ফিডেল ডি সাংমা
একটা বনের পশু বা পাখি যতই সুন্দর হোক আর প্রকৃতির সৌন্দর্য্য বৃদ্ধিতে যতই অবদান রাখুক না কেন, কারো অবহেলায়, নিরাপত্তাহীনতায় কখনো পশু বা পাখি মারা গেলেও বনের যেমন কিছু যায় আসে না- তেমনি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু জাতিরাও তাই। কারোর জান্তে-অজান্তে, স্বাভাবিক কিংবা অস্বাভাবিকভাবে তাদের কারোর মৃত্যু কিংবা হারিয়ে গেলে বাংলাদেশেরও কিছু যায় আসে না- বাংলাদেশের ৪৫টি জাতিগোষ্ঠ্যী দেশ- সমাজ- সংস্কৃতির বৈচিত্রে শ্রীবৃদ্ধি, কিংবা দেশ গঠনে (স্বাধীনতা যুদ্ধে, বর্তমান সরকারী দলে প্রতিমন্ত্রী, বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী সংস্থায় বিভিন্ন পর্যায়ের আসনে দায়িত্বপালন) ও উন্নয়ন পরিকল্পনায় অবদানের যতই অংশীদার হোক। বাঘ, ভালুক, সিংহরা পশুজাতির; তা স্বীকৃতি দিতে কারোর দ্বিধা নেই তেমনি দোয়েল, ময়না, ময়ুরদেরও পাখিজাতীয় বলতে দ্বিধা নেই, কিন্তু বাংলাদেশের গারো, চাকমা, বম, ত্রিপুরা এমন ৪৫টি জাতিগোষ্ঠ্যীতের জাতি স্বীকৃতি দিতেই এ সরকারের আপত্তি। কিন্তু কেন…
আপত্তি থাকারই কথা! কারণটা সম্ভবতঃ দেশ পরিচালনায় সরকারের ব্যর্থতা। দুর্নীতির শীর্ষে অবস্থানকারী এই দেশ বাংলাদেশ। স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও বাঙ্গালী স্বাধীনতার কী স্বাদ তা পরিষ্কার বুঝতে পারেনি। সর্বদা জাতীয়, সমাজ, পরিবার ও ব্যক্তি দ্বন্দ্ব কলহ অবস্থাথেকে মুক্ত হতে পারছে না জনসাধারণ। আইন শৃংখলা বাহিনী সকল মানুষের জান-মালের পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ ; এমন আরো কত কী সমস্যা! শুধু একটা জাতি(বাঙ্গালী)-র মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরণের নিশ্চয়তা ও মানুষের জান-মালের পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে যেখানে ব্যর্থ সেখানে আরো ৪৫টি জাতি যোগ হলে সে ব্যর্থতার দায়ভার বেড়ে যাবে, এটাই স্বাভাবিক, বাঞ্চনিয়, সমুচিত। আন্তর্জাতিক মহলে সুনাম ুন্ন হবে। এই দেশের প্রতিটি মানুষ সুস্থ- শান্তিতে থাকে- তা প্রমান দিতে না পারলে নোবেল, শান্তি পুরষ্কারের মত আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন পুরষ্কার, ডিগ্রী অর্জন যেখানে সম্ভব হবে না, সেখানে আরো ৪৫টি জাতি যোগ হলে সে ব্যর্থতার দায়ভার নেওয়ার কোন যুক্তি নেই। হয়তোবা একারণেই এ দেশের সরকার কোন দিন এই ৪৫টি জাতির স্বীকৃতি দেবে না, তা নির্বাচনের আগে দলীয় ইস্তেহারে জাতি স্বীকৃতি দেওয়ার মত পিছিয়ে থাকা এই অবহেলিত জাতির জন্য অতি লোভনীয় সুন্দও সুন্দর উন্নয়ন পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের প্রতিশ্র“তির মত যত যাই বলা হোক।
বাংলাদেশের এই ৪৫টি জাতিগোষ্ঠ্যীর ভাই-বোনদের বলি- আমরা কেন শুধু সাংবিধানিক জাতি স্বীকৃতির আশায় মাথা ঠুকছি? কি হবে জাতি স্বীকৃতি দিয়ে? দেশের সংবিধান দেশের প্রতিটি জনগনের দৈনন্দিন জীবন যাপনের জন্য কতটুকু কাজে লাগে? দেশের অধিকাংশ জনগন এখনো একদিন হরতালে পরেরদিন অনাহারে দিন কাটায়। নিজেরদের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসার ব্যবস্থা নিজেদেরই করতে হয়। আর এটাও ভাবুনতো- আমাদেও স্বজাতি গারো, চাকমা, বম, ত্রিপুরারাও কি এই দেশে কিংবা পার্শ্ববতী দেশে, প্রদেশে বর্তমান সরকারী ও বিরোধী দলে, বিভিন্ন সরকারী বেসরকারী সংস্থায় বিভিন্ন পর্যায়ের উল্লেখযোগ্য উচ্চ আসনে দায়িত্বপালন করছে না? তাহলে আমরা পিছিয়ে থাকবো কেন? কিসের, কার আশা ভরসায়?
পরনির্ভরশীলতা মানুষের সকল উন্নয়নের অন্তরায়। তাই আসুন আমরা সমস্বরে বলি, আমরা পরনির্ভরশীল হতে, থাকতে চাই না। আমাদের কেউ আমাদের জাতি স্বীকৃতি দিক আর না দিক, আমাদেরও কিছু আসবে যাবে না। বাঙ্গালী জাতির মৌলিক মানবিক চাহিদা পুরণের নিশ্চয়তা ও মানুষের জান-মালের পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে যেখানে ব্যর্থ; এই দেশে আমাদের নিজেদেরই মৌলিক মানবিক চাহিদা পুরণের প্রচেষ্টা ও নিজের জান-মালের নিরাপত্তার ব্যাপারে মনোনিবেশ করুন।
পরনির্ভরশীলতা মানুষের সকল উন্নয়নের অন্তরায়। তাই আসুন আমরা সমস্বরে বলি, আমরা পরনির্ভরশীল হতে, থাকতে চাই না। আমাদের কেউ আমাদের জাতি স্বীকৃতি দিক আর না দিক, আমাদেরও কিছু আসবে যাবে না। বাঙ্গালী জাতির মৌলিক মানবিক চাহিদা পুরণের নিশ্চয়তা ও মানুষের জান-মালের পূর্ণ নিরাপত্তা দিতে যেখানে ব্যর্থ; এই দেশে আমাদের নিজেদেরই মৌলিক মানবিক চাহিদা পুরণের প্রচেষ্টা ও নিজের জান-মালের নিরাপত্তার ব্যাপারে মনোনিবেশ করুন।
বড় কথা হচ্ছে- আমরা সন্তান জন্ম দিলে কোন শিশু গরু-ছাগল হয়ে জন্ম নেয়নি, আমরাও রক্তমাংসে; আবেগ-অনুভূতিতে সবারই মত; সুতরাং আমরাও মানুষ। আর মানুষ, সকল সৃষ্টির সেরা জীব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন