শনিবার, ২ নভেম্বর, ২০১৩

আমার বিশ্বাস, “বিশ্বাসে মিলায় বস্তু; তর্কে বহুদূর...”!


আমার বিশ্বাস, “বিশ্বাসে মিলায় বস্তু; তর্কে বহুদূর...”!

November 2, 2013 at 9:34pm
.
ফিডেল ডি সাংমা
.
গারো সমাজ মাতৃতান্ত্রিক সমাজ। আমাদের এই সমাজে নারীর মর্যাদা অনস্বীকার্য; অনেক উঁচু মানের এবং তা  উল্লেখযোগ্য। সন্তান-সন্তুতির পদবী হয় মায়ের থেকে, পিতৃতান্ত্রিক সমাজের মতো পিতার পদবিথেকে নয়। যেমন ডরথি নকরেকের কন্যা হবে- জাজং নকরেক, চাসং নকরেক, রাসং নকরেক, চিংআ নকরেক। অতএব, একটা পরিবারে, গোষ্ঠ্যিতে মেয়ে সন্তান না হলে চলে না, বংশ রক্ষা হয় না। গারোদের প্রথা অনুসারে, পরিবারের মেয়েরাই সম্পদের মালিক হবেন। কন্যা সন্তানদের জন্য আপন ভাগ্নে অথবা আত্মীয়তার সূত্রে ভাগ্নে সম্পর্কের ছেলেকে জামাতা হিসাবে নিজ বাড়িতে এনে বিয়ে দিবেন এবং জামাতা ঘর সংসারে অভিজ্ঞ হলে তাদের আলাদা ঘর করে দিয়ে আলাদা করে দিবেন। সর্বশেষ কন্যাই হবেন ‘নকনা’; যার বরকে ঘর জামাই মনোনিত করা হয়। এই ঘর জামাইয়ের আসন, দায়িত্ব, মান-মর্যাদা ইত্যাদি অন্যান্য জামাতাদের থেকে ভিন্ন; বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন। কেননা, তিনিই শ্বশুর-শাশুড়ির বর্তমানে, অবর্তমানে তার ঘর সংসার, পরিবার আর গোষ্ঠ্যীর সবাইকে দেখভাল করবেন, শ্বশুরের সহায় সম্পত্তি সুরক্ষা করবেন। নিজ পরিবারের সকল সামাজিকতা- বিয়ে, শ্রাদ্ধ, মানসা ইত্যাদি এবং বিভিন্ন ধরনের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে সমাজে মান মর্যাদা বজায় রেখে শ্বশুরের মুখ রক্ষা করবেন, উজ্জ্বল করবেন। অর্থাৎ পিতৃতান্ত্রিক সমাজে পুত্র সন্তানদের পিতামাতা ও পরিবারে দায়িত্ব পালনের মতো এ জামাতাই শ্বশুর শাশুড়ির বৃদ্ধ বয়সে তাদের ছেলে-সন্তানের দায়িত্ব পালন করবেন। এটাই গারো সমাজের প্রচলিত সনাতন প্রথা। যদিও আধুনিককালে গারোদের মধ্যে কোথাও কোথাও এই সমাজ ব্যবস্থাকে মানতে চান না, কিংবা আংশিক মানেন এবং কেউ কেউ পরিবর্তনের, পরিমার্জনের পক্ষে।
.
এবার নিজের গল্প বলি। আমার শাশুড়ি ছিলেন তার মায়ের একমাত্র কন্যা। আর শাশুড়ির ঘরে তিন কন্যা [এবং দুই পুত্র]; এর শেষ কন্যাই হলেন আমার স্ত্রী। প্রথম কন্যার ঘরে আছে দুই কন্যা এবং এক নাতনী। কিন্তু পরের দুই কন্যার ঘরে কন্যাসন্তান নেই। বলে রাখা ভালো- আমি; মানে এ হতভাগাই হচ্ছি সেই ঘরজামাই। আমাদের  নিজ পরিবারে, গোষ্ঠ্যীতে এবং সমাজের লোকজনেরও ন্যুনতম একটি কন্যা সন্তানের প্রয়োজন বোধ করছিলো।
আমরা স্বামী-স্ত্রী এ যুগের মানুষ। আমরা এ সমাজে বাস করি, এ সমাজকে ভালোবাসি, সম্মান করি। তবুও মুক্তমনা হিসাবে, আধুনিককালের মানুষ হিসাবে এ সমাজের প্রথাকে, রীতিনীতির ভালমন্দ বাছ বিচার করে চলতেই ভালোবাসি। এমনকি ধর্মের ক্ষেত্রেও আমি মৌলবাদী নই। এই বিশ্বাসথেকেই সকল ধর্মকেই আমি শ্রদ্ধার চোখে দেখি। বরং একজন আরেকজনের ধর্মের নিন্দা করতে শুনলে আমার পিত্তি জ্বলে যায়, তার মৌলবাদিতার টুটি টিপে দিতে ইচ্ছে করে। আমার বিশ্বাস, কোন ধর্মই মানুষের অকল্যাণ চাইতে পারে না। পারতপক্ষে, অপ্রয়োজনীয় প্রথা বা রীতিনীতির কাছে জিম্মি হতে চাই না। তাই আমাদের পরিকল্পনা- ছেলে হোক, মেয়ে হোক দুটি সন্তানই নেবো আমরা। সুশিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলতে পারলে ছেলেরাও মেয়েদের দায়িত্ব পালন করতে পারে, যেমন পিতৃতান্ত্রিক সমাজের তথা বাঙ্গালী হিন্দু সমাজে হচ্ছে। দুই পুত্র সন্তানের পর আমরা আর সন্তান না নেবার সিদ্ধান্ত আমাদের, কিন্তু বাঁধ সাধলেন আমার শাশুড়ি। শাশুড়ির নির্দেশ- পরিবারে একটা কন্যা সন্তান চাই; তার নাতনী চাই। নাহলে বংশ রক্ষা হয় না, আর নাতনির মুখ না দেখতে পারলে মরেও তিনি শান্তি পাবেন না ইত্যাদি। শ্বশুর অনেকদিন আগেই গত হয়েছেন, তিনি থাকলে হয়তোবা আরও কঠিন ফতোয়া জারি করতেন। শ্বশুর উনার জীবিতকালে কথা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বলতেন, আমরা এতোগুলো সন্তান লালন-পালন করলাম, আমার বংশধরও তা পারবে। এমনিতে এই দেশে আমাদের জনসংখ্যা কম, তাহলে হিসাব করে সন্তান নিতে হবে কেন ইত্যাদি। এদিকে সন্তানদের মামারাও সুযোগ পেলেই বলতেন, “চিংনাদে আমানি নককো মি’ফাল চটনাজক” অর্থাৎ মায়ের ঘরে আমাদের ভাত ফুরিয়ে যাচ্ছে। আমরাও তাদের খুশি রাখতে চাই, তাই আমি আমার স্ত্রীকে প্রস্তাব দিলাম, মেয়েদের বয়স ৩৫ হলেতো রিস্ক হয়ে যায়, তাছাড়া আমি থাকি (চাকরিসূত্রে) বাড়ির বাইরে, আর তুমি একা সংসার সামলাও। কষ্ট আমার চেয়ে তুমিই বেশি করছ। আবার প্রয়োজনের সময় কারোর সাহায্য সহযোগিতা পাওয়া বা বেশি মজুরি দিয়েও তেমন কাজের লোক পাওয়া যায় না। সুতরাং চল- আমরা একটা কন্যা সন্তান দত্তক নিই। কিন্তু তিনি রাজী হলেন না। বললেন, তুমি যে আমার কষ্টটা বুঝ, এতেই আমি খুশি, পরেরটা আমি বুঝবো। আমার কষ্ট হোক, তবু আমি আমার মায়ের খুশি মুখ দেখতে চাই।

দ্বিতীয় সন্তানের অনেক বছর পর আবারও একটি ছেলেই হলো। যদিও তাতেও কেউই অখুশি হলেন না; আর পিতামাতা হিসাবে আমরাতো নইই। কিন্তু শাশুড়ি এবং অন্যানদের পুরানো রেকর্ড বাজিয়েই চললো, একটি হলেও আমাদের ঘরে মেয়ে সন্তান তাদের চাই-ই। দুর্ভাগ্য যেখানে ভর করে সেখানে মানুষ কি আর কিইবা করতে পারে? পরের তিন বছরের মাথা আরও একটি সন্তান হলো পুত্র এবং এম্যাচিউরিটির কারণে এই পুত্রের আয়ু ছিলো মাত্র দেড় দিন। এদিকে আমাদের “ঘর সামলাবো না পর সামলাবো” অবস্থা।
.
তারপরের দিনগুলোতে আমরা সিদ্ধান্তহীণতায় কাটিয়ে দিলাম। একদিন আমার স্ত্রী বাইরেথেকে এসে বললেন, চল আমরাও বারমারী তীর্থে যাই।
-       কেন?
-       সবাই যাচ্ছে, গ্রামের লোকেরা বাস রিজার্ভ করছে।
-       তা করুক, তুমি গেলে মাকে (শাশুড়িকে) দেখবে কে? তাছাড়া বাড়িতে রেখে যাওয়ার মতো লোক নাই।
-       না থাক, আমি ধর্মের কাজে যাবো, ঈশ্বরই দেখবেন সবকিছু।
-       তাতো বুঝলাম, ধর্মতো ঘরে বসেও করা যায়, তীর্থে যাবে কিসের জন্য?
-       একটা মেয়ের জন্য?
-       মানে...? (আমি ভাবছিলাম, কাজের জন্য মেয়ে খুঁজতে চাইছে)
-       হ্যাঁ, আমি শুনেছি, সবাই বলাবলি করছে। ওখানে যারা বিশ্বাস নিয়ে যায়, প্রার্থনা করে, মা মারিয়া তাদের প্রার্থনা শুনেন। অনেক রোগী সুস্থ্যও হয়েছেন ইত্যাদি...
-       ঠিক আছে যাও। বাচ্চাদের সাথে নেবে?
-       শুধু বাচ্চাদেরই না, বাচ্চাদের বাবাকেও যেতে হবে। বাচ্চাদের আমি একা সামলাতে পারবো না। তুমিও আমার জন্য একটা মেয়ে চাইবে। (আমি নির্বাক থেকে তার কথায় সমর্থন দিলাম।)

যথারীতি তীর্থের সময় হয়ে এলো। যেখানে আমি চাকরি করি, সেখানকার খ্রিস্টভক্তরাও যাবেন। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আমাদের অফিস তাদের আর্থিকভাবে আংশিক সহযোগিতা দিচ্ছে। তাই তাদেরও আবদার, গাইডের মতো করে অফিসের লোকজন তাদের সাথে থাকলে ভালো হয়, তাই আমাদের অফিস কর্তৃপক্ষ স্টাফদের মধ্যথেকে বেশ কয়কজনকে সেখানে যাওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হলো। সেসাথে ইচ্ছুক যারা, তারা সপরিবারে যাবার সুযোগটাও পেল এবং যথারীতি ব্যাগ, ছোট খাটো বিছানাপত্র আর কিছু শুকনো খাবারসহ আমরাও গেলাম।
.
তীর্থস্থানে পৌঁছার পর দেখলাম চারিদিকে লোকে লোকারণ্য। ব্যাগ, বিছানাপত্র রাখারও জায়গা নেই। শেষে কোন এক সিস্টারের পরামর্শে গীর্জাঘরের এক কোণে সেগুলো রেখে প্যান্ডেলে গিয়ে দেখি, দাঁড়াবারও জায়গা নেই। অনুমানিক ২০ হাজার লোক হবে। চারিদিকে মাইক ফিট করা থাকায়, মূল অনুষ্ঠান শোনার, অংশগ্রহণ করার কোন অসুবিধাই রইলো না। প্রথমে পাপস্বীকার অনুষ্ঠান হলো, দ্বিতীয়ভাগে খ্রীস্টযাগ। তারপর আলোক সজ্জার মাধ্যমে প্রায় দেড় কিমি উঁচু নিচু পাহাড়ি পথে মালা প্রার্থনায় অংশগ্রহণ করলাম। রাত্রে কিছুক্ষণ বিরতির পর, বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে প্রার্থনানুষ্ঠানের পাশাপাশি যেখানে কুমারী মারিয়ার মূর্তি রাখা হয়েছে, সেখানেও সবাই গিয়ে ভক্তিভরে প্রার্থনা করতে লাগলো। আমার স্ত্রীও আমাকে বললেন, চল আমরাও সেখানে যাই। তখন রাত প্রায় দেড়টা। অনেক ক্লান্তি নিয়ে যেতে ইচ্ছে করছিলো না। স্ত্রী বললেন, সেখানে গিয়ে প্রার্থনা করতেইতো আমরা এসেছি, এমনি এমনি ফিরে যাবো? তার আবদার উপেক্ষা করা গেলো না, তীরে এসে তরী ডুবলে চলে না। অগত্যা পাহাড়ের অনেক উঁচুতে উঠে কাছে গিয়ে খুব মনযোগ ও ভক্তিসহকারে প্রার্থনা করলাম। আমি জানি, আমার স্ত্রী একটি মেয়ে সন্তানের আশায় এতদূর এসেছে, তাই আমিও আমার স্ত্রীর ইচ্ছা পূরণের জন্য প্রার্থনা করলাম। বললাম, “মাগো, আমাদের সংসারে ঠিক তোমার মত সুন্দর মনের অধিকারী একটি কন্যা সন্তান দাও”।
.
তার ঠিক এক বছর পর আমাদের একটি সন্তানের মুখ দেখলাম, কি অবাক করা ফুটফুটে সুন্দর মুখ। জন্মের পর পরই আমার কোলে চলে এলো। মনে হচ্ছিলো, এই মূহুর্তে আমিই পৃথিবীর সর্বোচ্চ ভাগ্যবান গারো পিতা। যাই হোক, যাকে ঘিরে এত স্মৃতিচারণ; এত কথা, সেই হচ্ছে আমাদের একমাত্র কন্যা সন্তান ‘চিংআ’। আজ ২ নবেম্বর চিংআর ৪র্থতম জন্মদিন। আপনারা সবাই আমাদের এই মেয়েকে এবং আমার ৩ রত্ন পুত্রদের জন্য আশীর্বাদ করবেন, প্রার্থনা করবেন এবং যাচ্ঞা পূরণকারী মহান সৃষ্টিকর্তা ঈশ্বরকে ধন্যবাদ দিবেন।
.
পরিশেষে একটা কথা বলে লেখার ইতি টানতে চাই। তাহলো- এ লেখায় আমি আমার বিশ্বাসের কথা লিখলাম, আমার স্ত্রীর বিশ্বাসের কথা লিখলাম এবং আমাদের পরিবারের কথা লিখলাম। আমরা বিশ্বাস করি, এ আমাদের মেয়ে চিংআ, আমাদের বিশ্বাসপূর্ণ প্রার্থনার ফল। আমার এ লেখার কথার পক্ষে বিপক্ষে অনেক কিছুই ভাবা যায়, যুক্তি দাঁড় করানো যায়। আপনারা বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, সেটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার। যার তার ধর্ম এবং বিশ্বাসের ব্যাপার! কথায় বলে, “বিশ্বাসে মিলায় বস্তু; তর্কে বহুদূর...”।

শুক্রবার, ২৮ জুন, ২০১৩

ভুল


ভুল

ফিডেল ডি সাংমা
(জাহিদ কবির হিমনকে)

তোমার হাসির মোহে মোনালিসা ভেবে
রেখেছিলাম তোমার- একগাছি চুল,
তুমি মলাধারে ডুবে আমায় বুঝিয়ে দিলে
করেছি ক্ষমার অযোগ্য; হিমালয় ভুল।

সোমবার, ১৭ জুন, ২০১৩

এ জার্নি বাই মাইক্রো টু ভার্সি


এ জার্নি বাই মাইক্রো টু ভার্সিটি...
(এক মিনিটের গল্প)
ফিডেল ডি সাংমা

গতকাল মাঝরাতে বেবীকে তার গালে একটা কিস্‌ দিয়ে গুড নাইট বলে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। ওয়াল ক্লকে এলার্ম শুনেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। রাতে ঘুম হলে শরীরটা খুব টায়ার্ড লাগে। তবুও নিজের অনিচ্ছার সাথে ফাইট করে উঠতে হল। বেডথেকে নেমে দেখি আমার ওয়াইফ তাড়াহুরা করে ব্রেকফাস্ট রেডি করছে। আজ হলি ডে। ভার্সিটিতে ভ্যালেন্টাইন ডে'র ফাংশান হবে। চার্মিং ব্যান্ড দল আসবে। দ্রুত বাথরুমে গিয়ে ব্রাশটা হাতে নিয়েই দেখি টুট পেষ্ট নেই। আজ বেবীর টুট পাওডার দিয়েই কাজ সারতে হবে। বেশ কয়েকদিন যাবত বাচ্চার মার জন্য ফেইস ওয়াশ আনতে হবে; তাও মনে থাকে না। স্যুট- টাই পড়ে হালকা ফ্লেভারের পারফিউমটা সারাটা শরীর স্প্রে করে নিলাম। আন্টিকে বাসার মেইন গেইট লক করতে বলে প্রায় দৌঁড়ে ফুটপাট ধরে হাঁটছি। মেইন রোড আজ খুব বিজি। রোড সাইডে হকাররা প্যাপার, ম্যাগাজিন ভাগাভাগি করছে। আজ ভাবছি- টেঙ্ক্যিাব বা স্কুটারে যাবো না। ইদানিং সিটিতে ভাড়ায় মাইক্রো পাওয়া যায়। তবে রেন্ট এ কার লেখা থাকে না। যাই হোক- টাইম কিল করার সময় নাই। প্রফেসর জন আর আমাকে সব দায়িত্ব না দিলেও পারত। আমরা যেন অল রাউন্ডার। সবাই আমাকে পেয়ে বসেছে, বউ-বাচ্চার জন্য সময় দিতে পারি না। আমার পুরো ভার্সিটির লাইফটাই খাটিয়ে মারল।

কালচারাল অনুষ্ঠানের টোটাল ম্যানেজমেন্ট কেমন হবে তা নিয়ে ভাবছি আর হাঁটছি। প্যান্টের পকেটথেকে বেরসিক মোবাইলটা বার বার রিং হচ্ছে। অমনি একটা রিক্সা বেল না বাজিয়ে বেক করতে গিয়ে আমার হ্যান্ড বেগের চেইনটা ছিঁড়ে দিল। ভেরী বেড লাক। রাগে ফায়ার হয়ে গেলাম। আজ প্রচন্ড রাগলেও প্রকাশ করা যাবে না। ফ্রেন্ডরা বলে, রাগলে না-কি আমাকে খুবই বিধ্বস্ত চেহারা লাগে, আনস্মার্ট লাগে...। - ওসব ফাল্টু কথা ভেবে লাভ নেই। শার্ট পকেটথেকে সান গ্লাসটা বের করে চোখে দিলাম। ফার্ম গেইটের ওভার ব্রিজ পেরিয়ে আবার মেজাজটা বিগড়ে গেল। আনন্দ সিনেমা হলের সামনেও প্রচন্ড জ্যাম। দাঁড়িয়ে কোন খালি গাড়ি আসলে হাত নেড়ে ডাকবে কিংবা চট্‌ করে গাড়িতে উঠে পড়বে- তারও উপায় নেই...। - সরকারের মহা মন্ত্রীরা জনগনের ইনকাম টেক্সের টাকা খেয়ে খেয়ে গদি আগলে বসে আছেন। দেশের কেন্দ্রস্থল রাজধানী ঢাকা সিটিকেই যারা শান্তিতে রাখতে পারেন না, তারাই দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেন। আর আর মেয়র সাহেব, উনি কি করেন.....,ক্ষোভটা যেন বেড়েই উঠছিল। হঠাৎ পেছনথেকে বোমা সাইজের ড্রাইভার বলে উঠল-
'স্যার যাইবেন..?'
হ্যাঁ- যাবো...
মনে মনে বলি- শালা ইডিয়েট! বেটা বলে কি, চৈত্রমাসের খরা রৌদ্রে রোডের উপর দাঁড়িয়ে আছি কি তামসা করার জন্যে... যাবো মানে- আমার বাপ-দাদা চৌদ্দগুষ্ঠি যাবে...।
'কই যাইবেন স্যার'
'ও হ্যাঁ, ভারসিটি যাবো, যাবেতো না-কি? '
'জী স্যার- যাবো'
'ভাড়া কত নেবে...?'
'তিনশো টাকা দিয়েন স্যার'
'আহ্‌ এতো কেনো, জিনিস-পাতির দামের সাথে তোমাদের ভাড়াও বেড়ে যায় নাকি...'
'ঈদতো আইসা গ্যালো স্যার, বোনাস দিবেন না....'
'আহ্‌ যে ভাবে বলছ- আমার মানি ব্যাগযে খালি করে দেবে। যাও, সব মিলিয়ে তোমাকে ২০০.০০ টাকা দেবো, চলবে....?'
'জ্বি স্যার....'
পাবলিক লাইব্রেরীতে ঢুকতে হবে। গতকাল সেক্রেটারীকে বলেছিলাম ওয়েটিং রুমের টেবিলের উপর পেপার ট্রে-তে লটারীর টিকিট আর লাঞ্চের টোকেনগুলো রাখতে। ওই বেটা সেভাবে রেখেছে কি-না কে জানে! এখন মেইনরোড একটু ফাঁকা হয়েছে। দুদিকথেকে ছোট, বড়, মাঝারী, লাল, নীল, বেগুনী, সবুজ, হলুদ ইত্যাদি বিভিন্ন সাইজ আর কালারের গাড়ী ছুটাছুটি করছে।

'খুব কেয়ারফুলি চালাবে, বুঝলে। রোডে এক্সিডেন্ট করে বসো না....'
'এক মিনিট স্যার, প্লিজ আপনি সিটে বসুন, আমি এসি-টা ছেড়ে দিচ্ছি। কন্‌ফেকশনারীথেকে একটা মিনারেল ওয়াটার নিয়ে আসি, লেইট হবে না।'
'ওকে গুড- যাও- তাড়াতাড়ি কর....'

সময় যত গড়িয়ে যাচ্ছে আমার টেনশান তার ডাবল হচ্ছে। সাইড লুকিং গ্লাসে তাকিয়ে লেজি চালকের জন্য ওয়েট করছি। সামনের রেড লাইট অফ হয়েছে। ট্রাফিক পুলিশ হুইসেল দিয়ে হাত নাড়ছে। অবশেষে আমাদের মাইক্রো রিস্টার্ট দিয়ে রেইল ক্রসিং ওভারটেক করল.....।

সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ, আসুন আমরা এই গল্পে কতটা ইংলিশ ওয়ার্ড আছে, তা ভাবার আগে একবার নিজের সংস্কৃতি নিয়ে একবার ভাবি। আমরা কি নিজেদের মধ্যে নিজস্ব ভাষায় কথা বলি? নিজস্ব সংস্কৃতি ভুলে যাচ্ছি কি?   আসুন আমরা আমাদের নিজস্ব জাতি-সংস্কৃতিকে ভালবাসা ও সম্মান দেই। ধন্যবাদ।

বুধবার, ১২ জুন, ২০১৩

((জামাই)) -গল্প


((জামাই)) -গল্প- জুয়েল রানাকে

by Fidel D Sangma (Notes) on Wednesday, June 12, 2013 at 10:13pm
(১)
জাহিদুল ইসলাম আরমান ওরফে মাষ্টর সাব। মেধাবী অথচ চালচলনে সহজ সরল। প্রায় ১৫/১৬ কিমি দূরে গ্রামের “আলোকিত মধুপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়”-এর সহকারী শিক্ষক। একবছর আগে চার বন্ধু- সুলতান মাহমুদ, সামিউল আলম, হারুনুর রশিদ, বচন পোদ্দার সকলেই একসাথে শিক্ষকতায় চাকুরী পেয়ে যান। প্রতিদিন যাতায়াতে অসুবিধা হওয়ায় পিতা হাজী মোঃ আতিকুল ইসলাম ছেলেকে রসুলপুর গ্রামে মোঃ আব্দুল লতিফ মন্ডলের বাড়িতে জায়গীর থাকতে বললেন। জাহিদুল কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই রসুলপুর গ্রামের নিরক্ষর জনগণদের প্রিয় মাষ্টর সাব হয়ে উঠলেন। এভাবেই মোঃ আব্দুল লতিফ মন্ডলের ৪/৫ বছরের নাতি ফজলুর সাথে সখ্যতা জাহিদুলের। ফজলুর দাদু ফজলুকে আদর করে “বর-বাই” বলে ডাকেন। মাষ্টর সাবের ঘরেও শুকনো খাবারগুলো ফজলুর জন্যই রাখা থাকে। স্কুলের পরও ফজলু প্রায় সারাদিন স্যারের পেছন পেছন ঘুরে। তাই জাহিদুল ইসলাম ইঁচড়েপাকা ফজলুকে নিয়ে গিয়ে তার দাদুর সামনে দাঁড়ায়-
-       আসসালামুয়ালাইকুম চাচা,
-       আলাইকুম ছালাম, কিরম আছুইন- মাষ্টর সাব?
-       জী চাচা- ভালোই আছি, আপনি আমাকে নাম ধরেই ডাকবেন। আর তুমি করে বলবেন-
-       আইচ্ছা, তা কইর- কিছু কইবা?
-       জী চাচা। আপনার এ নাতি খুব চালু। তাই অভ্যাসের জন্য তাকে স্কুলে ভর্তি দিতে চাই- কি বলেন”।
-       এইডা কি কও! বাইত তুমারে হারাদিন জ্বালায়, আবার ইশকুলেও...

গ্রামটিতে এখনও আধুনিকতার ছোঁয়া লাগে নি। তবে এলাকার লোকজন যেমন-  ধর্মপ্রাণ; বয়স্করা নিয়মিত ৫ ওয়াক্ত নামাজ পরেন, খানকা শরিফে সাপ্তাহিক জিগির হয়। রোজা রাখেন, জাকাত-ফিতরা দান করেন। তেমনই জুয়েল চৌধুরী, বাবুল সরকার, লুই মারাক, সঞ্জিব নাথ, হিমেল সরকার, সুজিত দাস; উনারাও যার যার সংসার ধর্ম পালন করে যাচ্ছেন, পরস্পরের সুবিধা অসুবিধার খবর নিচ্ছেন এবং একে অপরের পারিবারিক উৎসবেও উপস্থিত হচ্ছেন। এমনই শান্তিময় সহাবস্থানের এই গ্রামের নাম রসুলপুর।

মোঃ আব্দুল লতিফ মন্ডলের ২ ছেলে ৪ মেয়ের মধ্যে শেষ মেয়ে ফিরোজা আক্তার ওরফে জবাকুসুম; ১০ম শ্রেনীতে পড়ে। প্রায় দুই কিলো দুরের মাধ্যমিক স্কুলে গিয়ে তাকে পড়াশুনা করতে হয়। প্রথমদিকে বড় ভাই কবিরুদ্দিন সাইকেলে করে দিয়ে আসতো, কিন্তু এখন রাস্তা আর আশপাশের লোকজন পরিচিত হওয়ায় আর দিয়ে আসতে হয় না। জাহিদুল ইসলাম আরমান ওরফে মাষ্টার সাহেবও একই পথে যায় বলে জবাকুসুমের সাহসটাও একটু বেড়েছে। দেখতে সুন্দরী হওয়ায় গ্রামের সব যুবকের চোখে জবাকুসুমের দিকে। তবে গ্রামের নানী দাদী, কুটনী বুড়ীরা তাকে খুব কমই সহ্য করতে পারেন। এর রেশ ধরে মাষ্টর সাব আর জবাকুসুমকে নিয়ে সমালোচনা হলে- হতেও পারে।

(২)
তিনদিনের এজতেমায় গেছেন আঃ লতিফ মন্ডল। পাহাড়ি রাস্তা; ঝোঁপঝাঁড়ের কাঁটা আর নুঁড়ি বিছানো থাকে বলে তাঁর বড় ছেলেটাই সাইকেলে করে দিয়ে এলেন। ফজলুও খুব করে বায়না ধরেছিলো এজতেমায় যাওয়ার। “বড়-ভাই, আপনি তো কালই ফিরবেন, ছেলেটাকেও সঙ্গে করে নিয়ে আসতে পারবেন” বলেই জাহিদুল তার প্রিয় শিষ্য ফজলুকে রিজার্ভ করা ভ্যানে তুলে নিয়ে গিয়েছিলো।

হাজারের কাছাকাছি লোকের সমাগম। সে তুলনায় সামিয়ানা ছোটই মনে হচ্ছে। এতগুলো মুসল্লি এক সাথে কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ পরা যাবে কিনা বলা যাচ্ছে না। এদিকে অজু সারতে হবে একটা ছোট্ট দিঘিতে। গতবছর বৃষ্টি কম হয়েছিলো বলে দিঘিতে এবার পানিও কম। তাই যাতে পানি ময়লা-ঘোলা না হয়, এজন্যে খুব সাবধানে অজু করার নোটিশ টানানোর পরও বার বার মাইকে ঘোষণা দেওয়া হচ্ছে। ধর্মপ্রাণ লোকজন অবশ্য তা মেনেও চলছেন।

২য় দিন ভোরেই সবাই জেগে উঠল। কবিরুদ্দিন তার ছেলে ফজলুকে নামাজের পরেই নিয়ে ফিরে যাবেন। সবাই যে যার মত অজু সেরে নামাজে সামিল হলেন। কিন্তু নামাজ শেষে মাষ্টর সাহেবের দামী জুতো-জোড়া আর খুঁজে পেলেন না। এখন উপায়! অগত্যা পুরোনো জুতো দেখে পরে আরও দুইদিন কাটিয়ে দিল। আশে পাশে খাবার এবং দুয়েকটি টুপি আতরের দোকান ছাড়া অন্য কোন দোকান নেই। জুতো কিনে নিরাপদে ফিরবেন। আগামীকাল জুম্মার নামাজের পর সবাই যার যার মত করে বাড়ী ফিরে যাবে। মেরাজ, মিঠু, মুহিদ, সবুজ সবাই মিলে খোঁজাখুঁজির পরও তার দামী জুতো-জোড়ার কোন হদিস মিলল না।

এজতেমার শেষদিনে বিশ্বের সকল মানুষের মঙ্গলের জন্য, বিশ্ব-শান্তির জন্য জুম্মার নামাজে আখেরি মুনাজাত করা হল। সবাই যার যার মত ফেরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কিন্তু মাষ্টার সাহেব  ফিরবেন কি করে, খালি পায়ে?  রাস্তা জুড়ে যে ভাবে কাঁটা আর নুঁড়ি ছড়ানো ছিটানো থাকে, মনে হবে- কেউ ইচ্ছে করে যেন বিছিয়ে রেখেছে। আসার পথে এমরান আর আরমানের পায়ে বিঁধে রক্ত ঝরল, সোহেলের পায়ের বুড়ো আঙ্গুলটা ছিঁড়ে যাওয়ার উপক্রম হল; আর মুন্নাফ চাচা আরও একধাপ এগিয়ে; হুঁচোট খেয়ে নুড়িতে পরে গেল আর পেছনের চামড়া ছিঁড়ে গিয়ে ধপধপে সাদা জোব্বাটা রক্তে ভিজে চপচপ করছিল- ওহ! এসব ভাবতেই জাহিদুলের গা শিওরে উঠছে। কিন্তু কোথায় পাবে তার জুতো-জোড়া? জাহিদুল ভাবতে লাগলো- তার জুতো যিনি নিয়ে গেলেন, তার জুতো কই? ওটা হলেও চলতো। নিশ্চয়ই তার পায়ের মাপ একই হবে। সেটা জানা যখন আর মোটেই সম্ভব না, অন্য কারোর জুতো পরেই ফিরতে হবে। তাই বলে জুতো চুরি (নাউজুবিল্লাহ)!

(৩)
জায়গির বাড়িতে মাষ্টার সাহেবের থাকার রুমের বারান্দায় সবসময়ের জন্য চেয়ার টেবিল পাতা থাকে। ৩দিন পর ফিরে এসে দেখে তার রুম, বারান্দা, চেয়ার টেবিল সব ঝকঝক করছে। আর  টেবিলের ওপর একটা গোলাপী রঙের জবাফুল পরে আছে। ‘পরে আছে নয়; বলতে হবে দিয়ে গেছে’ অবাক হয়ে ভাবতে থাকে জাহিদুল। কে করলো এত সুন্দর কাজ? জবাকুসুম কি? এমন একজনকে জীবনসঙ্গী হিসাবে পেলে মন্দ হতো না।

বারান্দায় বসে রাস্তার অনেকদূর দেখা যায়। লোকেরা দল বেঁধে কাঁধে ব্যাগ-বোচকা নিয়ে ফিরছে। সেই দলে মাঝ বয়সী এক লোক খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে আসছেন। আহা! উনাকে দেখে মায়াও লাগছে। এই ধর্মপ্রাণ মানুষের ব্যাগটা নিয়ে উনার বাড়ীতে দিয়ে আসতে পারলে- একটা সওয়াবের কাজ হয়ে যেত। কিন্তু এতদূর নিজের ব্যাগ কাঁধে বয়ে এসে নিজেও অত্যধিক ক্লান্ত; ওটা যখন কিছুতেই সম্ভব হচ্ছে না, তাই অন্যদিকে মুখ ফিরিয়ে তাকিয়ে রইলো জাহিদুল। এবার জবাকুসুমকে নিয়েই ভাবতে শুরু করছে জাহিদুল।

“স্যার স্যার, আমি আন্নের জুতাডা আমার ব্যাগঅ ভইরা নইয়া আইসি”। .ফজলুর চিৎকারে জাহিদুলের ভাবনায় ছেদ পরে। মাষ্টার সাহেব তার জুতো-জোড়া দেখে থ।
-       এটা কোত্থেকে পেলে তুমি?
-       ক্যা-? হেদিন আন্নে এবা দামী জুতা বারান্দায় হালাই থুইয়া নামাজঅ গেলাইনগা, আর-ত ফিরুনের নামগুন্দ আছাল না। এন্নিগাই ত- আমি এইন্না আমার ব্যাগঅ ভইরা হালাইছিলাম।
-       তারপর-
-       তারহরে আর কি, আমি আন্নের নিগা খারই অইছি, হেসুম বাজান আমারে জুর কইরা সাইকলঅ তুইল্যা নইয়া আইলো।
-       হায়হায়রে বাজান, তুই করছস কি-
-       হ- স্যার, বাজানের জুন্তে আন্নেরে জুতা দিয়া আহাইলাম না
-       ইয়াল্লাহ! তবে আমি কার জুতা ...।
কথাগুলো শুনে জাহিদুলের দু’কান গরম হয়ে উঠল, আর মনটাও ভীষণ খারাপ হয়ে গেল। জুতো-জোড়া হাতে নিয়ে ফজলুকে কোলে তুলে নেয়। ফজলুর জন্য রাস্তার দোকানথেকে লেবেনচুস আনতে ভুলে নি জাহিদুল। ওগুলো হাতে ধরিয়ে দিতেই ফজলুর ছানাভরা চোখ চলে যায় তার অতিপ্রিয় মাষ্টর সাব-এর পায়ের দিকে। জুতোগুলো ফজলুর চেনা চেনা লাগছে, কিন্তু আবার সে ব্যস্ত হয়ে পরে লেবেনচুসে।

ফজলু তার স্বভাবমত প্রায় ১৫ মিনিট ধরে বকবক করছে। সুযোগ বুঝে জবাকুসুমের খবর নেয় জাহিদুল। হঠাৎ ফজলুর ডাকে চমকে যায় সে। ছেলেটি চিৎকার দিয়ে বলছে, ‘দাদু গো, অ দাদু- আন্নে এবাই খুড়াইয়া আতটাছুইন ক্যা? অ দাদু- আন্নের ঠ্যাং খাইল্যা ক্যা?’ দাদুকে খুব কাহিল দেখাচ্ছে; গলা দিয়ে কথা বেরুচ্ছে না; তিনি হাঁপাতে হাঁপাতে একটুখানি কাশলেন। ততোধিক জোরে ফজলু আবার বলে- ‘দাদু, অ দাদু, এই য্যা আন্নের জুতা...’
ফজলুর ছোট্ট আঙ্গুলের ইশারা অনুসরণ করে দাদু তার জুতো-জোড়া দেখতে পেলেন জাহিদুল মাষ্টরের পায়ে। যাকে কিছুক্ষণ আগেও জবাকুসুমের সাথে বিয়ে দিয়ে ছোট জামাই করার কথা ভাবছিলেন... 

(গল্প এবং চরিত্র কাল্পনিক. কাউকে ব্যক্তিগত সুখ বা আঘাত করার জন্য নয়।)

বুধবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০১৩

শীত ঘুম


' শীত ঘুম '

বহুদিনের সাধ,
সাপের মত শীত-ঘুম দেই;
বাসা মেলে না।।

স্বপ্ন-শিশিরে কত,
কুয়াশা ঢাকা শীত আসে যায়;
তবু ঘুম আসে না ।।

নীলা



OOOনীলাOOO
ফিডেল ডি সাংমা

কখনও আমি কি বলেছি যে, তুমি দুঃখ দেবী
হঠাৎ কেন বললে, "কাছে এসো না হে কবি",
আমি বলি কি- তুমি তো রক্তমুখী নীলা নও
যখন যার কাছেই যাও; ভার সইবে না তার,
নিরন্তর দুঃখ-কষ্ট সয়ে পুড়ে হৃদয় ছারখার।
এসো, দিব্যি দিলাম, এমন শত দুঃখ পেতেই
সদা তৃষিত আমার প্রাণ, সীমাহীন হাহাকার।
দুঃখ-দেবী, রক্তমুখী নীলা নও; তুমি শুধুই নীলা
দ্বিধাহীণ কাব্যছায়াতলে বসো করি কাব্য-লীলা

স্মৃতি



স্মৃতি
ফিডেল ডি সাংমা
==========
এ জীবনের অনেক পথ
রয়েছে বাকি
সংগোপনে হৃদয়ে বাঁধা
স্মৃতির রাখী।
খোলা যায় না কভু
যতই রাত্রি জাগি,
নীড়হারা পাখির মত
অচিন বিবাগী।

প্রান্তসীমা



প্রান্তসীমা
ফিডেল ডি সাংমা

কেউ কি বলি? কষ্ট, প্রসারিত করো ডানা!
তোর খুব গভীরে ঢুকে আয়েসে- অনুভবে,
যন্ত্রণার বিস্তৃতি দেখতে চাই নিবিড় নীরবে-
আমার রক্তশিরায় মাপি, দুঃখের প্রান্তসীমা।

চপচপ কামগন্ধে ভিজে রাত্রি; ঘুংগুর-মাতাল
বিষ ছোবলে নিথর, নগ্ন, সুখ ষোড়শীর গা,
ধর্ষণে-ঘর্ষণে স্বপ্নকুঁড়ি; আশার দুঃখ-মাতাল
মৃত্যু-সুখ কু’ডাক দেয় শুধু; কেউ শুনি না।