সোমবার, ১৬ মে, ২০১৬

গারোদের ডায়ালেক্ট বা উপভাষাসমূহ



গারোদের ডায়ালেক্ট বা উপভাষাসমূহ
আগেই বলা হয়েছে, গারো জাতি পৃথিবীর মধ্যে ব্যতিক্রম জাতি যার অনেকগুলো সম্প্রদায় এবং এদের প্রত্যেকটির আলাদা মাতৃভাষা রয়েছে। তবে কালের বিবর্তনে এদের সবার ভাষা চর্চার অভাবে প্রায় হারাতে বসেছে কিংবা হারিয়ে গেছে।

গারো গবেষকগণ গারোদের ১৭টি সম্প্রদায়ের ভাষার মধ্যে মিগাম এবং আত্তং সম্প্রদায়ের গোত্রের ভাষার শ্রেণিবিন্যাস ভিন্ন বলে মত প্রকাশ করেছেন। আত্তং ভাষা সম্পর্কে লেখক-গবেষক সুভাষ জেংচাম তাঁর গারোদের সমাজ ও সংস্কৃতিগ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “কোচ উপাখ্যানে জানা যায়, দেশত্যাগী কোচ সম্প্রদায়ের ১২টি পরিবার সোমেশ্বরী নদী পাড়ি দিতে অসমর্থ হয়ে সিজুর কাছাকাছি কোন একটি গারো গ্রামে অস্থায়ীভাবে অবস্থান শুরু করে এবং পরবর্তীতে তারা সেখানে গারোদের সাথে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে থাকে। ক্রমান্বয়ে তারা গারোদের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কও স্থাপন করে। গারো এবং কোচ সম্প্রদায়ের এই মিশ্র বিবাহের বংশধররাই পরবর্তীতে গারোদের আত্তং দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এখানে উল্লেখযোগ্য যে, কোচ ভাষা ও আত্তং দলের নিজস্ব কথ্য ভাষার মধ্যে যথেষ্ট সাদৃশ্য বিদ্যমান। 
অন্যদিকে ড. রবিন্স বার্লিং তাঁর ‘The Strong Women of Modhupur’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, “The Megam speak a dialect of Khasi. On linguistic grounds the Megam must be classified with the Khasis rather than with the Garos, but there is considerable intermarriage along the border, and the Megam share so many features of Garo kinship and social organization that they are sometimes described as another subgroup of Garos.”

সম্প্রতি SIL Bangladesh গারোদের ভাষা নিয়ে গবেষণা করেছেন। গারোদের ভাষার শাব্দিক মিল পর্যবেক্ষণ করে যে রিপোর্ট তুলে ধরেছেন, সেটি আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হয়েছে। সেসাথে গারো ভাষাগুলোর মধ্যে কোন গোত্রের ভাষা অন্যান্য গোত্রের ভাষার তুলনায় এর টিকে থাকার সম্ভাবনা বেশী বা কম এ নিয়েও ব্যাখ্যা করেছেন। তাদের গবেষণালব্ধ তথ্যটি গারোদের সবার জানা উচিৎ। তাই তাদের রিপোর্টথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশটি নিম্নে দেওয়া হলো-
বাংলাদেশের মান্দিদের মধ্যে একে অন্যের সাথে যোগাযোগের ভাষা আবেং-এর সাথে অন্যান্য মান্দি ভাষা বৈচিত্রের সাথে তুলনায় অনেক মিল দেখা যায়। আর এ ক্ষেত্রে ব্রাকের সাথে সবচেয়ে বেশি মিল পাওয়া যায়, কিন্তু চিবক, দুয়াল, আত্তং এবং মিগামের সাথে কিছুটা কম এবং এ সাদৃশ্য তাদেরকে এখানে উল্লেখিত ক্রম  অনুযায়ীই কম হতে থাকে, অর্থাৎ চিবক-এর সাথে মিলের পরিমাণ অন্যান্য চারটির তুলনায় বেশি এবং দুয়ালের সাথে আরো কম এবং এভাবে চলতে চলতে মিগামের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম। আবেং, ব্রাক, চিবক এবং দুয়াল এগুলোকে একে অন্যের আঞ্চলিক রূপ বলা চলে, কিন্তু শুধু শাব্দিক বা আভিধানিক সাদৃশ্যের দিক থেকে আত্তং এবং মিগামকে সম্পূর্ণ আলাদা ভাষা বলা চলে। সকল মান্দি ভাষাবৈচিত্র্য থেকে কোচ সম্পূর্ণ একটা আলাদা ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অবশ্য এটা সত্য বলে প্রতীয়মান হয় যে, মান্দি ভাষাবৈচিত্রের মধ্যে আত্তং ও কোচ ভাষার মাঝে সম্পর্ক রয়েছে, কিন্তু আঞ্চলিক সম্পর্ক থাকার মতো যথেষ্ট মিল ছিলনা”সবশেষে সিলেট বিভাগে পূর্বের পরিচালিত জরিপ থেকে সংগৃহীত লিংগাম ভাষার শব্দের তালিকার সাথে মিগাম ভাষার শব্দের তুলনা করা হয়েছিল এবং এর মাধ্যমে এটা পরিষ্কার হয় যে শুধুমাত্র লিংগাম ভাষার সাথে মিগাম  ভাষার এক রকম মিল রয়েছে।

গারো গবেষক, লেখক সুভাষ জেংচাম তাঁর ‘গারোদের সমাজ সংস্কৃতি’ গারো ভাষার সঙ্গে অন্যান্য কতিপয় জাতির ও সম্প্রদায়ের ভাষা কিছু তুলনার ছকের মাধ্যমে দিয়েছেন। পাঠকদের সুবিধার্থে এ ছক তিনটি তুলে ধরা হলো-
সুভাষ জেংচাম ‘গারোদের সমাজ সংস্কৃতি’ – পৃঃ ১২৫, ১২৬


সবশেষে আবারও SIL Bangladesh-এর গারোদের ভাষার স্থায়িত্ব নিয়ে যে জরিপ রিপোর্ট করেছেন, সেটি জানা আমাদের সকলের জরুরী। তাই তাদের রিপোর্টের গুরুত্বপূর্ণ অংশটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
ভাষার স্থায়িত পর্যবেক্ষণের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, পর্যবেক্ষণকৃত ছয়টি গারো ভাষাবৈচিত্র্যের মধ্যে ব্রাক  ভাষার হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি, কারণ ব্রাক ভাষার লোকেরা অধিক মাত্রায় এমনকি বাড়িতেও  বাংলা এবং আবেং ভাষা ব্যবহার করছে। অন্যদিকে, আবেং বাংলাদেশী গারোদের মাঝে যোগাযোগের ভাষা  হওয়ায় অন্যান্য ভাষার তুলনায় এর টিকে থাকার সম্ভাবনা অনেক বেশী, এবং এটা বেশির ভাগ বাংলাদেশী  গারোদের মাতৃভাষাও বটে। পর্যবেক্ষণকৃত অন্যান্য চারটি ভাষা- আত্তং, চিবক, দুয়াল এবং মিগাম; তাদের  ভাষারও টিকে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু এটা মনে হয় যে, যদি আবেং ভাষার আরো বেশি বিকাশ ঘটে এবং বর্তমানের মত বর্ধিত হারে জনগনের মাঝে আনুষ্ঠানিক শিক্ষায় বাংলা ব্যবহৃত হতে থাকে তবে সেই ভাষাগুলো ক্রমবর্ধমানভাবে বাংলা এবং আবেং ভাষা দ্বারা প্রভাবিত হবে”।

গারোদের মাতৃ ভাষা



গারোদের মাতৃ ভাষাঃ

পৃথিবীর প্রতিটি জাতি বা আদিবাসীর একটি করে নিজস্ব ভাষা আছে। তেমনই গারোদেরও নিজস্ব ভাষা রয়েছে, যদিও এ ভাষার বর্ণমালা নেই। গারো উপকথা অনুসারে জানা যায়- গারোরা যখন তিববত থেকে এদেশে আগমন করে, পশু চর্মে লিখিত গারো ভাষায় যে সমস্ত বই পুস্তক তখন যার বা যাদের জিম্মায় ছিল, তিনি বা তাঁরা ক্ষুধার জ্বালায় পথিমধ্যে সমুদয় বইপুস্তক সিদ্ধ করে খেয়ে ফেলেন। বিষয়টি অনেকদিন গোপন থাকার পর যখন জানাজানি হয় তখন আর কারো পক্ষে গারো বর্ণমালা স্মরণ করা সম্ভবপর হয়নি। আবার কোথাও শুনেছিলাম, ময়মনসিংহের এক জমিদার শিকারে গিয়ে এক গারো পর্বতগুহায় পুঁথির দু-একটি ছেঁড়া পাতা পেয়ে এর ফটো সৌরভ পত্রিকায় প্রকাশ করেছিলেন। তা এত ঝাপসা ছিল যে, কোনো অক্ষরই বোধগম্য হয় নি। বাহ্যিকভাবে লেখাগুলি ছিল চীনা চিত্রলিপির মতো।

প্রখ্যাত গবেষক ডঃ রবিন্স বার্লিং তাঁর ‘The Strong Women of Modhupur’ গ্রন্থে বলেছেন, “মান্দি ভাষা টিবোটো-বার্মান ভাষাগোষ্ঠীর বিশেষ একটি উপরিভাগের অন্তর্ভূক্ত। সামগ্রিকভাবে গোটা ভাষাগোষ্ঠীর ইতিহাস সম্বন্ধে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা না গেলেও এই বিশেষ উপরিভাগের ইতিহাস সম্বন্ধে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়।

নৃবিজ্ঞানীগণের মতে, গারোরা সিনো-তিব্বতীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত এবং অক্ষরহীন ও অলিখিত একটি প্রাচীন অনার্য ভাষা ব্যবহার করেএই একই (তিব্বতি-চীন) ভাষা- বোড়ো, নাগা, ত্রিপুরা, মনিপুরী, মুরমি, মুগরি, লেপচা বা রোং, আবোর, মিকির, আংগামি, সেমা, আত্ত, তাংখুলা, লুসাই, থাডো, কুকি জাতির লোকেরাও ব্যবহার করে থাকে। চীনা ভাষার সঙ্গে গারো ভাষার শব্দ, ব্যাকরণ ও ভাষাতত্ত্বগত প্রচুর মিল রয়েছে বলে ভাষাবিদদের অভিমতগারো ভাষায় নৃতত্ত্ব ও ধর্মের কথা রয়েছেতেমনই- প্রবাদ-প্রবচন, শ্লোক, গান, ছড়া, কিংবদন্তি, উপকথা, পালাগান ইত্যাদি রয়েছে। বহু ভাষার শব্দ দ্বারা গারো ভাষার শব্দকোষ পুষ্ট এ গারো ভাষা ব্যকরণিক দিক দিয়ে বাক্যগঠন, পদবিন্যাস, বিভক্তি-প্রত্যয়ের অবস্থান, ক্রিয়া ও শব্দের রূপান্তর উন্নত ভাষার মতো সুশৃঙ্খল। এ থেকে অনুমান করা হয়, ভাষাটির অতীত ঐতিহ্য ছিল। বাংলা ও অসমিয়া ভাষার সঙ্গে কিছু সাদৃশ্যের কারণে গারো ভাষাকে কেউ কেউ এ দু ভাষার মিশ্ররূপ বলে মনে করেন। আসলে এটি একটি মৌলিক ভাষা।
উল্লেখ্য, গারো একটি জাতি হলেও এদের মধ্যে অনেকগুলো সম্প্রদায় রয়েছে। যেমন- আবেং; আচিক; আখাওয়ে বা আওয়ে; চিবক; দুয়াল; মাচ্ছি; গারাগানচিং; চিসক; কচ্চু; আতিয়াগ্রা; মাৎজাংচি বা মাত্তাবেং; রুগা; ব্রাক; সমন; দলি; গন্ডায় ইত্যাদি আর এ সম্প্রদাগুলোর মধ্যেও প্রায় প্রত্যেকটির ভিন্ন ভিন্ন মাতৃভাষা রয়েছে।

বর্তমানে বাংলাদেশের গারোরা গারো ও বাংলা ভাষায় সাবলীলভাবে কথা বলে এবং লিখতে পারে। শিক্ষিত গারোরা ইংলিশ ভাষাও ব্যবহার করেন। কিন্ত ভারতীয় মেঘালয়ের গারোরা গারো, হিন্দি, ইংলিশ এবং বাংলা; আসামের গারোরা গারো, ইংলিশ, অসমিজ এবং পশ্চিমবঙ্গের গারোরা গারো, বাংলা, ইংলিশ এবং হিন্দি ভাষায় কথা বলতে পারে

গারোদের বর্তমান জনসংখ্যাঃ



গারোদের বর্তমান জনসংখ্যাঃ

বিগত আদম শুমারীসমূহে দেশের আদিবাসীদেরকে আলাদাভাবে গনণা করা হয়নি বা দেখানো হয়নি। তাই বাংলাদেশের খ্রীষ্টিয়ান মিশনারী কিংবা এলাকায় কর্মরত বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থাসমূহের তথ্য ছাড়া গত্যন্তর নেই। বর্তমানে বসবাসরত বাংলাদেশিদের অবস্থা এবং তাদের জনসংখ্যা মোটেও সন্তোষজনক নয়। বিভিন্ন সূত্রমতে, ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা, ভালুকা, ফুলবাড়িয়া, ফুলপুর, হালুয়াঘাট, জামালপুর জেলার শোলাকুড়ি, শেরপুর জেলার শ্রীবর্দী, নকলা, নালিতাবাড়ি, ঝিনাইগাতি, বখশিগঞ্জ, টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল, মধুপুর, নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা, দুর্গাপুর, কলমাকান্দা এবং সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুর, সুনামগঞ্জ প্রভৃতি এলাকায় ছিল গারো, হাজং, কোচ, বানাই, ডালু আদিবাসীদের। ১৯৫০ ও ১৯৬৪ তে রায়ট হয়। সে সময় ট্রাক ভরে ফুলপুর, টাঙ্গাইল, কিশোরগঞ্জ, ভালুকা, গফরগাওঁ থেকে পাকিস্তানি সরকার লোক এনে হালুয়াঘাটের রাস্তার ফেলে যায়। ওরা তখন গারো, হাজং, বানাই ও ডালুদের বাড়ি দখল করে নেয়। শুধুমাত্র আবিমাঞ্চলথেকেই (মধুপুর) ২৭টা মান্দি গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। এখনও মান্দিদের ঘরবাড়ি বসতভিটা কেড়ে নেওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে; ফলে বহু আদিবাসী জীবন বাঁচাতে মেঘালয়ে চলে গেছে। ফলে বাংলাদেশে গারোদের সংখ্যা অতি নগন্য এবং সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে সোয়া লাখের মত গারো রয়েছে।

ডঃ মজহারুল ইসলাম তরু সম্পাদিত ২১শে বইমেলা- ২০০৯-এ প্রকাশিত গারো সম্প্রদায়ঃ সমাজ ও সংস্কৃতিবই-এর ভূমিকায় লিখেছেন- ১৯৯১ সালের আদম শুমারী অনুসারে বাংলাদেশে গারো জনসংখ্যা ৬৮ হাজার ২ শত ১০ জন উল্লেখ করা আছে। আর ২০০৫ সালের সেন্সাস রিপোর্ট অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশে গারোদের সংখ্যা প্রায় ১ লক্ষ ২০ হাজার। অপরদিকে ২০০১ সালের ভারতীয় সেন্সাস রিপোর্ট থেকে নেওয়া এথনোলগ - এর তথ্যমতে, শুধু ভারতে ৮ লক্ষ ৮৯ হাজার মানুষ গারো ভাষায় কথা বলে। অর্থাৎ বর্তমানে ভারত এবং বাংলাদেশ মিলে ১২ লক্ষের মতো মানুষ গারো ভাষায় কথা বলে।

গারোদের ভৌগলিক অবস্থান বসবাস



গারোদের ভৌগলিক অবস্থান বসবাস

ভারত উপমহাদেশে গারোদের অবস্থানঃ গারো গবেষক, লেখক মণীন্দ্রনাথ মারাক তাঁর ‘গারো নামের ইতিবৃত্ত’ প্রবন্ধে যা লিখেছেন, এ নিবন্ধের শুরুতে তাঁর কিছু অংশ তুলে ধরছি- “প্লিনি গারো পাহাড়কে মালেয়াস পাহাড় এবং এই পাহাড়ের আদিবাসীদের মান্দাই (মান্দে>মান্দাই>মান্দি>মানুষ) বলেছেন (ম্যাগাস্টেনিস এরিয়ান)। টলেমির ভূগোল পুস্তকে কিরাত জাতির সঙ্গে গারিওনি জাতির কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি গারো পাহাড়কে মৈরন্তুম পর্বত বলেছেন। তিনি হয়তো রামায়নে উল্লেখিত মন্দর বা মিন্দিরকে মৈরন্তুম পাহাড় বলেছেন। তিনি পাতালিপুত্রথেকেই এই অঞ্চলের তথ্যাদি সংগ্রহ করেছিলেন। তাই জাতির নাম ও স্থানের মানগুলি অপভ্রংশ হয়েছে। খুব সম্ভব ‘গারো’ নাম লোকমুখে শুনে এবং অপভ্রংশ করে ‘গারো’ শব্দকে ‘গারিওনি’ লিখেছেন। টলেমীর জীবনকাল খ্রিস্টীয় ২য় শতাব্দী। আর প্লিনি যিনি ‘ন্যাচারাল হিষ্ট্রিতে’ গারোদের মান্দাই বলে উল্লেখ করেছেন। তাঁর জীবনকাল ছিলো খ্রিষ্টীয় ১ম শতাব্দী’’।

ইতিহাস বলে, গারো জাতি ছিলো যাযাবর জাতি। ডঃ মঝারুল ইসলাম তরু তাঁর গ্রন্থে বলেছেন, গারোদের আগমনকালকে আজথেকে আনুমানিক সাড়ে ছয় হাজার বছর পূর্বে ধরে নেওয়া হয় কিন্তু প্রশ্ন হলো কোথায় ছিলো এ গারো জাতির মানুষেরা। ঝুমচাষপ্রেমী গারো জাতি যেখানেই পাহাড় জঙ্গল পেয়েছে, সেখানেই কয়েক বছরের জন্য আবাস গেড়েছে। আবার যখনই দেখেছে একই জায়গায় প্রত্যাশানুরূপ ফসল হচ্ছে না, তখনই অনত্র সড়ে গিয়ে সেখানে আবার কয়েক বছরের জন্য আস্তানা গেড়েছে- গারোদের ইতিহাস তাই বলে। গারোরা জাতিগতভাবে আসলেই সহজ সরল, শান্তিপ্রিয়। তাই রাজনৈতিক ক্ষেত্রে শান্তিপ্রিয় এ গারো জাতি পারতপক্ষে কারোর সাথে দলাদলিতে যেতে চায় নি বিধায় কোথাও বেশিদিন কারোর উপরে কর্তৃত্বও করে নি, অন্যদিকে কারোর কাছে মাথানত, বশ্যতা স্বীকার করেও চলতে চায় নি। ইচ্ছায় হোক, আর অনিচ্ছায় হোক, যেখানেই গেছে, থেকেছে কিন্তু যুগ যুগ ধরে বা এক নাগারে কোথাও বসবাস করে নি। একারণে এককথায় গারোদের বসবাসের ভৌগলিক অবস্থান নির্ণয় করা দুরূহ ব্যপার।
ভারতীয় উপমহাদেশে গারোদের বসবাস সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্যপঞ্জি, গ্রন্থ ঘাটিয়ে এবং এলাকার প্রাচীন ব্যক্তিবর্গের মতামত সাপেক্ষে বলা যায়, গারোদের পূর্ব পুরুষগণ জাতি হিসাবে গারো নাম নিয়েই তিব্বত দেশথেকে এসেছে এবং পরবর্তীতে গারো পাহাড়ে এসে বসবাস শুরু করেছে। এবং এই গারো পাহাড়টির নাম গারোদেরই দেওয়া বলে সকলেই দাবী করেছেন। ভৌগলিক, রাজনৈতিক এবং সামাজিক নিরাপত্তার কারণে ধীরে ধীরে বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিলো এই গারো সমাজ

বিভিন্ন তথ্যপঞ্জি, গ্রন্থ ঘাটিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে গারোদের বসবাস সম্পর্কিত তথ্যপঞ্জি নিম্নে সংক্ষিপ্ত আকারে দেওয়া হলো-
ক) ১৯৯৪ খ্রীষ্টাব্দে প্রকাশিত সুভাষ জেংচাম রচিত বাংলাদেশের গারো আদিবাসীনামক বইটির ৯ম পৃষ্ঠায় গারোদের জনসংখ্যা সম্পর্কে লিখেছেন-গারোরা ভাষা অনুযায়ী বোডো মঙ্গোলীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত।
খ) বৃটিশ শাসনামলে শুরুতে টাঙ্গাইলের মধুপুর গড়াঞ্চলের গারোদেরকে নাটোরের রানী ভবানীর প্রজা হিসাবে চিহ্নিত হতে দেখা যায় এবং সে মর্মে তাদে ভূমিস্বত্বের কাগজপত্রাদিও পাওয়া যায়। (সুভাষ জেংচাম)
গ) সুসং দূর্গাপুর এলাকায় গারোরা সপ্তম থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দির শেষ ভাগ পর্যন্ত অত্যন্ত প্রতাবশালী ছিল। ঐ সময়কালে তারা বিভিন্ন দলনেতার নেতৃত্বে সুসং দূর্গাপুরে রাজত্ব করে। অবশেষে শেষ গারো রাজা বাইস্যা মান্দা তার বিশ্বাসঘাতক হিন্দু ধর্মাবলম্বী মন্ত্রী সমেশ্বর পাঠকের হাতে ১২৮০ খ্রীষ্টাব্দে সিংহাসনচ্যুত ও নিহত হন।
ঘ) ৬২৯ খ্রীষ্টাব্দে চীন পর্যটক হিউয়েন সাঙ কামরূপ ভ্রমণে এসে সাদামাটা প্রকৃতির ছোটখাটো চেহারার ঘন হলুদ ঘেঁসা এক গুয়ে ও বুনো ধরনের প্রখর স্মরণ-শক্তিসম্পন্ন যে মানুষ দেখতে পান বলে তাঁর ভ্রমণ কাহিনীতে উল্লেখ করেছেন, সেই জনগোষ্ঠীই এ অঞ্চলের গারো সম্প্রদায়ের বলে অনেক ঐতিহাসিকই মনে করেন। (আলী আহাম্মদ খান আইয়োব- গারো সম্প্রদায়)
ঙ) ঐতিহাসিক প্রমান পাওয়া যায়, নেত্রকোনার মদনপুরে এবং সুসং দূর্গাপুরে গারোরাজ্য প্রতিষ্ঠার বিবরণে। জানা যায়- নেত্রকোনার মদনপুরে নবম থেকে একাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগ পর্যন্ত গারোদের চিরান পদবীর এক সমৃদ্ধ সামন্ত রাজ্য ছিল, যে রাজ্যে গারো মদন চিরান (মদন গারো) ১০৬০ খ্রীষ্টাব্দে ইসলাম ধর্ম প্রচারক হযরত শাহ সুলতান রুমীর হাতে পরাজয় বরণ করেন এবং রাজ্য ত্যাগে বাধ্য হন।
চ) এ অঞ্চলে আর্যদের প্রবেশের পর গারোদের একাংশ হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়ার ফলে চতুর্থবর্ণ শূদ্রের সৃষ্টি হয়। ফলে গারোদের একাংশ সেই শূদ্র বর্ণে প্রবেশ করে। আবার যুদ্ধ-বিগ্রহের ফলে সেই গারো সমাজের লোকজন ক্ষত্রিয় বর্ণের দাবীদার হয়ে পড়ে। (আলী আহাম্মদ খান আইয়োব- গারো সম্প্রদায়)
ছ) আলী আহাম্মদ খান আইয়োব- গারো সম্প্রদায় প্রবন্ধে আরও লিখেছেন- হিন্দু ধর্মগ্রন্থ রামায়ণে নাম আছে গারুদা। মহা ভারতেও বলা আছে গারুদা। (দেবতা বিষ্ণু ও দেবী লক্ষ্মীর কাহিনীতে পাওয়া যায় এই গারুদার উপস্থিতি)। এই হচ্ছে গারো বা আচ্ছিক্ মান্দিদের নামের ইতিহাস
জ) ভগদত্তের কামরূপ রাজত্যকালেই উত্তর ভারতের কুরুক্ষেত্রে কুরু-পান্ডবদের মধ্যে আত্মক্ষয়ী মহাযুদ্ধ সংঘটিত হয়। সেই মহাযুদ্ধে রাজা ভগদত্ত তার পরম মিত্র কুরু রাজা দূর্যোধনের পাবলম্বন করে যুদ্ধে অংশগ্রহন করে। তার সৈন্যদলে বহু গারো (কিরাত সৈন্য) কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে বিরত্ব সহকারে অংশগ্রহন করে মৃত্যু বরণ করেন। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ ঐতিহাসিক ঘটনা। পন্ডিতদের মতে উহার সংঘটিত কাল তিন হাজার একশত আত্রিশ খ্রীষ্টপূর্ব অব্দে অর্থাৎ আজথেকে প্রায় পাঁচ হাজার একশত পঞ্চাশ বছর আগে। কাজেই ভারতীয় উপমহাদেশে গারোদের আগমনকালকে আজথেকে আনুমানিক সাড়ে ছয় হাজার বছর পূর্বে ধরে নেওয়া যায়। (ডঃ মজহারুল ইসলাম তরু)
ঝ) ডঃ মজহারুল ইসলাম তরু আরও লিখেছেন- গারোদের বিশ্বাস ২৫০০ খ্রষ্টপূর্বাব্দ থেকেই উল্লিখিত (বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও থানা) অঞ্চলসমূহে বসবাস করে আসছে। নৃ-তত্ত্ববিদ Edward Dalton, Robbins Burling প্রমূখ অনুরূপে অভিমত পোষণ করেন।
ঞ) উইকিপিডিয়ায় বলা আছে- "উয়ারী-বটেশ্বর অঞ্চলে ২০০৬ খ্রিস্টাব্দে প্রাপ্ত পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন অনুযায়ী বাংলাদেশ অঞ্চলে জনবসতি গড়ে উঠেছিলো প্রায় ৪ হাজার বছর আগে। ধারণা করা হয় দ্রাবিড় ও তিব্বতীয়-বর্মী জনগোষ্ঠী এখানে সেসময় বসতি স্থাপন করেছিল"। (বাংলাদেশের ইতিহাস এবং বাংলার ইতিহাস - উইকিপিডিয়া)
ট) Wikipidia এবং Official Homepage of Meghalaya State of India-তে বলা আছে-
 According to one such oral tradition, the Garos first came to Meghalaya from Tibet about 400 (BC) years ago under the leadership of Jappa Jalimpa, crossing the Brahmaputra River and tentatively settling in the river valley. It is said that they were later driven up into the hills by other groups in and around the Brahmaputra River. Various records of the tribe by invading Mughal armies and by British observers in what is now Bangladesh wrote of the brutality of the people.”
ঠ) নৃতাত্ত্বিকদের মতে, গারোরা তিব্বতীয়-বর্মী জনগোষ্ঠী (সুভাষ জেংচাম- গারোদের সমাজ ও সংস্কৃতি)।
ড) The Garos’ own traditions relate that they came originally from Tibet to what is now Cooch Behar, whence they moved on to Dhubri whose king received them warmly. However, later on, being afraid of them, he did not allow them to settle permanently. From there they moved to their neighourhood of Jogighopa where they remained for about 400 years but they were again forced to leave the place, driven towards the south by the ruler of that country, crossed the Brahmaputra on rafts and advanced towards Gauhati, where they settled at Ka’magre or present Kamakhya Hills and along the Brahmaputra valley. As the place was infested with tigers, the Garo relinguished the place and then spread into Habraghat Pargana in Goalpara. Tradation also tell us while in the neighbourhood of Habraghat Pargana, the Garo appear to have become rich and prosperous and the first Garo Kingdom was established, of which the first reigning price was Abrasen who has his palace and capital at Sambol A’ding, an isolated hill near the Dakaitdol Village not far from Goalpara town”.
-Historical Accounts, Official Homepage of Meghalaya State of India

অতএব, উপরোক্ত সমীক্ষাথেকে ভারতীয় উপমহাদেশে গারোদের আগমনকালকে আজথেকে আনুমানিক সাড়ে ছয় হাজার বছর পূর্বে ধরে নেওয়া যায় নৃতত্ত্ববিদদের মতে ভারতবর্ষে মোঙ্গলীয়রা প্রবেশ করেছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া দিয়ে। এরা প্রথমে পূর্ব ও উত্তর ভারতের পাহাড়ি অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। বিশেষ করে চীন-ভারতের সীমান্তবর্তী তিব্বত, ভুটান, নেপাল, সিকিম এবং তৎসংলগ্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছিল। বাংলাদেশের পাহাড়ি অঞ্চলের মোঙ্গলীয়রা প্রবেশ করেছিল মায়ানমারের চীন প্রদেশের চীনা পাহাড়ের বন্ধুর পথ পেরিয়ে। ভারতে প্রবেশকারী মোঙ্গলীরা নানা শাখায় বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। ধারণা করা এদের একটি শাখা প্রথমে তিব্বতের তুরা প্রদেশে ও ভুটানের নকলবাড়ি নামক অঞ্চলে বসতি শুরু করে। এই শাখাকেই ভারতবর্ষে গারোদের আদি জনগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

গারোদের ভৌগলিক অবস্থান অতীত ও বর্তমান

বর্তমান গারোহিলসের সীমারেখা নির্ধারনের আগেই গারোহিলস বা গারোদের আবাসভূমি পূর্বক তত্ত্ব উপাত্ত বের করে E.T Dalton তাঁর Description Ethonology of Bengal and History of Eastern India গ্রন্থে গারোদের ভৌগলিক সীমারেখা উল্লেখ করেছিলেন। B.C Allen এর Gaze Tree of Bengal and North East India নামক গ্রন্থে একই কথা বলেছেন। E.T Dalton এবং B.C Allen এর গ্রন্থ মতে গারোহিলসের সীমারেখা হচ্ছে- উত্তর গোয়ালপাড়া জেলার হাবরাঘাট মেচপাড়া পশ্চিমে কালুমালুপাড়া, কড়াইবাড়ি, সিঙ্গিমারি, পুটিমারি, রৌমারি অর্থাৎ পুরো ব্রহ্মপুত্র বেষ্টিত। দক্ষিণে বর্তমান বাংলাদেশের সাবেক ছয়টি থানা; যেমন শেরপুর, নালিতাবাড়ি, হালুয়াঘাট, সুসংদুর্গাপুর, কলমাকান্দা এবং শ্রীবর্দী।
E.T Dalton তাঁর Description Ethonology of Bengal and History of Eastern India গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, গারোহিলসের অবস্থান হচ্ছে উত্তরে ২৫ ডিগ্রী ও ২৬ ডিগ্রীর ভিতরে। গারোহিলসের সাবেক জেলা প্রশাসক মেজর এ প্লেফেয়ার্স প্রায় মত ব্যক্ত করেছেন। তিনি জানিয়েছেন গারোহিলস জেলার অবস্থান হচ্ছে- উত্তরে ২৫-৯ ডিগ্রী এবং ২৬-১০ ডিগ্রী; পূর্বে Longitude ৮৯-৪৯ এবং ৯১-২ ডিগ্রীর মধ্যে। E.D Dalton আরও উল্লেখ করেছেন, সে সময়ে গারোদের আবাসভূমিতে হিন্দু মুসলিমদের অনুপ্রবেশ ঘটে নি। কিন্তু ব্রিটিশ ভারত সরকার হাবরাঘাট, মেচপাড়া, কালুমালুপাড়া, কড়াইবাড়ি, সিঙ্গিমারি, পুটিমারি, রৌমারি এবং বাংলাদেশের সাবেক ছয়টি থানা; যেমন শেরপুর, নালিতাবাড়ি, হালুয়াঘাট, সুসংদুর্গাপুর, কলমাকান্দা, শ্রীবর্দী এসব বিশাল অংশ বাইরে রেখে গারোহিলসের মানচিত্র প্রণয়ন করেন ১৮৭২ সালে। মূলতঃ এ মানচিত্র প্রণয়নই গারোদের দেশ খণ্ড বিখণ্ড ও বিভক্ত করার নীল নকশা। ইতিহাসের ভাঙা সিড়ি বেয়ে গারোরা আজ তিনটি ভৌগলিক অংশে বসবাস করছে। যেমন মেঘালয়ের গারোহিলস, দ্বিতীয়ত আসাম রাজ্যের হাবরাঘাট, মেচপাড়া, কালুমালুপাড়া, কড়াইবাড়ি, সিঙ্গিমারি, পুটিমারি, রৌমারি এবং বাংলাদেশে।

বর্তমানে গারোরা ভারতের মেঘালয়ের গারো হিলসে, আসাম রাজ্যের কামরূপ, গোয়ালপাড়া এবং কারবি আংলং জেলায়, পশ্চিম বঙ্গের দিনাজপুর, ডার্জিলিং কোচবিহার, জলপাইগুড়িতে অধিক সংখ্যক গারো বসবাস করে। ত্রিপুরা রাজ্যের মোট ৪টি জেলায় ‘ত্রিপুরা গারো ইউনিয়ন’-এর তথ্যমতে সেখানে গারোর সংখ্যা প্রায় ১৫০০০ অধিক গারো রয়েছে। এছাড়াও Gan-Chaudhuri, Jagadis. Tripura: The Land and its People. (Delhi: Leeladevi Publications, 1980 গ্রন্থ অনুসারে নাগাল্যাণ্ড রাজ্যেও কিছু সংখ্যক গারো রয়েছে, তবে তরুণ প্রজন্মের বেশির ভাগ গারোই তাদের মাতৃভাষা বলতে পারে না। উক্ত গ্রন্থের ১০ পৃষ্টায় বলা হয়েছে, “Garos are also found in minority number in Nagaland but many of the young generations are unable to speak the garo mother tongue”.
এদিকে বাংলাদেশে বসবাসরত গারো জনগোষ্ঠি ঢাকা বিভাগের বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার মুক্তাগাছা, ভালুকা, ফুলবাড়িয়া, ফুলপুর এবং হালুয়াঘাট উপজেলায়, জামালপুর জেলার সদর উপজেলা এবং শোলাকুড়ি; শেরপুর জেলার সদর থানা, শ্রীবর্দী, নকলা, নালিতাবাড়ি এবং ঝিনাইগাতি এবং বখশিগঞ্জ উপজেলায়; টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল এবং মধুপুর উপজেলায়, নেত্রকোনা জেলার পূর্বধলা, দুর্গাপুর, কলমাকান্দা উপজেলায়, গাজিপুর জেলার শ্রীপুর, কাওরাইল; সুনামগঞ্জ জেলার তাহেরপুর, সুনামগঞ্জ উপজেলায়; সিলেট জেলা ও মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন উপজেলায় এবং পার্বত্য চট্টগ্রামে জেলাতেও কিছু অংশ গারো বসবাস করছে। জনশ্রুতি রয়েছে, বাংলাদেশের রংপুর জেলাতেও অল্প সংখ্যক গারো রয়েছে, যারা দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ গারোদের সাথে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছে এবং নিজস্ব সমাজ-সংস্কৃতি ভুলে বসে আছে। তবে এর পক্ষে তেমন কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হয় নি।