বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৫

সবার মাতৃভাষায় পড়ালেখার ব্যবস্থা করবে বাংলাদেশ সরকার?

ফিডেল ডি সাংমা

ফেসবুকে আমার “আদিবাসী শিশুদের হাতে সরকারী পাঠ্যপুস্তক বিতরণ” সম্পর্কিত একটি পোস্টে চোখে পরে যায় জনৈক বাংলাভাষী প্রধান শিক্ষিকার। পোস্টটি ছিলো ১ জানুয়ারী ২০১৪ সালের। সম্ভবত ছবির/পোস্টের শিশুদের হাতে পাঠ্যবই দেখে তিনি চমকে গিয়েছিলেন। আমার ধারণা, ‘বাংলাদেশের আদিবাসী শিশুরা বাংলায় পড়াশুনা করে’ এমন কথা ভাবার কথা উনার মাথাতেই আসে নি কিংবা সেরকম ভাবার সুযোগও পান নি। আমি আমার কর্ম জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতায়ও দেখেছি, কোন কোন সরকারী শিক্ষা অফিসার; এমনকি বাঙ্গালী প্রধান শিক্ষকদের মাথাতেও আসে না, "ভিন্নভাষী কোমলমতি শিশুরা কি ভাবে বাংলায় পড়াশুনা করে?"

আমার বাংলা পরীক্ষার খাতায় কম নম্বর পেলে আমার ৪র্থ শ্রেনী অনুত্তীর্ণ মা আমাকে “কি করে বাংলায় এত কম নাম্বার পাস, ভালো করতে পড়তে পারিস না” বলে বকতেন, বুঝাতেন। আমিওবাঙ্গালীরাই(বাংলাভাষীরা) বাংলায় ফেল করে, আর আমিতো আদিবাসী(গারো); ভাগ্যিস আমি টেনেটুনে পাশের নম্বর তুলেছি- বলে মাকে উত্তর দিতাম। মূলত এভাবেই নিজেকে সান্ত্বনা দিতাম আমি।

হয়তোবা সম্মানিত এ প্রধান শিক্ষিকাও আমার মতোই ভাবছিলেন। উনার সাথে কমেন্টের মাধ্যমে নিম্নে প্রদত্ত মতবিনিময় হলো। আমি জানি না, আমাদের দুজনের এ মত বিনিময়ে কার কী লাভ হলো। উনার সাথে আমার ডায়ালগুলো ছিলো এরকম...
= এই শিশুগুলোর নিজের ভাষা কি? ওরা যদি মায়ের ভাষায় পড়তে পারত তবেই আমার শান্তি হত ...
.
** এই শিশুরা গারো। মাতৃভাষা- গারো/আচিক। প্রথম প্রথম এই শিশুরা পড়া বুঝতে পারে না; না বুঝে শুধু মুখস্ত করে। এই জন্যই গারো ভাষা জানে এমন শিক্ষক দরকার হয়। তাই আমাদের এই শিশুরা সরকারী (বাঙ্গালী) স্কুলে যায় কম। অবশ্য গারো অধ্যুষিত এলাকায় সরকারী স্কুল নাই বললেই চলে।
.
= সে কি আমি বুঝতে পারছিনা অমন হলে কি কষ্ট হবে ওদের পড়তে ! সরকারীভাবে কেন দেশের সকল শিশুর জন্য তার মায়ের ভাষায় পাঠ্যবই লেখা হবে না?
.
** বাংলাদেশে যাদের মাতৃভাষা বাংলা নয় এমন জাতির সংখ্যা ৪৫; বাংলা ভাষী নিয়ে ৪৬টি ভাষা হবে। সবার মাতৃভাষায় পড়ালেখার ব্যবস্থা করবে বাংলাদেশ সরকার? আমাদের বাংলাদেশ সরকারের না আছে ক্ষমতা, না আছে মমতা
.
= ওহ ! তাহলে উপায়!
.
** সে কঠিন অবস্থা! প্রাইমারী থাকতে আমাদের বাংলা টু বাংলা, বাংলা টু গারো, বাংলা টু ইংলিশ; আবার ইংলিশ টু বাংলা, ইংলিশ+বাংলা টু গারো ভাষার ব্যবহার করতে হয়। যাদের মাতৃভাষা বাংলা নয়; এমন শিশুদেরকে সবাইকেই এই কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত এর মোকাবেলা করে যাচ্ছে। এমন কি এসব স্কুলে পড়তে আসা বাঙ্গালী/বাংলাভাষী ছেলেমেয়েরা ও আদিবাসী ভাষা শিখে যায়। আমাদের শিশু বয়সথেকেই কিভাবে বাঁধার পাহাড় পেরিয়ে আসতে হয়। তাই আমি বলি, আদিবাসী শিশু মানে সংগ্রামী শিশু
.
এবার আপনি/আপনারা বুঝতে পারছেনতো, আমরা কিভাবে আছি?
আপনার কনসার্ন-এর জন্য ধন্যবাদ.....                  .
.
== ধন্যবাদ দিয়ে আর লজ্জা দেবেন না ! কিন্তু যত ভাষাই হোক না কেন শিশুদের সংখ্যা বেশি হওয়ার কথা নয়। রাষ্ট্র এবং সমাজের ... আমার এবং আপনার উচিৎ এই শিশুদের প্রথম পাঠ অন্তত তার মায়ের ভাষাতে হওয়ার সুযোগ করে দেয়া ...
.
** আমি জানি না, আমাদের দুজনের এ মত বিনিময়ে কার কী লাভ হলো। আপনারা কী কেউ জানেন...?

# পরিশেষে জনাবা প্রধান শিক্ষিকা বললেন-খুব ভালো লাগলো আলোচনায় সবার গঠন মূলক মতামতের জন্য। গত রাতে আপনার সাথে কথা বলে শিশুদের মত জানতে আজ স্কুলে ক্লাস ফাইভে ক্লাস নেবার সময় যখন আমি ওদের প্রশ্ন করলাম, আচ্ছা ধর, যদি তোমাদের সব বই গুলো বাংলাতে নয় অন্য আর কোন ভাষায় লেখা হয় তবে কেমন হয়? তো ওদের সাফ উত্তর, ম্যাম, তবে নির্ঘাত স্কুল ছাড়বো। তারপর বই খুলে বলে, এটা ভাবতেই পারি না। তারপর ওদের বাংলা বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে বাংলাদেশের নানা জাতিগোষ্ঠী এবং ভাষার মানুষের কথা বলা হয়েছে যেখানে সেখানটা দেখিয়ে যখন ওদের বললাম, দেখো তো এই শিশু গুলো তবে কোন ভাষায় পড়বে? তখনও তাদের সাফ উত্তর, ওদের ভাষায় পড়বে, নাইলে পড়তে পারে নাকি? শিশুরা কত সহজেই না সত্যটা বুঝতে পারে ! ধন্যবাদ, দাদা। চলুন সবাই মিলে আমাদের শিশুদের তাদের মায়ের ভাষায় পড়ার জানার ব্যবস্থা করি

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন