লতিফ ভায়ের সাথে দেখা হলো না
------------------------------------------
.
চিত্রপটঃ জলছত্র কর্পোস খ্রীস্টি মিশন। আলোকিত মধুপুরের প্রধান পৃষ্ঠপোষক লতিফ ভুইঞা সেখানে এসেছেন। খবরটি শুনেই আমারও আগ্রহ হলো। ভাবলাম, যাই আমিও দেখা করে আসি। তারপর তিনি যদি শোনেন, আমি তার কাছে পিঠে থেকেও দেখা করতে আসলাম না; তাহলে তিনি মাইণ্ড করতে পারেন। এমনিতে গ্রুপের কার্যকরী কমিটির সভাপতি পদথেকে আমার সড়ে আসাতে উনি ব্যাক্তিগতভাবে খুশি নন, ভেতরে ভেতরে মানাভিমান রয়ে গেছে- সেটা আমি জানি। সুতরাং দেখাটা না করলে আমার নিজেরও ভালো লাগবে না। আগেরবার নির্বাচনকালীন সময়ে উনি ২ মাসের জন্য ছুটিতে এলেও আমার সাথে কখনও সাক্ষাৎ হয়নি। সাথে এসেছেন সুন্দর ধবধবে সাদা শাড়ি পরিহিতা মহিলা। দূরথেকে দেখে আমি ভাবলাম, মহিলাটি মিশনের কোন সিস্টার (নান) হতে পারেন; কিন্তু পরে জানলাম, মহিলাটি লতিফ ভায়ের মা।
.
দেখলাম, লতিফ ভাই, উনার মা আর আমার অপরিচিত একজন ফাদার (খ্রিস্টান ধর্মের পুরোহিত)-এর সাথে আলাপ করছেন। মনে হলো, উনাদের আলাপটা শেষ পর্যায়ে। আমি পৌছতেই লতিফ ভাই এবং আমি একসাথে হ্যাণ্ডশেকের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলাম। তখন আমার মাথায় দুষ্টুমি বুদ্ধি চাপলো। আমাকে চিনতে পারেন কিনা ভেবে আমি বললাম- আমি ফিডেল সাংমার ছোট ভাই। কিন্তু আমার মনে হলো না, আমার কথাটা তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। সুতরাং ব্যস্ততার ভান করে মিশন প্রাঙ্গন ঘুরে দেখার নামে অন্যান্য লোকজনদের সাথে সাক্ষাৎ করতে অন্যদিকে চলে গেলেন। এরই মধ্যে রফিক ভুইঞা আমার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। রফিক ভুইঞা আমার পূর্ব পরিচিত এবং খাতির; যা বিশ্বের কোন ভুইঞা বংশের সাথে আগে কখনও ছিলো না। ধরে নিলাম, এই রফিকও লতিফ ভায়ের সফর সঙ্গী। রফিকের সাথে খোশ গল্প করতে করতে জানলাম, লতিফ ভাই এই মিশনের জন্য ৫ লক্ষ টাকা অনুদান দিতে চাইছেন। আমি কিছুক্ষণ ভেবে ভ্রু কুঁচকে রফিককে বললাম, তগর ভুইঞা বংশের টেহা কি বেশি অয়া গেলো গা নাকি? এই মিশনরাতো চাইলের বিদেশী ডলার সাহায্য পায়তে পারে।- আমি কিবায় কমু, যার যেবা ইচ্ছা-- নাকি আবার নির্বাচনী প্রচারণা?- তাইবান-- কিন্তু এডা অয়লে- চিন্তা করসস? হাতে এহনও ৫টা বসর রয়সে, যে কোন (নির্বাচনী) পরিস্থিতি, যে কোন সময় পাল্টায়া যাবার পারে। - তাওতো কতা-- তাইলে এই অনুদান পরের নির্বাচনের আগে দিলেই বেশি বালা অইত নাকি?- হেডা হেই বালা বুজবো নি- যাই অউক, হেরে আবার কবাইন, ফিডেল দাদার বড়বাই অথবা সুডুবাই আইসিলো। দেহি, হে আমারে চিনা হায়কিনা-
.
আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আলাপ করছিলাম, তার কাছাকাছি এলাকার নিম্ন আয়ের লোকজন কাজ করছে। মাঝে মাঝে দুজনই তাদের কাজ করার দিকে তাকাচ্ছি আর আলাপ করছি। আমার একটা খুব খারাপ একটা বদ-অভ্যাস আছে, তা হলো সিগারেট খাওয়া। আমি রফিককে সরাসরি না বলে আমার স্বভাবসুলভ দুষ্টুমি করে বললাম, আমার দুই আঙ্গুলের চিপায় কেন্নিগা জানি খায়জায়তাসে। বুঝলাম, রফিক আমার কথা বুঝতে পারে নি। তাই চোখ দুটো বড় বড় করে আমার দিকে তাকায়। আমি আবার বললাম, যাইন, আমরা কতা কইতে কইতে এইন্দা হাঁটি। কথা না বাড়িয়ে রফিক আমার সাথে হাঁটে।
আলাপ করতে করতে আমরা বড় এবং অনেক উঁচু একটা পানির ট্যাঙ্কের পেছনে চলে এলাম। পরিবেশটা খুব সুন্দর। আশেপাশে ছোট ছোট ফল আর বাহারী ফুলের গাছ। ছোট ছোট রঙিন প্রজাপতি আর পাখিগুলো উড়াউড়ি করছে। শিরশিরে ঠাণ্ডা হাওয়া গায়ে লাগছে টের পাচ্ছি। চারপাশ দেখে মনে হলো, সিগারেট খাওয়ার মতো নিরাপদ স্থান। যদি না লতিফ ভাই লোকজনের সাথে আলাপ শেষ করেন, তাহলে এখন এদিকে কারোর আসার সম্ভাবনা নাই। সুতরাং এবার সিগারেটটা এখানেই খাওয়া যায়। পকেটথেকে সিগারেট বের করে গ্যাসলাইটে চাপ দিতে যাবো, ঠিক সেসময় ঢুম করে বিকট শব্দ শুনে দুজনই চমকে গেলাম। ত্বরিৎ গতিতে ভাবছি, শব্দটা কিসের হতে পারে, কাছেই মজুররা ট্যাংকির উপড়ে চড়ে কাজ করছিলো। ওদেরই কিছু হলো নাতো! আশঙ্কা এবং ভয়ে ঘেমে যাচ্ছি। আমরা আর দাঁড়িয়ে না থেকে যেদিকথেকে শব্দটা এসেছে সেদিকে দৌড়াচ্ছি আর হাঁপাচ্ছি। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে আমরা দুজনই প্রচণ্ডভাবে ঘামছি। আমাদের পরনের শার্ট ভিজে শরীরের সাথে লেগে চপচপ করছে; তবুও দৌঁড়াচ্ছি। কিছুক্ষণ পরই আবার ততোধিক বিকট শব্দ! ঢুরররুম করে আওয়াজটা হতেই দেখি, আরে এতো ফুলের বাগান নয়, মামুন খানের খরখরে বিছানা।
.
অগত্যা, আমার আফসোস; লতিফ ভায়ের সাথে আর দেখা হলো না। আমি মনে মনে বলি, আরে হালা খোয়াব, তর গুষ্টি কিলাই
-----------------------
(তারিখঃ ১৫ মে, ২০১৪)
------------------------------------------
.
চিত্রপটঃ জলছত্র কর্পোস খ্রীস্টি মিশন। আলোকিত মধুপুরের প্রধান পৃষ্ঠপোষক লতিফ ভুইঞা সেখানে এসেছেন। খবরটি শুনেই আমারও আগ্রহ হলো। ভাবলাম, যাই আমিও দেখা করে আসি। তারপর তিনি যদি শোনেন, আমি তার কাছে পিঠে থেকেও দেখা করতে আসলাম না; তাহলে তিনি মাইণ্ড করতে পারেন। এমনিতে গ্রুপের কার্যকরী কমিটির সভাপতি পদথেকে আমার সড়ে আসাতে উনি ব্যাক্তিগতভাবে খুশি নন, ভেতরে ভেতরে মানাভিমান রয়ে গেছে- সেটা আমি জানি। সুতরাং দেখাটা না করলে আমার নিজেরও ভালো লাগবে না। আগেরবার নির্বাচনকালীন সময়ে উনি ২ মাসের জন্য ছুটিতে এলেও আমার সাথে কখনও সাক্ষাৎ হয়নি। সাথে এসেছেন সুন্দর ধবধবে সাদা শাড়ি পরিহিতা মহিলা। দূরথেকে দেখে আমি ভাবলাম, মহিলাটি মিশনের কোন সিস্টার (নান) হতে পারেন; কিন্তু পরে জানলাম, মহিলাটি লতিফ ভায়ের মা।
.
দেখলাম, লতিফ ভাই, উনার মা আর আমার অপরিচিত একজন ফাদার (খ্রিস্টান ধর্মের পুরোহিত)-এর সাথে আলাপ করছেন। মনে হলো, উনাদের আলাপটা শেষ পর্যায়ে। আমি পৌছতেই লতিফ ভাই এবং আমি একসাথে হ্যাণ্ডশেকের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলাম। তখন আমার মাথায় দুষ্টুমি বুদ্ধি চাপলো। আমাকে চিনতে পারেন কিনা ভেবে আমি বললাম- আমি ফিডেল সাংমার ছোট ভাই। কিন্তু আমার মনে হলো না, আমার কথাটা তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। সুতরাং ব্যস্ততার ভান করে মিশন প্রাঙ্গন ঘুরে দেখার নামে অন্যান্য লোকজনদের সাথে সাক্ষাৎ করতে অন্যদিকে চলে গেলেন। এরই মধ্যে রফিক ভুইঞা আমার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। রফিক ভুইঞা আমার পূর্ব পরিচিত এবং খাতির; যা বিশ্বের কোন ভুইঞা বংশের সাথে আগে কখনও ছিলো না। ধরে নিলাম, এই রফিকও লতিফ ভায়ের সফর সঙ্গী। রফিকের সাথে খোশ গল্প করতে করতে জানলাম, লতিফ ভাই এই মিশনের জন্য ৫ লক্ষ টাকা অনুদান দিতে চাইছেন। আমি কিছুক্ষণ ভেবে ভ্রু কুঁচকে রফিককে বললাম, তগর ভুইঞা বংশের টেহা কি বেশি অয়া গেলো গা নাকি? এই মিশনরাতো চাইলের বিদেশী ডলার সাহায্য পায়তে পারে।- আমি কিবায় কমু, যার যেবা ইচ্ছা-- নাকি আবার নির্বাচনী প্রচারণা?- তাইবান-- কিন্তু এডা অয়লে- চিন্তা করসস? হাতে এহনও ৫টা বসর রয়সে, যে কোন (নির্বাচনী) পরিস্থিতি, যে কোন সময় পাল্টায়া যাবার পারে। - তাওতো কতা-- তাইলে এই অনুদান পরের নির্বাচনের আগে দিলেই বেশি বালা অইত নাকি?- হেডা হেই বালা বুজবো নি- যাই অউক, হেরে আবার কবাইন, ফিডেল দাদার বড়বাই অথবা সুডুবাই আইসিলো। দেহি, হে আমারে চিনা হায়কিনা-
.
আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আলাপ করছিলাম, তার কাছাকাছি এলাকার নিম্ন আয়ের লোকজন কাজ করছে। মাঝে মাঝে দুজনই তাদের কাজ করার দিকে তাকাচ্ছি আর আলাপ করছি। আমার একটা খুব খারাপ একটা বদ-অভ্যাস আছে, তা হলো সিগারেট খাওয়া। আমি রফিককে সরাসরি না বলে আমার স্বভাবসুলভ দুষ্টুমি করে বললাম, আমার দুই আঙ্গুলের চিপায় কেন্নিগা জানি খায়জায়তাসে। বুঝলাম, রফিক আমার কথা বুঝতে পারে নি। তাই চোখ দুটো বড় বড় করে আমার দিকে তাকায়। আমি আবার বললাম, যাইন, আমরা কতা কইতে কইতে এইন্দা হাঁটি। কথা না বাড়িয়ে রফিক আমার সাথে হাঁটে।
আলাপ করতে করতে আমরা বড় এবং অনেক উঁচু একটা পানির ট্যাঙ্কের পেছনে চলে এলাম। পরিবেশটা খুব সুন্দর। আশেপাশে ছোট ছোট ফল আর বাহারী ফুলের গাছ। ছোট ছোট রঙিন প্রজাপতি আর পাখিগুলো উড়াউড়ি করছে। শিরশিরে ঠাণ্ডা হাওয়া গায়ে লাগছে টের পাচ্ছি। চারপাশ দেখে মনে হলো, সিগারেট খাওয়ার মতো নিরাপদ স্থান। যদি না লতিফ ভাই লোকজনের সাথে আলাপ শেষ করেন, তাহলে এখন এদিকে কারোর আসার সম্ভাবনা নাই। সুতরাং এবার সিগারেটটা এখানেই খাওয়া যায়। পকেটথেকে সিগারেট বের করে গ্যাসলাইটে চাপ দিতে যাবো, ঠিক সেসময় ঢুম করে বিকট শব্দ শুনে দুজনই চমকে গেলাম। ত্বরিৎ গতিতে ভাবছি, শব্দটা কিসের হতে পারে, কাছেই মজুররা ট্যাংকির উপড়ে চড়ে কাজ করছিলো। ওদেরই কিছু হলো নাতো! আশঙ্কা এবং ভয়ে ঘেমে যাচ্ছি। আমরা আর দাঁড়িয়ে না থেকে যেদিকথেকে শব্দটা এসেছে সেদিকে দৌড়াচ্ছি আর হাঁপাচ্ছি। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে আমরা দুজনই প্রচণ্ডভাবে ঘামছি। আমাদের পরনের শার্ট ভিজে শরীরের সাথে লেগে চপচপ করছে; তবুও দৌঁড়াচ্ছি। কিছুক্ষণ পরই আবার ততোধিক বিকট শব্দ! ঢুরররুম করে আওয়াজটা হতেই দেখি, আরে এতো ফুলের বাগান নয়, মামুন খানের খরখরে বিছানা।
.
অগত্যা, আমার আফসোস; লতিফ ভায়ের সাথে আর দেখা হলো না। আমি মনে মনে বলি, আরে হালা খোয়াব, তর গুষ্টি কিলাই
-----------------------
(তারিখঃ ১৫ মে, ২০১৪)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন