সোমবার, ৩ আগস্ট, ২০১৫

গারোদের সাংসারেক ধর্ম এবং দেবদেবী

গারোদের সাংসারেক ধর্ম এবং দেবদেবী
                                                                 ফিডেল ডি সাংমা।
গারোদের আদিধর্মের নাম সাংসারেক। ঐতিহাসিকদের মতে, এই সাংসারেক ধর্ম বিশ্বের সংখ্যাগুরু খ্রীষ্টিয়ান এবং ইসলাম ধর্মের চেয়েও প্রাচীন। অনেকের মতে সনাতন বা হিন্দু ধর্মের সমসাময়িক; তাই মেজর এ প্লেফেয়ার তাঁর The Garos গ্রন্থে হিন্দু ধর্মের মত এই সাংসারেক ধর্মকেও Animism-এ বিশ্বাসী বলে উল্লেখ করেন। আলোচনার শুরুতে Animism-এর সংজ্ঞাটা আগে জেনে নেওয়া যাক। Wikipedia-তে বলা আছে, Animism (from Latin anima, "breath, spirit, life") is the worldview that non-human entities—such as animals, plants, and inanimate objects—possess a spiritual essence.” আবার বলা আছে, “Animism encompasses the belief that there is no separation between the spiritual and physical (or material) world, and souls or spirits exist, not only in humans, but also in some other animals, plants, rocks, geographic features such as mountains or rivers, or other entities of the natural environment, including thunder, wind, and shadows. Animism thus rejects Cartesian dualism. Animism may further attribute souls to abstract concepts such as words, true names, or metaphors in mythology. Some members of the non-tribal world also consider themselves animists (such as author Daniel Quinn, sculptor Lawson Oyekan, and many Neopagans).” অর্থাৎ ব্যাপক অর্থে Animism  শব্দের অর্থ “বহু  দেবতা এবং উপদেবতায় বিশ্বাসকে বুঝায়। তবে, অন্যান্য ধর্মের মত এ সাংসারেক ধর্মের কোন প্রমানপত্র বা ধর্মগ্রন্থ নেই। আদিমকালথেকে এই ধর্ম মুখে মুখে এবং ধর্মাচার পালনের মধ্য দিয়ে আজ পর্যন্ত যৎসামান্য টিকে রয়েছে।
গারোদের সৃষ্টিতত্ত্ব প্রায় অন্যান্য প্রধান প্রধান ধর্মবিশ্বাসের অনুরূপ। বিশেষ করে পবিত্র বাইবেলে বর্ণিত সৃষ্টিতত্ত্বের সঙ্গে ব্যাপক সাদৃশ্য বিদ্যমান। তাদের বিশ্বাস আদিতে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জলময় ও ঘোর অন্ধকারাচ্ছন্ন ছিল। পরবর্তীকালে প্রধান দেবতা তাতারারাবুগা তাঁর সহচর নস্তু-নপান্তু ও অন্যান্য দেব-দেবীর সহায়তায় পৃথিবী, আকাশমণ্ডল, গ্রহ-নক্ষত্র, সাগররাজি, পর্বতমালা, নানা জীবজন্তু, গাছপালা প্রভৃতি সৃষ্টি করেন। তাতারা-রাবুগা ছাড়াও গারোদের উপাস্য আরও অনেক দেবেদবী রয়েছে। এইসব দেব-দেবীর কারো কারো দায়িত্ব মানুষকে বিষয়সম্পদে সৌভাগ্যশালী করা আবার কারো কারো দয়িত্ব মানুষকে নানাবিধ রোগ-ব্যাধি প্রদানের মাধ্যমে শাস্তি প্রদান করা।
শান্তি, নিরাপত্তা, নীরোগ স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবনের আকাঙ্ক্ষায়ই মানুষ দেবতাকে আবিষ্কার করেছে। তাই মানুষ হয়তো জীবনের একেকটা দায়িত্ব একেক দেবতাকে অর্পণ করে নিশ্চিত হতে চেয়েছে। গারো জনগোষ্ঠীর মধ্যেও এই প্রবণতা লক্ষণীয়। ফলে উল্লিখিত দেবতা ছাড়া জীবনের অন্যান্য বিষয় ও দিকের নিয়ন্তারূপে আরো অসংখ্য দেবদেবীকে শনাক্ত করেছে এবং পূজা করে থাকে। আপাতদৃষ্টিতে এসব বিশ্বাস প্রায়ই যুক্তিহীন, আবার কোথাও বিজ্ঞানভিত্তিক যুক্তিলভ্যও। বহুদেবত্ববাদে বিশ্বাসী গারোদের সংস্কৃতির বিস্তৃত পরিসরজুড়ে আছে উল্লিখিত দেব-দেবীকে নিবেদিত কৃত্য। সব কৃত্যের সমাচারই তাদের জীবন ও সংস্কৃতি।
গারোদের আদি ধর্ম বহু-দেবতা ভিত্তিক। এই ধর্মে সূর্য, চন্দ্র, তারকারাজি, বজ্র, বৃষ্টি প্রভৃতির পূজার বিধান রয়েছে।
  কিন্তু এর পাশাপাশি গারোরা সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বে বরাবর বিশ্বাস করে এসেছে। তিনি যে এই পৃথিবীর সবকিছুর স্রষ্টা এ বিশ্বাস গারোদের মধ্যে ছিল। গারোরা একইসঙ্গে মানবদেহে আত্মার অস্তিত্বে বিশ্বাসী এবং সেই আত্মা যে অবিনশ্বর এটাও তারা বিশ্বাস করে। তারাও হিন্দুদের মতো জন্মান্তর বাদে বিশ্বাসী। গারোদের প্রথাগত বিশ্বাস ও সংস্কারসর্বস্ব একটি অনানুষ্ঠানিক কৃষিভিত্তিক ধর্মোৎসব রয়েছে। জমির উর্বরতা বৃদ্ধি, ফসল সংরক্ষণ, রোগশোক, মহামারী, ভূত-প্রেত-রাক্ষস ইত্যাদি অদৃশ্য অপশক্তির অমঙ্গল থেকে বাঁচার জন্য তারা বারো মাসে তেরো কিংবা ততোধিক ব্রত ও পর্ব-পার্বণ পালন করে।
নৃগোষ্ঠীর প্রকৃত পরিচয়টি বিধৃত হয় তার Ritual-এর অবয়বে। আদি গারো এবং বর্তমান সাংসারেকদের বিশ্বাস অনুসারে একেক দেবতার মর্জি একেক রূপ। তাঁদের খুশি করার রীতিও ভিন্ন ভিন্ন। ভিন্ন ভিন্ন তাঁদের উপাচার, নৈবেদ্য, মন্ত্র এবং পূজার লগ্ন। কৃত্যের বাঁধা ছকে আবদ্ধ জীবন তাই কৃত্যসর্বস্ব।

ধরাটি গ্রামের খামাল দীনেশ নকরেক, চুনিয়া গ্রামের খামাল জনিক নকরেক, সাইনামারী গ্রামের খামাল নরেশ মৃ প্রমুখের সাথে সাক্ষাৎকারের সময় জানিয়েছেন সাংসারেক ধর্মে প্রায় ৭০০০ দেবতা, ৭০০ উপদেবতা (মিদ্দি হাজালস্নি, কাচ্চি রিচ্চাসনি) রয়েছে। নিম্নে আমাদের প্রাপ্ত দেবদেবীদের নামগুলো দেওয়া হলো-

১) মিদ্দি আপফা তাতারা_রাবুগা (Tatara Rabuga) = আপফা তাতারা-রাবুগা জগৎ স্রষ্টা; তাঁর দুজন অধস্তন দেবতা নস্তু-নপান্তু এবং মাচি জগৎ সৃষ্টিকর্মে সহায়তা করেতাঁর অনেক নাম, যেমন- ওয়াসিনি_নক্সা, ওজানি_রাজা, আনিং_চারা_খামাল_খলসিফা, দাকগিপা অর্থাৎ সমস্ত কিছুর সৃষ্টিকর্তা, দালগিপা ইত্যাদি।
তিনি সর্বোৎকৃষ্ট ও শক্তিধর আত্মা হিসেবে সব কিছুর তদারক করেন। মানবকল্যাণ সম্বন্ধীয় চিন্তা তাঁর নিজের বিশেষ উদ্দেশ্যের অন্তর্গত। বিভিন্ন সূত্র হতে জানা যায়, তিনি আরও অন্য আটটি নামে পরিচিত। যেমন- স্তরা_পানতুরা, জিপজিনি_জিপজানা, কুরাডুক-কুরাপিন, চানদাসি, গনগগ্রিগিপা, বুলগিপা, ইমবানগগিপা, আজানজান, বুলজানজান, সেকিরা-বালিরা জামানক গিপা ও জানগিনি বিয়ামবি। কালাজ্বর এবং অন্যান্য স্থায়ী জ্বরসহ তিনি নানা ধরনের দুরারোগ্য অসুখ নিরাময় করে থাকেন। তাঁর উদ্দেশে নিবেদিত পূজা খুবই ব্যয়বহুল। এই পুজায় একটি ষাঁড়, একটি ছাগল ও মোরগ-মুরগি অবশ্যই তাঁর সম্মানে হত্যা করা হয় এবং দুই দিন চু এবং ভাত খাবারের ব্যবস্থা থাকে।
২) দেবী সুসিমে বা সুসিমি (Susime) : = তিনি চন্দ্রের দেবী, ধন-সম্পদের দেবী এবং চন্দ্রদেবের প্রতিনিধি। যিনি অশিক্ষা থেকে মুক্তি, অন্ধত্ব এবং শরীরের অবশ বা পঙ্গুত্ব হওয়াথেকে রক্ষাকর্তা। একই ভাবে তাঁকে মানবীয় ও শারীরিক প্রেম ও কাম দেবীও বলা হয়। পৃথিবী সৃষ্টির পর এ দেবী সুসিমেই মানুষকে যৌন কামনা বাসনা দান করেছেন। মানুষের যৌনদুর্বলতাতেও দেবী সুসিমেকে পুজা দিতে হয়। বাঁশের বেড়া দিয়ে গোল করে মণ্ডপ তৈরী করে একটা শূকর, একটি পেঁচা এবং কিছু মদ দিয়ে তাঁর পূজা সম্পন্ন করার বিধান আছে। পূজার উপকরণগুলো অরণ্যচারী গারোদের কাছে সহজলভ্য এবং এগুলো নির্বাচন দেবতার কর্মের সঙ্গেই সংগতিপূর্ণ।
৩) মিদ্দি সালজং (Saljong) = সালজং হচ্ছে গারোদের সূর্যদেবতা, উর্বরতার দেবতা। যিনি ফসলের যোগানদাতা এবং রক্ষাকর্তা। এই দেবতাকে পুজা না দিয়ে কেউ নতুন কোন ফসলে খেতে পারে না। তাই সালজং অবশ্যপূজ্য দেবতা।
তিনি পূজিত হন সর্বদাই। কারণ সব শস্যই তাঁর নিয়ন্ত্রণে এবং তাঁর সহানুভূতি ছাড়া কোনো চাষাবাদ করা সম্ভবকোনো প্রাণী বা জীবের অস্তিত্ব রক্ষা তাঁকে বাদ দিয়ে সম্ভব নয়  গারোদের সর্ববৃহৎ বার্ষিক উৎসব ওয়ানগাল্লা তাঁর সম্মানেই উৎসর্গীকৃত। কিন্তু তাঁর উদ্দেশে প্রকৃত পূজা নিবেদিত হয় মাঠে, গ্রামে উৎসব অনুষ্ঠিত হওয়ার আগে। একটি মোরগ হত্যা করে সেটির রক্ত উৎসর্গ বেদিতে ছিটানো হয়। সামান্য মদ এই বেদির বাইরে মাটিতে এর সম্মুখে রাখা হয়। তারপর পূজারিরা ওয়ানগাল্লা উৎসবে আনন্দ উপভোগের জন্য গ্রামে ফিরে আসে। এই দেবতা থেংসুগুপা, সালগিরা, সালগ্রা, গেস রেংরা-বালসা নামেও পরিচিত।
৪) মিদ্দি আসিমা_দিংসিমা (Asima Dingsima)= এ দেবী খুবই তেজস্বিনী এবং দেবী সুসিম্মের মাতা। যার নাম উচ্চারণ করলেই মানুষের দুর্ভাগ্য নেমে আসতে পারে বলে সাংসারেক ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস। আপাতদৃষ্টে এ রকম ধারণা করা হয় যে সুসিমি তা সহ্য করতে পারে না। আসিমা দিংসিমা তিনি সুনির্দিষ্ট কোনো কর্ম উপলক্ষে আবির্ভূত হন না। তাই তাঁর পূজাও অনুষ্ঠিত হতে দেখা যায় না। তাঁর অনেক নাম রয়েছে- তন্মধ্যে নরেকবাক (Norekbak), নরেকদিম(Norekdim), সোনাকালি_কাবুরাঞ্চি (Sonakalie-Kaburanche) এবং মিকরংগিতক_খি’সাং_সিতক(Mikrongitok-kishang-sitok) ইত্যাদি। তাঁকে শূকর এবং মোরগ দিয়ে পুজা দিতে হয়।
৫) মিদ্দি নাওয়াং (Nawang) = যমদূত বা মৃত্যুদূত বা জীবন হননকারী বা রাক্ষস। যিনি মানুষের আত্মাকে চিকমাং বা বালফাক্রাম পর্যন্ত নিয়ে যান। তিনি হচ্ছেন একটি খারাপ আত্মা, যিনি মানুষকে ভালো কাজথেকে বিরত রাখলে প্রলোভিত করতে পারে, স্বর্গের পথ থেকে মানুষের আত্মাকে বিতাড়িত করতে পারেতাই ধারণা করা হয়, জীবিত মানুষকেও খারাপ পথে পরিচালিত করার জন্য নাওয়াং সর্বদায়ই সারা দুনিয়ায় ঘুরে বেড়া। এ কাজে সে কখনো মনুষ্যরূপে কখনো শয়তান বা পৌরাণিক প্রাণীর আকৃতি নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। ইনি মানুষের মৃত্যুশয্যায় বসে থাকে মৃত্যুর পর তার আত্মাকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়ার জন্য। তাই মরণশীল মানুষ তাঁর আক্রোশ থেকে মুক্তির লক্ষ্যে লোহার তৈরি একটি অস্ত্র বানিয়ে সাথে রাখেন। গারোদের বিশ্বাস; কোন এক দুষ্ট দেবী মানুষের কাছ থেকে এটা ধার করে অথবা কেড়ে নিয়ে যায় এবং দূর থেকে তা নিক্ষেপ করে বলে সেই মানুষের আত্মরক্ষার কিছুই থাকে না; ফলে মানুষের মৃত্যু হয় গারোরা মৃতব্যক্তির সাথে মুদ্রা বা পয়সা দিয়ে থাকেন, সে মুদ্রাগুলো এই নাওয়াংকে প্রদান করতে হয়। মিদ্দি নাওয়াং মানুষের পেট ফাঁপা ধরা, পাকস্থলীর ব্যথা, বমি ও ডায়রিয়ার কারণ। তাই তাঁকে পেটের পীড়ার জন্য পুজা দেওয়া হয়।
৬) মিদ্দি চুরাবুদি (Churabudi) = চুরাবুদি একটি প্রসন্ন আত্মার দেবতা। তিনি ধরিত্রীমাতা বা পৃথিবী পৃথিবীর বুকে শষ্য ফলে বলে চুরাবুদিকে ফসলের রক্ষাকর্তা বা শস্য দেবতাও বলা হয়। চুরাবুদি তাতারা রাবুগার আজ্ঞাবহ। অন্য দেবতা মাচির সহযোগিতায় পৃথিবী তিনি সুসজ্জিত করেন। জমির ফসল তোলার আগে চুরাবুদির জন্য পূজার আয়োজন করে তার উদ্দেশে চাল, ময়দা, তরমুজ বা খেজুর উৎসর্গ করতে হয়। অর্থাৎ যাবতীয় কৃষিজ দ্রব্যসামগ্রী তার পূজার উপকরণরূপে উৎসর্গ করাই বিধি। আর, যখন তাতারা-রাবুগার উদ্দেশে পূজা নিবেদন করা হয় তখন চুরাবুদির উদ্দেশে অবশ্যই একটি শূকর অথবা একটি মোরগ উৎসর্গ করে তাঁকে পুজা দিতে হয়। মূলত কৃষি অর্থনীতিনির্ভর সমাজের গারো অধিবাসীরা চুরাবুদির ওপর আপন সন্তোষ প্রকাশ করতেই তার পূজানুষ্ঠানের আয়োজন করে। কানের ব্যথা এবং ফোড়া ইত্যাদি রোগজনিত বেদনানাশের জন্য তার পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
৭) মিদ্দি দেবী নস্তু-নপান্তু (Nostu-Nopantu)= আপফা মিদ্দি তাতারা_রাবুগার নির্দেশে মাচির সহযোগিতায় পৃথিবী সৃষ্টিতে সহায়তাকারী বা দায়িত্বপ্রাপ্ত। তিনি পৃথিবীকে সুদৃশ্যরূপে তৈরি করেন। পৃথিবী সৃষ্টি ছাড়া তার তেমন কোনো ভূমিকা নেই। যেহেতু তারা মানুষের কোনো ক্ষতি করে না; সেহেতু নস্তু-নপান্তু ও মাচির উদ্দেশে কোনোরূপ পূজা অর্পণ করা হয় না।
৮) মিদ্দি গয়েরা/গয়রা বা দুরা মিদ্দি বা রাংখান্তা (Goera.Dura) = পরাক্রম শক্তিদেবতা, যিনি বজ্র ও বিদ্যুৎ নিয়ন্ত্রণ করেন। গোয়েরা হচ্ছে শক্তির দেবতা এবং বজ্র ও বিদ্যুতের উৎস বা কারণ। দীর্ঘ অসুস্থতার পরে স্বাস্থ্য ও শক্তির কামনায় তাঁর প্রার্থনা করা হয়। সব সময়ই গাছের শিকড়ে তাঁর পূজা উৎসর্গীকৃত হয়ে থাকে।  যখন একটি গাছ বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয় বা মারা যায় তখন এরূপ বলা হয়, গোয়েরা একে আঘাত করেছেন। এই সময় ওই গাছের শিকড়ে এই উদ্দেশে পূজা দিতে হয়, যাতে পার্শ্ববর্তী গৃহস্থদের কোনো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এই দেবতার পূজার সঙ্গে অরণ্যাচারী গারোদের নৈমিত্তিক জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি যুক্ত। একটি শূকর, একটি মোরগ-মুরগি অথবা একটি পাতিহাঁস তাঁর পূজায় নিবেদন করা হয়।
৯) মিদ্দি বা’গিপা বরম্বি (Bagipa_Borombi) = শিশুর জীবন রক্ষাকর্তা; যাকে শিশুর জন্মের সময় মোরগ বলি দিয়ে পুজা দিতে হয়।
১০) মিদ্দি কালকামে (Kalkame) = তিনি সেই দেবতা, যাঁর দুই হাতে সব হাতে মানুষের জীবন ন্যাস্ত থাকে। তাঁকে গ্রাম দেবতাও বলা হয়। ইনি গোয়েরার ছোটভাই; যিনি গ্রামের সকলকে বিভিন্ন রোগ-শোক, বিপদ-আপদথেকে রক্ষা করেন।
’সংথাতা বা আ’সংরকা উৎসবে তাঁর প্রার্থনা অনুষ্ঠিত হয়। পূজা উৎসব পরবর্তী বছর পর্যন্ত তিনি সমূহ বিপদ-আপদ থেকে গ্রামবাসীকে রক্ষা করেন। মানুষ তাঁর নাম করে শয়তান তাড়ায়। পাথরের উপরে বেদী সাজিয়ে তাঁর পূজা অনুষ্ঠিত হয় এবং উৎসর্গীকৃত পশু বা মোরগ-মুরগির রক্তে ওই পাথর রঞ্জিত করা হয়। জীবনরক্ষাকারী দেবতা হিসেবে তাঁর পূজা অন্য দেবতাদের পূজা অপেক্ষা অধিকতর গুরুত্ব লাভ করে। কালকামের খুশির জন্য তাঁর পূজায় একটি ছাগল অথবা একটি মোরগ-মুরগি উৎসর্গ করাই নিয়ম
১১) মিদ্দি নারেংসি (Narensi) = ইনি সেই দেবতা, যিনি ভূমিস্থল নির্মানের কাজে পাতালপুরীথেকে মাটি এনে দিয়েছিলেন। ইনি বা চিচিং_বারচিং নামেও পরিচিত। এই দেবতাও মানুষের কোনো ক্ষতি করে না
১২) মিদ্দি নচী= উপদেবতা; যিনি পাতালপুরীথেকে মাটি আনতে গিয়ে দেবী “চি_রিম্মিৎ”এর রূপে মজে গিয়ে মাটি আনতে ভুলে গিয়েছিলেন। এছাড়া তার তেমন কোনো ভূমিকা আছে কিনা তা জানা যায় নায়এই দেবতা মানুষের কোনো ক্ষতি করে না
১৩) মিদ্দি ব্রারা (Brara) = মিদ্দি ব্রারা চর্মরোগের অধিকারী। মানুষের উপর তাঁর ছায়া পরলেই সারা শরীর চর্মোরোগে আক্রান্ত হয়। তাই এই দেবতাকে চর্মরোগ পালন ও রক্ষাকর্তা বলা হয়ে থাকে।
১৪) মিদ্দি দগ্নী (Dogni) = মিদ্দি দগ্নীও ব্রারার মতোই চর্মরোগের অধিকারী। মানুষের উপর তাঁর ছায়া পরলেই সারা শরীর চর্মোরোগে আক্রান্ত হয়। তাই এই দেবতাকেও চর্মরোগ পালন ও রক্ষাকর্তা বলা হয়ে থাকে। মিদ্দি ব্রারা এবং মিদ্দি দগ্নী উভয়ের ক্ষেত্রেই সিম্মা নিয়া বা রোগ পরীক্ষার করার পর মুরগী অথবা হাঁস দিয়ে পুজা করার নিয়ম প্রচলিত।
১৫) মিদ্দি নকনি বিদাওয়ি (Nokni_Bidawe) = মিদ্দি নকনি বিদাওয়ি কুদৃষ্টি মানে কোন জীবের শারীরিক ও মানসিক দুর্বলতা। অসুস্থ্যতাজনিত অথবা কোন কারণ চিহ্নিত ছাড়াই যদি কারোর শরীর শুঁকিয়ে দিন দিন দুর্বল হতে থাকে, তাহলে মিদ্দি নকনি বিদাওয়িকে একটি মোরগ দিয়ে পুজা দেওয়া হয়।
১৬) মিদ্দি বিদাওয়ি চাপিগাল (Bidawe Chapiga) = মিদ্দি বিদাওয়ি চাপিগাল অতি সুন্দরী দেবী। ইনি সৌন্দর্যের প্রতিকী হিসাবে পাহাড়ের ঝর্ণা রূপ ধারণ করে থাকেন। তাই মিদ্দি বিদাওয়ি চাপিগালকে ঝর্ণা দেবী বলা হয়; মানুষের পানির অভাব হলে বা মাটিথেকে পানি শুঁকিয়ে গেলে একটি শুকর উৎসর্গের মাধ্যমে তাঁকে পুজা দেওয়া হয়
১৭) মিদ্দি আ’সং (A’song)= এই মিদ্দি আ’সং-ও গ্রাম রক্ষাকর্তা; ইনি কলেরা, বসন্ত ইত্যাদি রোগেররক্ষাকর্তা। এসব রোগ হলে মুরগী অথবা কবুতর দিয়ে তাঁর পুজা দিতে হয়।
১৮) মিদ্দি চিচানি বা চিনি (Chi’chani) = চিচানি মিদ্দি, যার পানিতেই বসবাস। এই মিদ্দির সর্বদা আকন্ঠ তৃষ্ণা। তাই যখনই ইচ্ছা করেন, তখনই মানুষকে পানিতে ডুবিয়ে মারতে পারেন। এই তৃষ্ণা মেটানোর জন্য প্রয়োজনে মানুষের শরীরের সমস্ত পানি বের করেন ডাইরিয়া রোগ দেওয়ার মাধ্যমে। তাই এই মিদ্দি ডায়রিয়া ও জ্বরের রক্ষাকর্তা। তাঁকে পানিতে ডুবে মৃত্যুর কারণ ও রক্ষাকর্তা বলে মনে করেন।
১৯) মিদ্দি গামিকখা (Gamikka) = গৃহপালিত পশুপাখির রক্ষাকর্তা, পশুপাখির মড়ক লাগলে তাঁকে পুজা দেওয়া হয়। তাঁর পুজার নৈবেদ্য হিসাবে শূকর, হাঁস, মুরগী, ছাগল, ভেড়া, কবুতর ইত্যাদির যে কোন একটি বলি দিতে হয়।
২০) মিদ্দি বানফাং বাসুলি (Banpang Basuli) = মিদ্দি বানফাং বাসুলি অতি চঞ্চল, দুরন্ত দেবতা। এই দেবতার পুজার অভাব বোধ করলেই মানুষকে মৃগী রোগী বানিয়ে দেন। আবার তাঁকে পুজা দিলেই সে রোগি সুস্থ্যতা লাভ করতে পারে। তাই এই দেবতাকে মৃগী রোগের রক্ষাকর্তা হিসাবে মানা হয়।
২১) মিদ্দি বাসুলি দালগুবা (Basuli Dalguba) = মিদ্দি বাসুলি দাল্গিপা মস্তিষ্ক বিকৃতি জনিত রোগের রক্ষাকর্তা। মস্তিষ্ক বিকৃতি জনিত রোগে কেউ হারিয়ে গেলেও তাঁকে পুজা দেওয়া হয়
২২) মিদ্দি দুমারু_চাংমারু (Du’mau_Changmaru) - উপদেবতা পাতালপুরীর দেবতা, অধিকর্তা এবং দেবী চি_রিম্মিৎ-এর স্বামী।
২৩) দেবী চি_রিম্মিৎ (Chi_Rimmit) = মিদ্দি দুমারু_চাংমারুর স্ত্রী; পাতালপুরীর দেবী; যার রূপে “মিদ্দি নচী” ভূমিস্থল নির্মানের কাজে পাতালপুরীথেকে মাটি আনতে গিয়ে ভুলে গিয়েছিলো।
২৪) মিদ্দি দরিবল্ (Doribol) = মাথা ঘোরা, প্রেসার জাতীয় রোগের রক্ষাকর্তা। মাথা ঘোরা, বমি, শরীর কাঁপুনি, অজ্ঞান হয়ে পড়লে একটি মোরগ বা মুরগী দিয়ে তাঁকে পুজা দিতে হয়।
২৫) মিদ্দি মাৎচি আ’দক (A’dok) = মিদ্দি দরিবলের মতো মিদ্দি মাৎচি আ’দকও মাথা ঘোরা, প্রেসার জাতীয় রোগের রক্ষাকর্তা। মাথা ঘোরা, বমি, শরীর কাঁপুনি, অজ্ঞান হয়ে পড়লে একইভাবে একটি মোরগ বা মুরগী দিয়ে তাঁকে পুজা দিতে হয়।
২৬) মিদ্দি রিসি নকমা (Risi_Nokma) = সাংসারেক ধর্মের অনেক দেবতা রয়েছেন, যারা মানুষের কোন ক্ষতি করেন না বা মানুষের সামনে যখন তখন চলে আসেন না। এই রিসি নকমাও সেরকম একজন দেবতা। মিদ্দি চুরাবুদিকে পুজা করার সময় যাকে ঘরের ভেতর পুজা দিতে হয়।
২৭) মিদ্দি জারিদ্দিং (Jaridding) = এই দেবতাও ক্ষতিকারক নন, তাই চুরাবুদির সাথে তাঁকেও স্মরণ করে সূতা বেঁধে পুজা দিতে হয়।
২৮) মিদ্দি জাফাকরা (Jakapra) = এই মিদ্দি জাফাকরাও সেরকম একজন দেবতা। যিনি মানুষের কোন ক্ষতি করেন না বা মানুষের সামনে যখন তখন চলে আসেন না। মিদ্দি চুরাবুদিকে পুজা করার সময় তাঁকেও স্মরণ করে পুজা দিতে হয়।
২৯) মিদ্দি মা’চি (Ma’chi) = সৃষ্টিকর্তা তাতারা_রাবুগার নির্দেশে নস্তু-নপান্তুর সহযোগিতায় পৃথিবী সৃষ্টিতে সহায়তাকারী বা দায়িত্বপ্রাপ্ত এই দেবী। তিনি পৃথিবীকে সুদৃশ্যরূপে তৈরি করেন। পৃথিবী সৃষ্টি ছাড়া তাঁর কোনো ভূমিকা নেই। যেহেতু তারা মানুষের কোনো ক্ষতি করে না; সেহেতু মাচিনস্তু-নপান্তুর উদ্দেশে কোনোরূপ পূজা অর্পণ করা হয় না।
৩০) মিদ্দি চিপং নকমা (Chipong_Nokma) = মিদ্দি চিপং নকমার কুনজর মানুষের উপরে পরলে তাঁর হাত, পা ফুলে যায় এবং স্বাভাবিক চলাফেরা করতে পারে না। তাই হাত-পা ফোলা রোগের জন্য চিপং নকমাকে পুজা দিতে হয়।
৩১) মিদ্দি বালং গিত্তেল (Balong Gittel) = এই মিদ্দি চিচিং_বারচিংকে মাঞ্জুষের সারা শরীর ফুলে যাওয়া রোগের কারণ মনে করা হয়। তাই এ রোগে কেউ আক্রান্ত হলে তাঁকে পুজা দিতে হয়।
৩২) মিদ্দি মাৎচা দেও (Matcha Deo) = এই দেবতার আবাস্থল জলাশয়ে বা এর কাছাকাছি বড় কোন গাছের কোঠরে। এই দেবতা কাঁচা মাছপ্রিয়। সন্ধ্যার অন্ধকারে মৎস শিকারিকে অনুসরণ করে এবং মানুষকে মাছের প্রলোভন দেখিয়ে জলে টেনে নিয়ে ডুবিয়ে মেরে ফেলতে পারে।
৩৩) মিদ্দি নজারিক_নংদিল (Nojarik Nongdil) = মিদ্দি নজারিক_নংদিল দুধ প্রিয় দেবতা। সন্তান দুগ্ধবতী মাকেও তাঁর ইর্ষা, তাই তাঁর বদ নজরে মায়েদের স্তন ফুলে যায় এবং তীব্র ব্যথায় ভুগে, তাই মা সন্তানকে বুকের দুধ কপান করাতে পারে না। তাই এই বুকে ব্যাথা এবং মহিলাদের স্তনে ব্যাথা বা দুধ ওঠার জন্য পূজনীয়।
৩৪) মিদ্দি নরে_চি’রে_কিমরে_বকরে (নোবিচি_কিমরি_বকরি (Nore_Chire_Kimre bakre) = এই দেবতার নামটাও কিম্ভূতকিমাকার, মিদ্দি নরে_চি’রে_কিমরে_বকরে বা নোবিচি_কিমরি_বকরি। এর কুনজরে মানুষের শরীরে প্রচণ্ড গরম হয়ে জ্বর আসতে পারে। তাই এরকম হলে তাঁকে একটি মুরগী এবং চু দিয়ে পুজা দিতে হয়।
৩৫) মিদ্দি সালারাম_সালগিৎচাক (Salaram_Salgitchak) = মিদ্দি সালারাম_সালগিৎচাক-এর অপর নাম মারাং কিপাত্তাং গাল্লানি মিদ্দি। অর্থাৎ এই দেবতা মানুষের জন্য অমঙ্গল বয়ে নিয়ে আসে। একারণে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজে অমঙ্গলজনক বা অপ্রোতিকর ঘটনা ঘটে বলে সাংসারেকদের বিশ্বাস। তাই অমঙ্গল দূর করতে এই দেবতাকে পুজা দেওয়ার রেওয়াজ। পাপ বা অমঙ্গলথেকে শুচিকরণের সিম্মা নিয়া অনুসারে ডিম অথবা মোরগ দিয়ে এই দেবতাকে পুজা দিতে হয়
৩৬) মিদ্দি দাল’চিরিং (Dal’a Chiring) = ক্লান্তি অবসাদ এবং পেটের পীড়ায় যাকে পুজা দিতে হয়
৩৭) মিদ্দি নকরাম (নকগাম)= প্রচলিত আছে, এই দেবতার সারা শরীরে চুলকানি রোগে পরিপূর্ণ। তাই এই দেবতার গায়ের হাওয়া বা গন্ধ মানুষের শরীরে লাগলেই তারও চুলকানি রোগে আক্রান্ত হবে। শরীর ব্যাথা ও চুলকানির রোগে এই দেবতাকে পুজা দিতে হয়
৩৮) মিদ্দি সালবামন (Salbamon) = মিদ্দি সালবামনের কুনজরে মানুষের শরীরের ফুলে যাওয়া, চুলকানির সাথে ব্যাথার রোগে আক্রান্ত হওয়ার কারণ। তাই কারোর শরীরের ফুলে যাওয়া, চুলকানির সাথে ব্যাথার রোগ হলেই মিদ্দি সালবামনকে একটি মোরগ উৎসর্গের মাধ্যমে পুজা দিতে হয়
৩৯) মিদ্দি উদুম_বিমা (Udum Bima) = শরীর ফুলে যাওয়া, চুলকানির সাথে বাত ও ব্যাথাজনিত রোগ এবং পক্ষাঘাতের জন্য পুজনীয় দেবতা। একটি কালো রঙের ছাগল উৎসর্গের মাধ্যমে পুজা দিতে হয়।
৪০) মিদ্দি জা’আ (Ja’a) = থেকে থেকে জ্বর, অরুচি, শরীর শুকিয়ে যাওয়াথেকে রক্ষা পেতে পুজা দিতে হয়।
৪১) মিদ্দি চি’কং বা চিখং (Chikhong) = গারো ভাষায় চি মানে পানি আর খং-এর অর্থ হচ্ছে গর্ত চিখং-এর শাব্দিক অর্থ চাড়াঁইয় জলাধার। এই মিদ্দি চি’খং ঠাণ্ডাজনিত জ্বরের রক্ষাকর্তা
৪২) মিদ্দি আ’চিকরা (Achikra) = শিশুদের পাগলা ভাব বা অস্বাভাবিক আচরণের জন্য পুজা দিতে হয়।
৪৩) মিদ্দি আফুরু বা হা’ফুরু (Hapuru) = মানুষের পেটে হঠাৎ করে গ্যাস জমে ফুলে ঢোল হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে কানে বন্ধ হয়ে যাওয়া, ঝিন-ঝিন বা শন-শন করে আওয়াজ করা এবং কানে কম শোনা বা একেবারেই না শোনার জন্য এই মিদ্দি আফুরু দায়ী। তাই কারোর পেট ফুলে যাওয়া এবং কানে কম শোনার জন্য পূজনীয়
৪৪) মিদ্দি মারেমু_মারেবক (Maremu_Marebok) = রকমারাঙা বা শুদ্ধিকরণ বা সংশোধনের নিমিত্তে পুজনীয় দেবতা। অমঙ্গল বা শনির প্রভাবথেকে মুক্ত হওয়ার জন্য যাকে পুজা দিতে হয়।
৪৫) মিদ্দি রংদিক (Rongdik) = ধানের ফলন দেবী, যার আশীর্বাদে ধান ভালো হয়, সংসারের অভাব দূর হয়
৪৬) মিদ্দি নাগনি/চিপফু আমা (Nagni) = ইনি সর্পদেবী। এর পরিচারকের নাম সুরেং রেং নামক একটি বিশাল সাপ। মিদ্দি নাগনির মনঃক্ষুণ্ণ হলে সাপেরা মানুষকে দংশন করে। তাই অকারণে সাপ মারতে নেই।
৪৭) মিদ্দি খ্রংনা বা গ্রংনা (Krongna) = ঘন জঙ্গলে চলাচল করতে হলে মিদ্দি খ্রংনা/গ্রংনা ছাড়া ভাবা যায় না। এই দেবতা মানুষকে নিরাপদে বনজঙ্গল পার করে দিতে পারেন। আর জঙ্গলের ধারেকাছে বসবাস করতে হলেতো এই দেবতা ছাড়া ছাড়া গতি নাই। তাই সাংসারেকদের বিশ্বাস, এই দেবতা জীবজন্তুর অত্যাচারথেকে রক্ষাকর্তা।
৪৮) মিদ্দি গং (Gong) = মিদ্দি গং ঐশর্যের যোগানদাতা এবং রক্ষাকর্তা; ইনিই মানুষকে ঐশর্য দান করেন।
৪৯) মিদ্দি না’মা_না’সা (Na’ma_Na’sa) = মাছের দেবতা; জলজ প্রাণীর পালনকর্তা
৫০) মিদ্দি থেংআ (Thenga) = ইনি আলোকবর্তিকা দেবী। বিপদের বন্ধু। মানুষকে বুদ্ধি পরামর্শ দিয়ে আলোর পথে নিয়ে চলতে চান।
৫১) মিদ্দি টংরেমা (Tongrema) = বিভিন্ন জলাধার; যেমন নদী, খাল, বিল, পুকুর, মান্দা ইত্যাদি স্থানে এই দেবির আবাস্থল। ইনি ছোট ছেলেমেয়ে এবং ভীতু লোকদের ভয় (থরা’স) দেখিয়ে থাকেন।
৫২) মিদ্দি আল্লেমী (Allemi) = দেবী আল্লেমী সকল দেবদেবির রানীও বলা হয়। ইনি মানুষের দেহে নানা প্রকার রোগ-শোক, ব্যাথা-বেদনার কারণ।
৫৩) মিদ্দি মেগাফাপি’আ (Megafapia) = এ দেবিও মিদ্দি বা’গিপা বরম্বির মতোই শিশুর জীবন রক্ষাকর্তা; যাকে শিশুর জন্মের সময় পুজা দিতে হয়। সন্তান জন্মের সময় গর্ভবতী মায়ের কষ্টের সময় এই দেবীকে স্মরণ করা হয়।
৫৪) মিদ্দি আন্নিং (Anning) = বাচ্চাদের মাথা ব্যাথা এবং চুল পড়ার কারণ। তাঁকে শূকর এবং মদ দিয়ে পুজা দিতে হয়।
৫৫) মিদ্দি চুরাসি (Churasi) = ছেলেমেয়েদের পেটের পীরায় এই দেবিকে মোরগ, মদ উৎসর্গের মাধ্যমে পুজা দিতে হয়।
৫৬) মিদ্দি চাগপ (Chagop) = চাগপ দেবতার কুনজরে মানুষের পা প্রচুর পরিমানে ঘামে এবং মানুষের শরীরকে প্রচণ্ডভাবে দূর্বল করে দিতে পারে।
৫৭) মিদ্দি আগপফা (Agopfa) = এই দেবতাও মানুষের শরীরকে প্রচণ্ডভাবে দূর্বল করে দিতে পারে।
৫৮) মিদ্দি চি_গিৎচাম (Chi_Gitcham) = এই দেবতা কুনজরে মানুষ বাত-বেদনায় ভুগে থাকে। এই দেবতাকে ষাঁড় গরু/শুকড় উৎসর্গের মাধ্যমে পুজা দিতে হয়।
৫৯) মিদ্দি জগু (Jogu) = বুকে এবং পিঠের ব্যাথার কারণে শ্বাসকষ্ট হলে তাঁকে পুজা দিতে হয়। এই দেবতাকে শুকর, মোরগ উৎসর্গের মাধ্যমে পুজা দিতে হয়।
৬০) মিদ্দি বিদাওয়ি চিবাল (Chibal) = শরীর ফোলা এবং সুতিকা জাতীয় রোগের রক্ষাকর্তা
৬১) মিদ্দি আজিম (Ajim) = আজিম_রাজা; পাতালে অবস্থানকারী। এই আজিম রাজা তার স্ত্রী সেং’চীর সাথে পাতালপুরীতে অবস্থান করেন, এবং এরাই পশু-পাখির লালন ও পালনকারী। পৃথিবী সৃষ্টির পর এই দম্পতিই মানুষকে খাবার এবং লালন পালনের জন্য পশু পাখি দিয়েছেন।
৬২) মিদ্দি সেং’চি (Seng’chi) = মিদ্দি সেং’চী একজন দেবী এবং পাতালে অবস্থানকারী আজিম_রাজার স্ত্রী। এরাই পশু-পাখির লালন ও পালনকারী।
৬৩) মিদ্দি গং বা গঙ্গা (Ganga) = ঐশ্বর্যের দেবতা। মিদ্দি গং বা গঙ্গা জুম চাষের প্রবর্তক এবং তুলা চাষের প্রবর্তক
৬৪) মিদ্দি রোক্কিমা (Rokkima) = ধানের দেবী। ধারণা করা হয় হিন্দু ধর্মের লক্ষ্মী দেবীই রোক্কিমা নামে গারোরা পূজা করে।
৬৫) মিদ্দি বালওয়া/বালমন্দ্রি (Balwa_Balmondri) = বায়ু ও ঝড়ের দেবতা। প্রবল ঝরের তাণ্ডব হতে গ্রামবাসীকে বাঁচানোর জন্য এই দেবতাকে সিম্মা নিয়া অনুসারে দেবতার চাহিদা অনুসারে গৃহপালিত পশুপাখি বলি দিয়ে পুজা দিতে হয়।
৬৬) মিদ্দি গ্রো_চাআনি (Gro Cha’ani) = মানুষের সমাজে অর্থদন্ড দেওয়া হলে এই দেবতাকে স্মরণ করা হয়, যেন পুনরায় অর্থদণ্ডের মত কোন দুর্ঘটনা না ঘটে।  
৬৭) মিদ্দি আবেত রেঙ্গে (Abet_Renge) = আসিমা_দিংসিমার মতো ক্ষতির দেবতা। এই দেবতাকে অপমান করলে কঠিন অসুখ হয় এবং এই অসুখ থেকে মৃত্যুও হতে পারে।
৬৮) মিদ্দি পাত্তাংগ্নি বা পাচ্চাংগ্নি (Patchang'gni) = গারো ভাষায় গ্নি মানে হচ্ছে দুই সংখ্যা। যে কোন মানুষের হাতে ও পায়ের হাড়ের সন্ধিস্থলে ব্যথা হতে পারে। তাই হাটু ও পেশীর ব্যাথায় মোরগ দিয়ে পুজা দিতে হয়।
৬৯) মিদ্দি কুবেরা (Kubera) = পাতালের দেবতা। পাতালের সঞ্চিত অর্থ পাহারা দেন। হিন্দু পৌরাণিক চরিত্র কুবের-এর সাথে এর মিল রয়েছে বলে অনেকে মনে করেন।
৭০) মিদ্দি পিৎরাংফা (Pitratfa) = এই দেবতা সেংরাংফাও বলা হয়। চর্মরোগের কারণে একটি মোরগ দিয়ে পুজা দিতে হয়।
৭১) মিদ্দি আপিতফা (Apitfa) – এলার্জির কারণে শরীর চুলকানো রোগের কারণে একটি কবুতর দিয়ে পুজা দিতে হয়।
৭২) মিদ্দি বুরুম্বি/বাগুবা (Burumbi) = মাৎচা, মাকবুল, চিপ্পু, হারিঙ্গা, চিনি জ’অং পালনকারী দেবতা। 
৭৩) মিদ্দি গ্রাগ্সি (Graksi) = বুকে ব্যাথা বা নিমোনিয়ার ধারক ও বাহক। বাঁশ দ্বারা সাম্বাসিয়ার মাধ্যমে মোরগ এবং মদ দিয়ে পুজা দিতে হয়।
৭৪) মিদ্দি রাকগাসি (Raggasi) = এই মিদ্দি রাগগাসি ধুমকেতু বিশেষ। সোনারূপার মালিক বা বহনকারী। তার কাছে চাওয়া হয়।
৭৫) মিদ্দি খেতর/কেত্তর (Kettor) = এই দেবতা শুকড়ের পরিচালক। পশু শিকার না মিললে অথবা শিকারের আগে এই দেবতাকে একটি মোরগ দিয়ে পুজা দিতে হয়।
৭৬) মিদ্দি দো’জং (Do’jong) = জ্বরের কারণে এই দেবতাকেও পুজা দিতে হয়। এই পুজায় একটি মোরগ উৎসর্গ করতে হয়।
৭৭) মিদ্দি ফোজো (Fojou) = সন্তান উৎপাদনের দেবী। এই দেবতাকে একটি মোরগ দিয়ে পুজা দিতে হয়।  
৭৮) মিদ্দি আগপফা (Agopfa) = এই দেবতা ফরিং-এর পরিচালক। শরীর চুলকানো রোগের কারণে একটি ফরিং অথবা একটি মোরগ দিয়ে পুজা দিতে হয়। 
৭৯) মিদ্দি তেংগাজা (Tengaja) = জিন-পরির দেবী। প্রচলিত জিন-পরির আচর নাকি এই মিদ্দি তেংগাজা বা তাঁর উপদেবতাদের কারণে হয়ে থাকে। এই দেবীকে ছাগল, কবুতর, সিঁদুর এবং ধুপারতি দিয়ে পুজা দিতে হয়।
৮০) মিদ্দি গদাংফা (Godangfa) = শরীরের বিষ ব্যাথায় এই দেবতাকে একটি মোরগ দিয়ে পুজা দিতে হয়।  
৮১) মিদ্দি টিকরে (Tikre) = মিদ্দি টিকরে একজন দেবী। অসুস্থতার কারণে এই দেবীকে একটি মুরগী দিয়ে পুজা দিতে হয়।
৮২) মিদ্দি টিকসে (Tikse) = মিদ্দি টিকসে একজন দেবতা; এবং মিদ্দি টিকরের স্বামী। অসুস্থতার কারণে রোগীর হাত পা বাঁকা হয়ে গেলে এই দেবতাকে একটি মোরগ দিয়ে পুজা দিতে হয়।
৮৩) মিদ্দি রুরুবে_কিন্নাসে (Rurube_Kinnase) = শিশুদের অসুস্থ্যতা এবং অস্বাভাবিক আচরণের একটি মুরগীর ডিম দিয়ে এই দেবতাকে পুজা দিতে হয়।
৮৪) মিদ্দি ক’সাপিক_কসাপিন (Kosapin_Kosapik) = পেট ফাঁপা এবং ব্যাথার কারণে একটি কবুতর দিয়ে এই দেবতাকে পুজা দিতে হয়।
৮৫) মিদ্দি সিম্বু (Simbu) = পেটের ব্যাথার কারণ, ভাত দিয়ে পুজা দিতে হয়।
৮৬) মিদ্দি জিকমিদ্দি (Jikmiddi) = গারো ভাষায় জিক মানে হচ্ছে স্ত্রী। অর্থাৎ এই দেবী গৃহদেবতার স্ত্রী একজন স্ত্রী। ইনি মানুষের ঘরের কোনায় বা এর আশেপাশের থাকতে পছন্দ করেন।
৮৭) মিদ্দি বুদবিমা (Budbima) = মাথা ঘোরা এবং অসুস্থ্যতার জন্য এই দেবীকে একটি মুরগি দিয়ে পুজা দিতে হয়।
৮৮) মিদ্দি মেংগং (Mengong) = বিড়ালের আচড়ের মতো পেটের ব্যাথার কারণ, একটি পুষ্ট মুরগীর ডিম দিয়ে মিদ্দি মেংগংকে পুজা দিতে হয়।
৮৯) মিদ্দি রাগ’গাআল (Ragga'al) = হাটু ও পেশীর ব্যাথায় মোরগ দিয়ে পুজা দিতে হয়
৯০) মিদ্দি নোয়েরি সিমেরি (Noyeri Simeri) = ক্ষতিকারক দেবী। জ্বরের কারণে এই দেবীকে পুজা মুরগী এবং হাঁস দিয়ে পুজা দিতে হয়।
৯১) মিদ্দি মিন্নামিদ্দি (Minnamiddi) = পেট ফোলা এবং পেট ফাঁপা রোগে মোরগ দিয়ে পুজা দিতে হয়।
৯২) মিদ্দি দু’আদাক (Du’a dak) = বাঁশের চুঙ্গা বানিয়ে মোরগ দিয়ে উপাস্য। গলা ব্যাথার জন্য পুজা দিতে হয়।
৯৩) মিদ্দি জগুরংসিল (Jogurongsil) = বাঁশ দিয়ে সাম্বাসিয়া করে মোরগ দিয়ে পুজা দিতে হয়   
৯৪) মিদ্দি দারিচিক নকসাম (Darichik Noksam) = মিদ্দি দারিচিক বিমা- গর্ভবতীর বাচ্চা সুস্থ্যতা এবং সুস্থ্য প্রসবের উদ্দেশে এই দেবতাকে মুরগী দিয়ে পুজা দিতে হয়।
৯৫) মিদ্দি দারিচিক রামা (Ramani Darichik) = পুরুষ দেবতার নাম গর্ভবতীর বাচ্চা সুস্থ্যতা এবং সুস্থ্য প্রসবের উদ্দেশে এই দেবতাকে মুরগী দিয়ে পুজা দিতে হয়।
৯৬) মিদ্দি ওয়া’সঙা (Wa’song’a) = বাঁশের অধিকর্তা। গিরায় গিরায় ব্যাথা প্রশমনে এই দেবতার পুজা দিতে হয়।
৯৭) মিদ্দি জা’ফাগাল ( Japagal) = পেট ব্যাথার কারণে ছোট ছোট চাটাই বুনে তেরাস্তার মোরে রাস্তার মাঝখানে মোরগ দিয়ে পুজা দিতে হয়।   
৯৮) মিদ্দি বিদায়ি চা’পিগাল (Bidayi Cha'pigal) = ক্লান্তি এবং জ্বরের কারণে দুটি মোরগ ও মুরগী দিয়ে এই দেবতাকে মুরগী দিয়ে পুজা দিতে হয়।
৯৯) মিদ্দি বিদায়ি চিবল (Bidayi Chi'bol) = শরীর ফুলে গেলে হাত-পা ফুলে গেলে দুটি মোরগ-মুরগী, মদ এবং শুকড় অথবা ছাগল দিয়ে বিলের ধারে পুজা দিতে হয়।  
১০০) মিদ্দি দু‘আজাক (Du'aJak) = জ্বরের কারণে রোগি শুকিয়ে গেলে একটি হাঁস এবং একটি মোরগ দিয়ে পুজা দিতে হয়। 
১০১) মিদ্দি আত্তিচেল্লা (Atichella) = কেউ অসুস্থ্য হয়ে পরলে একটি ছাগল এবং একটি মোরগ দিয়ে পুজা দিতে হয়।
১০২) মিদ্দি বংসি/ বংসি_ঠাকুর (Bongsi Thakur) = এই দেবতাকে ক্লান্তি, অবসাদের কারণে জ্বরের কারণে একটি মোরগ দিয়ে পুজা দিতে হয়। 
১০৩) মিদ্দি চেনদিকরি (Chendikuri) = অসুস্থ্যতার কারণে হাত-পা বাঁকা হয়ে গেলে মিদ্দি চেনদিকরিকে   একটি মোরগ দিয়ে পুজা দিতে হয়। 
১০৪) মিদ্দি হা’নি মাৎচি (Ha'ani Matchi) = সাম্বাসিয়ার মাধ্যমে জ্বরের কারণে, বারবার দুঃস্বপ্ন দেখতে থাকলে মিদ্দি হা’নি মাৎচিকে একটি মোরগ দিয়ে পুজা দিতে হয়। 
১০৫) মিদ্দি দাগগিবা বিৎচিমা (Daggiba Bitchima) কাঁপুনি দিয়ে জ্বরের কারণে মিদ্দি দাগগিবা বিৎচিমাকে একটি মোরগ ও একটি হাঁস দিয়ে পুজা দিতে হয়।
১০৬) মিদ্দি জা’গিপাং (Jaggipang) = জ্বরের কারণে মিদ্দি জা’গিপাংকে মোরগ অথবা ছাগল অথবা হাঁস দিয়ে  পুজা দিতে হয়। তবে এর উপরোক্ত যে প্রাণীই হোক না কেন, এদের সাথে একটি মোরগ অবশ্যই থাকতে হবে।
১০৭) মিদ্দি নকগাম (Nok’gam) = হাতপা ঝিঝি ধরা, চাবানো ব্যাথার কারণে একটি মোরগ অথবা ছাগল অথবা হাঁস দিয়ে পুজা দিতে হয়।
১০৮) মিদ্দি দা’গাল (Da'gal) = নতুন জমিতে চাষের আগে বা ধানের বীজ রোপনের আগে এই দা’গাল মিদ্দিকে একটি ডিম দিয়ে পুজা দিতে হয়।
১০৯) মিদ্দি দেন’দামবাক (Dendambak) = প্রতি সন্ধ্যার দিকে হাতপা ঝিঝি ধরা, চাবানো ব্যাথা হয়ে জ্বরের কারণে একটি মোরগ দিয়ে পুজা দিতে হয়। বিকাল বা সন্ধ্যার দিকেই এই পুজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
১১০) মিদ্দি বানপাং (Banpang) = এই দেবতা গুদ্দক রু’গুবা (Giddok Rugupa) এবং ময়লা নামেও পরিচিত। তবে এই দেবী একা নন; এরা সাত বোন। এই দেবতাদের কাজ হলো শিশুদের কাঁদানো, ভয় দেখানো, পাগল করা এবং গর্ভাবস্থায় নষ্ট করা ইত্যাদি করতে পারে। অবস্থাভেদে (সিম্মা দেখার মাধ্যমে) এই দেবতাদের উদ্দেশে হাস-মুরগী অথবা হাঁস-ছাগল দুটো করে (একসাথে দুটো প্রাণী) উৎসর্গের মাধমে এ দেবীদের পুজা দিতে হয়।   
১১১) মিদ্দি জাজং (Jajong) = মিদ্দি জাজং দেবী সুসিম্মের অন্তর্ভূক্ত দেবতা।
১১২) মিদ্দি বনচেও (Bon’cheo) = চোখের ব্যাথার কারণে একটি মোরগ দিয়ে মিদ্দি বনচেওকে পুজা দিতে হয়।
১১৩) মিদ্দি দুরা_আমবিসি (Dura Ambisi) = মিদ্দি দুরা_আমবিসিকে মিদ্দি দুরেং_আম্বিসিও বলা হয়। এই দেবতাকে একটি মোরগ অথবা হাঁস দিয়ে পুজা দিতে হয়।
১১৪) মিদ্দি বারিংখল (Baringkol) = চাষাবাদের সময় চাষের শুরুতে জমির শুচীকরণ করতে ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে এই দেবতাকে পুজা দিতে হয়। এর পুজায় একটি মোরগ লাগে।
১১৫) মিদ্দি গি’রাম/গি’আরাম (Ge’ram) = এই দেবতাকে অসুস্থ্যতার কারণে পুজা দিতে হয়। এর পুজায় একটি মোরগ বলি দিতে হয়।
১১৬) মিদ্দি চু’আল আচাক (Chu'al achak) = শরীর ব্যাথা, বমি বমি ভাব এসে কেউ অসুস্থ্য হয়ে পরলে একটি কুকুরের বাচ্চা বলি দিয়ে এই দেবতাকে পুজা দিতে হয়।
১১৭) মিদ্দি চু’আল দো’অ (Chu'al Do'o) = হাত পা জ্বালায় একটি মোরগ দিয়ে এর নৈবেদ্য দিতে হয়।
১১৮) মিদ্দি চিচানি দ’গগ (Chichani Do’bog) = সন্ধ্যার দিকে জঙ্গল, বিল বা পুকুরের পাড়ে, বাঁশের ঝাড়ে যেতে নেই। সেসময় কেউ অজ্ঞান হয়ে গেলে এই দেবতাকে একটি ছাগল দিয়ে এই দেবতাকে পুজা দিতে হয়। 
১১৯) মিদ্দি চিচানি দ’গুগু (Chichani Do’gugu) = সন্ধ্যা বা অন্ধকারে অপ্রাকৃত কিছু বা মানুষের ছায়ামূর্তি দেখলে। ভয় পেলে একটি কবুতর দিয়ে এই দেবতাকে পুজা দিতে হয়। 
১২০) মিদ্দি চি’ব্রেং (Chibreng) = হাত পা জ্বালা যন্ত্রনায় একটি ছাগল দিয়ে এ মিদ্দি চি’ব্রেংকে পুজা দিতে হয়। 
১২১) মিদ্দি বাঙ্গালস্নি (Bangal Snee) = ছোট করে ঘরের মত বেদি তৈরী করে জ্বর এবং হাত পা জ্বালা যন্ত্রণা ইত্যাদি সমস্যায় একটি কবুতর অথবা একটি মোরগ দিয়ে মিদ্দি বাঙ্গালস্নিকে পুজা দিতে হয়।  
১২২) মিদ্দি রিসি নকমা (Risi Nokma) = মিদ্দি রিসি নকমা একজন দেবী এবং মিদ্দি দিমারিসির স্ত্রী; অথবা বলা যায় তিনি ঘরের কর্তৃ। কানে কম শোনার সমস্যায় একটি মোরগ দিয়ে এই দেবতাকে পুজা দিতে হয়।
১২৩) মিদ্দি মিগগাসি (Miggasi) = অসুস্থ্যতার কারণে একটি মোরগ দিয়ে মিদ্দি মিগগাসিকে পুজা দিতে হয়।
১২৪) মিদ্দি সালবামন ফ্রিং (Salbamon Pring) = প্রতি সকালে অসুস্থ্যতার কারণে একটি মোরগ দিয়ে এই দেবতাকে পুজা দিতে হয়।
১২৫) মিদ্দি হান’তাম (Salbamon Hantam) = প্রতি বিকালে বা সন্ধ্যার দিকে রোগী অসুস্থ্যবোধ করার কারণে একটি মোরগ দিয়ে পুজা দিলে মিদ্দি হান’তাম তুষ্ট হন
১২৬) মিদ্দি দাল’আ চিরিং (Dala Chiring) =  মিদ্দি দাল’আ চিরিংকে ক্লান্তি অবসাদের কারণে হাঁটাচলায় সমস্যার কারণে একটি মোরগ অথবা একটি হাঁস দিয়ে পুজা দিতে হয়।
১২৭) মিদ্দি সুয়াবারি জংগ্রিম (Suabari Jangrim) = টাইফয়েড বা অন্যান্য জ্বরের কারণে একটি মোরগ দিয়ে এই মিদ্দি সুয়াবারি জংগ্রিমকে পুজা দিতে হয়।
১২৮) মিদ্দি রাগগাসি পাতচাংগ্নি (Raggasi Patchang'gnee) = মিদ্দি রাগগাসি পাতচাংগ্নিকে ঘরের অমঙ্গল দূরীকরণে সিদ্ধহস্ত। তাই এই দেবতাকে একটি মোরগ দিয়ে পুজা দিতে হয়।
১২৯) মিদ্দি জারিদ্দিং রা’আল (Jariding Ra'al) = এই দেবতাকে কোন গর্ভস্থ শিশুর আত্মা অন্যের গর্ভে যাতে স্থানান্তর না হয় বা গর্ভের সন্তান যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য একটি মোরগ দিয়ে পুজা দিতে হয়।
১৩০) মিদ্দি দো’মাল (Do'mal) = প্রচণ্ড মাথা ব্যাথা সহ জ্বরের কারণে মিদ্দি দো’মালকে একটি মোরগ দিয়ে  পুজা দিতে হয়।
১৩১) মিদ্দি সুসিমে হানথাম (Susime Hantam) = সকালে এবং সন্ধ্যায় বার বা অসুস্থ্য হলে একটি মোরগ দিয়ে এই দেবতাকে পুজা দিতে হয়।
১৩২) মিদ্দি পাত্তাংগ্নি (Pattang'gni) = হাটু ও পেশীর ব্যাথায় মোরগ দিয়ে পুজা দিতে হয়
১৩৩) মিদ্দি বুরগুদ্দক (Burgidok) = কাশির জন্য এই দেবতাকে পুজা দিতে হয়।

উপরোক্ত দেবদেবী ছাড়াও আরো কিছু নাম সংগ্রহ করা হয়েছে। খামাল জনিক নকরেক এবং খামাল দীনেশ নকরেকের সাথে নামগুলো যাচাই করা হয়েছে। তবে এই দেবতাদের চারিত্রিক বিবরণ সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের কাজ এখনও চলছে।
১৩৪) মিদ্দি গনচু হা’দক (Gonchu Hadok)
১৩৫) মিদ্দি গনচু নকসাম (Gonchu Noksam)
১৩৬) মিদ্দি গালমাকদুয়া (Galmakdua)
১৩৭) মিদ্দি রাংনোখল (Rangkhonol)
১৩৮) মিদ্দি অলিবক (Olibok)
১৩৯) মিদ্দি চিনাবেং (Chinabeng)
১৪০) মিদ্দি রেব্বক মে’চিক (Rebbok Me’chik)
১৪১) মিদ্দি সালবঙ্গি (Salbongi)
১৪২) মিদ্দি কান’তাব গোয়েরা (Kantab Goyera)
১৪৩) মিদ্দি নক_ওয়ালজক্কানি (Nok_Wal’jokkani)
১৪৪) মিদ্দি গান্দি গল’দাক (Gandi Goldak)
১৪৫) মিদ্দি আমিন্দা (Aminda)
১৪৬) মিদ্দি মিন্না (Minna Middi)
১৪৭) মিদ্দি হা’সংদেন্না (Ha’song Den’a)
১৪৮) মিদ্দি দারিচিক দ’মিনি (Darichik Domini)
১৪৯) মিদ্দি মিরিসি (Mirisi)
১৫০) মিদ্দি বা’গিবা (Ba’giba)
১৫১) মিদ্দি বরিসাল (Borisal)
১৫) মিদ্দি দেন’বিলসিয়ানি (Den’bil Siani)
১৫৩) মিদ্দি মিজাসু রুগালানি (Mijasu Rugalani)
১৫৪) মিদ্দি পত্তিম (Pottim)
১৫৫) মিদ্দি রংচাঙা (Rongchag’a)
১৫৬) মিদ্দি হিরা_কুচ্ছুনি (Hira_Kucchuni)
১৫৭) মিদ্দি বারোবাই_বারপচ্চিম (Barbai_barpochchim)
১৫৮) মিদ্দি সাগাল পান্থি (Sagal Panthi)
১৫৮) মিদ্দি হাংকি (Hangki)
১৬০) মিদ্দি চলসি (Cholsi)
১৬১) মিদ্দি তিত্তিক (Tittik)
১৬২) মিদ্দি চান্দ/চান্দা Chando)
১৬৩) মিদ্দি রিসিফ্রিং (Risipring)
১৬৪) মিদ্দি গামুকা গাওয়ালি (Gamuka Gawali)

জেমস ঝুলন নকরেক খামাল জনিক নকরেকের কাছথেকে আরো কিছু দেবতা/উপদেবতার নাম সংগ্রহ করে আমাকে দিয়েছেন। কিন্তু এই তথ্য বা নাম সম্পর্কে যাচাই করা এখনও সম্ভব হয়ে উঠে নি। তারপরেও নামগুলো নিম্নে দেওয়া হলো-
১৬৫) মিদ্দি রংচাকা (Rongchaka)
১৬৬) মিদ্দি ওয়া’সঙা (Wasong’a)
১৬৭) সঙ্গল টঙি আমুয়ানি মিদ্দি (Songol Tong'i Amuani)
১৬৮) মিদ্দি দকবান্দা/দকমান্দা (Dokbanda)
১৬৯) চিরিং চিদিকনি মিদ্দি (Chiringni chidekni)
১৭০) মিদ্দি নকসাম (Noksam)
১৭১) মিদ্দি রামাসাম (Ramasam)
১৭২) মিদ্দি হা’দিক (Hadik)
১৭৩) মিদ্দি ওয়া’কারং (Wakarong)
১৭৪) দিংরিকনা রে’আও চুগারিয়ানি মিদ্দি (Dingrikna Re’ao Chugariani)
১৭৫) মিদ্দি চকখেলা চুগারিয়ানি মিদ্দি (Chokkhela Ra'na Re’ao Chugariani)
১৭৬) স’না চুগারিয়ানি মিদ্দি (Su’na Chugariani)
১৭৭) চুগারিয়ানি মিদ্দি (Su’na hammu Chugariani)
১৭৮) চুগারিয়ানি মিদ্দি (Gandu du'mee potdi Chugariani)
১৭৯) মিদ্দি দো’মি গান্দুনি রংদু (Do’mi Ganduni Rongdu)
১৮০) আস্কি দো’মি চা’ও রুগালা ওয়ানমারাঙানি মিদ্দি (Aski du'me cha'ao rugala wanmarang'a)
১৮১) মিদ্দি দেন’মারাঙা ওয়ানগালানি (Denmarang’a Wangala)
১৮২) জা’সুয়েদ্দো চুগারিয়ানি মিদ্দি (Jasuiddo Chugariani)

সাত হাজার দেবতা এবং সাতশত উপদেবতাদের উপাসনা, মন্ত্রতন্ত্র, জাদু-টোনা ইত্যাদি নিয়েই সাংসারেক ধর্ম। এরা সর্বপ্রাণবাদী ও বস্তুর দ্বৈতসত্তায় বিশ্বাসী এবং প্রকৃতি ও জড়বস্তুতে প্রাণ আরোপ করে। এরা সাপ ও বাঘকে মনে করে প্রেতাত্মার দেহীরূপ। কোনো কোনো মানুষ দিনে মানুষ থাকে এবং রাতে বাঘ হয়ে যায়। গারো ভাষায় এটাকে বলে মাৎসাদু মাৎসাদে। কোনো কোনো গাছ, পাথর, টিলা ভূতপ্রেতের আবাস, এ বিশ্বাসে তারা এগুলিকে এড়িয়ে চলে। গারোদের অনুষ্ঠানাদি উদযাপন, মহামারীর বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় ব্রত পালন, তাবিজ এবং ভেষজ দিয়ে রোগ-বালাইয়ের নিরাময় ইত্যাদি যাঁরা করেন, তাঁরা সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি। এই ব্যক্তিবর্গ খামাল (Khamal) নামে পরিচিত। আর এই খামাল বা কবিরাজদেরকে অলৌকিক শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তি মনে করা হয়।
[[প্রসঙ্গত, সাংসারেক ধর্মের দেবতাদের সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের জন্য আমরা সবেমাত্র কাজ শুরু করেছি। বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে বিশেষ করে খামালদের কাছথেকে দেবতাদের নাম জানার চেষ্টা করেছি। আমাদের সাথে প্রথম সাক্ষাতকালে খামালদের প্রায় সকলেই ১০০জন বা তাঁর কিছু কমবেশি দেবদেবীর নাম অনেক সময় নিয়ে মুখস্ত বলতে পেরেছেন। কারণ- প্রয়োজন ব্যতীত দেবতাদের নাম বলা বা স্মরণ করার অনুচিত বলে মনে করা হয়। দ্বিতীয়ত, উনাদের কারোর কাছেই দেবতাদের নাম লিখিতভাবে পাওয়া যায় নি। উনারা সকলেই একবাক্যে স্বীকার করেছেন, সাংসারেক ধর্মের সব দেবদেবীর নাম তাঁদের মনে নেই। তাই বাধ্য হয়ে বিভিন্ন দেশি-বিদেশি বিভিন্ন বই পড়তে হয়েছে, বারবার ইন্টারনেট ঘাটতে হয়েছে। কবি, প্রবন্ধকার লুই চিরান নেট ঘেটে, বই পড়ে অনেকগুলো দেবদেবীর নাম সংগ্রহ করে পাঠিয়েছেন। আবার সেগুলোকে যাচাই করার জন্য পুনরায় উক্ত খামালদের কাছে ছুটতে হয়েছে। তাই দেবদবীর নাম ও বিবরণ সংযোজন, পরিমার্জন করা আমাদের জন্য বিশেষ করে আমার জন্য বেশ কঠিন ব্যাপার ছিলো। তারপরেও আমরা যেটুকু করতে পেরেছি, তারই খসড়া বা সংক্ষিপ্তরূপ এটি। উল্লেখ্য, আমাদের এই কাজ ক্রমাগত চলতেই থাকবে। আমরা চাইছি আপনাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতা এবং যৌক্তিক পরামর্শ। তাই অনুগ্রহ করে যদি আপনারা আমার এই এই মেইলে ইনবক্স করতেন, কৃতজ্ঞ থাকবো। ধন্যবাদ সবাইকে।]]  
তথ্য সহায়ক-
  1. খামাল দীনেশ নকরেক, সাংসারেক ধর্মীয় পুরোহিত।
  2. খামাল জনিক নকরেক, সাংসারেক ধর্মীয় পুরোহিত।
  3. খামাল নরেশ মৃ, সাংসারেক ধর্মীয় পুরোহিত।
  4. লুই চিরান, প্রবন্ধকার, কবি, গল্পকার
  5. জেমস ঝুলন নকরেক, শিক্ষানুরাগী।
  6. বিধি পিটার দাংগ – গারো সৃষ্টিতত্ত্ব – জানিরা, গবেষণা জার্নাল, ৩য় সংখ্যা, ১৯৮১
  7. রেভাঃ ক্লেমেন্ট রিছিল – গারোদের আদিধর্ম ও সংস্কৃতির সম্পর্ক- স্মরণিকা, উপঃ কালচারাল একাডেমি, বিরিশিরি।
  8. সালসেং প্রণব রাংসা - স্রষ্টার উদ্দেশে পুজাঃ আ’মোয়া ক্রীতা
  9. †gRi G. †c­‡dqvi- `¨ Mv‡ivÕm ( fviZ)|
  10.  Wt iwebm& evwj©b - `¨ ÷ªs I‡gb Ae gaycyi-
  11.  evsjv‡`‡ki Mv‡iv Avw`evmx- myfvl †RsPvg|
  12.  Mv‡iv m¤cÖ`vq: mgvR I ms¯‹…wZ- Wt gRnvi“j Bmjvg Zi“|
  13. Culture & Festivals – West Garo Hills District Official Wbsite
  14. People & Culture – Sout West Garo Hills District Meghalaya
  15. Wikipedia, the free encyclopedia

1 টি মন্তব্য:

  1. ধরাটি গ্রামের খামাল দীনেশ নকরেক, চুনিয়া গ্রামের খামাল জনিক নকরেক, সাইনামারী গ্রামের খামাল নরেশ মৃ প্রমুখের সাথে সাক্ষাৎকারের সময় জানিয়েছেন সাংসারেক ধর্মে প্রায় ৭০০০ দেবতা, ৭০০ উপদেবতা (মিদ্দি হাজালস্নি, কাচ্চি রিচ্চাসনি) রয়েছে

    উত্তরমুছুন