে। সে কবে কোন কুক্ষণে স্বামী সালসেং মারা গেলেন। লোকেরা বলল, ‘জাওয়ানী জাক্ (বান মারা/ যাদু টোনা করা)’। তিনি কোন সন্তান দিয়ে যেতে পারেন নি। তাই এতদিন দেবর জারাম্বং-কেই স্নেহ-আদর দিয়ে, কোলে পিঠে করে বড় করেছে জানিরা। বৌমার ভবিষ্যতের কথা ভেবে শাশুড়ী জানিরাকে আবার বিয়ে করতে বলেছিলেন। আর তা না হয় সে বাপের বাড়ি চলে যেতে পারে। তখন কোন প্রস্তাবেই রাজী হয়নি। বাকী দিনগুলো সালসেং-এর স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে চেয়েছে জানিরা। কিন্তু এখন পৃথিবীর সব কিছুই মূল্যহীন মনে হয় তার কাছে। উদার শাশুড়ী, স্বামী এবং জারাম্বংকে নিয়ে এতদিন ভালই তো ছিল।
শাশুড়ী পাশের ঘরে খুক-খুক করে কাঁশছেন। গর-গর করা তামাক টানার শব্দ বন্ধ হয়ে গেছে। কদিনে তিনিও অনেক বেশী বুড়িয়ে গেছেন। স্বামী মারা যাবার এক বছর পর জারাম্বং-ও বিয়ে করে শশুর বাড়ীতে ঘর-জামাই হয়েছে। ছেলে পরের বাড়ি জামাই গেলেও বেঁচে তো আছে, এটাই শাশুড়ীর একমাত্র সান্তনা। কিন্তু কী আছে জানিরার! কিসের জন্য তার বেঁচে থাকা। মানুষের জীবনটা কেন এমন হয়, এমনি হাজারো প্রশ্ন তার বুকের গভীরে গুমরে মরে- যার উত্তর সে খুঁজে পায় না।
বিয়ে আগেও একবার হয়েছিল জানিরার। সেই শৈশবে; যখন তার বয়স ছয় কি সাত। গোষ্ঠীর সম্পত্তি হাতছাড়া হওয়ার ভয়ে জ্যাঠার মৃত্যুর পর দ্বিতীয় জামাই আনার সময় তাকেও আজং-এর সাথে অন্চাপা উপপত্নি করেছিল। ওটুকুন বয়সে কেই বা ভাল মন্দ বুঝে। দু’টুকরো বিস্কুট খাবার সুযোগ পাওয়াটাকেই বড় পাওয়া মনে হয়েছিল তার। সেরকম রেওয়াজ তো আছেই।
কিন্তু যাকে এতদিন পিতৃ স্থানীয় বলে জানত, আওয়াং (কাকা) বলে ডাকত; সেই লোকটা দশটি বছর পেরোবার আগেই জানিরাকে বয়স্ক করে দিল। অবশ্য একদিন এ পাষন্ড বুড়োটার জন্যই ওয়ান্গালাতে এসে সালসেং-এর সাথে দেখা। তারপরথেকেই সালসেং-এর বাড়িতে আছে সে।
সালসেং বেঁচে থাকতেও জানিরা আর জারাম্বং-কে নিয়ে সমাজে কম কানাঘুষা হয়নি। স্বামী শাশুড়ীর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, দেবরকে সন্তানের মতই ভালবাসে জানিরা। সালসেং-এর মৃত্যুর পর শেষ পর্গন্ত শাশুড়ীকে মাথা ঘামাতেই হল। সমাজের সমালোচনায় অতিষ্ট হয়ে জারাম্বং-কে বললেন, ‘তুই এখন আর সেই ছোট্টটি নোস, বড় হয়েছিস, তোকে এবার ঘর সংসার নিয়ে ভাবতে হবে। বৌমাকেও ডেকে দেবর ভাবীর সম্পর্কের কথা স্মরণ করিয়ে দিলেন এবং আগের মত আদর সোহাগ করতে নিষেধ করে দিলেন। কোনদিন তাদের সম্পর্কে কেউ এভাবে বলবে জানিরা তা ভাবেনি। কিন্তু শাশুড়ীর কথাগুলো শুনে জানিরার মন কেমন যেন করতে লাগল। শাশুড়ী সাবধান বাণী দিলেন না কি জানিরার হৃদয়ের অপ্রকাশিত কথাগুলো বের করে আনলেন তা ভেবে খুব অস্থিরতায় ভুগে সে। কি তার করা উচিত তা ভেবে পায় না জানিরা। হার্ট বিট বেড়ে দিগুণ হয়ে যায় তার। দূর হতে পাহাড়ী ঝরণার ঝর-ঝর শব্দে আবেগে আপ্লুত হয়। চোখে-মুখে অন্ধকার দেখতে থাকে সে। সে আলো-আঁধারিতে যেদিকে তাকায় সেদিকে ক্ষণে জারাম্বং-এর মুখ ক্ষণেই সালসেং-এর মুখ ভাসতে থাকে। এ মুহুর্তে সালসেং-এর রেখে যাওয়া সংসারটাকে তার সমাজ, আর জারাম্বং-কে একান্ত আপন মনে হয়।
আজ মাঝ রাতেই চাঁদের আলো ম্লান হয়ে এল। ছেঁড়া-ছেঁড়া মেঘের দল চাঁদের সাথে লুকোচুরি খেলছে। বারান্দার এক কোনে মাদুর বিছিয়ে আধ শোয়া অবস্থায় আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকে সে। রাতের তারকা মেলায় তাদের আড্ডার গল্প আড়ি পেতে শোনার চেষ্টা করে জানিরা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ঘন ঘন হাই ওঠে চোখ পানি ভরে যাচ্ছে। গত কয়েক রাতের নির্ঘুম চোখ দ’টো ব্যথায় টন্ টন্ করছে। শাশুড়ী খুক-খুক করে কাশছেন। এক ঘুম দিলেন মনে হয়। জানিরাও মাদুরটা হাতে তুলে নেয়, এবার তারও ঘুমানোর চেষ্টা করা উচিত। এভাবে আর কতদিন। দরজাটা বন্ধ করে শুতে যাবে এমন সময় কারোর পায়ের শব্দ শুনতে পায় জানিরা। ঠক্-ঠক্ করে শব্দ হয়। শব্দটা দরজায় না তার হৃদপিন্ডে তা বুঝার আগেই আর একবার শব্দ হয়-‘ ঠক্-ঠক্ ঠক্-ঠক্’। কুপিটা ধরিয়ে জিজ্ঞেস করে জানিরা, ‘কে..?’ বাইরে থেকে কোন উত্তর আসে না। আবার জিজ্ঞেস করলে উত্তরে খুব সাবধানে আস্তে করে কাশি শোনা যায়। আস্তে করে দরজা খুলে দেখে অনতি দূরে দাঁড়িয়ে জারাম্বং। একটু আগেও বার বার কেন জানি তার মন বলছিল, আজ সে আসতে পারে। কি ভাবে তার অনুমান সত্যি হল তা ভেবে অবাক হয় জানিরা। জারাম্বং কি মাতাল! ‘এত রাতে তুমি? মাতো অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়েছে, ডেকে দেবো?’ কাঁপা কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করে জানিরা। ‘না, আমি শুধু তোমার কাছে এসেছি’ -বলেই ভেতরে ঢুকে পড়তে চায় জারাম্বং। 
- কেন..? 
- আমি ওই ঘর সংসার ত্যাগ করে তোমার কাছে চলে এসেছি। তোমাকে ছাড়া আমি.. 
- কি বলছ তুমি, এটা কি করে সম্ভব। তুমি পাগল হয়ে গেছ। ইদানিং মদ খেলে তোমার আর হুঁশ থাকে না, তাই না? 
- কেন নয়, তুমিই না আগে বলতে সেদিনই আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে। দাদা নেই, তুমি আর মা এই সংসারে কেমন করে থাকবে বল? একদিকে মা আর একদিকে তুমি, তোমাদের কষ্ট আমি সহ্য করতে পারছি না।
কিংকর্তব্যবিমূঢ় জানিরা। তার বুকের শুন্যতা দিগুণ বেড়ে গেল যেন। হৃদপিন্ডের গায়ে রক্ত কণিকাগুলো দর-দর করে দেহের প্রতিটি শিরায় আছড়ে পড়ছে। যার আসার পথ চেয়ে কেটেছে বৈধব্য জীবনের প্রতিটি মূহুর্ত, স্বপ্ন দেখেছে একটু ভালবাসার স্পর্শ পাওয়ার, শুধু একটিবার ‘আমি তোমাকে ভালবাসি’ কথাটি শোনার অধীর আগ্রহে বাতাসের কাছে কান পেতেছে-, সেই আজ তার সামনে দাঁড়িয়ে। কিন্তু শাশুড়ী কখন যে পেছনে এসে রাতের ঘুট-ঘুটে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে সব শুনলেন, টের পায়নি জানিরা। পাথর চাঁপা দেওয়া হৃদয়ের জমাট বাঁধা কষ্টগুলো ঝরণার মত তীব্র বেগে ছুটে বের হয়ে আসতে চায়। কিন্তু বাঁধা পড়ে যায় সংসার সমাজের মায়াজালে। চোখের সামনে ভাসতে থাকে স্বামী সালসেং-এর করুণ মুখ। যে স্বামীকে প্রাণের চেয়ে বেশী ভালবাসত। যার ভালবাসা পাওয়ার জন্য পৃথিবীর তাবৎ সুখ নিমিষে ঝেড়ে ফেলে দিয়ে শত দুঃখ-কষ্ট হাসি মুখে বরণ করে নিতে পারত। জানিরা আর কিছু ভাবতে পারে না। চোখে-মুখে অন্ধকার দেখছে, মাথাটা তার ভীষণ ভাবে ঘুরছে। পড়ে যাবে কিনা বুঝতে পারছে না। কারোর কিছু বলার আগেই খট্ করে দরজাটা বন্ধ করে দেয় জানিরা। এমনি করে তার ভালবাসার দরজা বন্ধ করে দিতে হয়; চির জীবনের জন্য। পাহাড়ি ঝরণার মত বুক চিরে কান্না আসে জানিরার। ভেতরের বাঁধ ভাঙ্গা কান্না দমিয়ে রাখতে গিয়ে ডান পাশের বুকটা ব্যথায় চিন্-চিন্ করে ওঠে। এ মূহুর্তে জ্ঞান হারাবে কিনা বুঝতে পারছে না সে। তবুও জানিরা নিঃশব্দে কান পেতে থাকে। এক সময় জারাম্বং-এর পায়ের আওয়াজটা অন্ধকারে মিলেয়ে গেল….।
শব্দার্থ/ টীকা- সালসেং = আলোকময়/ উজ্জ্বল (নাম)। জারাম্বং = চাঁদের আলো/ জোৎস্না (নাম)। জানিরা = আয়না (নাম)। দঃবুক দক্কা = গারোদের এক প্রকার বিয়ে। 
ইয়া হৈ- সালসেং নামিং হৈ, জানিরা নামিং হৈ = এটা বিয়ের মন্ত্র। অর্থ – ‘সালসেং-এর সাথে জানিরার আজ বিয়ে হচ্ছে…’ ওয়াংগালা = গারোদের ফসলাদি ঘরে তোলার পর দেবতার উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতাস্বরূপ ফসল উৎসর্গ করার উৎসব।

কি হবে জাতি স্বীকৃতি দিয়ে…?


ফিডেল ডি সাংমা  
একটা বনের পশু বা পাখি যতই সুন্দর হোক আর প্রকৃতির সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে যতই অবদান রাখুক না কেন, কারো অবহেলায়, নিরাপত্তাহীনতায় কখনো পশু বা পাখি মারা গেলেও বনের যেমন কিছু যায় আসে না- তেমনি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু জাতিরাও তাই। কারোর জান্তে-অজান্তে, স্বাভাবিক কিংবা অস্বাভাবিকভাবে তাদের কারোর মৃত্যু কিংবা হারিয়ে গেলে বাংলাদেশেরও কিছু যায় আসে না- বাংলাদেশের ৪৫টি জাতিগোষ্ঠ্যী দেশ- সমাজ- সংস্কৃতির বৈচিত্রে শ্রীবৃদ্ধি, কিংবা দেশ গঠনে (স্বাধীনতা যুদ্ধে, বর্তমান সরকারী দলে প্রতিমন্ত্রী, বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী সংস্থায় বিভিন্ন পর্যায়ের আসনে দায়িত্বপালন) ও উন্নয়ন পরিকল্পনায় অবদানের যতই অংশীদার হোক। বাঘ, ভালুক, সিংহরা পশুজাতির; তা স্বীকৃতি দিতে কারোর দ্বিধা নেই তেমনি দোয়েল, ময়না, ময়ুরদেরও পাখিজাতীয় বলতে দ্বিধা নেই, কিন্তু বাংলাদেশের গারো, চাকমা, বম, ত্রিপুরা এমন ৪৫টি জাতিগোষ্ঠ্যীতের জাতি স্বীকৃতি দিতেই এ সরকারের আপত্তি। কিন্তু কেন…
আপত্তি থাকারই কথা! কারণটা সম্ভবতঃ দেশ পরিচালনায় সরকারের ব্যর্থতা। দুর্নীতির শীর্ষে অবস্থানকারী এই দেশ বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও বাঙ্গালী স্বাধীনতার কী স্বাদ তা পরিষ্কার বুঝতে পারেনি। সর্বদা জাতীয়, সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তি দ্বন্দ্ব কলহ অবস্থাথেকে মুক্ত হতে পারছে না জনসাধারণ। আইন শৃংখলা বাহিনী সকল মানুষের জান-মালের পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ ; এমন আরো কত কী সমস্যা! শুধু একটা জাতি(বাঙ্গালী)-র মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা ও মানুষের জান-মালের পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে যেখানে ব্যর্থ সেখানে আরো ৪৫টি জাতি যোগ হলে সে ব্যর্থতার দায়ভার বেড়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক, বাঞ্চনিয়, সমুচিত। আন্তর্জাতিক মহলে সুনাম ুন্ন হবে। এই দেশের প্রতিটি মানুষ সুস্থ- শান্তিতে থাকে- তা প্রমান দিতে না পারলে নোবেল, শান্তি পুরষ্কারের মত আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পুরষ্কার, ডিগ্রী অর্জন যেখানে সম্ভব হবে না, সেখানে আরো ৪৫টি জাতি যোগ হলে সে ব্যর্থতার দায়ভার নেওয়ার কোন যুক্তি নেই। হয়তোবা একারণেই এ দেশের সরকার কোন দিন এই ৪৫টি জাতির স্বীকৃতি দেবে না, তা নির্বাচনের আগে দলীয় ইস্তেহারে জাতি স্বীকৃতি দেওয়ার মত পিছিয়ে থাকা এই অবহেলিত জাতির জন্য অতি লোভনীয় সুন্দও সুন্দর উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের প্রতিশ্র“তির মত যত যাই বলা হোক।
বাংলাদেশের এই ৪৫টি জাতিগোষ্ঠ্যীর ভাই-বোনদের বলি- আমরা কেন শুধু সাংবিধানিক জাতি স্বীকৃতির আশায় মাথা ঠুকছি? কি হবে জাতি স্বীকৃতি দিয়ে? দেশের সংবিধান দেশের প্রতিটি জনগনের দৈনন্দিন জীবন যাপনের জন্য কতটুকু কাজে লাগে? দেশের অধিকাংশ জনগন এখনো একদিন হরতালে পরেরদিন অনাহারে দিন কাটায়। নিজেরদের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসার ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হয়। আর এটাও ভাবুনতো- আমাদেও স্বজাতি গারো, চাকমা, বম, ত্রিপুরারাও কি এই দেশে কিংবা পার্শ্ববতী দেশে, প্রদেশে বর্তমান সরকারী ও বিরোধী দলে, বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী সংস্থায় বিভিন্ন পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য উচ্চ আসনে দায়িত্বপালন করছে না? তাহলে আমরা পিছিয়ে থাকবো কেন? কিসের, কার আশা ভরসায়?
পরনির্ভরশীলতা মানুষের সকল উন্নয়নের অন্তরায়। তাই আসুন আমরা সমস্বরে বলি, আমরা পরনির্ভরশীল হতে, থাকতে চাই না। আমাদের কেউ আমাদের জাতি স্বীকৃতি দিক আর না দিক, আমাদেরও কিছু আসবে যাবে না। বাঙ্গালী জাতির মৌলিক মানবিক চাহিদা পুরণের নিশ্চয়তা ও মানুষের জান-মালের পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে যেখানে ব্যর্থ; এই দেশে আমাদের নিজেদেরই মৌলিক মানবিক চাহিদা পুরণের প্রচেষ্টা ও নিজের জান-মালের নিরাপত্তার ব্যাপারে মনোনিবেশ করুন।
বড় কথা হচ্ছে- আমরা সন্তান জন্ম দিলে কোন শিশু গরু-ছাগল হয়ে জন্ম নেয়নি, আমরাও রক্তমাংসে; আবেগ-অনুভূতিতে সবারই মত; সুতরাং আমরাও মানুষ। আর মানুষ, সকল সৃষ্টির সেরা জীব।

ভালো লেখক, কবি, গবেষকের সৃষ্টি

প্রায় লোকই বড় লেখা যেমন প্রবন্ধ, গল্প, বড় আকারের পদ্য পড়েন না, পড়তে চান না; মন্তব্যও করেন না। তার কারণ হাতে সময় নেই অথবা ধৈর্যের অভাব। অথচ একটু ধৈর্য নিয়ে পড়ে গঠন মূলক মন্তব্য লিখলে লেখক অনেক উৎসাহ পেতো এবং এর মাধ্যমে ভালো লেখক, কবি, গবেষকের সৃষ্টি হতো। সর্বোপরি আমাদের নিজেদের পাঠাভ্যাস অব্যাহত বজায় থাকতো.... কিন্তু তাতো হচ্ছে না; হওয়া উচিত ছিলো >>>

Feature- Lojja


DIGITAL BANGLADESH-er sathe manusho ki DIGITAL hoye jai..? Sorokari dol O birodhi dol uvoy dolei adibasi bektira bivinno pode achen, oneke abar montri-porishodero member, unara desher mongoler(!) kotha vabte vabte (?) nijer jati-sottar kotha unara vule jaan. Abar keo keo nij-jatisottar porichoy diteo lozza pan...Shudhu lozza paben na - akdin jokhon unara okritgger moto- amader kachei/nij ghore/nij-jatisottar vetore firben, matha gojar chesta korben, keo keo abar vote chaiben... Apnara ekjon adibasi hoye adibasider pokkhe koidin kotha bolechen, ki kore diyechen.... Afsos... jonogon apnader chinte vul kore....
Adibasi hisabe amader lozzito howa uchit, adibasi projonmer kache khoma chawa uchit. Amra ki amon kajtie korchi na...? Amra keno biswas korate parina je amra shudhu amader jatisottar porichoye ei deshe thakte chai ar sobar moto ei sundor bangladsh.ke valobese..desher unnoyone sohovagi hote chai....

Story- রাবিন


ফিডেল ডি সাংমা

রাবিনের হাতে এখন অফুরন্ত সময়। রাবিন ভাবে- বাবা শিক্ষিত হলে তার নাম রাবিন না হয়ে রবীন্দ্রনাথ রাখত। তেমন অর্থ ছাড়াই কোন মানুষের নাম হয়। কি অদ্ভুত! গত রবিবার বিকেল বেলায় পাশের বাড়ি থেকে সঞ্জিব দ্রং-এর লেখা ‘বাংলাদেশের বিপন্ন আদিবাসি’ বইটি আনা হয়েছে। গারোদের মধ্যে এমন লিখিয়ে খুব একটা পাওয়া যায় না। তবে এই ভদ্রলোক বাংলাদেশ এবং সারা বিশ্বের অধিকার বঞ্চিত আদিবাসীদের কথা, বিশেষ করে গারোদের কথা লিখলেও, গারো পুরুষ কোনভাবে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে কী হবে অথবা তার পক্ষে সান্ত¡নামূলক কোন কথাই লিখেননি। এটাই বড় আপসোস! বইটি একপাতা দু’পাতা করে পড়ে আজ প্রায় শেষের দিকে চলে এসেছে। অনেকদিন না পড়ে পড়ে বই পড়ার অভ্যাসটাই একেবারে চলে গেছে রাবিনের। পরের দিনের জন্য বাকী পাতাগুলো রেখে ঘুমিয়ে পড়তে হবে। বালিশের একপাশে বইটা রেখে ঘুমাতে গিয়ে ঘুম আসে না রাবিনের। প্রায়ই সারা রাত কখনো ইজি চেয়ারে বসে থাকে, কখনওবা জানালার গ্রীল্টা ধরে বাইরে দূরের আকাশ দেখতে থাকে সে। যেন কখনো তার জীবনে শান্তির পরশ পায়নি। বড় বিষাদ ভরা মুখ।

শরীর ও মনে বিশ্বের ক্লান্তিরা আকড়ে ধরেছে রাবিনকে। প্রচন্ড ঘুমে দু’চোখ বন্ধ হয়ে আসে তবু ঘুম আসে না তার। শুধু এপাশ-ওপাশ করে। দু’চোখ বন্ধ করে থাকে সে। অন্ধকারে দু’হাত শুন্যে কিংবা দু’পাশে ছড়িয়ে বিছানার চাঁদরে কিছু একটা ছোঁয়ার, অনুভব করার চেষ্টা করে। যেন এই অন্ধকারেই কিছু একটা হারিয়ে গেছে তার। না, আজ কিছুই সে হারায়নি; যা হারাবার তা হারিয়েছে অনেক আগেই।
আবিমার ঠিক মাঝখানটাতে রাবিনদের গ্রাম। সামান্য উচু-নীচু লাল মাটির এলাকাটা প্রায় সিলেটী গ্রামের মত। গ্রামে বিভিন্ন ধর্ম- বর্ণের বসবাস। দৈনিক তিনবার গীর্জ্জার ঘন্টা, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আজান, সকাল- সন্ধ্যা পূজার উলুধ্বণী, পাখিদের কলরব আর বাড়ির পাশে বাতাসে কলা পাতার ফর-ফর করা শব্দ সব সময় তাকে মাতিয়ে রাখত। অফুরন্ত হেসে খেলে কেটে যেত অতীতের সোনালী দিনগুলো।
দুই ভাই, তিন বোনের মধ্যে রাবিন সবার বড়। ক্লাশের অত্যন্ত মেধাবী ছাত্র হওয়া সত্তেও হতভাগা রাবিনের মাত্র ষষ্ঠ শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা। যৌবনের শুরুটা কেটেছে কাদের বাহিনীতে গিয়ে শেখ মুজিবের হত্যার বিচার চেয়ে। মুরারজী দেশাই বাংলাদেশে পুশব্যাক করার পর বড় ভাই হিসাবে সংসারের কাজে বাবাকে সাহায্য করে কেটে যাচ্ছিল দিনগুলো। প্রতিদিনের মত কাজে গিয়ে বিকেল বেলায় ছোট ভাইকে ছুটে আসতে দেখে রাবিন। তার দিকেই হাঁপাতে হাঁপাতে ছুটে আসছে। বলে - ‘দাদা, বাড়িতে মামার সাথে অনেক লোকজন এসেছে; তোমাকে নাকি জামাই নিয়ে যাবে..।’ ছোট মামার মেয়ে- সারাং বেশ সুন্দরী। নামটা সারাং না হয়ে নারাং হলে মানাত। কমলার মত গায়ের রং তার। রাবিনের চোখে ভাসতে থাকে- আদিবাসি পোষাকে সারাং তার সামনে দাঁড়িয়ে হাসছে। হাসি, চাহনী, শরীরের নড়াচড়া সবই ছন্দময়। তন্ময় হয়ে দেখতে থাকে সে। আর কতক্ষণ যে দেখতো- কে জানে। ‘দাদা, চল..’ ছোট ভাইয়ের কথায় সম্বিত ফিরে পায় রাবিন। মদ-মাংস খাওয়া আর হই-হুল্লোড় শুরু হয়ে গেছে। আপন ছোট ভাই মেয়ের জামাই নেবে, তাই বাবা-মা রাজী হয়ে গেলেন। রাবিনকেও জিজ্ঞেস করা হল। অবশ্য তাকে জিজ্ঞেস না করলেও চলত। লজ্জাবনত মস্তকে শুধু ‘হূঁ’ শব্দটি করেছে । তাতেই হার্টবিট বেড়ে যায় তার। গারোদের দাক্বেওয়াল মেনে ঘর-বর, পান-চিনি, বান প্রকাশ করতে করতে বিয়েটা মাস তিনেক লেগে গেল। পান্থে হাতত হিসাবে একটা বকনা বাছুর আর দশ হাজার টাকা সারাং এর হাতে গুজে দিলেন শাশুড়ী। শুরু হল রাবিনের জীবনের নতুন অধ্যায়।

নতুন সংসারে স্বামী স্ত্রী মিলে অনেক সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন দেখে রাবিন। মায়ের দেয়া দশ হাজার টাকা ভাঙ্গতে আর অলস জীবন যাপনে প্রায় পাঁচটি বছর কেটে গেল। এরই মধ্যে এসেছে দ’টি কন্যা সন্তান। আটজন ছেলে মেয়ে নিয়ে শশুরের বিরাট সংসার। আয় রোজগার সীমিত হওয়ায় সংসারে টানা-পোড়েন, অশান্তি দেখা দিল। সারাদিন ঘুরে ফিরে বাড়িতে এসে দেখে মা-মেয়ে বনিবনা না হওয়ায় আলাদা হাঁড়ি-পাতিল তাতে সামান্য শাক-ভাত রান্না। হতবাক রাবিন ভাবতে থাকে। অবশিষ্ট সামান্য কয়টা টাকা দিয়ে সে কি করবে। মেয়ে হিসাবে যা ওয়ারিশ পাবে, তাও দেওয়া হল না। শশুর একমন ধান দিতে চেয়েছিলেন, সারাং রাগ করে তাও নিল না। বোকা মেয়ে। মাত্র দুই হাজার টাকায় আড়াই শতাংশ জমি কেনা বাড়ীর ভিটার জন্য। পাশেই ত্রিশ শতাংশ উঁচু জমি মেয়াদী নেওয়া গেছে। চাষ করতে বাপের বাড়িথেকে একটা গরু ধার চেয়ে মলিন মুখে ফিরে এসেছে সারাং। উল্টো কাপুরুষ, মুরোদহীন বলে বকে দিল। কিছু টাকা রোজগার করে, নিলাম কাপড়ের ব্যবসা শুরু করে রাবিন। যেদিন বেশী বিক্রি হয়, সেদিন মোটা চাল আর সব্জি কেনে। মাছ মাংসের খবর থাকে না। মাঝে মাঝে স্ত্রীকে বলে- বিকেলে মাছ মেরে মেয়েদের খাওয়াব। প্রায়ই এমনি করে খাইয়েছে সে। একদিন ব্যবসার টাকায় সতর হাজার টাকা দিয়ে একটা বকনা বাছুর কিনে। গরু দুটি দিয়ে জমি চাষ করা যাবে। রাবিনের মনে আছে- কেনা গরুটির দুধ বিক্রি করে সতর হাজার টাকা না হওয়া পর্যন্ত মেয়ে দু’টিকে এক ফোঁটা দুধ সে খেতে দেয়নি। আজ কথাগুলো মনে হলে রাবিনের বড় কষ্ট লাগে।

জীবন সংগ্রামে কখন চৌদ্দটি বছর কেটে গেছে টের পায় নি রাবিন সারাং। টেবিলে ভাত দেওয়া হয়েছে। রাবিনের মনে পড়ে- ভাত খাওয়ার জন্য ভাল কোন প্লেট ছিল না। দুধ বিক্রির টাকা দিয়ে সে পাচঁটা মাটির সাইক কিনে আনার পথে পা পিছলে দু’টো ভেঙ্গে গেল। সেদিন স্বামী-স্ত্রী দুজনেই ভাঙ্গা সান্কীর জন্য দুঃখ পেয়েছিল। সেখানে আজ মেলামাইনের প্লেট-গ্লাস শোভা পাচ্ছে। এখন আর খাওয়া পরার জন্য রাবিনকে তেমন চিন্তা করতে হয় না; তবু অপচয় ঠেকাতে চা, পান, বিড়ি-সিগারেট এমন কি মদও সে খায় না। এজন্য পাড়া প্রতিবেশীদের কাছে মহাকৃপন উপাধি জুটেছে তার। তা হোক। নাছোড় বান্দা রাবিনকে আরো উপরে উঠতে হবে। এখন প্রায় বিশ একর জমির মালিক। যে মানুষ বিশ হাজার টাকার স্বপ্ন দেখত না; সে দশ লক্ষ টাকা আনারস বাগানে শুকাতে দিয়েছিল। টাকা বাড়ার সাথে সাথে শত্রুও বেড়ে গেছে রাবিনের। এজন্য হাইজ্যাক পার্টির কবলে পড়ে চৌদ্দদিন পর লক্ষ টাকার বিনিময়ে ছাড়া পেয়েছে। দিনের প্রায় চব্বিশ ঘন্টা সাইকেলের চেইন দিয়ে হাত পা বাধাঁ ছিল তার। চোখ এবং পায়ের সমস্যায় অনেকদিন চিকিৎসাও নিতে হয়েছে।

জীবনে অনেক ঘাত প্রতিঘাত গেছে রাবিনের। মাসে চব্বিশ হাজার টাকা খরচ করেও বড় মেয়েকে বাঁচাতে পারেনি। বড় ধরনের অসুখ হয়েছিল। মেয়ের পাঁচ বছর পর স্ত্রীও চলে গেল। ছোট মেয়ের জন্য জামাই আনা হয়েছে। স্ত্রী নিজের মৃত্যুর কথা জেনেই হয়তবা ছোট মেয়েকে বিয়ে দিতে জোর দিয়েছিল। রাবিনের মনে হয়, পৃথিবীতে সে একা। কাছাকাছি কেউ নেই, এমনকি দূরেও ঘন কুয়াশায় কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। বড় কষ্ট দেয় এই নিঃসঙ্গতা। মানুষের দিন ফুরিয়ে যায় অতি দ্রুত। ক্ষুদ্র জীবনের পঙ্তিতে জমা হয় অম্ল মধুর স্মৃতিসত্ত্বা। সে স্মৃতিসত্ত্বাই বয়োবৃদ্ধদের বাকী জীবনে বেঁচে থাকার রসদ হয়ে ওঠে। কিন্তু রাবিনের এই মধ্যবয়সেই স্মৃতিগুলো তার জীবনে বেঁচে থাকার রসদ না হয়ে কঠিন বিষময় হয়ে আছে।

যার ছায়ায় রাবিনের জীবনটা অতিবাহিত হবে, সে মেয়েটাও ইদানিং কেমন হয়ে গেছে। সংসার-সম্পদ নিয়ে ব্যস্ত। বিপত্নিক পিতার খোঁজ নেয়ার প্রয়োজন বোধ করে না। স্ত্রীর মৃত্যুর এক বছর পর শ্রাদ্ধ এবং যাবতীয় অনুষ্ঠান হয়েছে। স্ত্রীপক্ষথেকে তাল বাহানা করে রাবিনের জন্য বউ দিল তো না-ই বরং কি ভাবে এ বাড়িথেকে তাকে বিতাড়িত করা যায় সে ব্যবস্থা নিতে থাকল। অন্য পরিবারের মেয়ে এ বাড়িতে বউ হয়ে আসলে তাদের সম্পদ ভাগ হয়ে কমে যাবে- এভাবে ছোট মেয়ে এবং জামাইকে বুঝাতে সক্ষম হল। অন্যদের প্ররোচনায় জন্মদাতা পিতার প্রতি চরম অবহেলা, অপমান বাড়ে। এ নিয়ে সংসারে অশান্তি বেড়েই চলল। নিজের জমিতে চাষ-বাস, ক্রয়-বিক্রয় করার কাজে বাধা আসতে থাকে রাবিনের। গভীর রাতে মৃত স্ত্রী এবং মেয়ের কথা ভেবে চোখের পানি ধরে রাখতে পারে না সে। দিন দিন জীবন সংসারের প্রতি বিতৃষ্ণায় মনটা বিষিয়ে উঠছে। মরে যেতে ইচ্ছা করে তার। কোন কোনদিন মা মেয়ে মিলে রাবিনকে নিতে আসে কিন্তু কেন জানি যাওয়া হয় না। বুঝিবা রাবিনের কপালে আরো কোন দুর্গতি অপেক্ষা করছে।

পঞ্চাশ বছর পার হওয়া একটা লোক এখন একা। রাবিনের জন্য আর দ্বিতীয় বউ দেওয়া হল না। নিজের রক্তের মেয়ে সেও বাবাকে ঠাঁই দিল না। যে মেয়ের জন্মদিনে রাবিন আনন্দে নেচে ওঠেছিল, ভবিষ্যতে সুখের স্বপড়ব দেখেছিল, আজ সে মেয়ের কারনে চোখের জল ফেলে। শুণ্য থেকে শুরু করে এত কষ্টে ধন সম্পদ অর্জন করেও তা ভোগ করা হল না রাবিনের। নিষ্ঠুর ভাবে সম্পদ থেকে বঞ্চিত করা হল তাকে। গারোদের নিয়ম বলে কথা! কোন রকমে চলা, মায়ের বাড়িতে আশ্রয় নিতে হয়েছে রাবিনের। গারো সমাজে সম্পত্তির সমানাধিকার হলে অন্তত রাবিনকে মা-বোনের গলগ্রহ হয়ে থাকতে হত না। খেতে বসে ভীষন লজ্জা আর দ্বিধা লাগে তার। বিয়ে হওয়া আর না হওয়া ছোট দুই ভাই-ই সংসারের প্রতি কেমন উদাস হয়ে গেছে। তারা মুখের ওপর বলে গেল, ‘খেটে-খুটে কী হবে, রাবিন দাদার জন্য আমরা কী করতে পেরেছি ....’ ইত্যাদি। নির্বাক রাবিন নীরবে শুধু চোখের জল ফেলেছে। শারিরীক ও মানসিক ভাবে ক্লান্ত রাবিনের সেই যৌবনের শক্তি এখন আর নেই। এদিক-ওদিক ভেবে কোন কূল পায় না সে। যেন নীড় হারা- ডানা ভাঙ্গা এক আহত পাখি। রাবিন ভেবে পায় না কেন তার এমন পরিণতি। মাঝ পথে এসে- থেমে যাওয়া কেন? কী তার দোষ! আদিবাসি মায়ের পেটে জন্ম নেওয়টাই কী তার পাপ! পাশের ঘরে মোরগটা হঠাৎ ডেকে উঠল। চমকে ওঠে রাবিন। ঘোর কেটে যায় তার। সারারাত ঘুম তার মোটেও এল না। ‘বাংলাদেশের বিপন্ন আদিবাসি’ বইয়ের শেষ পাতাগুলো পড়ে ফেলতে পারে সে।

‘অর্ডার অর্ডার...’ আদালতে বিচার কাজ চলছে। ম্যাজিষ্ট্রেট হেমন্ত কুবির হাতে হাতকড়া লাগানো অবস্থায় কাঠগড়ায় দাঁড়ানো আসামী রাবিন। এডভোকেট দীনেশ দারু জেরা করতে প্রস্তুত। ডিষ্ট্রিক্ট রেজিষ্ট্রি অফিসার সুভাষ জেংচাম জমি-সম্পদ সংক্রান্ত কাগজ পত্র বগলে নিয়ে এক কোনায় নীরবে বসে আছেন। কলামিষ্ট সঞ্জিব দ্রং এবং রাখী ম্রং কলমের মুখ বন্ধ করে শুধু শুধু সাদা কাগজের পাতায় তর্জনী দিয়ে আঁকিবুকি করছেন। সম্ভবত তাদের ক্যামেরাটা (!) ব্যাগে ভরাই আছে। শত শত বুদ্ধিজীবি, সমাজ সেবক, মানবাধিকার কর্মী, শিক্ষক-শিক্ষিকাগণ দর্শকের আসনে মুখে টেপের মত কিছু একটা গুজে নিথর বসে আছেন। বাইবেল হাতে স্বয়ং বিশপ পনেন কুবি এগিয়ে এসে শপথ বাক্য পাঠ করালেন, ‘যাহা বলিব সত্য বলিব, সত্য বই মিথ্যা বলিবনা..

মহামান্য আদালত, সারা বিশ্বে যতগুলো আদিবাসি আছে, তার মধ্যে গারো জাতির আলাদা বৈশিষ্ট্য আছে, সংস্কৃতি, রীতি-নীতি আছে; যা অত্যন্ত সুন্দর এবং আকর্ষনীয়, জাতীয় মূল্যবোধ ততধিক উৎকৃষ্ট। আমি আমার জাতিকে হৃদয় দিয়ে ভালবাসি এবং সন্মান করি। কিন্তু মহামান্য আদালত, আমাদের গারো জাতির সেই সৌন্দর্য্য আর মূল্যবোধ আজ আমরা হারাতে বসেছি। একটু চোখ-কান খোলা রাখলেই দেখবেন- বিভিন্ন অন্যায়- অপরাধ এবং দূর্নীতির সাথে আমরা জড়িয়ে পড়ছি; মানুষে-মানুষে ভেদাভেদ সৃষ্টি করছি। আচিক্ জাতির মাঝে ভালবাসা, সহমর্মীতা, সত্যবাদিতা, ন্যায়পরায়নতা এবং সহজ সরল জীবন যাপন এখন আর নেই। যে জাতি নিজস্ব সংস্কৃতি এবং মূল্যবোধের জন্য গর্ব করতে পারত; সে জাতিতে আমি রাবিনের এমন পরিণতি কেন? একটু চোখ খুলে দেখুন, কান পেতে শুনুন, এই গারো সমাজে আমার মত অনেক রাবিন আছে, পুরুষ বলে লজ্জায় কেউ মুখ খুলে না। এই গারো সমাজের নিয়মের বলি কাষ্ঠে আজ আমি অসহায়, হতভাগ্য একজন মানুষ। মাতৃতান্ত্রিক সমাজ বলে; স্ত্রী নাই বলে, আমার সারা জীবনের বহু কষ্টার্জিত সহায় সম্পত্তি, ঘর-সংসার, সন্তান-আত্মিয়-পরিজন সব কিছুই আমাকে হারাতে হল। এমন অবস্থা দিনকে দিন চলতে থাকলে আচিক্ সমাজ একদিন নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তাই নিশ্চিহ্ন হওয়ার আগেই এই জতির ভবিষ্যত প্রজন্মের কথা একবার ভাবুন। বৃহত্তর সমাজে মাথা উচু করে উন্নয়নে সামিল হওয়ার কথা চিন্তা করার সময় হয়ে এসেছে। আর তা না হলে এই গারো সমাজকে যাদুঘরেই স্থান করে নিতে হতে পারে। তাই আজ আমার আকূল আবেদন, আমার জীবন, আমার প্রিয় আচিক্ সমাজের কথা ভেবে- আমার প্রতি আপনি ন্যায় বিচার করবেন। আমি আরও একটা প্রস্তাবনা দিতে চাই মহামান্য আদালত, আশা করি আমার প্রস্তাবনাটি একটু ভেবে দেখবেন; আর তা হল- স্ত্রীর ওয়ারিশ/ সম্পত্তি তা স্ত্রীর নামেই থাকুক কিন্তু সংসারে স্বামী-স্ত্রী মিলে যে সম্পদ অর্জন করে তা সকল সন্তান এবং স্বামী-স্ত্রী যেন সমান ভাবে পেতে পারি এমন বিধান রাখা হোক। পৃথিবীর সকল দেশ ও সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে সংবিধান বা রীতি-নীতির পরিবর্তন, পরিমার্জন হয় আমাদের জাতীকে টিকিয়ে রাখতে যদি প্রয়োজন মনে হয় সমগ্র গারো সমাজ বিষয়টা ভেবে দেখবেন।

মহামান্য আদালত- ছোট মুখে বড় কথা মানায় না; তবুও বলি- দোষ হলে ক্ষমা করবেন। আজ সারা বিশ্বের নারী তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দেলন করছে, সে যুগে একজন পুরুষ হয়ে নিজের কথা বলতে ভীষন ভাবে লজ্জিত হয়ে পড়ছি। মহামান্য বিচারক মহোদয় আপনি নিজেও একজন গারো..। আপনারা যারা গারো পুরুষ, বড় বড় সমাজ সেবক হয়ে সমাজ সেবা করে যাচ্ছেন, বড় বড় কর্মকর্তা, বুদ্ধিজীবি সরকারী-বেসরকারী অফিসের উচ্চ আসনে আসীন। আজ আমার জীবনের যে করুণ পরিনতি; তা আপনাদের প্রত্যেকের জীবনে যদি ঘটে যায়, তখন কী হবে? আপনাদের সারা জীবনের শ্রম সাধনা যদি বিফলে যায় তার পরিনতি একবার ভেবে দেখবেন কি? এত বড় সমাজে আমি রাবিন হারিয়ে গেলে হয়তবা কারোর কিছুই আসবে যাবে না কিন্তু আপনাদের মত প্রগতিশীল ব্যক্তিবর্গ হারিয়ে গেলে আদিবাসি সমাজের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে মহামান্য আদালত...।’

আদালত প্রাঙ্গনের সকল লোকজন নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে কী যেন বলাবলি করতে লাগল। কিছুই বুঝা যাচ্ছে না। মনে হচ্ছে- একজন গারো পুরুষের মুখে এমন লজ্জাজনক আহাজারি শুনে বিচারক মহোদয় তিনি নিজেও বিচার কাজে বিব্রতবোধ করছেন। এদিক ওদিক তাকিয়ে একটু নড়ে-চরে বসে টেবিলে সজোড়ে হাতুরী দিয়ে বললেন, ‘অর্ডার অর্ডার...’ শব্দটা এত বেশী মনে হল যেন টেবিলটাই ভেঙ্গে যাবে। চারিদিক পিন্ পতন নীরবতা। তারপর আরও একবার দ্বিগুণ জোড়ে হাতুরীর শব্দ ঠক্-ঠক্-ঠক্ ...। কিন্তু কথাগুলো আর ‘অর্ডার অর্ডার’ জাতীয় শব্দ নয়। প্রতিদিনের মত দরজায় দাঁড়িয়ে ছোট্ট ভাগনীটা বলছে, ‘ মামা- চাকাত্বো, ওয়াল্ সেংজক্ ( উঠে পড়, রাত ভোর হয়েছে) ...। বই পড়ে শেষ করার পর তা নিয়ে ভাবতে ভাবতে রাবিন ঘুমিয়ে পড়েছিল। উঠে দরজাটা খুলতে খুলতে রাবিন ভাবে, ‘পৃথিবীতে প্রতিটি রাত যেমনি ভোর হয়, তেমনি তার জীবনের রাতের অন্ধকার কখনো ঘুচবে কি-না...। আদিবাসি মা-বোনেরা আমার ভাগ্নীর মত কোনদিন ঝল্-মলে আলোর সন্ধান দেবে-তো...?’
দীর্ঘ শ্বাস ছাড়তে ছাড়তে দরজা খোলে রাবিন। সকালের নির্মল শীতল বাতাস তার ঘরে ঢুকছে ...।
(www.bangladeshnews24x7.com
রাবিন, বাংলাদেশনিউজ২৪x৭.কম www.bangladeshnews24x7.com) - এ প্রকাশিত গল্পটি কপি করা হয়েছে ।

আদিবাসী অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র (Adibasi Odhikar bishoyok Jatisongher ghoshonapotro)


   আদিবাসী অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্র

                                                                                                (সংগৃহীত)

অংশদারিত্ব ও পারষ্পরিক শ্রদ্ধবোধের ভিত্তিতে অব্যাহত সফলতার ফলক হিসেবে নিমোক্ত আদিবাসী অধিকার বিষয়ক জাতিসংঘ ঘোষণাপত্রটি (৪৬টি অনুচ্ছেদে বিভক্ত )আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেছে---

অনুচ্ছেদ - ১

জাতিসংঘ সনদ, সার্বজনীন মানবাধিকার ঘোষণা পত্র ৩ এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনসমূহে স্বীকৃত সকল প্রকার মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতা, সমষ্টিগতভাবে হোক, আদিবাসীদের পূর্ণাঙ্গভাবে উপভোগ করার অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-২

আদিবাসী জনগোষ্ঠী সমূহ অন্য সকল জনগোষ্ঠী ও ব্যক্তির মতোই  স্বাধীন ও সমান এবং তাদের অধিকার উপভোগ করার েেত্র, বিশেষ করে তাদের আদি উৎপত্তি অথবা পরিচয়ের ভিত্তিতে যেকোন বৈষম্য থেকে মুক্তি লাভের অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-৩

আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রনের অধিকার রয়েছে। সেই অধিকার বলে তারা অবাধে তাদের রাজনৈতিক মর্যাদা নির্ধারণ করে এবং অবাধে তাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কর্মপ্রয়াস অব্যাহত রাখে।

অনুচ্ছেদ-৪

আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার উপভোগের বেলায়, তাদের আভ্যন্তরীণ ও স্থানীয় বিষয়ে তথা স্বশাসিত কার্যাবলীর অর্থায়নের পন্থা ও উৎস নির্ধারণের েেত্র তাদের স্বায়ত্ত্বশাসন বা স্বশাসিত সরকারের অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ- ৫

আদিবাসী  জনগন যদি পছন্দ করে তাহলে রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের পূর্ণ অধিকার রেখে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের স্বতন্ত্র রাজনৈতিক, আইনগত, অর্থনৈতিক , সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান অুন্ন রাখা ও শক্তিশালীকরণের অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-৬

আদিবাসী ব্যক্তির জাতীয়তা লাভের অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-৭

১.    আদিবাসী ব্যক্তির তার জীবন, শারীরিক এবং মানসিক মর্যাদা , স্বাধীনতা এবং ব্যক্তিগত নিরপত্তা লাভের অধিকার রয়েছে।

২.    আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের স্বতন্ত্র জনগোষ্ঠী হিসেবে স্বাধীনভাবে, শান্তিতে ও নিরাপদ ভাবে জীবন যাপনের অধিকার রয়েছে এবং জোরপূর্বক একগোষ্ঠীর শিশুদের অন্য কোন গোষ্ঠীতে সরিয়ে নেওয়াসহ    গণ হত্যা অথবা অন্য কোন প্রকার সহিংস কর্মকান্ডের শিকার করা যাবেনা।

অনুচ্ছেদ-৮

১.    আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও ব্যক্তিকে জবরদস্তিমূলক ভাবে অন্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে একীভুত করা বা তাদের সংস্কৃতি ধ্বংস করা যাবে না।

২.    রাষ্ট্র আদিবাসীদের বিরুদ্ধে নিুোক্ত কার্যক্রম নিবৃত্ত ও প্রতিকারের  জন্য কার্যকরী কর্মকৌশল গ্রহণ করবে।

(ক) তাদের স্বতন্ত্র জনগোষ্ঠীর মর্যাদা বা সাংস্কৃতিক মূলবোধ কিংবা আত্মপরিচয়কে বিপন্ন করার ল্েয অথবা প্রভাবিত করে এমন যে কোন কার্যক্রম;

(খ) তাদের ভূমি, ভূখন্ড অথবা সম্পদ থেকে বিতাড়িত করার ল্েয অথবা প্রভাবিত করে এমন যে কোন কার্যক্রম ;

(গ) তাদের অধিকার লঙ্গন ও ুন্ন করার ল্েয অথবা প্রভাবিত করে এমন যে কোন জবরদস্তিমূলক জনগোষ্ঠী স্থানান্তর কার্যক্রম;

(ঘ) যে কোন প্রকার একীভুতকরণ বা অঙ্গীভুতকরণ কার্যক্রম;

(ঙ) তাদের বিরুদ্ধে জাতিগত কিংবা নৃতাত্ত্বিক বৈষম্য ত্বরান্বিত করা বা উস্কে দেয়ার ল্েয পরিকল্পিত যে কোন অপপ্রচারণা।

অনুচ্ছেদ-৯

আদিবাসী জনগোষ্ঠী ও ব্যক্তির তাদের ঐতিহ্য ও প্রথা অনুসারে আধিবাসী সম্প্রদায় বা জাতির সদস্য হওয়ার অধিকার রয়েছে। এই অধিকার উপভোগ করার েেত্র কোন প্রকার বৈষম্য করা যাবে না।

অনুচ্ছেদ-১০

আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে তাদের ভূমি কিংবা ভূখন্ড থেকে জবরদস্তিমূলকভাবে উৎখাত করা যাবে না। আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে তাদের স্বাধীন ও পূর্ববহিত সম্মতি ছাড়া কোনভাবে অন্য এলাকায় স্থানান্তর করা যাবে না এবং ন্যায্য ও যথাযথ তিপূরণের বিনিময়ে সমঝোতা সাপেে স্থানান্তর করা হলেও, যদি কোন সুযোগ থাকে , পুনরায় তাদেরকে স্ব-এলাকায় ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

অনুচ্ছেদ- ১১

১.    আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও প্রথা চর্চা করা ও পুনরুজ্জীবিত করার অধিকার রয়েছে। এই অধিকারের মধ্যে তাদের সংস্কৃতির অতীত , বর্তমান , ভবিষ্যৎ অভিব্যক্তি , যেমন প্রতœতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক স্থান , শিল্পকলা , নকশা, অনুষ্ঠানাদি, প্রযুক্তি এবং সচিত্র ও অভিনয় শিল্প ও সাহিত্য অুন্ন রাখা, রা এবং উন্নয়ন করার অধিকার অন্তর্ভূক্ত থাকবে।

২.    রাষ্ট্র আদিবাসীদের সাথে যৌথভাবে প্রণীত কার্যকর কর্মকৌশল গ্রহণের মাধ্যমে, সাংস্কৃতিক , বুদ্ধিবৃত্তিক , ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক সম্পদ যা আদিবাসীদের স্বাধীন ও পূর্বাবহিত সম্মতি ব্যতীত কিংবা তাদের  আইন ,ঐতিহ্য ও প্রথা লঙ্গন করে কেড়ে নেওয়া হয়েছে সেগুলোকে সম্মানজনকভাবে পুনরুদ্ধারের েেত্র কার্যকর প্রতিবিধানের উদ্যোগ নেবে।

অনুচ্ছেদ- ১২

১.    আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় ঐতিহ্য , প্রথা ও উৎসব বিশ্বাস  করা , পালন করা , উন্নয়ন করা এবং শিা প্রদানের অধিকার ; তাদের ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক স্থানসমূহ অুন্ন রাখা, রা করা এবং একান্ত ভাবে চর্চার প্রবেশাধিকার ; উৎসব আচারাদিকার বস্তসামগ্রী ব্যবহার ও নিয়ন্ত্রণের অধিকার ; এবং তাদের পূর্ব পুরুষের দেহাবশেষ ফিরিয়ে পাওয়ার অধিকার রয়েছে।

২.    রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে যৌথভাবে প্রণীত ন্যায়সঙ্গত , স্বচ্ছ ও কার্যকর কর্মকৌশলের মাধ্যমে উৎসব আচারাদির বস্তসামগ্রী লাভ করা এবং / কিংবা দেহাবশেষ ফিরিয়ে পাওয়ার েেত্র উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

 অনুচ্ছেদ-১৩

১.    আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের ইতিহাস, ভাষা, অলিখিত প্রথা, দর্শন, লিখিত পদ্ধতি ও সাহিত্য পুনরুজ্জীবিত করা, ব্যবহার করা, উন্নয়ন করা ও ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে হস্থান্তর করা  এবং জনগোষ্ঠী, স্থান ও ব্যক্তির নিজস্ব নামকরণ করা ও তা বহাল রাখার অধিকার রয়েছে।

২.    আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার যাতে রতি হয় তা নিশ্চিত করার জন্য এবং আদিবাসীরা বুঝতে পারে ও বুঝতে সম হবে এমন রাজনৈতিক, আইনগত ও প্রশাসনিক কার্যপ্রণালী, প্রয়োজনে অনুবাদের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য রাষ্ট্র কার্যকরী পদপে গ্রহণ করবে।

অনুচ্ছেদ-১৪

১.    আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের নিজস্ব ভাষায় শিা প্রদানের জন্য তাদের সাংস্কৃতিক রীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ পাঠদান ও শিা পদ্ধতি অনুসারে শিাপ্রতিষ্ঠান স্থাপন এবং সে সবের উপর তাদের নিয়ন্ত্রণের অধিকার রয়েছে।

২.    আদিবাসী ব্যক্তির , বিশেষ করে আদিবাসী শিশুদের , বৈষম্যহীনভাবে রাষ্ট্র প্রদত্ত সকল স্তরের ও সকল প্রকারের শিা লাভের অধিকার রয়েছে।

৩.    রাষ্ট্র, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে যৌথভাবে , যারা তাদের সম্প্রদায়ের বাইওে বসবাস করছে তাদেরসহ আদিবাসী মানুষের , বিশেষ করে শিশুদের জন্য সম্ভব েেত্র , নিজস্ব সংস্কৃতি ও ভাষায় শিা লাভের সুযোগ সৃষ্টির কার্যকর পদপে গ্রহণ করতে হবে।

অনুচ্ছেদ-১৫

১.    আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের মর্যাদাপূর্ণ ও বৈচিত্রপূণর্ সংস্কৃতি , ঐতিহ্য , ইতিহাস ও আশা -আকাঙা ধারণের অধিকার রয়েছে যা শিাব্যবস্থায় ও রাষ্ট্রীয় তথ্যভান্ডারে যথাযথভাবে প্রতিফলিত হয়।  

২.    রাষ্ট্র আদিবাসী জনগোষ্ঠী এবং সমাজের অন্য সকল অংশের মধ্যে বিদ্বেষ প্রশমন করা ও বৈষম্য দূরী করা এবং সহনশীলতা, সমঝোতা ও সুসম্পর্ক ত্বরান্বিত করার জন্য সংশিষ্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে আলোচনাক্রমে ও যৌথভাবে কার্যকর পদপে গ্রহণ করবে।

অনুচ্ছেদ-১৬

১.    আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের নিজস্ব  গণ মাধ্যম প্রতিষ্ঠা করার অধিকার এবং কোনরূপ বৈষম্য ব্যতীত  অ- আদিবাসী জনগোষ্ঠী কর্তৃক পরিচালিত সকল প্রকার গণ মাধ্যমে প্রবেশাধিকার রয়েছে।

২.    রাষ্ট্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন গণ মাধ্যমে আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র যাতে যথাযথ প্রতিফলিত হয় তা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদপে গ্রহণ করবে। কোনরূপ বাধা ব্যতীত মত প্রকাশের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিতকরণে, আদিবাসীদের সাংস্কৃতিক বৈচিত্র পর্যাপ্তভাবে প্রতিফলন ঘটানোর জন্য রাষ্ট্র বেসরকারী মালিকানাধীন গণ মাধ্যমগুলোকে উৎসাহিত করবে।

অনুচ্ছেদ-১৭

১.    আদিবাসী ব্যক্তি ও জনগোষ্ঠীর বিদ্যমান আন্তর্জাতিক ও দেশীয় শ্রম আইনে স্বীকৃত সকল প্রকার অধিকার পূর্ণাঙ্গ ভাবে উপভোগ করার অধিকার রয়েছে।

২.    রাষ্ট্র আধিবাসী শিশুদের মতায়নের নিমিত্তে তাদেও শিার প্রয়োজনীয়তা ও গুরূত্বকে বিবেচনা করে তাদেরকে অর্থনৈতিক শোষণ থেকে এবং তাদেও শিায় অনিশ্চিত কিংবা বাধাগ্রস্ত করে অথবা শিশুদের স্বাস্থ্য বা দৈহিক , মানসিক, আধ্যাত্মিক ,নৈতিক  বা সামাজিক অগ্রগতিকে তিগ্রস্ত করে এমন যে কোন ঝুঁকিপূর্ণ কাজ থেকে রার জন্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে আলোচনাক্রমে ও যৌথভাবে বিশেষ পদপে গ্রহণ করবে।

৩.    আদিবাসী ব্যক্তিকে কাজ এবং যেমন, চাকরী বা বেতন - ভাতার েেত্র কোন বৈষম্যমূলক শর্তারোপ করা যাবে না।

অনুচ্ছেদ-১৮

আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের নিজস্ব কর্মপদ্ধতিতে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে, তাদের অধিকারকে প্রভাবিত করবে এমন বিষয়ে , তথা তাদের নিজস্ব আদিবাসী সিদ্ধান্ত - নির্ধারণী প্রতিষ্ঠান অুন্ন রাখা ও উন্নয়নের জন্য , সিদ্ধান্ত নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-১৯

রাষ্ট্র  আদিবাসীদের প্রভাবিত করতে পারে এমন আইন প্রনয়ন কিংবা প্রশাসনিক সংক্রান্ত পদপে  গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পূর্বে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর স্বাধীন ও পূর্বাবহিত সম্মতি নেয়ার জন্য তাদের প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে আন্তরিকত্ব সদিচ্ছার সাথে আলোচনা ও সহযোগিতা করবে।

অনুচ্ছেদ-২০

১.আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের জীবন- জীবিকা ও উন্নয়নের নিজস্ব ধারা নিশ্চিত করার জন্য এবং তাদের ঐতিহ্যগত ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কার্যক্রমে স্বাধীনভাবে নিযুক্ত থাকার জন্য তাদের রাজনৈতিক ,অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থা বা প্রতিস্থান বজায় রাখা ও উন্নয়নের অধিকার রয়েছে।

২.আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের জীবন- জীবিকা ও উন্নয়নের েেত্র যে বঞ্চনার শিকার হয়েছে তার ন্যায্য ও নিরপে প্রতিকার পাওয়ার তাদের অদিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-২১

১.    আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদেও অর্থনৈতিক ও  সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন তথা শিা , কর্মসংস্থান , কারিগরি প্রশিণ ও পৌন প্রশিণ , আবাসন, স্যানিটেশন , স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা লাভের অধিকার রয়েছে।

২.    রাষ্ট্র আদিবাসদের অর্থনৈতিক ও  সামাজিক অবস্থার অব্যাহত উন্নতির নিশ্চয়তা বিধানের জন্য কার্যকরী পদপে এবং প্রয়োজন েেত্র বিশেষ পদপে গ্রহণ করবে। আদিবাসী প্রবীন , যুবক - যুবতী , শিশু ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অদিকার ও প্রয়োজনীয়তার প্রতি সবিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।

অনুচ্ছেদ-২২

১.    এই ঘোষণাপত্র বাস্তবায়নের সময় আদিবাসী প্রবীণ, যুবক- যুবতী , শিশু ও প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের অদিকার ও প্রয়োজনীয়তার প্রতি সবিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।

২.    রাষ্ট্র আদিবাসী নারী ও শিশুরা যাতে সকল প্রকার সহিংসতা ও বৈষম্য থেকে রা পায় ও তা নিশ্চয়তার সাথে পরিপূর্ণভাবে উপভোগ করে তার নিশ্চিত করার জন্য , আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে যৌথভাবে , পদপে গ্রহণ করবে।

অনুচ্ছেদ-২৩

আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের উন্নয়নের অধিকার প্রয়োগের জন্য অগ্রাধিকার বিষয় ও কর্মকৌশলের নির্ধারণ ও প্রনয়নের অধিকার রয়েছে।আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিশেষ করে স্বাস্থ্য , আবাসন এবং অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ড যা তাদেরকে প্রভাবিত করে এগুলোর উন্নয়ন ও নির্ধারণের জন্য এবং যতাসম্ভব তাদেও নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এসব কর্মকান্ড পরিচালনা করার জন্য সক্রিয়ভাবে জড়িত হওয়ার অধিকার রয়েছে।  

অনুচ্ছেদ-২৪

১.    আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদেও ঐতিহ্য ঔষধি ব্যবস্থাপনা এবং অত্যাবশক ঔষধি গাছ , জীবজন্তু ও খনিজ সম্পদ সংরণসহ তাদের স্বস্থ্য পরিচর্যার অধিকার রয়েছে। আদিবাসী জনগোষ্ঠীর কোন বৈষম্য ছাড়া সকল প্রকার সামাজিক ও স্বাস্থ্য সেবা লাভের অধিকার রয়েছে।

২.    আদিবাসী ব্যক্তির তাদের প্রাপ্য সর্বোচ্চ মানের দৈহিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সেবা উপভোগের অধিকার রয়েছে। রাষ্ট্র এই অধিকার পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের েেত্র ক্রমাগত অগ্রগতির ল্েয পদপে গ্রহণ করবে।

 

অনুচ্ছেদ-২৫

আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের ঐতিহ্য গতভাবে মালিকানাধীন কিংবা অন্যথায় দখলয়ী ও ব্যবহার্য জমি, ভূখন্ড, জল, সমুদ্র উপকূল ও অন্যান্য সম্পদের সাথে তাদের স্বাতন্ত্র্য আধ্যাত্মিক সম্পর্ক রাখা ও সুদৃঢ়করণের অধিকার এবং এ ক্ষেত্রে ভবিষ্যত প্রজন্মেও নিকট তাদের এসবের দায়িত্বসমূহ সমুন্নত রাখার অধিকার রয়েছে।

 

অনুচ্ছেদ-২৬

১.    আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের ঐতিহ্যগতভাবে মালিকানাধীন, দখলীয় কিংবা অন্যথায় ব্যবহার্য কিংবা অধিগ্রহণকৃত জমি, ভূখন্ড ও সম্পদের অধিকার রয়েছে।

২.    জমি, ভূখন্ড ও সম্পদের উপর যা আদিবাসীরা ঐতিহ্যগত মালিকানা কিংবা ঐতিহ্যগত ভোগদখল, ব্যবহার, বা অন্যথায় অধিগ্রণের মাধ্যমে অর্জন করে এসবের উপর আদিবাসী জনগোষ্ঠীর মালিকানা, ব্যবহার উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণের অধিকার রয়েছে।

৩.    রাষ্ট্র এসব জমি, ভূখন্ড ও সম্পদের আইনগত স্বীকৃতি ও রার বিধান প্রদার করবে। সংল্লিষ্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রথা, ঐতিহ্য এবং ভূমি মালিকানা ব্যবস্থাপনা মেনে সেই স্বীকৃতি প্রদান করবে।

 

অনুচ্ছেদ-২৭

রাষ্ট্র সংশ্লিষ্ট  আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে যৌাথভাবে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আইন, ঐতিহ্য, প্রথা ও ভূমি মালিকানাধীন ব্যবস্থাপনার যথাযথ স্বীকৃতি প্রদান করে, ঐতিহ্যগত ভাবে মালিকানাধীন কিংবা অন্যথায় দখলীয় বা ব্যবহার্য তাদের ভূমি, ভূখন্ড ও সম্পদেও উপর গুরুত্ব প্রদান করে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার স্বীকৃতি দেয়া ও নির্ণয় করার ল্েয একটি অবাধ, স্বাধীন, নিরপে, উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়া প্রবর্তন ও বাস্তবায়ন করবে। এই প্রক্রিয়ায় আদবাসী জনগোষ্ঠীর অংশগ্রহণের অধিকার রয়েছে।  

 

অনুচ্ছেদ-২৮

১.    আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি, ভূখন্ড ও সম্পদ যা তাদের ঐতিহ্যগতভাবে মালিকানাধীন কিংবা অন্যথায় দখলকৃত বা ব্যবহারকৃত, এবং তাদের স্বাধীন ও পূর্বাবহিত সম্মতি ছাড়া বেদখল, ছিনতাই, দখল বা তিসাধন করা হয়েছে এসব যাতে ফিরে পায় কিংবা, তা সম্ভব না হলে, একটা ন্যায্য, যথাযথ ও উপযুক্ত তিপূরণ পায় তার প্রতিকার পাওয়ার আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকার রয়েছে।

২.    সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী স্বেচ্ছায় অন্য কোন কিছু রাজী না হলে তিপূরণ হিসেবে গুণগত, পরিমানগত ও আইনি মর্যাদা  দিক দিয়ে সমান ভূমি, ভূখন্ড ও সম্পদ অথবা সমান আর্থিক তিপূরণ দিতে হবে বা অন্য কোন যথাযথ প্রতিকার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

 

অনুচ্ছেদ-২৯

১.    আদিবাসী জনগোষ্ঠীর পরিবেশ এবং তাদের ভূমি বা ভূখন্ড ও সম্পদেও উৎপাদন সমতা সংরণ ও রা করার অধিকার রয়েছে। রাষ্ট্র কোন বৈষম্য ছাড়া এ ধরনের সংরণ ও রা করার ক্ষেত্রে আদিবাসী জনগোষ্ঠীর জন্য সহায়তামূলক কর্মসূচি গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করবে।

২.    রাষ্ট্র আদিবাসিদের ভূমি বা ভূখেন্ড কোন প্রকার ঝুঁকিপূর্ণ দ্রব্যসামগ্রী গুদামজাতকরণ বা এর আবর্জনা স্তুপীকরণ যাতে না হয় তা নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

৩.    রাষ্ট্র আদিবাসীদেও স্বাস্থ্যসেবা পরিবীণ, দেখাশুনা এবং পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত কার্যক্রম যা উল্লেখিত দ্রব্যসামগ্রী দ্বারা প্রণীত ও কার্যকর হবে তা যাতে যথাযথ ভাবে বাস্তবায়িত হয়, প্রয়োজনানুসারে সেটা নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

 

অনুচ্ছেদ-৩০

১.    আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি কিংবা ভূখন্ডে সামরিক কার্যক্রম হাতে নেয়া যাবে না, যতণ না পর্যন্ত উপযুক্ত রাষ্ট্রীয় স্বার্থের/ জনস্বার্থের ( প্রয়োজনে যুক্তিগ্রাহ্য হবে অথবা অন্যদিকে যদি সংশ্লিষ্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠীর স্বেচ্ছায় সম্মতি জ্ঞাপন বা অনুরোধ করে।

২.    রাষ্ট্র সামরিক কার্যক্রমের জন্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি বা ভূখন্ড ব্যবহারের পূর্বে যথাযথ পদ্ধতি ও বিশেষ করে তাদের প্রতিনিধিত্বকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে কার্যকর আলোচনার উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

 

অনুচ্ছেদ-৩১

১.    আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের সাংস্কৃতিক কৃষ্টি, ঐতিহ্যগত জ্ঞান এবং ঐতিহ্যগত সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তি, তথা মানব ও বংশ উৎপত্তি বিষয়ক সম্পদ, বীজ, ঔষধ, প্রাণী ও উদ্ভিদ বিষয়ক সম্পদ, মৌখিক ঐতিহ্য, সাহিত্য, নকশা, ক্রীড়া ও ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা এবং সচিত্র ও অভিনয় কলাসহ তাদের বিজ্ঞান প্রযুক্তি এবং সংস্কৃতির প্রদর্শনের চর্চা, নিয়ন্ত্রণ, সংরণ এবং উন্নয়নের অধিকার রয়েছে। সাংস্কৃতিক কৃষ্টি, ঐতিহ্যগত জ্ঞান এবং ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক অভিব্যক্তিসহ তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ বজায় রাখা, নিয়ন্ত্রণ, রা এবং উন্নয়নের অধিকার ও তাদের রয়েছে।

২.    রাষ্ট্র আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে যৌথভাবে এ সকল অধিকারগুলোর স্বীকৃতি ও সংরণে কার্যকর পদপে গ্রহণ করবে।

 

অনুচ্ছেদ-৩২

১.    আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের ভূমি কিংবা ভূখন্ড ও অন্যান্য সম্পদের উন্নয়নের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার বিষয় ও কর্মকৌশল নির্ধারণ ও প্রনয়ণের অধিকার রয়েছে।

২.    রাষ্ট্র আদিবাসী জনগোষ্ঠীর ভূমি, ভূখন্ড ও সম্পদের উপর প্রভাব বিস্তার করে এমন কোন প্রকল্প অনুমোদনের পূর্বে, বিশেষ করে তাদের খনিজ, জল কিংবা অন্য কোন সম্পদের উন্নয়ন, ব্যবহার বা আহোরণের পূর্বে স্বাধীন ও পূর্বাবহিত সম্মতি গ্রহণের জন্য তাদের নিজস্ব প্রতিনিধিত্বশীল প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে আলোচনা ও সহযোগিতা করবে।

৩.     রাষ্ট্র উক্তরূপ কোন কার্যক্রমের ন্যায্য ও যথাযথ প্রতিকারের জন্য কার্যকর কর্মকৌশল গ্রহণ করবে এবং মারাত্মক পরিবেশগত, অর্থনৈতিক, সামাজিক অথবা আধ্যাত্মিক প্রভাব কমানোর জন্য যথাযথ পদপে গ্রহণ করবে।

 

অনুচ্ছেদ-৩৩

১.    আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের নিজস্ব প্রথা এবং ঐতিহ্য মোতাবেক তাদের আত্মপরিচয়  অথবা সদস্যপদ নির্ধারণের অধিকার রয়েছে। এই অধিকার যে রাষ্ট্রে বাস করে সেই রাষ্ট্রর নাগরিকত্ব লাভ থেকে আদিবাসী ব্যক্তিদেরকে নিবৃত্ত করবে না।

২.    আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের নিজস্ব পদ্ধতি অনুযায়ী তাদের প্রতিষ্ঠানের কাঠামো নির্ধারণ ও সদস্য পদ মনোনয়নের অধিকার রয়েছে।

 

অনুচ্ছেদ-৩৪

আদিবাসী জনগোষ্ঠীর আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মান অনুসারে তাদের নিজস্ব প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো ও তাদের স্বতন্ত্র প্রথা, আধ্যাত্মিকতা, ঐতিহ্য, কার্যপদ্ধতি, অভ্যাস এবং যে রাষ্ট্রে তাদের বাস রয়েছে উক্ত রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থা কিংবা ঐতিহ্যের প্রসার ঘটানো, উন্নয়ন করা ও বজায় রাখার অধিকার রয়েছে।

অনুচ্ছেদ-৩৫
আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তাদের সমাজে ব্যক্তির দায়িত্বাবলী নির্ধারণের অদিকার রয়েছে।


অনুচ্ছেদ-৩৬

১.    আদিবাসী জনগোষ্ঠীর, বিশেষত্বঃ যারা আন্তর্জাতিক সীমানা দ্বারা বিভক্ত হয়েছে তারা অন্য প্রান্তের নিজস্ব জনগোষ্ঠী তথা অন্যান্য জনগোষ্ঠীর সঙ্গে আধ্যাত্মিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক সংক্রান্ত কার্যক্রমসহ যোগাযোগ, সম্পর্ক ও সহযোগিতা বজায় রাখার ও উন্নয়নের অধিকার রয়েছে।

২.    রাষ্ট্র এই অধিকার কার্যকরকরণে সহযোগিতা প্রদান ও বাস্তবায়ন নিশ্চিতকরণের জন্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাথে আলোচনা ও সহযোগিতার ভিত্তিতে কার্যকর পদপে গ্রহণ করবে।

 

অনুচ্ছেদ-৩৭

১.    আদিবাসী জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্র কিংবা তাদের উত্তরসূরী  চুক্তি, সমঝোতা স্মারক এবং অন্যান্য গঠনমূলক ব্যবস্থাবলীর (constructive arrangement)  স্বীকৃতি, প্রতিপালন এবং বাস্তবায়ন করার অধিকার রয়েছে এবং এসব চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও গঠনমূলক ব্যবস্থাবলীর অবশ্যই রাষ্ট্রীয় মর্যাদা লাভের অধিকার রয়েছে।

২.    চুক্তি সমঝোতা স্মারক ও অন্যান্য গঠনমূলক ব্যবস্থায় সন্নিবেশিত আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অধিকারগুলোকে খর্ব ও বিলুপ্ত করার জন্য এই ঘোষণাপত্রের কোন কিছুরই ব্যাখ্যা করা যাবে না।

অনুচ্ছেদ-৩৮

রাষ্ট্র এই ঘোষণাপত্রের চূড়ান্ত ল্য অর্জনের জন্য আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সাতে আলোচনাক্রমে ও সহযোগে আইন প্রনয়ণসহ যথাযথ পদপে গ্রহণ করবে।

অনুচ্ছেদ-৩৯

আদিবাসী জনগোষ্ঠীর এই ঘোষণাপত্রে সন্নিবেশিত অধিকারগুলো উপভোগের জন্য রাষ্ট্র থেকে ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে অর্থনৈতিক ও কারিগরি সাহায্য লাভের অধিকার রয়েছে।
 
অনুচ্ছেদ-৪০

আদবাসী জনগোষ্ঠীর রাষ্ট্ররা অন্যান্য পরে সাথে বিদ্যমান সংঘাত ও বিরোধ নিষ্পত্তি, তথা তাদের ব্যক্তিগত ও সমষ্টিতগত অধিকারের উপর হস্তেেপর কার্যকর প্রতিকারের জন্য ন্যায্য ও নিরপে পদ্ধতি গ্রহণ করা এবং তার মাধ্যমে দ্রুত মীমাংসা লাভের অধিকার রয়েছে। এরূপ মীমাংসার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট আদিবাসী জনগোষ্ঠীর প্রথা, ঐতিহ্য, নিয়মনীতি ও আইনি ব্যবস্থা এবং আন্তর্জাতিক মানবাধিকারকে যথাযথ বিবেচনায় রাখতে হবে।
 
অনুচ্ছেদ-৪১

জাতিসংঘের বিভিন্ন বিভাগ ও বিশেষায়িত সংস্থাসমূহ এবং অন্যান্য আন্তঃরাষ্ট্রীয় সংস্থাসমূহ অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতাসহ কর্মোদ্যোগ গ্রহণের মাধ্যমে এই ঘোষণাপত্রের বিধানবলী পূুর্ণ কার্যরূপদানে ভূমিকা রাখবে। আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করে এমন সব বিষয়ে তাদেও নিশ্চিত অংশগ্রহনের জন্য পথ ও পন্থা গড়ে তুলতে হবে।
 
অনুচ্ছেদ-৪২

জাতিসংঘ, আদিবাসী বিষয়ক স্থায়ী ফোরামসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন পরিষদ, জাতিসংঘের বিশ্ষোয়িত সংস্থাসমূহ, তাদের দেশীয় পর্যায়ের অফিসসহ, ও রাষ্ট্র এই ঘোষণাপত্রের বিধানাবলীর পূর্ণাঙ্গ প্রয়োগ ও স্বীকৃতি প্রদান করবে এবং এই ঘোষণাপত্রের কার্যকরণের অনুগ্রামী কর্মসূচি গ্রহণ করবে।

অনুচ্ছেদ-৪৩

এই ঘোষণাপত্রে স্বীকৃতি অধিকারগুলো বিশ্বের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব  রক্ষা, মর্যাদা ও সমৃদ্ধিও জন্য ন্যূনতম মান গঠন/ প্রদর্শন করে।

অনুচ্ছেদ-৪৪

এই ঘোষণাপত্রে স্বীকৃতি সকল অধিকার ও স্বাধীনতা আদিবাসী ব্যক্তির নারী ও পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে সমান ভাবে নিশ্চিত করা হয়েছে।

 

অনুচ্ছেদ-৪৫

এই ঘোষণাপত্রের কোন কিছুরই আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বিদ্যমান ও ভবিষ্যতে অর্জিত কোন অধিকার হ্রাসকরণ ও বিলুপ্তকরণ হিসেবে ব্যাখ্যা প্রদান করা যাবে না।

 

অনুচ্ছেদ-৪৬

১.এই ঘোষণাপত্রের কোন কিছুরই ব্যাখ্যা প্রদান করা যাবে না যা অর্থ দাঁড়ায় যে, জাতিসংঘ সনদের বিরোধাত্মক কোন তৎপরতায় প্রবৃত্ত হওয়া বা কোন কার্য সম্পাদন করার অদিকার কোন রাষ্ট্র, জনগোষ্ঠী, গোষ্ঠী বা ব্যক্তির রয়েছে অথবা সার্বভৌম ও স্বাধীন রাষ্ট্রের ভৌগোলিক অখন্ডতা বা রাজনৈতিক ঐক্যের, সম্পূর্ণ বা অংশবিশেষ, অঙ্গচ্ছেদ বা তি করবে এমন কোন কার্যের অধিকার রয়েছে।

২.এই ঘোষণাপত্রে ঘোষিত অধিকারগুলো উপভোগের ক্ষেত্রে, সকলের মানবাধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা হবে। এই ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত অধিকারগুলো উপভোগের ক্ষেত্রে কেবল আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের দায়বদ্ধতা অনুসারে আইন দ্বারা নির্ধারিত সে সব সীমাবদ্ধতাগুলো কার্যকর হবে। এসব সীমাবদ্ধতা গুলো অন্যদের অধিকার ও মৌলিক স্বাধীনতার যথাযথ স্বীকৃতি প্রদানে ও সম্মান প্রদর্শনে নিশ্চয়তা বিধানের উদ্দেশ্যে এবং গণতান্ত্রিক সমাজের ন্যায্য ও অতীব বাধ্যবাধক প্রয়োজনীয়তা পুরিপূরণের জন্য একমাত্র অপ্রভেদমূলক ও কঠোর আবশ্যকতার ক্ষেত্রে বলবৎ হবে।

৩.    এই ঘোষণাপত্রে অন্তর্ভুক্ত বিধানাবলী ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান প্রদর্শন সমতা, বৈষম্যহীনতা, সুশাসন এবং আন্তরিক সদিচ্ছার (good faith) মূলনীতি অনুসারে ব্যাখ্যা করা যাবে।


সমাপ্ত