প্রবন্ধসমগ্র-ফিডেল লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
প্রবন্ধসমগ্র-ফিডেল লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

মঙ্গলবার, ২৪ এপ্রিল, ২০১৮

বাকদিল বা গোত্রসমূহ


বাকদিল বা গোত্রসমূহ

গারোদের গোত্র বা মাহারিগুলো প্রত্যেকটি সাংমা মারাক এই দুটো গোত্রের অন্তর্গতঅনেকের মতে, মোমিন, সিরা আরেং এরাও সাংমা-মারাকের সমপর্যায়ভুক্ত। তবে, মোমিন, সিরা আরেং গোত্রের লোকেরা সকলেই নিজেদের স্বাতন্ত্রভাবে প্রকাশ করতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন বলে জানা যায়। আবার কিছু কিছু মাচং অঞ্চলভেদে ভিন্ন ভিন্ন উচ্চারণে পরিচিতি লাভ করলেও বেশ কিছু মাচংগুলো অন্যটির অংশ বলে জানা যায়। যেমন, অনেকেই কামা বলেন, আবার কেউ কেউ বলেন খামা। তেমনই আগিদক/হাগিদক, আজং/হাজং, মিচেং/মেচেং, খকনল/ককনাল, দোসিক/দোচিক, বল/বাংবল, বেংবংগ্রি/বাংবংগ্রি, রংচল/রংচেল ইত্যাদি। আবার অনেকে এগুলোর কোন কোনটাকে আলাদা বলে দাবি করেন। প্রায় সকল মাহারি এবং মাচংধারি লোকদের বসবাস ভারতে এবং অল্প সংখ্যক মাত্র বাংলাদেশে বসবাস করে থাকে। তাই এ অল্পপরিসরে প্রাপ্ত অপ্রাপ্ত মাহারি/মাচংগুলোকে যাচাই করা এবং মতামত নেওয়া সম্ভব প্রায় অসম্ভব। তবে, যে মাচংগুলো যেটারই অংশ হোক না কেন, তারা তাদের নেওয়া মাচং-এর পরিচিতিতেই সাচ্ছন্দবোধ করেন এবং নিজ নিজ নাগরিক সনদপত্রে সেভাবেই নামের সাথে মাচং লিখে থাকেন। তাই প্রাপ্ত মাচংগুলো আমরা ভিন্ন ভিন্ন ভাবেই উল্লেখ করছি। নিম্নে সেগুলো ক্রমানুসারে দেওয়া হলো-

সাংমা
আগল, আগিদক/হাগিদক, আতিয়ারা, আমফাং, ওয়াইচিংদা, ওয়াত্রক, ওয়াল, কংকাল, খকনল/ককনাল, খকসি, খকসেপ, গরি, গান্দাই, গিনেই, চাম্বুল, চিকাল, চিচাম, চিমা, চিরান, চিসিক, চিসিম, জলাই, জামদাম, জাম্বাত, জাম্ব, জেংচাম, জেত্রা, ত্রিসা, তেলসি, থেবংগ্রি, থিগিদি, দোইংনাং, দচিক, দফো, দাওয়া, দাগাল, দাজেল, দাম্বো, দালবত, দারিং, দ্রাংগ্রি, দিও, দিওয়া, দিব্রা, দিব্রু, দিলসি, নকচ্রাম, নংলাদু, নেকলা, নেংওয়া, নেংখ্রা, নেংখুগ্রি, নেংমিনজা, পাকরে, পান্ত্রা, বলদাকগ্রি, বলসাল, বলং, বলসিল, বানজলগ্রি, নাংসাল, বেলা, বাংসি, বাংসিল, বাম-বমচেং, বাবুরি, বারিং, বাংবল, বেংবংগ্রি/বাংবংগ্রি, মৃ, মাংসাং, মাংসেল, মাচো, মানখিন, মান্দা, মিচেং/মেচেং, মিদ্দিক, মেংগংগ্রি, মেজল, রংখাল, রংখুয়াক, রংক্রাম, রংগাপ, রংচল/রংচেল, রংজেং, রংজেরাম, রংদি, রংদু, রংবক, রংমথু, রংরেং, সংসাক, সামফাল, সামিন, স্নাল, সিমসাং, স্কু, হাউই, হাচ্ছা, হাপাং ইত্যাদি। = ১০০টি


মারাক
আজং/হাজং, আজিম, আজি, আনিল, আরেং, আসাক্রা, আপু, ওয়ালগুসি, ককন্যাল, কামা/খামা, খাগরা, কুবি, গরা, গারা, গারে, গিচ্চাক, গিপি, চান্দা, চাম্বুগং, চেব্রা, চিগিচ্চাক, জামগে, জাম্বিল, জিচান, তজু, তিবি-আসিমগ্রি, থাকনি, দকগ্রি, দখুমি, দবু, দ্রং, দমিনি, দলজেল, দরেক, দাংগ, দাজেল, দাদক, দান্দালি, দানিল, দারু, দেংওয়াজং, দিকগিল, দিনাজিক, দিম্বিল, দিলমা, দিমাক, দোমিসেল, নকরেক, নংউরা, নংবাক, নংমিন, নাওয়া, নাফাক, নাবাল, নেংসত, পানখো, পাথাং, পিরা, ফান্তু, বনোয়ারি, বলওয়ারি, বলং, বলসিলগং, বাজি, বানজল, বাবারি, ম্রং, মাজি, মাত্তং, মানদিক, মালসাম, মুরং, মেগাদপ, মেংকি, মেংগেচি, মেজেঙ্গা, রখো, রংখেং, রংমা, রমথু, রংখি, রংগারা, রাকসাম, রাংসা, রিছিল, রিমা, রুরাম, রেমা, রেখিং, রেংচেং, মাপিল, মাৎচক, দকগ্রি, দ’খংসি, দানাল, পেত্তংগ্রি, সিথাং, স্লেংসি, হাউই = ১০০টি
মোমিন
অদিপেক, আকস্কি, আদকগ্রি, ওয়ারী, ওয়াগি, ওয়াচেকসি, ওয়াথ্রি, এবাং, কনচিখল, গলদি, গান্দিম, গাবিল, ঘাগ্রা, চেকগেচিৎ, চেরান, চিগিসিল, চিগিৎসিল, ছতজলজা, জংসুগ্রি, জাকগিৎচেত, জেনজিং, ওয়াফাং, তেবিল, তোতিং, দখংসি, দগ্রিং, দালবত, দারুগ্রি, দোবিত, নারিংগ্রি-খিতং, নংসোবাল, নংমিল, নংমিলং, পাবিত, বল, বলদাক, বলতোতু, বারিংগ্রি, বাসুগ্রি, মাচ্চকগ্রি, মাংগি, মেগং, মেংগৎচি, ম্রেন্দা, স্নেং, রংগন, রাদা, রিমসু, রুগা, সামব্রাক ইত্যাদি। = ৪৯টি
সিরা
হাদিমা, দালবত-মাপফ্রু = ২টি
আরেং
দোসিক, নংবাক = টি
উল্লেখ্য, মেগামদের আরও কিছু মাচং; এবং তাদের আলাদা একটা স্বরূপ বা প্রথা রয়েছে, তা উল্লেখ না করলে মেগাম সম্প্রদায়ের প্রতি অবিচার করার মত হবে বলে মনে করি। বিষয়টি আমার কাছে মনে হয়, অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা নিয়ে আরও তথ্য সংগ্রহ এবং গবেষণার সুযোগ রয়েছে। কারণ মেগামদের মধ্যে নিম্নোক্ত মাচংধারিরা উপরোক্ত ৫টি মাহারি দলের কোনটার মধ্যেই পড়েন না বা এরা নিজেদের একেবারেই স্বতন্ত্র বলে দাবী করেন। এগুলো হচ্ছে- নংউড়া, মংরিই, নংমিন, নংমসর, নংব্রিই, নংদেংআন, সলমার, রেংচাং, রংরিন, হাছা, দি.খার, গারায়, রাইমা ইত্যাদি= ১৩টি।
উপরোল্লেখিত, প্রায় ২৮০টি মাচং এর মধ্যেও কিছু কিছু মাচং এর উপদলের নাম জানা গেছে আর সেগুলো হলো-
) নকরেক = নকরেক ওয়াকসু, নকরেক রংখাবক, নকরেক মিদান, নকরেক পানেত, নকরেক পাচেক, নকরেক ওয়াগি, নকরেক গিসিম= ৭টি
২) দালবত = দালবত রংআ_রংচিং, দালবত ওয়াকসু, দালবত তজু, দালবত মাপফ্রু, দালবত পাচেক, দালবত ওয়াগি, দালবত ওয়াফাং, দালবত দামদিল= ৮টি
৩) ম্রং= মংগ্রি, ম্রংদানিল, ম্রংগিসিম, ম্রং ওয়াকনল, ম্রং গুরা, ম্রং রংচিং, ম্রং পাচেক, ম্রং রাঙ্গল, ম্রং মাপফ্রু= ৯টি
৪) রিছিল = রিছিল চান্দা, রিছিল-ফুকা, রিছিল-খিমা= ৩টি
৫) রাংসা = রাংসা দসিক, রাংসা গিপি, রাংসা গিৎচাক= ৩টি
৬) কুবি = কুবি রংবেত, কুবি রুয়ান, কুবি রংদিক, কুবি রংচিং= ৪টি
৭) বলওয়ারি = বলওয়ারি হামাক, বলওয়ারি দেংওয়াজং= ২টি
৮) মৃ = মৃ জ্রি, মৃ রংবেত, মৃ মাপফ্রু, মৃ দোআমুক=৪টি
) দফো= দফো ওয়াসিং, দফো গিসিম, দফো গিচ্চাক, দফো দেল্লং, দফো রংদিক= ৫টি

সোমবার, ১৬ মে, ২০১৬

গারোদের ডায়ালেক্ট বা উপভাষাসমূহ



গারোদের ডায়ালেক্ট বা উপভাষাসমূহ
আগেই বলা হয়েছে, গারো জাতি পৃথিবীর মধ্যে ব্যতিক্রম জাতি যার অনেকগুলো সম্প্রদায় এবং এদের প্রত্যেকটির আলাদা মাতৃভাষা রয়েছে। তবে কালের বিবর্তনে এদের সবার ভাষা চর্চার অভাবে প্রায় হারাতে বসেছে কিংবা হারিয়ে গেছে।

গারো গবেষকগণ গারোদের ১৭টি সম্প্রদায়ের ভাষার মধ্যে মিগাম এবং আত্তং সম্প্রদায়ের গোত্রের ভাষার শ্রেণিবিন্যাস ভিন্ন বলে মত প্রকাশ করেছেন। আত্তং ভাষা সম্পর্কে লেখক-গবেষক সুভাষ জেংচাম তাঁর গারোদের সমাজ ও সংস্কৃতিগ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “কোচ উপাখ্যানে জানা যায়, দেশত্যাগী কোচ সম্প্রদায়ের ১২টি পরিবার সোমেশ্বরী নদী পাড়ি দিতে অসমর্থ হয়ে সিজুর কাছাকাছি কোন একটি গারো গ্রামে অস্থায়ীভাবে অবস্থান শুরু করে এবং পরবর্তীতে তারা সেখানে গারোদের সাথে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকে। ক্রমান্বয়ে তারা গারোদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কও স্থাপন করে। গারো এবং কোচ সম্প্রদায়ের এই মিশ্র বিবাহের বংশধররাই পরবর্তীতে গারোদের আত্তং দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, কোচ ভাষা ও আত্তং দলের নিজস্ব কথ্য ভাষার মধ্যে যথেষ্ট সাদৃশ্য বিদ্যমান। 
অন্যদিকে ড. রবিন্স বার্লিং তাঁর ‘The Strong Women of Modhupur’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “The Megam speak a dialect of Khasi. On linguistic grounds the Megam must be classified with the Khasis rather than with the Garos, but there is considerable intermarriage along the border, and the Megam share so many features of Garo kinship and social organization that they are sometimes described as another subgroup of Garos.”

সম্প্রতি SIL Bangladesh গারোদের ভাষা নিয়ে গবেষণা করেছেন। গারোদের ভাষার শাব্দিক মিল পর্যবেক্ষণ করে যে রিপোর্ট তুলে ধরেছেন, সেটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। সেসাথে গারো ভাষাগুলোর মধ্যে কোন গোত্রের ভাষা অন্যান্য গোত্রের ভাষার তুলনায় এর টিকে থাকার সম্ভাবনা বেশী বা কম এ নিয়েও ব্যাখ্যা করেছেন। তাদের গবেষণালব্ধ তথ্যটি গারোদের সবার জানা উচিৎ। তাই তাদের রিপোর্টথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি নিম্নে দেওয়া হলো-
বাংলাদেশের মান্দিদের মধ্যে একে অন্যের সাথে যোগাযোগের ভাষা আবেং-এর সাথে অন্যান্য মান্দি ভাষা বৈচিত্রের সাথে তুলনায় অনেক মিল দেখা যায়। আর এ ক্ষেত্রে ব্রাকের সাথে সবচেয়ে বেশি মিল পাওয়া যায়, কিন্তু চিবক, দুয়াল, আত্তং এবং মিগামের সাথে কিছুটা কম এবং এ সাদৃশ্য তাদেরকে এখানে উল্লেখিত ক্রম  অনুযায়ীই কম হতে থাকে, অর্থাৎ চিবক-এর সাথে মিলের পরিমাণ অন্যান্য চারটির তুলনায় বেশি এবং দুয়ালের সাথে আরো কম এবং এভাবে চলতে চলতে মিগামের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম। আবেং, ব্রাক, চিবক এবং দুয়াল এগুলোকে একে অন্যের আঞ্চলিক রূপ বলা চলে, কিন্তু শুধু শাব্দিক বা আভিধানিক সাদৃশ্যের দিক থেকে আত্তং এবং মিগামকে সম্পূর্ণ আলাদা ভাষা বলা চলে। সকল মান্দি ভাষাবৈচিত্র্য থেকে কোচ সম্পূর্ণ একটা আলাদা ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অবশ্য এটা সত্য বলে প্রতীয়মান হয় যে, মান্দি ভাষাবৈচিত্রের মধ্যে আত্তং ও কোচ ভাষার মাঝে সম্পর্ক রয়েছে, কিন্তু আঞ্চলিক সম্পর্ক থাকার মতো যথেষ্ট মিল ছিলনা”সবশেষে সিলেট বিভাগে পূর্বের পরিচালিত জরিপ থেকে সংগৃহীত লিংগাম ভাষার শব্দের তালিকার সাথে মিগাম ভাষার শব্দের তুলনা করা হয়েছিল এবং এর মাধ্যমে এটা পরিষ্কার হয় যে শুধুমাত্র লিংগাম ভাষার সাথে মিগাম  ভাষার এক রকম মিল রয়েছে।

গারো গবেষক, লেখক সুভাষ জেংচাম তাঁর ‘গারোদের সমাজ সংস্কৃতি’ গারো ভাষার সঙ্গে অন্যান্য কতিপয় জাতির ও সম্প্রদায়ের ভাষা কিছু তুলনার ছকের মাধ্যমে দিয়েছেন। পাঠকদের সুবিধার্থে এ ছক তিনটি তুলে ধরা হলো-
সুভাষ জেংচাম ‘গারোদের সমাজ সংস্কৃতি’ – পৃঃ ১২৫, ১২৬


সবশেষে আবারও SIL Bangladesh-এর গারোদের ভাষার স্থায়িত্ব নিয়ে যে জরিপ রিপোর্ট করেছেন, সেটি জানা আমাদের সকলের জরুরী। তাই তাদের রিপোর্টের গুরুত্বপূর্ণ অংশটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
ভাষার স্থায়িত পর্যবেক্ষণের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, পর্যবেক্ষণকৃত ছয়টি গারো ভাষাবৈচিত্র্যের মধ্যে ব্রাক  ভাষার হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, কারণ ব্রাক ভাষার লোকেরা অধিক মাত্রায় এমনকি বাড়িতেও  বাংলা এবং আবেং ভাষা ব্যবহার করছে। অন্যদিকে, আবেং বাংলাদেশী গারোদের মাঝে যোগাযোগের ভাষা  হওয়ায় অন্যান্য ভাষার তুলনায় এর টিকে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশী, এবং এটা বেশির ভাগ বাংলাদেশী  গারোদের মাতৃভাষাও বটে। পর্যবেক্ষণকৃত অন্যান্য চারটি ভাষা- আত্তং, চিবক, দুয়াল এবং মিগাম; তাদের  ভাষারও টিকে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এটা মনে হয় যে, যদি আবেং ভাষার আরো বেশি বিকাশ ঘটে এবং বর্তমানের মত বর্ধিত হারে জনগনের মাঝে আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় বাংলা ব্যবহৃত হতে থাকে তবে সেই ভাষাগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে বাংলা এবং আবেং ভাষা দ্বারা প্রভাবিত হবে”।