বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৫

দৃষ্টিপাতঃ৪ মানুষ বনসাই, নাকি হাইব্রিড?

দৃষ্টিপাত-৪ঃ মানুষ বনসাই, নাকি হাইব্রিড?
.................
বনসাই গাছ দেখলে আমার বড্ড মায়া লাগে। মনে হয় কি নিদারুণ যন্ত্রণা নিয়ে আত্মরক্ষায় নিরুপায় জীবনকে মেনে নিয়ে অসহায় ভাবে ছোট্ট একটা টবের উপর দাঁড়িয়ে আছে, কোনরকমে বেঁচে আছে। স্বার্থবাদি মানুষ উদ্দেশ্য প্রনোদিতভাবে, নিজেদের মনোরঞ্জনের জন্য এ বনসাইদের জোর করে চাপিয়ে রেখেছে। চিরজীবনের জন্য ছোট করে রেখেছে। প্রাকৃতিকভাবে, স্বাভাবিকভাবে এদের বেড়ে ওঠার উপায় নেই; অন্যান্য গাছের মত বড় হওয়ার অধিকার নেই, এরা যেন বঞ্চিত জাতি। বাংলাদেশ সরকার এবং বৃহত্তর নৃগোষ্ঠী (নৃগোষ্ঠী= নৃবিজ্ঞানের ভাষায় মানুষ) যেভাবে চাকমা, মার্মা, গারোদের মত প্রায় ৪৫টি জাতিকে উপজাতি (এখন আবার নৃগোষ্ঠী) করে রাখতে চেয়েছে- বনসাই প্রক্রিয়াকেও আমাকে কাছে ঠিক তেমনই মনে হয়। বনসাই-এর নামে একেকটা জাতের বৃক্ষকে উপজাতিকরণের অপপ্র‍য়াস!

শুনেছি, হাইব্রিডটাও তেমনই; দ্রুত বর্ধনশীল অথচ ক্ষণস্থায়ী, সামান্য ব্যাতিক্রমেই রোগাক্রান্ত বা বিনষ্ট হয়ে যায়। তারপরেও মানুষের দৃষ্টি হাইব্রিডটার দিকে। মানুষ ঝুকেছে স্বল্প মূল্যে বেশি লাভের আশায়। অথচ গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে- হাইব্রিড চিকেন, ফলমূল, শাকসবজি খেয়ে মানুষ তথা প্রাণীকুল শারীরিক ও মানসিকভাবে বিভিন্ন সমস্যায় জর্জড়িত হয়েছে এবং হচ্ছে। কিন্তু আশ্চর্য হলেও সত্য যে, মানুষ লোভ আর লাভের আশায় LOVE- কে চিতার আগুনে পুড়ে অংগার করে দিয়ে চলেছি। হাইব্রিডটার দিকেও আমাদের দৃষ্টি প্রসারিত।

আগামী ৫০ বছর পর মানুষ কি প্রকৃত মানুষ থাকবে? নাকী মানুষও বনসাই কিংবা হাইব্রিড পরিণত হয়ে যাবে? আমরাতো কেউই ব্যাক্তি, পরিবার, দেশ ও সমাজে অন্যায় অবিচার, দুর্নীতি, হত্যাযজ্ঞ, রক্তারক্তি হোক, তা চাই না। তবে মানুষ কি পারে না মানুষের নেতিবাচক দিকগুলোকে বনসাই রূপ দিতে এবং মনের ইতিবাচক দিকগুলোকে হাই করে তুলতে? হাইব্রিড যদি করতেই হয়, তাহলে আসুন সকলে মিলে আমাদের সুস্থ্য মন মানসিকতাকে হাই করে তুলি। আমরা কতজন প্রস্তুত আছি...?

।।ফিডেলডিসাংমা, ৫ এপ্রিল/১৫।।

দৃষ্টিপাতঃ আমার ধারাপাঠ

দৃষ্টিপাত ১ঃ  আমার ধারাপাঠ
---------------------------
বোধকরি, অদ্যাবধি লাল সবুজের বাংলাদেশ তথা বিশ্ব ভ্রহ্মাণ্ডে পাপ পঙ্কিলতায় পরিপূর্ণ হইয়া উঠে নায়। আমার ধারণা, “এমন একটা দিন আবো, যেদিন বেক্কে মিইল্যা আনন্দমেলার ন্যালা এই দ্যাশের মানুষ এহই থালায় কইরা হাসতে হাসতে মজার সালুন দিয়া বিরিয়ানি-বাত নিজেও খাবো, আর আরেকজুনরেও খিলাবো”- এইরূপ বিশ্বাস-বাসনা পোষণকারী কিছু শান্তিপ্রিয় মানুষ মহাবিশ্বে এখনও বিদ্যমান। যাহারা মানুষের সহিত যাচিয়া মাগিয়া বিবাদ বাঁধাইতে, লাগাইতে যান না, কিংবা সেরূপ মনোবৃত্তি রাখিয়া চলেন না। পারতপক্ষে ইহারা সমূহ গ্যাঞ্জাম এড়াইয়া চলিবার লক্ষ্যে নিরন্তর সকলের সহিত সমহারে সদাচরণ করিবার অকৃত্রিম বাসনা লইয়া, রামধনু পণ করিয়া নিত্য প্রভাতে সৃষ্টিকর্তার নিকটে মিনতি করিয়া আপন কর্মে মনোনিবেশ করিয়া থাকেন। মূলতঃ ইহারা পরচর্চা, পরনিন্দাকে অতিশয় ঘৃণা করিয়া থাকেন।

তথাপি পরিতাপের বিষয় যে, কিছু মানুষের কর্মকাণ্ড দেখিয়া, ইহাদের আচরণ এবং মতবিনিময়-বাদানুবাদ শুনিয়া, বুঝিয়া বোধ হয় ইহারা খুবই গ্যাঞ্জামপ্রিয়। মনে হইবে ইহারা দুয়েকদিন যৎসামান্য গ্যাঞ্জামে জীবন অতিবাহিত করিতে না পারিলে উনাদের দেহ ও মনের বলশক্তির অপপ্রয়োগ ঘটিতেছে কিংবা উদরের অন্ন হজমে ব্যাঘাত ঘটিবেক। এই কারণে ইহারা শান্তিপ্রিয় মানুষদের পেছনে তাড়া করিয়া দিনযাপন সর্বোত্তম মনে করিয়া থাকেন। ফলে ইহারা নিত্য নিত্য আপন পেশীশক্তি প্রদর্শণপূর্বক শান্তিপ্রিয় মানুষের পশ্চাদদেশে বাঁশ দিবার, দূর্বলদের ভাড়াভাতে ভস্ম প্রদান করিবার, সহস্র ভুখা-নাঙ্গা মানুষের লালরক্ত ঝরাইবার মনোবৃত্তি লইয়া উহাদের সৃষ্টিকর্তার নিকটে মিনতি করিতে করিতে রাজপথে বাহির হন। ইহাদের পর্যবেক্ষণে মনে হইবে যেন- " ঐ শালা নিরামিষ, ক্ষ্যাপ, আমার বোগলে আয়। তুই কাইজ্জা করবি না ক্যা, দ্যাখ তুই... এই মারলাম খোঁচা, বাঁশ, লাথি, গুত্তা, গুলি, বোমা" বলিয়া ইহারা সাধ্যানুযায়ী আপন মহিমা প্রকাশ করিয়া থাকেন।

।।ফিডেলডিসাংমা।। তাখিখঃ ১ মার্চ, ২০১৫

দৃষ্টিপাতঃ ২, যত দোষ- নন্দ ঘোষের!

দৃষ্টিপাতঃ ২, যত দোষ- নন্দ ঘোষের!
(প্লিজ, না পড়ে লাইক দিবেন না। মন্তব্য না হলেও চলবে)
~~~~~~~~~~~~~~~
“টাঙ্গাইলের মধুপুরে ২১৮ লিটার মদসহ দুই নারী আটক”- টাঙ্গাইল বার্তা।

উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো খবর বটে। তবে, এ আটককৃত লোকেরা পুনরায় এ মদের ব্যবসায় নামবে না, এর নিশ্চয়তা কোথায়? আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে মনে হয়, এরা এই ব্যবসা ছাড়বে না, ছাড়তে পারবে না। কারণ, এই ব্যবসার পেছনে অনেক ডোনার থাকে; যারা নিজেরাই এসব মদের ভোক্তা। দরিদ্র ঋষি পরিবার বা এলাকার অন্যান্য আদিবাসীরা নিজেদের ব্যবহারের জন্য মদ কিনে না, কেনার সাধ্যও নাই তাদের। কোন না কোনভাবে এসব দরিদ্র পরীবারকে ফুসলিয়ে, টাকার লোভ দেখিয়ে এদের এব্যবসায় নামতে বাধ্য করা হয়েছে। আর এরাও পেটের দায়ে মদের ব্যবসা চালিয়ে গেছে এবং চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ এসব মদের ভোক্তা কারা তাকি প্রশাসন জানে না? এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে এব্যবসা চলছে, সেহেতু, প্রশাসনের জানার কথা। কারণ মন্ত্রণালয় এসব দুর্নীতিরোধে করণীয় সমস্ত প্রশিক্ষণ দিয়েই প্রশাসনে রেখেছে। তারপরও যারা ভোক্তা, প্রশাসন তাদের ধরবে না।

এইসব মাদকসেবীর দলের কোন ধর্ম নাই, দ্বিধা নাই। ধর্মীয় পাপ-পূণ্য বা হারাম হালালের ভাবনাও নাই। এরা সব জায়গায়, সব সমাজে বসে মদ খেতেও পারেন । কারণ, এরা এলাকার প্রভাবশালী, অর্থ-সম্পদশালী লোক; বড় বড় রাজনীতি দলের সোনার টুকরা কিংবা সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত পরিবারের হবু আদর্শ নেতা। যারা রাষ্ট্রীয় এবং ধর্মীয় আইনের চোখে ধূলো দিয়ে অথবা প্রশাসনের লোকদের সাথে হাত মিলিয়ে এসব করেন এবং কোনোভাবে ফাঁদে পড়লেও যারা একটি দুটি ফোন ওর্ডারের মাধ্যমে ছাড়া পেয়ে যান। আর এসব লোকদেরকেও মহান সাংবাদিকেরাও দেখেন না? এটার উত্তরও হ্যাঁবোধকই হবে। কিন্তু উনাদের এসব কীর্তিকাণ্ডের খবর ছাপানো হয় না, ছাপানো যাবে না, কারণটাও জানা- এসব মানী লোকদের পেছনে লাগতে গেলে সাংবাদিক, রিপোর্টারদের জীবন আর পেশা দুটোই হুমকীর মুখে পড়তে হয়।

মদের ব্যবসা বা মদ পান করা কোনটাই ভালো নয়। ব্যক্তি, সমাজ এবং দেশ ও জনগণের জন্য ক্ষতিকর। তাই সমাজথেকে ক্ষতিকর বিষয়টি বন্ধ করতে হলে এসবের দরিদ্র ব্যবসায়ীদের ভালো কোন কাজে প্রশিক্ষণদানের মাধ্যমে, ক্ষুদ্র ঋণ দিয়ে পুনর্বাসন করা উচিত। আর কাজের উদ্যোগটি নিতে পারেন সরকার এবং বেসরকারি সাহায্য সংস্থা, সমাজের প্রভাবশালী, অর্থ-সম্পদশালী এবং ধর্মীয় নেতৃবৃন্দ।

পৃথিবীর সকল মানুষের মঙ্গল হোক।
।।ফিডেলডিসাংমা।। ৪মার্চ,২০১৫।।

লতিফ ভায়ের সাথে দেখা হলো না

লতিফ ভায়ের সাথে দেখা হলো না
------------------------------------------
.
চিত্রপটঃ জলছত্র কর্পোস খ্রীস্টি মিশন। আলোকিত মধুপুরের প্রধান পৃষ্ঠপোষক লতিফ ভুইঞা সেখানে এসেছেন। খবরটি শুনেই আমারও আগ্রহ হলো। ভাবলাম, যাই আমিও দেখা করে আসি। তারপর তিনি যদি শোনেন, আমি তার কাছে পিঠে থেকেও দেখা করতে আসলাম না; তাহলে তিনি মাইণ্ড করতে পারেন। এমনিতে গ্রুপের কার্যকরী কমিটির সভাপতি পদথেকে আমার সড়ে আসাতে উনি ব্যাক্তিগতভাবে খুশি নন, ভেতরে ভেতরে মানাভিমান রয়ে গেছে- সেটা আমি জানি। সুতরাং দেখাটা না করলে আমার নিজেরও ভালো লাগবে না। আগেরবার নির্বাচনকালীন সময়ে উনি ২ মাসের জন্য ছুটিতে এলেও আমার সাথে কখনও সাক্ষাৎ হয়নি। সাথে এসেছেন সুন্দর ধবধবে সাদা শাড়ি পরিহিতা মহিলা। দূরথেকে দেখে আমি ভাবলাম, মহিলাটি মিশনের কোন সিস্টার (নান) হতে পারেন; কিন্তু পরে জানলাম, মহিলাটি লতিফ ভায়ের মা।
.
দেখলাম, লতিফ ভাই, উনার মা আর আমার অপরিচিত একজন ফাদার (খ্রিস্টান ধর্মের পুরোহিত)-এর সাথে আলাপ করছেন। মনে হলো, উনাদের আলাপটা শেষ পর্যায়ে। আমি পৌছতেই লতিফ ভাই এবং আমি একসাথে হ্যাণ্ডশেকের জন্য হাত বাড়িয়ে দিলাম। তখন আমার মাথায় দুষ্টুমি বুদ্ধি চাপলো। আমাকে চিনতে পারেন কিনা ভেবে আমি বললাম- আমি ফিডেল সাংমার ছোট ভাই। কিন্তু আমার মনে হলো না, আমার কথাটা তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। সুতরাং ব্যস্ততার ভান করে মিশন প্রাঙ্গন ঘুরে দেখার নামে অন্যান্য লোকজনদের সাথে সাক্ষাৎ করতে অন্যদিকে চলে গেলেন। এরই মধ্যে রফিক ভুইঞা আমার কাছে এসে দাঁড়িয়েছে। রফিক ভুইঞা আমার পূর্ব পরিচিত এবং খাতির; যা বিশ্বের কোন ভুইঞা বংশের সাথে আগে কখনও ছিলো না। ধরে নিলাম, এই রফিকও লতিফ ভায়ের সফর সঙ্গী। রফিকের সাথে খোশ গল্প করতে করতে জানলাম, লতিফ ভাই এই মিশনের জন্য ৫ লক্ষ টাকা অনুদান দিতে চাইছেন। আমি কিছুক্ষণ ভেবে ভ্রু কুঁচকে রফিককে বললাম, তগর ভুইঞা বংশের টেহা কি বেশি অয়া গেলো গা নাকি? এই মিশনরাতো চাইলের বিদেশী ডলার সাহায্য পায়তে পারে।- আমি কিবায় কমু, যার যেবা ইচ্ছা-- নাকি আবার নির্বাচনী প্রচারণা?- তাইবান-- কিন্তু এডা অয়লে- চিন্তা করসস? হাতে এহনও ৫টা বসর রয়সে, যে কোন (নির্বাচনী) পরিস্থিতি, যে কোন সময় পাল্টায়া যাবার পারে। - তাওতো কতা-- তাইলে এই অনুদান পরের নির্বাচনের আগে দিলেই বেশি বালা অইত নাকি?- হেডা হেই বালা বুজবো নি- যাই অউক, হেরে আবার কবাইন, ফিডেল দাদার বড়বাই অথবা সুডুবাই আইসিলো। দেহি, হে আমারে চিনা হায়কিনা-
.
আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে আলাপ করছিলাম, তার কাছাকাছি এলাকার নিম্ন আয়ের লোকজন কাজ করছে। মাঝে মাঝে দুজনই তাদের কাজ করার দিকে তাকাচ্ছি আর আলাপ করছি। আমার একটা খুব খারাপ একটা বদ-অভ্যাস আছে, তা হলো সিগারেট খাওয়া। আমি রফিককে সরাসরি না বলে আমার স্বভাবসুলভ দুষ্টুমি করে বললাম, আমার দুই আঙ্গুলের চিপায় কেন্নিগা জানি খায়জায়তাসে। বুঝলাম, রফিক আমার কথা বুঝতে পারে নি। তাই চোখ দুটো বড় বড় করে আমার দিকে তাকায়। আমি আবার বললাম, যাইন, আমরা কতা কইতে কইতে এইন্দা হাঁটি। কথা না বাড়িয়ে রফিক আমার সাথে হাঁটে।
আলাপ করতে করতে আমরা বড় এবং অনেক উঁচু একটা পানির ট্যাঙ্কের পেছনে চলে এলাম। পরিবেশটা খুব সুন্দর। আশেপাশে ছোট ছোট ফল আর বাহারী ফুলের গাছ। ছোট ছোট রঙিন প্রজাপতি আর পাখিগুলো উড়াউড়ি করছে। শিরশিরে ঠাণ্ডা হাওয়া গায়ে লাগছে টের পাচ্ছি। চারপাশ দেখে মনে হলো, সিগারেট খাওয়ার মতো নিরাপদ স্থান। যদি না লতিফ ভাই লোকজনের সাথে আলাপ শেষ করেন, তাহলে এখন এদিকে কারোর আসার সম্ভাবনা নাই। সুতরাং এবার সিগারেটটা এখানেই খাওয়া যায়। পকেটথেকে সিগারেট বের করে গ্যাসলাইটে চাপ দিতে যাবো, ঠিক সেসময় ঢুম করে বিকট শব্দ শুনে দুজনই চমকে গেলাম। ত্বরিৎ গতিতে ভাবছি, শব্দটা কিসের হতে পারে, কাছেই মজুররা ট্যাংকির উপড়ে চড়ে কাজ করছিলো। ওদেরই কিছু হলো নাতো! আশঙ্কা এবং ভয়ে ঘেমে যাচ্ছি। আমরা আর দাঁড়িয়ে না থেকে যেদিকথেকে শব্দটা এসেছে সেদিকে দৌড়াচ্ছি আর হাঁপাচ্ছি। দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে আমরা দুজনই প্রচণ্ডভাবে ঘামছি। আমাদের পরনের শার্ট ভিজে শরীরের সাথে লেগে চপচপ করছে; তবুও দৌঁড়াচ্ছি। কিছুক্ষণ পরই আবার ততোধিক বিকট শব্দ! ঢুরররুম করে আওয়াজটা হতেই দেখি, আরে এতো ফুলের বাগান নয়, মামুন খানের খরখরে বিছানা।
.
অগত্যা, আমার আফসোস; লতিফ ভায়ের সাথে আর দেখা হলো না। আমি মনে মনে বলি, আরে হালা খোয়াব, তর গুষ্টি কিলাই
  -----------------------
(তারিখঃ ১৫ মে, ২০১৪)

সবার মাতৃভাষায় পড়ালেখার ব্যবস্থা করবে বাংলাদেশ সরকার?

ফিডেল ডি সাংমা

ফেসবুকে আমার “আদিবাসী শিশুদের হাতে সরকারী পাঠ্যপুস্তক বিতরণ” সম্পর্কিত একটি পোস্টে চোখে পরে যায় জনৈক বাংলাভাষী প্রধান শিক্ষিকার। পোস্টটি ছিলো ১ জানুয়ারী ২০১৪ সালের। সম্ভবত ছবির/পোস্টের শিশুদের হাতে পাঠ্যবই দেখে তিনি চমকে গিয়েছিলেন। আমার ধারণা, ‘বাংলাদেশের আদিবাসী শিশুরা বাংলায় পড়াশুনা করে’ এমন কথা ভাবার কথা উনার মাথাতেই আসে নি কিংবা সেরকম ভাবার সুযোগও পান নি। আমি আমার কর্ম জীবনের বাস্তব অভিজ্ঞতায়ও দেখেছি, কোন কোন সরকারী শিক্ষা অফিসার; এমনকি বাঙ্গালী প্রধান শিক্ষকদের মাথাতেও আসে না, "ভিন্নভাষী কোমলমতি শিশুরা কি ভাবে বাংলায় পড়াশুনা করে?"

আমার বাংলা পরীক্ষার খাতায় কম নম্বর পেলে আমার ৪র্থ শ্রেনী অনুত্তীর্ণ মা আমাকে “কি করে বাংলায় এত কম নাম্বার পাস, ভালো করতে পড়তে পারিস না” বলে বকতেন, বুঝাতেন। আমিওবাঙ্গালীরাই(বাংলাভাষীরা) বাংলায় ফেল করে, আর আমিতো আদিবাসী(গারো); ভাগ্যিস আমি টেনেটুনে পাশের নম্বর তুলেছি- বলে মাকে উত্তর দিতাম। মূলত এভাবেই নিজেকে সান্ত্বনা দিতাম আমি।

হয়তোবা সম্মানিত এ প্রধান শিক্ষিকাও আমার মতোই ভাবছিলেন। উনার সাথে কমেন্টের মাধ্যমে নিম্নে প্রদত্ত মতবিনিময় হলো। আমি জানি না, আমাদের দুজনের এ মত বিনিময়ে কার কী লাভ হলো। উনার সাথে আমার ডায়ালগুলো ছিলো এরকম...
= এই শিশুগুলোর নিজের ভাষা কি? ওরা যদি মায়ের ভাষায় পড়তে পারত তবেই আমার শান্তি হত ...
.
** এই শিশুরা গারো। মাতৃভাষা- গারো/আচিক। প্রথম প্রথম এই শিশুরা পড়া বুঝতে পারে না; না বুঝে শুধু মুখস্ত করে। এই জন্যই গারো ভাষা জানে এমন শিক্ষক দরকার হয়। তাই আমাদের এই শিশুরা সরকারী (বাঙ্গালী) স্কুলে যায় কম। অবশ্য গারো অধ্যুষিত এলাকায় সরকারী স্কুল নাই বললেই চলে।
.
= সে কি আমি বুঝতে পারছিনা অমন হলে কি কষ্ট হবে ওদের পড়তে ! সরকারীভাবে কেন দেশের সকল শিশুর জন্য তার মায়ের ভাষায় পাঠ্যবই লেখা হবে না?
.
** বাংলাদেশে যাদের মাতৃভাষা বাংলা নয় এমন জাতির সংখ্যা ৪৫; বাংলা ভাষী নিয়ে ৪৬টি ভাষা হবে। সবার মাতৃভাষায় পড়ালেখার ব্যবস্থা করবে বাংলাদেশ সরকার? আমাদের বাংলাদেশ সরকারের না আছে ক্ষমতা, না আছে মমতা
.
= ওহ ! তাহলে উপায়!
.
** সে কঠিন অবস্থা! প্রাইমারী থাকতে আমাদের বাংলা টু বাংলা, বাংলা টু গারো, বাংলা টু ইংলিশ; আবার ইংলিশ টু বাংলা, ইংলিশ+বাংলা টু গারো ভাষার ব্যবহার করতে হয়। যাদের মাতৃভাষা বাংলা নয়; এমন শিশুদেরকে সবাইকেই এই কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হতে হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত এর মোকাবেলা করে যাচ্ছে। এমন কি এসব স্কুলে পড়তে আসা বাঙ্গালী/বাংলাভাষী ছেলেমেয়েরা ও আদিবাসী ভাষা শিখে যায়। আমাদের শিশু বয়সথেকেই কিভাবে বাঁধার পাহাড় পেরিয়ে আসতে হয়। তাই আমি বলি, আদিবাসী শিশু মানে সংগ্রামী শিশু
.
এবার আপনি/আপনারা বুঝতে পারছেনতো, আমরা কিভাবে আছি?
আপনার কনসার্ন-এর জন্য ধন্যবাদ.....                  .
.
== ধন্যবাদ দিয়ে আর লজ্জা দেবেন না ! কিন্তু যত ভাষাই হোক না কেন শিশুদের সংখ্যা বেশি হওয়ার কথা নয়। রাষ্ট্র এবং সমাজের ... আমার এবং আপনার উচিৎ এই শিশুদের প্রথম পাঠ অন্তত তার মায়ের ভাষাতে হওয়ার সুযোগ করে দেয়া ...
.
** আমি জানি না, আমাদের দুজনের এ মত বিনিময়ে কার কী লাভ হলো। আপনারা কী কেউ জানেন...?

# পরিশেষে জনাবা প্রধান শিক্ষিকা বললেন-খুব ভালো লাগলো আলোচনায় সবার গঠন মূলক মতামতের জন্য। গত রাতে আপনার সাথে কথা বলে শিশুদের মত জানতে আজ স্কুলে ক্লাস ফাইভে ক্লাস নেবার সময় যখন আমি ওদের প্রশ্ন করলাম, আচ্ছা ধর, যদি তোমাদের সব বই গুলো বাংলাতে নয় অন্য আর কোন ভাষায় লেখা হয় তবে কেমন হয়? তো ওদের সাফ উত্তর, ম্যাম, তবে নির্ঘাত স্কুল ছাড়বো। তারপর বই খুলে বলে, এটা ভাবতেই পারি না। তারপর ওদের বাংলা বইয়ের প্রথম অধ্যায়ে বাংলাদেশের নানা জাতিগোষ্ঠী এবং ভাষার মানুষের কথা বলা হয়েছে যেখানে সেখানটা দেখিয়ে যখন ওদের বললাম, দেখো তো এই শিশু গুলো তবে কোন ভাষায় পড়বে? তখনও তাদের সাফ উত্তর, ওদের ভাষায় পড়বে, নাইলে পড়তে পারে নাকি? শিশুরা কত সহজেই না সত্যটা বুঝতে পারে ! ধন্যবাদ, দাদা। চলুন সবাই মিলে আমাদের শিশুদের তাদের মায়ের ভাষায় পড়ার জানার ব্যবস্থা করি

আজ পালিত হলো আবিমানি গারো রাজা পরেশ চন্দ্র মৃর ১৭তম মৃত্যু বার্ষিকী!

।।ফিডেল ডি সাংমা।।
.টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলার চুনিয়া গ্রামে পিতা রায়চান নকরেক এবং মাতা দেঙা মৃ-এর কোলে ১৯২৯ খ্রীষ্টাব্দে পরেশ চন্দ্র মৃ। মধুপুরের আদিবাসীদের বর্তমান ও ভবিষৎ প্রজন্মের চেতনাতে জাগ্রত করে তোলার ক্ষেত্রে তাঁর সীমাহীন অবদানের জন্য এলাকাবাসী  এই কিংবদন্তি মহাপুরুষ পরেশ চন্দ্র মৃ-কে আবিমানি “গারো রাজা” উপাধি দেওয়া হয়।
.
আজ ৭ই মার্চ, স্বর্গীয় আবিমানি গারো রাজা পরেশ চন্দ্র মৃ ১৭তম মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের আয়োজনে এর কেন্দ্রীয় কার্যালয় জলছত্রে খিম্মা সঙা (স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন) এবং স্মরণসভার আয়োজন করা হয়। এই অনুষ্ঠানে পরিবারের পক্ষথেকে পরেশ চন্দ্র মৃর জ্যৈষ্ঠ মিসেস মুকুল দারু, মেজো কন্যা শিশিলিয়া দারু এবং তাঁর স্বামী মিহির মৃসহ মোট ১৮টি সংগঠন, অঙ্গসংগঠনের নেতৃবর্গ এবং  এলাকার অনেক গন্যমান্য ব্যক্তিগণ উপস্থিত ছিলেন।
 .
অনুষ্ঠান শুরু হয় জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ প্রাঙ্গণে পরেশ চন্দ্র মৃ-র স্মরণে খিম্মা সঙা এবং তাঁর আত্মার জন্যে প্রার্থনার মাধ্যমে। অতঃপর জাউপ সভাকক্ষে সাধারণ সম্পাদক মিঃ থমাস চাম্বুগং-এর সঞ্চালনায় সংগঠনের সভাপতি মিঃ ইউজিন নকরেকের স্বাগতিক বক্তব্য প্রদান করা হয়। তিনি তাঁর বক্তব্যে জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের প্রতিষ্ঠার বিবরণ কৃতজ্ঞতা চিত্তে স্মরণ করেন। তিনি বলেন, ১৯৬২ সন এক ঐতিহাসিক বছর। সেই বছরে আদিবাসীদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ করা ও তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ফাদার উয়াং এর পরামর্শ ও সহযোগিতায় একটি সংগঠন শুরু করেন। সেসময় এ সংগঠনের নাম ছিল “জলছত্র জয়েনশাহী আদিবাসী ঋণদান সমবায় সমিতি”; যা বর্তমানে “জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদ” নামে সুপরিচিত।
 .
জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের সহসভাপতি, আবিমানি গারো রাজা পরেশ চন্দ্র মৃ-র জ্যৈষ্ঠ কন্যা মিসেস মুকুল দারু তাঁর পিতার স্মৃতিচারণ শুনতে শুনতে উপস্থিত আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। মিসেস মুকুল দারু তাঁর স্মৃতিচারণে বলেন, তাঁর পিতার কিশোর  বয়সথেকেই পরোপকারী, সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাকারী, সুসংগঠক, সংগ্রামী জীবনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। নিজে সুশিক্ষিত হয়ে পিছিয়ে পড়া আদিবাসী জনগোষ্ঠীকে জাতি অস্তিত্বকে টিকিয়ে রাখার জন্য সকলকে শিক্ষিত হওয়ার বিকল্প তিনি ভাবতেই পারতেন না। মনোবল এবং প্রবল ইচ্ছা শক্তির অধিকারী। তাই সমাজ উন্নয়নের কাজের পাশাপাশি আদিবাসী সমাজের অন্যায় অত্যাচারের বিরূদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছিলেন। তাই আজ তাঁদের পরিবার সকলেই প্রতিষ্ঠিত। তিনি তাঁর পিতাকে আবিমানি “গারো রাজা” উপাধি প্রদানের জন্য গারো জাতির কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবেন বলে জানালেন।
 .
মিসেস মুকুল দারু আর বলেন, আমরা তাঁর তিন মেয়ে ও দুই ছেলে। বাবার আদর্শ শিক্ষায় আমার সকলেই মোটামুটি সমাজে প্রতিষ্ঠিত। ছোটবেলা থেকে বাবাকে দেখেছি খুবই উদার, বিনয়ী এবং নম্র। তিনি ছোট বেলাথেকে আমাদের শিখিয়েছেন ভালোমন্দ বিচার করার চেতনা। তিনি ভালোবাসতে শিখিয়েছেন সমাজকে, শিখিয়েছেন নিজস্ব জাতীকে নিয়ে গর্ব করতে, সুরক্ষা ও সংরক্ষন করতে শিখিয়েছেন নিজস্ব কৃষ্টি কালচারকে। বাবার মহান আদর্শকে অনুসরণ করে বর্তমানে আমরা সমাজে বিভিন্ন ভাবে অবদান রাখার প্রচেষ্টায় আছি।
১৯৪৫-১৯৪৬ খ্রীষ্টাব্দে দেশে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা বেঁধেছিল, তখন অনান্য হিন্দু পরিবারের মতো বঙ্কিমবাবুর পরিবারও নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য কলকাতায় চলে যাবার সময় পরেশ চন্দ্র মৃকেও সাথে  নিয়ে যান এবং নারিকেল ডাঙ্গা হাই স্কুলে ভর্তি করে দেন। পরেশ চন্দ্র মৃ স্কুল জীবনে হিন্দু পরিবারে থাকার সুবাদে একাধারে যেমন হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ রামায়ন, মহাভারত, গীতা ও বেদান্তর দর্শণ পড়াশুনা করেছেন, তেমনই মাওসেতুং, মেসিম গোর্কি, এঞ্জেলস ও হিটলার লেলিনথেকে শুরু করে জীবনীগ্রন্থথেকে শুরু করে রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিম চন্দ্র, শরৎচন্দ্র, ফালগুনীর গ্রন্থসহ অনেক বিখ্যাত লেখকের লেখা তিনি পড়াশোনা করেছেন। কলকাতায় বঙ্কিম বাবুর পরিবারে থাকার সময়ই  তিনি কংগ্রেস ও মুসলিম লীগের রাজনৈতিক আন্দোলন প্রতক্ষ্য করেছেন এবং সে বাড়ীতে অনেক বড় বড় রাজনীতিবিদদের আনাগোনা ও সমাজ পরিবর্তনের বিষয়ে আলোচনা শুনতে শুনতে পরেশ চন্দ্র মৃ নিজেও নিজ আদিবাসী সমাজের দুরাবস্থার কথা ভাবতেন এবং কুশিক্ষা, কুসংস্কারে আচ্ছন্ন এ সমাজকে পরিবর্তনের স্বপ্ন দেখতেন।
 .
আচিক মিচিক সোসাইটি এবং জাউপ- শিক্ষা ও সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদিকা, আদিবাসী নেত্রী মিসেস সুলেখা ম্রং তাঁর বক্তব্যে আদিবাসীদের পরিবার এবং সামাজিক জীবনে পরেশ চন্দ্র মৃর অবদানের কথা স্মরণ করতে গিয়ে বলেন, আমাদের এ সমাজ নেতা শুধু সুশিক্ষিতই নন, তিনি একজন আদর্শ কৃষকও বটে। তখনকার সময়ে আদিবাসীদের জীবন নির্ভর করতো জুমচাষকে ভিত্তি করে। তিনি এলাকার গারো সমাজের ভবিষৎ অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ইদিলপুর গ্রামের মিচি মৃ-র পরামর্শে আনারস, লেবু, লিচু, আম, কাঁঠাল ইত্যাদির চাষ নিজে শুরু করে অন্যদেরও উৎসাহিত করেন। অন্যদিকে পরেশ চন্দ্র মৃ চিকিৎসাবিদ্যায় শিক্ষিত না হয়েও নিজ এলাকায় চিকিৎসক হিসাবেও সুপরিচিত ছিলেন। সে সময় এলাকায় কোন চিকিৎসক না থাকায় গ্রাম্য কবিরাজ ও দেবতার ভোগ ও পূজা ছাড়া আর গারো ও অনান্য আদিবাসীদের কোন ঔষধ সেবন ও নিরাময়ের অভিজ্ঞতা ছিলনা। ফলে ম্যালেরিয়া, কালাজর, কলেরা এবং ডায়রিয়ায় অনেক লোক মারা যেত। তাই তিনি নিজে হোমিওপ্যাথি ও এলোপ্যাথি চিকিৎসার বই কিনে এনে পড়াশোনা করে এলাকাবাসীদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দিয়েছেন। তিনি নিজেও অসুস্থ্য হলে ইনজেকশন নেওয়ার জন্য পরেশ বাবুর কাছে গিয়েছেন।
 .
আদিবাসী কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়নের সভাপতি, আদিবাসী নেতা মি আন্তনী মাংসাং তাঁর বক্তব্যে পীরগাছা সেন্ট পল চার্চ এবং উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় স্বর্গীয় পরেশ চন্দ্র মৃর বিশেষ অবদানের কথা ব্যক্ত করতে গিয়ে বলেন, শিক্ষার ক্ষেত্রেও সাংসারেক ধর্মাবলম্বী গারো সমাজটি পিছিয়ে ছিল। কিন্তু এলাকার আদিবাসীদের শিক্ষার আলো প্রজ্জলিত রাখার প্রচেষ্টায় তিনি স্কুলের ও র্গীজার উন্নয়নের জন্যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যান এবং এরই ফলসরূপ বর্তমান পীরগাছা গ্রামের বুকে স্বগৌরবে মাথাউচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সেন্ট পল উচ্চবিদ্যালয় এবং পীরগাছা সেন্ট পল চার্চ। যেখানে আমাদের অনেক ছেলেমেয়ে পড়াশোনা করতে পারছে এবং সুন্দর ও সুষ্ঠু জাতি গঠনের জন্যে উপযুক্ত প্রজন্ম তৈরী হচ্ছে সাথে পাচ্ছে আধ্যাতিক গঠনের সুযোগ।
 .
পরেশ চন্দ্র মৃ-র আদর্শে যোগ্য একনিষ্ঠ অনুসারী, জয়েনশাহী আদিবাসী উন্নয়ন পরিষদের প্রাক্তন সভাপতি এবং বর্তমান উপদেষ্টা, আদিবাসী নেতা মিঃ অজয় মৃ তাঁর বক্তব্যে বলেন, এই মহান নেতা যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সরাসরি প্রতিবাদ করতেন এবং আমাদেরকেও জাতির অস্তিত্ব রক্ষায় প্রতিবাদ করতে শিখিয়ে গেছেন। তৎকালীন পাকিস্তান শাসনামলে, ১৯৫২ খ্রীষ্টাব্দে জমিদারী প্রথা উচ্ছেদের সাথে সাথে পাকিস্তান সরকার আদিবাসীদের একমাত্র আয়ের উৎস ঝুমচাষ বন্ধ করে দেন। মধুপুরের আদিবাসীদের ভূমির ন্যায্য অধিকারের লড়াই এখান থেকেই শুরু।  আবার ১৯৫৬ সনে সরকার মধুপুরের আদিবাসী অধ্যুসিত গ্রামের বনানঞ্চলগুলো ধনী ব্যবসায়ীদের নিলামে বিক্রি করে দিয়ে পুনরায় সেখানে এবং আদিবাসীদের বাগান ও আবাদি জমিতেও গজারী ও শাল বাগান শুরু করে। তখনও সরাসরি প্রতিবাদ করা হয়।
১৯৫৬ সনে আবারও আদিবাসীদের উপর আঘাত আসে। ১৯১২সন  থেকে ১৯১৯ সন পর্যন্ত সিএসসি রেকর্ড করা আদবাসীদের পত্তনী জমিগুলো নটিফিকেশন করে খাস ঘোষনা করে ও বনবিভাগের আওতায় নিয়ে যায়। তখন বাবা আরো কয়েকজন আদিবাসী নেতাদের নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনায় বসেন। এলাকার আদিবাসীদের ঐক্যবদ্ধ করেন এবং তার নেতৃতে সরকারের কাছে সকলে মিলে মৌখিক ও লিখিত ভাবে আপত্তি জানান। এভাবে সকল আদবাসী জমি তখনও সাময়িক রক্ষা পায়।
 .
১৯৬১ সনে পাকিস্তান সরকার ঘোষনা দেন যে এলাকার ৪০বর্গ মাইল নিয়ে জাতীয় উদ্যান করা হবে এবং সমস্ত আদিবাসী পরিবার উচ্ছেদ করা হবে। অর্থাৎ প্রায় ১৫টি গ্রাম এর এরিয়ার ভেতর পড়ে। আবারও পরেশ বাবুর নেতৃতে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। মধুপুরের আদিবাসীগন সরকারের কাছে প্রতিবাদ লিপি প্রদান করেন।
 .
১৯৬২ সনে প্রথমে শুধু চুনিয়া গ্রামের আদিবাসী পরিবার উচ্ছেদের পায়তারা করেছিল। পরেশ বাবুর নেতৃতে আদিবাসীদের প্রতিবাদ জোড়ালো হওয়ায় তারা এই নেতাকে পার্কের নির্ধারিত এলাকার বাইরে বা টাঙ্গাইল শহরে রাজকীয় বাড়ী, অথবা ক্ষতিপূরণবাবদ তাঁর চাহিদা অনুসারে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পরেশ চন্দ্র মৃ জাতির অস্থিত্বকে টিকিয়ে রাখার স্বার্থে সকল প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে উলটো জনগণকে সংগঠিত করতে থাকেন। তিনি তখনই ঘোষণা দেন, “এই গ্রাম এবং এই বন ছেড়ে আমরা কোথাও যাবো না। আমরা বনের সন্তান, বন ছাড়া আমরা বাঁচতে পারবো না”।
এছাড়াও ১৯৬৭ সনে তখনকার পূর্ব পাকিস্তানের গর্ভনর মোনায়েম খাঁনের আদিবাসীদের উচ্ছেদ এবং পুনর্বাসনের ঘোষনা, ১৯৬৮ সনে পুনরায় চুনিয়া গ্রাম উচ্ছেদ ও ক্ষতিপূরণ প্রদানের নোটিশ করা হয়েছিল। ১৯৭২ সনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর  মন্ত্রীপরিষদ নিয়ে সদ্য স্বাধীনতা প্রাপ্ত বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করার উদ্দেশে দোখলায় আসেন। তখনও শেখ মুজিব নিজেই ঘোষনা দিলেন আদিবাসী গ্রাম উচ্ছেদের। অবশেষে ১৯৮০সনে জিয়ার সামরিক শাসন আমলে সামরিক আইন অনুযায়ী আবার উচ্ছেদের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সবক্ষেত্রেই দৃঢ় মনোবলের অধিকারী বাবু পরেশ চন্দ্র মৃ এলাকার লোকজনদের সংগঠিত করে সরকারের বিভিন্ন দফতরে প্রতিবাদ লিপি পেশ করে সৎসাহস দেখিয়েছেন, সফল হয়েছেন। একারণেই তিনি গারো নেতা, একারণেই তিনি আবিমানি গারো রাজা।
 .
উক্ত আলোচক ছাড়াও এ স্মরণসভায় বক্তব্য রাখেন আদিবাসী লেখক ও সমাজকর্মী মিঃ ফিডেল ডি সাংমা; কারিতাস ইআইপি, মাঠকর্মকর্তা মিস সূচনা রুরাম; আদিবাসী নেত্রী ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মিসেস যষ্টিনা নকরেক; কর্পোস খ্রীষ্টি উচ্চবিদ্যালয়ের সিলনিয়র শিক্ষিকা এবং জাউপ- মহিলা বিষয়ক সম্পাদিকা পিউ ফিলোমিনা ম্রং, আদিবাসী নেতা ও সমাজকর্মী মিঃ মাইকেল নকরেক, ইউপি মেম্বার মিঃ নিতেন নকরেক প্রমুখ।
 .
উল্লেখ্য, চুনিয়া গ্রামের বাড়িতে গারোদের সামাজিক নিয়মানুসারে এবং খ্রীষ্টযাগ অর্পনের মাধ্যমে আবিমানি গারো রাজা স্বর্গীয় পরেশ চন্দ্র মৃর স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়।

দৃষ্টিপাতঃ ৩, সকল ধর্মেই শান্তি আর স্বর্গের টোপ

দৃষ্টিপাতঃ ৩, সকল ধর্মেই শান্তি আর স্বর্গের টোপ
(প্লিজ, না পড়ে লাইক দিবেন না।)

“টাঙ্গাইলে হিন্দু পরিবারের আট সদস্যের ইসলাম গ্রহণ”- শিরোনামে খবরটি প্রথমবার পড়েছি ২ মার্চ/১৫ রাতে। আজ ১৫ মার্চ, আবার হঠাৎ করে অনলাইন নিউজগুলোতে প্রচারের হিড়িক পড়েছে। এ নিউজটি পড়ে যারা ধন্য ধন্য গাইছেন, হিপহিপ হুররে করছেন, তাঁদের দেখে আমার একটু একটু হিংসা হচ্ছে। কারণ সংখ্যাগুরু ইসলামথেকেও এরকম দুয়েকজন ধর্মান্তর হয়, কিন্তু তা নিউজে আসে না, আনা যায় না; তাই প্রচারও হয় না। কারণ এসব নিউজে আসলে আপনাদের মত আবেগপ্রবণ মানুষের রোষানলে পড়তে হবে- তা না বললেও আপনারাই বুঝবেন। তাই, এসব চিল্লাচিল্লি বাদ দিয়ে উক্ত পরিবারের কাছে গিয়ে দেখুন এ ঘটনার অভ্যন্তরে আরো কোন ঘটনা রয়েছে কিনা। আর শুধু এই পরিবারকে উদ্দেশ্য করে বলছি না। কেউ যদি সত্যিকারভাবে ধর্মটাকে ভালোবেসে, স্বর্গীয় সুখ-শান্তির আশায় ইসলাম বা যেকোন ধর্মে ধর্মান্তর হয়ে থাকেন, তাহলে সকলেরই তাঁদের এ ইচ্ছা এবং মূল্যবোধকে সম্মান জানানো উচিত বলে মনে করি।

শুধু এদেশের কথা বলছি না। পৃথিবীর সকল সংখ্যালঘুরা সবসময়ই চাপের মধ্যে থাকে। অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে, মেয়ে-ছেলের নিরাপত্তার আশায়, ক্ষুধার যন্ত্রনা এবং সামান্য মাথা গোঁজার ঠাই পাওয়ার আশায় অনেকেই স্বধর্ম ত্যাগ করে সংখ্যাগুরুদের ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য হয়েছে, হচ্ছে- এমন নজির পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রয়েছে। আমার ধারণা এ ঋষি পরিবারের ধর্মান্তরের ঘটনাটিও সেরকম কিছু হয়ে থাকতে পারে। আবার নাও হতে পারে, তবে আমার অনুমানের পেছনে নিজস্ব অভিজ্ঞতালব্ধ কয়েকটি কারণ, উদাহারণ আমি পেশ করছি-

১) পারিবারিক পরিবেশথেকে চাপঃ আমার নানী গারোদের আদিধর্ম সাংসারেক-এর অনুসারী ছিলেন। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে, কলেরায় মা-বাবা মারা যাওয়ার পর আমার নানীরা (ওরা ৩ বোন) এতিম অবস্থায় খ্রীষ্টান মিশনারিদের সহায়তা পেতে পেতে খ্রীষ্টধর্মে দীক্ষিত হলেন। কিন্তু নানীর জীবিত একমাত্র মামা অনেক আগেথেকেই হিন্দু/সনাতন ধর্মের অনুসারী ছিলেন। আমার নানী বড় হতেই তাঁর মামার বদৌলতে এক সাংসারেক ছেলে(নানা)কে ধর্মান্তর করে বিয়ে দিতে গিয়ে নিজ ধর্মমতে অর্থাৎ হিন্দুমতে বিয়ে দিলেন। তখনথেকেই নানা-নানীর পরিবার সকলেই হিন্দু ধর্ম পালন করতেন। নানীর ধর্মান্তরের কাহিনী যদিও এটি, কিন্তু পিছিয়ে পড়া লোকসমাজে এরকম ধর্মান্তরের কাহিনী হয়তো বহুবিধ।

২) সামাজিক পরিবেশঃ আমার মা-মামারা বড় হতে হতে খ্রীষ্ট ধর্মের প্রসার বেড়ে গেছে। এদিকে গারো হিন্দু পরিবার কম থাকায় উপযুক্ত হিন্দু পাত্র না পাওয়ার কারণে বাধ্য হয়ে মাকে খ্রীষ্টান পাত্রের সাথে খ্রীষ্টধর্ম মতে বিয়ে দিতে হলো। মায়ের আরো ৫ বোন আর ১ ভায়ের মধ্যে ১ বোন ছাড়া সবাই এখন খ্রীষ্টান। গারো মেয়েদের স্বামীর ঘরে চলে যাওয়াটা ছিলো গারো রীতির পরিপন্থি। তাই হিন্দু ধর্মমতে বিয়ে করায় সেই মাসীকে স্বামীর ঘরে চলে যেতে হলো। অর্থাৎ গারো হয়েও মাসী মায়ের ঘরে থাকতে পারলেন না। আমি বলতে চাইছি, বাধ্য হয়ে নানীকে খ্রীষ্টান মেয়ের সাথে থাকতে হলো। কিন্তু এই নানী তাঁর শেষ বয়সে আর হিন্দু ধর্মে থাকতে পারলেন না। খ্রীষ্ট ধর্ম পুনরায় গ্রহণ করলেন তার মৃত্যুর কয়েক বছর আগে। মৃত্যুর আগে তিনি বললেন, সবাই খ্রীষ্টান হয়ে গেছে, আমি একা হিন্দু থেকে কি করবো?
অন্যদিকে, ৯১-এ দেখলাম, “খ্রীষ্টাব্দ” নামের পত্রিকা নিয়ে কিছু হিন্দু এবং মুসলিম যুবক ঘোরাফেরা করছেন, পরে জানলাম এরা খ্রীষ্টান হয়েছেন। কারণ একটাই, অভাব। পরে নিজেদের খ্রীষ্টান দেখিয়ে খ্রীষ্টাব্দ সংস্থায় চাকরী পেয়েছেন। কিন্তু বিগত কয়েক সপ্তাহ আগে শুনলাম, নিজ এলাকায় নও খ্রীষ্টিয়ান সমাজে উপযুক্ত পাত্র-পাত্রী না পাওয়ায় তাঁদের সন্তানদের হিন্দুরা হিন্দু সমাজে এবং এবং মুসলিমরা মুসলিম সমাজে বিয়ে করিয়েছেন, আর নিজেরাও আবার আগের (হিন্দু ও মুসলিম) ধর্ম পালন করছেন। এলাকার বৃহত্তর খ্রীষ্টান সমাজ আদিবাসী সমাজ হওয়ায় এবং সংস্কৃতির কারণে এই অ-আদিবাসীদের বিয়ে-শাদীর ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে নি।

৩) দারিদ্রতাঃ টাঙ্গাইলের মধুপুরথেকে বাসে করে ময়মনসিংহ যাচ্ছি, হঠাৎ খেয়াল করলাম- দারিদ্রপূর্ণ টেলকী নামক গারো আদিবাসী অধ্যুষিত গ্রামে বেশ কিছু ছোট ছোট টিনের ঘর চকচক করছে। ভাবলাম, বেশ! কিন্তু আরো বেশ কিছুদিন পর একটা সাইনবোর্ড চোখে পড়লো, তাতে লেখা “নও মুসলিম...”; তারও কিছুদিন পর দেখলাম একটা জামে মসজিদ তৈরী হচ্ছে। অবশেষে জিজ্ঞেস করে জানা গেলো- “ইসলামী ফাউণ্ডেশন” কর্তৃক যারা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছে, তাদের একটা করে টিনের ঘর, আর কিছু টাকা-পয়সা দিয়েছে। যারা মধুপুরথেকে বাসে করে ময়মনসিংহ গেছেন, তারা নিশ্চয়ই বনের মাঝখানে টেলকী নামক গ্রামে, রাস্তার পাশেই একটা মসজিদ এবং সাইনবোর্ড দেখে থাকবেন। এরকম উদাহারণ আরো দেওয়া যায়, ১৯৭৯-এ বয়’জ হোস্টেলে থাকার সময় একদিন দেখলাম, ফাঃ হোমরিক একজন যুবককে তাড়া করে গেইট পার করছেন। কারণ জানলাম, পরিবারের একমাত্র ছেলে চাকরী জুটাতে না পেরে মিশনে চাকরির আশায় খ্রীষ্টান হতে চেয়েছেন। অর্থাৎ আমি বলতে চাইছি, সমাজ যাদের সহযোগিতায় আসে না, তাঁদের অনেকেই ধর্মান্তরের পথটিকে বেছে নিতে বাধ্য হয়।

৪) নিরাপত্তাহীনতাঃ ৭১-এর স্বাধীনতার যুদ্ধের সময় হিন্দুদের পরিবারে জোরপূর্বক ধর্মান্তরের কথা নাইবা বললাম। এদেশে ধর্মীয় ও সামাজিকভাবে সংখ্যালঘু হওয়ায় এলাকার সংখ্যাগুরু লোকদের দ্বারা বিভিন্নভাবে সম্পদ শোষণ ও নির্যাতনের ইতিহাস যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। একই কারণে বখাটেরা মেয়েকে উত্যক্ত করে, বিয়ের সমন্ধ আসললেও বখাটেরা বাঁধা দিয়ে, এমনকী  ধর্ষণ এবং ধর্ষণের হুমকী ইত্যাদির কারণে দিশাহারা এসব সংখ্যালঘুরা। এদেশের প্রায় সকল সংখ্যালঘু আদিবাসীদের সমাজথেকে মেয়েদের বিয়ের প্রলোভন, প্রেম ও বিয়ের কারণে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার কাহিনীও অতি পুরানো খবর। ফলে এসব সংখ্যালঘুরা বৃহত্তর সমাজে মিশে যাবার জন্য কৌশল হিসাবে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করার কাহিনী কতবার খবরের কাগজে পড়েছি, সে সংখ্যা আজ আর মনে নাই।
অন্যদিকে সংখ্যালঘু হওয়ায় নিজধর্ম পালনের পরিবেশ না পাওয়া এবং ধর্ম পালনে বাঁধাপ্রাপ্ত হতে হতে নিজের ধর্মের প্রতি আস্থা, ভক্তি কমে যেতে পারে- ফলশ্রুতিতে ধর্মান্তর করা খুবই সহজ এবং সফল কর্ম।

শেষ কথাঃ উপরোক্ত কারণ ভেবে আপনাদের মতো আমি কোন পক্ষেই ধন্য ধন্য গাইতে, হিপ-হিপ হুররে করতে পারি না। একই জাতের ফুল দিয়ে যেমন একটি ফুলের বাগানের সৌন্দর্য পূর্ণাঙ্গ হয় না, তেমনই কোন দেশ ও সমাজও নয়। বরং বিভিন্ন ধর্ম, বর্ণ, সংস্কৃতির সহাবস্থানেই যে কোন সমাজ ও দেশ সুন্দর এবং ভাতৃত্বপূর্ণ হয়। সকল ধর্মেই শান্তি আর স্বর্গের টোপ দেওয়া থাকে; সুতরাং ধর্ম যার যেটা ভালো লাগে, সে সেটাই করুক। আমিও তাই করছি।

আমি সত্যিই বলছি, আপনাদের মতো এতোটা ধর্মভীরু বা ধার্মিক ব্যক্তি নই আমি। আমার ভালো কাজ, চিন্তা যেটুকুই করি, তা ধর্ম বা বেহেস্তের লোভে করি না; মানসিক প্রশান্তির জন্য করি, মানুষ হিসাবে দায়িত্ব পালন করি...

।।ফিডেলডিসাংমা।। ১৫মার্চ,২০১৫।।

দৃষ্টিপাতঃ ৫- গারো ভাষায় ধর্ষক, ধর্ষণ, ধর্ষিতা, যৌন হয়রানি, সমকামিতা ইত্যাদির কোন প্রতিশব্দ নেই।

দৃষ্টিপাতঃ ৫- গারো ভাষায় ধর্ষক, ধর্ষণ, ধর্ষিতা, যৌন হয়রানি, সমকামিতা ইত্যাদির কোন প্রতিশব্দ নেই।

(১) কতিপয় বেহায়া পুরুষের জন্য সমগ্র পুরুষ জাতিকে তিরস্কার হজম করতে হয়। ওরা পুরুষ নয়, পশু। কাপুরুষররাই নিজেদের অসভ্যতাকে সংবরণ করতে অক্ষম।
নারী, ক্ষমা চাওয়ার মুখ নাই। প্রতিশোধ নিতে শেখ। চিরকালের জন্য ওদের কাপুরুষ করে দাও। আমার বিশ্বাস, দুজন নারীর জীবনের বিনিময়ে দুই কোটি নারী বাঁচবে।

(২) আদিবাসিদের কাছথেকে বাংগালীদের অনেক কিছুই শেখার আছে। আমরা আমাদের বড়দিন, নববর্ষ, ছোটদিন, বিয়ে, বাগদান, শ্রাদ্ধ, মানসা, সভা সেমিনারে নারী পুরুষ সবাই একসাথে আনন্দ ফুর্তি করি, সারারাত নাচি, গাই, কীর্তন করি। তবুও কেউ কাউকে এমন বিশ্রী অভিযোগ দিতে পারে না। আমরা নারীকে তার যথাযথ সম্মান দিতে জানে বলে আদিবাসী পুরুষের দ্বারা নারীরা যৌন নির্যাতিত হয় না। অর্থাৎ বাংগালী নারীর তুলনায় আদিবাসী নারী অনেক বেশি নিরাপদ।

(৩) আমাদের গারো ভাষায় ধর্ষক, ধর্ষণ, ধর্ষিতা, যৌন হয়রানি, সমকামিতা ইত্যাদির কোন প্রতিশব্দ নেই। আমরা লেখাপড়া না শিখলে জানতামই না এই শব্দগুলোর অর্থ কি। আমাদের বাবা মা নারীকে, মায়ের জাতকে এবং সকল মানুষকে সম্মান দিতে শিখিয়েছেন। আমরাও আমাদের ছেলেমেয়েদের তাই শিখাচ্ছি।

দামা লাইব্রেরীর গঠনতন্ত্র



দামা লাইব্রেরীর গঠনতন্ত্র

প্রতিষ্ঠানের নামঃ দামা লাইব্রেরী
স্থানঃ ধরাটি, পোস্টঃ পীরগাছা, উপজেলাঃ মধুপুর, জেলাঃ টাঙ্গাইল।
প্রতিষ্ঠাকালঃ পুনরুত্থান রবিবার, ৫ই এপ্রিল-২০১৫ খ্রীষ্টাব্দ।

দামা লাইব্রেরীর উদ্দেশ্যঃ
১) দামা গ্রুপ এলাকার সদস্যদের দ্বারা সামাজিকভাবে শিক্ষার আন্দোলন গড়ে তোলা।
২) ছাত্রছাত্রীদের মাঝে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি সহশিক্ষাক্রমে উৎসাহিত করা এবং মেধা বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করা।
৩) এলাকায় লাইব্রেরীর কেন্দ্রিক বিভিন্ন আলোচনা ও তথ্য বিনিময়ের মাধ্যমে জনগণকে উচ্চশিক্ষার জন্য উদ্বুদ্ধকরণ এবং শিক্ষায় ঝরে পড়া রোধ এবং সচেতন করা।
৪) গ্রামীণ কৃষক এবং গৃহিণীদের জন্য তাঁদের উপযুক্ত বই পড়তে উৎসাহিত করা।
৫) লাইব্রেরী পরিচালনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট জনগণের মাঝে নিয়মতান্ত্রিক দায়িত্ববোধ ও শৃংখলা এবং নৈতিকতাবোধ জাগিয়ে তোলা।
৬) লাইব্রেরীর মাধ্যমে বিভিন্ন শিক্ষা ও সেবা প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ রাখার ক্ষেত্র সৃষ্টি করা।
৭) লাইব্রেরীকে রেজিস্ট্রিকরণের মাধ্যমে এলাকায় একটি স্থায়ী প্রতিষ্ঠান হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা।
৮) দামা লাইব্রেরীর মালিক হবেন জনগণ। তাই সমবেতভাবে পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে এই লাইব্রেরীর পরিচালনা করা। 

দামা লাইব্রেরীর নীতিমালাঃ
১) দামা লাইব্রেরী একটি অলাভজনক, শিক্ষা ও বিনোদনমূলক প্রতিষ্ঠান হিসাবে প্রতিষ্ঠিত হবে।
২) রাষ্ট্রীয় রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন, সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং কোন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান অথবা সম্প্রদায়ের প্রভাবমুক্ত থাকবে।
৩) এই প্রতিষ্ঠানের একটি গঠনতন্ত্র/নীতিমালা থাকবে এবং ২ বছর মেয়াদী পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে পরিচালিত হবে।
৪) লাইব্রেরী দামা গ্রুপের এলাকার সকলের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
৫) দামা লাইব্রেরীর জন্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাবোর্ডের বই, নোট ও সহায়িকা, অন্যান্য সামাজিক-পারিবারিক ও ব্যাক্তি শিক্ষামূলক যেমন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, নেতৃত্ব, ধর্মীয় পুস্তকাদি সংগ্রহ, প্রদান, গ্রহণ ও বিনিময় করতে পারবেন।
৬) কোনক্রমেই ব্যক্তি, পরিবার এবং আর্থ-সামাজিকভাবে অগ্রহণযোগ্য, কুরুচিপূর্ণ অশ্লীল বই, সিডি এবং কোন প্রকার তথ্যাদি সংগ্রহ, প্রদান, ক্রয় ও বিনিময় করা যাবে না।  
৭) দামা লাইব্রেরী খোলা থাকবে-
·         প্রতি রবিবার সকাল ১০:০০ হতে বিকাল ০৫:০০টা
·         প্রতি শুক্রবার দুপুর ০৯:০০টা হতে বিকাল ০৫:০০টা
·         শনিবার এবং সোমবার হতে বৃহস্পতিবার দুপুর ০২:০০টা হতে বিকাল ০৫:০০টা পর্যন্ত।
৮) দামা লাইব্রেরীর উন্নয়নের জন্য যে কোন ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠান নগদ অর্থ, বইপত্র, সিডি ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি বিনাশর্তে প্রদান করতে পারবেন।
৯) নগদ অর্থ, বইপত্র, সিডি ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি প্রদানকারী কোন ব্যাক্তি, প্রতিষ্ঠান সকলকেই দাতা হিসাবে নথিভুক্ত হবেন।
১০) লাইব্রেরীর উন্নয়নের জন্য এককালীন সর্বনিম্ন ১০’০০০ নগদ অর্থ অথবা সরঞ্জামাদি প্রদানকারীকে গোল্ডেন মেম্বার হিসাবে সম্মানিত করা হবে।

লাইব্রেরীথেকে সদস্যদের বই গ্রহণ ও জমা প্রদানের শর্তাবলীঃ
১) লাইব্রেরীতে সদস্য হিসাবে নিবন্ধকরণের মাধ্যমে বই পড়তে ইচ্ছুক যে কেউ সদস্য হতে পারবেন। সদস্যপদ গ্রহণের জন্য নিম্নোক্ত হারে ভর্তি ফিস প্রদান করবেন-
·         প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী জনপ্রতি- ৫/= টাকা
·         উচ্চবিদ্যালয় ছাত্রছাত্রী- জনপ্রতি ১০/=
·         কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী- জনপ্রতি ২০/=
·         সাধারণ অভিভাবকমণ্ডলী জনপ্রতি- ১০/=
·         ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী জনপ্রতি ৫০/=
২) লাইব্রেরীথেকে সদস্যগণ প্রতিবার একসাথে সর্বোচ্চ ২টি বই/সিডি এক সপ্তাহের জন্য বাড়িতে নিতে পারবেন।
৩) লাইব্রেরীথেকে বই, ম্যাগাজিন, সিডি এবং অন্যান্য তথ্যাদিসমূহ গ্রহণের জন্য নিম্নোক্ত হারে এক সপ্তাহের জন্য ফিস প্রদান করবেন-
·         প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী প্রতিটি বই ৫/= টাকা
·         উচ্চবিদ্যালয়ের প্রতিটি বই/বস্তু ৫/=টাকা
·         কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী প্রতিটি বই/বস্তু ৫/= টাকা
·         সাধারণ অভিভাবকমণ্ডলী প্রতিটি বই/বস্তু- ৫/= টাকা
·         ব্যবসায়ী ও চাকরিজীবী প্রতিটি বই/বস্তু ১০/= টাকা
৪) লাইব্রেরীতে বসে বই, ম্যাগাজিন এবং দৈনিক/সাপ্তাহিক পত্রিকা ইত্যাদি পড়তে ইচ্ছুক ব্যাক্তিকে প্রতি ঘন্টায় ২/= টাকা প্রদান করবেন।
৫) লাইব্রেরীথেকে গ্রহণকৃত বই, ম্যাগাজিন, সিডি এবং অন্যান্য তথ্যাদিসমূহ কোনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত অথবা হারিয়ে গেলে উক্ত বস্তু ক্রয়/সংগ্রহ করে অথবা সমমূল্যে নগদ অর্থ লাইব্রেরীতে জমা দিতে বাধ্য থাকবেন। অন্যথায় উক্ত ব্যাক্তি এবং পরিবারের সদস্যবৃন্দ লাইব্রেরীর সদস্যপদ এবং অন্যান্য সুবিধাদি হারাবেন।

ঝড়ের পূর্বাভাস!

@@ ঝড়ের পূর্বাভাস! @@
~~~~~~~~~~~~~~~
অনেক কথার বোঝা- হিমালয় চূঁড়া,
কিকরে কমাবো, অক্ষম আমি,
অথচ- মৃত্যসঞ্জীবনী সুধায় মত্ত কালের সংগমে
মন সীমাহীন ভাবনাপ্রসবিনী।

মাইরি! যাবো কার কাছে-
বনখেকোদের দায়ের কোপে স্তব্ধ পাখি,
মৃত্যুভয় সাগরের গর্জনে,
হাওয়ারাও কাঁদে বৈশাখী ঝড়ের পূর্বাভাসে।
দিগ্বিদিক খুঁজে বেড়াই মন,
সমঝদার নেই, অজুহাতের শেয নেই;
বলে, কালে হয় নি, অকালে তা হয় কিকরে
আজ বুঝেছি, আমার ভুলের সময় গেছে ভুলে।
আজন্ম তাই বয়ে বেড়াই অক্ষয় হিমালয় চূঁড়া!!
~~ফিডেল ডি সাংমা~~২৩/০৪/২০১৫~~

আমাদের সমাজ আলোর মুখ দেখবেই



আমাদের সমাজ আলোর মুখ দেখবেই
ফিডেল ডি সাংমা।

দেশ জুড়ে জাতীয় সম্পদের অসম বন্টন এবং যাদের পুঁজি আছে, তাদের একচ্ছত্র ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় নীতি, পরিকল্পনা এবং আইন প্রণয়ণের ফলে সামষ্টিক ক্ষমতায়ণ প্রায় অসম্ভব। সামষ্টিক ক্ষমতায়ন বাস্তবায়িত হতে সংহতি অর্থনীতির মাধ্যমে। এই সংহতি স্থাপনের লক্ষ্যে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি, ব্যক্তি থেকে সমষ্টি (এসোসিয়েশন, সমবায়), সমষ্টি হতে রাষ্ট্র সংহতি স্থাপনের সংগ্রাম আমাদেরকে করতে হচ্ছে। এই সংগ্রাম বাস্তবায়ন করার জন্য একগুচ্ছ সচেতন জনগোষ্ঠী বা সংগঠনের প্রয়োজন। 
ব্যক্তির বিকাশ, ব্যক্তির স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা ইত্যাদি মানুষের অর্ন্তনিহিত মনস্ততাত্বিক লক্ষ্য, যাকে বিকশিত করার নামেই চলছে ব্যক্তি প্রতিষ্ঠার অর্থনীতি, যাকে বলা হচ্ছে উদারনৈতিক অর্থনৈতিক বিধি-ব্যবস্থা। ব্যক্তির  সামাজিক দায়দায়বদ্ধতা, মানবিকতা, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ইত্যাদি বিষয়গুলোও মানুষের মনস্তাত্বিক লক্ষ্য হিসাবে কাজ করে। তাই আমাদের সমাজের প্রতিটি অভিভাবক এবং তরুণ সমাজকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে বিষয়টিকে ভালো করে বুঝা উচিত। তবেই আমাদের সমাজ আলোর মুখ দেখতে পাবে বলে আমার বিশ্বাস।
শিক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা, বাসস্থান, আত্মকর্মসস্থান, সমবায় ব্যবস্থাপনা, কৃষি পণ্যের ন্যায্যমূল্যে সরবরাহের সুযোগ প্রদান, ইত্যাদি সহ সাংগঠনিক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা তৈরী করা; যা যে কোন উন্নয়নকামী পরিবার ও সমাজের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ন। এই বিষয়গুলোকে যত বেশি কার্যকরী করা যায়, ততই তরুণ ও যুব সমাজের মধ্যে চাকরীকেন্দ্রিক যে হতাশা, তা অনেকাংশে দূর করা সম্ভব হবে। এজন্য সমাজ উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠিত সামাজিক সংগঠন এবং এর কর্মীসহ সকলের সম্মিলিত ও স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহনের প্রয়োজন রয়েছে।
বাংলাদেশ এবং সারাবিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক বা ঋণ লেনদেনের যে অবস্থা তা বলাই বাহুল্য। ঘুষ ছাড়া একটি কানাকড়ি গরীব জনগণের হাতে আসাতো দূরের কথা, ঋণের আবেদন জমা দিতেও কিছু উপরি দেওয়া লাগে। সে তুলনায় আমার জানামতে খ্রীষ্টিয়ানদের দ্বারা পরিচালিত বিশেষ করে গারোদের দ্বারা পরিচালিত ক্রেডিট সংগঠনগুলোতে কোন প্রকার ঘুস লাগে না। আমিও জানি, পীরগাছা থাংআনি কো-অপারেটিভ ক্রেডিট ইউনিয়ন অত্র এলাকায় বিশেষ করে মান্দিদের জন্য ভালো কাজ করে যাচ্ছে। তাই আমার পক্ষথেকে এই সমিতিকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। তদুপরি, ভালোরতো শেষ নেই, তাই এই সমিতি এবং অন্যান্য সামাজিক সেবা সংগঠনগুলোর প্রতি আমার কয়েকটি প্রস্তাবনা রাখতে চাইছি। আশা করি, প্রস্তাবগুলো ইতিবাচকভাবে ভেবে দেখবেন এবং আমাদের সকলের জন্য উপযোগী মনে হলে প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা যায় কিনা ভেবে দেখবেন। আমার প্রস্তাবসমূহ নিম্নরূপঃ-

১) প্রতিটি সেবা সংগঠন/প্রতিষ্ঠানকে যুগোপযোগী উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে উদ্যোগ গ্রহণঃ
বিশ্বব্যাপি তথা আমাদের দেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে উন্নয়ন বিষয়ক চিন্তা নতুন কোন বিষয় নয় এবং আমাদের মতো পিছিয়ে পড়া আদিবাসীদের জন্যেতো নয়ই। কিন্তু উন্নয়নের চিন্তার মধ্যে আছে বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত, একই মতের বিপরীতে বিভিন্ন মত, পথ  বা কর্মকৌশল ভাবনা রয়েছে। তাই সমাজ উন্নয়ণমূলক কর্মে যারা নিয়োজিত, তাদেরকে বেছে নিতে হয় নিজস্ব উন্নয়ন চিন্তা ও কর্মকৌশল। সেসাথে জানতে হয় বিপরীত চিন্তাগুলোও। আবার ব্যক্তি এবং এলাকাভেদে সেখানে সমস্যা ভিন্ন হতে পারে এবং এর সমাধানের জন্যেও ভিন্ন, বিকল্প উন্নয়ন বা সমাধানের পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের দ্বারা সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের কোন বিকল্প নেই। তাই প্রতিটি সেবা সংগঠন/প্রতিষ্ঠানকে যুগোপযোগী উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের দিকে দৃষ্টি দেওয়া এবং গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক।

২) প্রতিটি গ্রামে দক্ষ সাব-কমিটি এবং সদস্য তৈরী করাঃ
যে কোন প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে সর্বস্তরে জনপ্রিয় এবং কার্যকরী করতে হলে সহজতর যোগাযোগ প্রক্রিয়ার কোন বিকল্প নেই। আমাদের এলাকায় যে সমস্ত সেবা সংগঠন বা ঋণদান প্রকল্পগুলো রয়েছে, সেখানে লোকবল কম। পরিকল্পনা এবং কাজ করার মানসিকতা থাকা সত্ত্বেও পরিকল্পিত সেবা প্রাপকদের সবার কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয় না। এমন কতগুলো গ্রাম/এলাকা রয়েছে, একটু সেবা/ঋণ পেতে হলে আপনার প্রতিষ্ঠানে কয়েকবার যাতায়াতে হাজার টাকা অনায়াসে চলে যাচ্ছে। অথচ এই এক হাজারটাকা দিয়ে একটা ছোট্ট পরিবারের অনেক কিছু করা সম্ভব। তাই আমার ২য় প্রস্তাবনা হলো- প্রতিটি গ্রামের ভোক্তা বা সেবা প্রাপকদের নিয়ে একেকটা গ্রাম কমিটি, ক্রেডিট/সংগঠনের শাখা/উপশাখা গঠন করা যায়। পরবর্তীতে এসব শাখা/কমিটিকে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে ভাতা দিয়ে হোক বা না হোক স্বেচ্ছাসেবক তৈরী করে প্রশিক্ষণ দিয়ে এলাকার লোকজনকে ঋণ/সেবা কার্যক্রমে সক্রিয় হবার জন্য উৎসাহিত করার কাজটি করানো যেতে পারে। এরকম কমিটি হলে নতুন সদস্য গ্রহণ, বিভিন্ন সভা, প্রশিক্ষণ, ঋণ গ্রহণের নথিপত্র সংগ্রহ ইত্যাদি সহজতর হয়ে উঠবে। তাঁদের মাধ্যমে অথবা সুপারিশে এলাকায় ঋণ কার্যক্রম কালচার করানো সম্ভব হলে এ গ্রাম কমিটিগুলো সম্মানিতবোধ করবেন এবং কাজে দ্বিগুণ উৎসাহিত হবেন বলেই আমার বিশ্বাস। আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, যেখানে প্রতিষ্ঠানের সেবাদাতা এবং ভোক্তা উভয়ই অন্তত প্রতি সপ্তাহে একদিন সহজেই যোগাযোগ রাখতে পারেন। এতে করে ঋণ প্রদান এবং উত্তোলন দুটিই সহজতর হয়ে উঠে।

৩) সমাজের সর্বস্তরে সচেতনতা প্রদানের কর্মসূচীঃ
দেশের বেশিরভাগ মানুষ ক্রমাগত দরিদ্র হতে দরিদ্রতর হতে থাকে এবং অল্প সংখ্যক মানুষের হাতে সম্পদ ও ক্ষমতা কুক্ষিগত হয়। এটাই আমরা বুঝতে পারছি না অথবা জেনেও চুপ করে আছি। অথবা বলা যায়, আমাদের সমাজে  এসব বিষয়ে আগ্রহ থাকলেও তেমন সচেতনতা নেই কিংবা সচেতনতা থাকলেও তা পারিপার্শ্বিক চাপে বাস্তবায়ন করার মতো সক্রিয় কার্যক্রম বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ সীমিত পর্যায়ে রয়ে গেছে। এজন্যে দায়ী আমাদের মানসিকতা, অনিচ্ছা আমি অপূর্ণাঙ্গরূপ চেতনার। দেশের মূল সীমাবদ্ধতা হলো – পরিবার ও সমাজের  সমস্যাকে চিহ্নিত করতে না পারা এবং সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে করণীয়গুলো নির্ধারণ করার দক্ষতা উন্নয়ণকে প্রাধান্য না দেওয়া। কিন্তু আমরা ক’জন ভাবি যে, আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে দক্ষতা উন্নয়নের কর্মসূচি গ্রহণ করে এই সমাজেই টিকে থাকতে হবে। আর তাই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে  টিকে থাকার মতো সবার গুণাবলী এবং দক্ষতার উন্নয়ণ ঘটে, সেই জন্যই  কর্মসূচি গ্রহণ করা জরুরি। তাই উক্ত গ্রাম কমিটি বা উন্নয়ণ দলের মাধ্যমে জনগণকে বিভিন্ন ধরণের প্রশিক্ষণ দিয়ে চেতনা প্রদানের কাজটি করা যেতে পারে।

৪) উচ্চশিক্ষার সুযোগ দানের মাধ্যমে সমাজে দক্ষ নেতৃত্ব তৈরী করাঃ
আমাদের ব্যাক্তি, পরিবার এবং সমাজে সমস্যা সীমাহীন। এই সমস্যাগুলোকে চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে সমাধান করতে হলে দক্ষ ব্যাক্তি ও নেতার কোন বিকল্প নেই। তরুণ ও যুবসমাজের মধ্যে চাকুরিকেন্দ্রিক হতাশা দূর করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। তবে চাকুরির বাজারে প্রয়োজনীয় দক্ষতাগুলো যদি আমাদের সদস্যদের আয়ত্বে থাকে, তবে প্রতিযোগিতায় তারা অবশ্যই এগিয়ে থাকতে পারবে। তাই আমার প্রস্তাবনা হলো, সমাজের প্রতিটি ছেলেমেয়েদের উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের জন্য চলমান শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অব্যাহত রাখা এবং আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য অনুপ্রাণিত করার মাধ্যমে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েটদের শিক্ষাসনদের বিপরীতে সুদমুক্ত ব্যাংক ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষাবৃত্তি প্রদানকালে ছাত্র, অভিভাবকের কাছথেকে লিখিত প্রতিশ্রুতি নেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে দিক নির্দেশনামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান এবং অন্যান্য সামাজিক সেবা সংগঠনের সাথে উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য ব্যবস্থা করে দেওয়া যেতে পারে।

৫) তরুণ, যুব সম্প্রদায়কে সংগঠিত করে উদ্যোক্তা হিসাবে গড়ে তোলাঃ
প্রতিবছর বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলো হতে কত গ্রাজুয়েট চাকুরির বাজারে প্রবেশ করছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। আবার প্রতিবছর সরকারি ও বেসরকারি খাত মিলে কত সংখ্যক চাকুরি সৃষ্টি হচ্ছে, সেই পরিসংখ্যান পাওয়াও দুস্কর। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সঠিক কর্মপরিকল্পনা তৈরী করা সহজ বিষয় হয়ে উঠে না। তরুণ, যুব সম্প্রদায়কে ব্যক্তি ও সামষ্টিক উন্নয়ণে সচেতন ও কার্যকরী। কিন্তু সামগ্রিক যুবসমাজের অনেক বড় একটা অংশ অকার্যকর হয়ে আছে। এক্ষেত্রে গ্রামে বা সমাজে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যোগাযোগ করে সেখানেও ভূমিকা রাখা যেতে পারে। কর্মপ্রত্যাশী ছাত্র-তরু-যুবদের স্বেছাসেবী প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ও পরিচালনা করার জন্য উদ্যোগী ভূমিকা পালন করার জন্য অনুপ্রাণিত করা যেতে পারে এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন তরুন-যুবদের উদ্যোক্তা হিসাবে গড়ে তোলার জন্য প্রতিষ্ঠান মুলধন সরবরাহের লক্ষ্যে সুদমুক্ত ব্যাংক ঋণ ব্যবস্থা চালু রাখতে পারে

৬) সমবায়ভিত্তিক আন্দোলন জোরদার করাঃ
প্রতিনিয়ত সমস্যার মধ্যে আমাদের বসবাস, সমাধানের প্রত্যাশা সবার। সমস্যা না চাইলেও আসে। কিন্তু সমাধান আসে সামগ্রিক প্রচেষ্টায়। সমাধানের প্রচেষ্টায়  আমরা যে যার মতো করে ভাবছি, সমাধান না পেয়ে ক্ষুব্ধ হচ্ছি, সমস্যা নিয়ে কেউ কেউ আমাদের আলোড়িত করছেন, স্বপ্ন দেখাচ্ছেন, কিন্তু সমাধান যা আসছে, তাতে সন্তুষ্ট হতে পারছি না আমরা। কারণ সমস্যার সমাধান আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে না। তাই চাওয়া ও না পাওয়ার ব্যবধানটা ক্রমাগত বাড়ছে। সমাজে ধনী ও গরিবের ব্যবধান বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য প্রয়োজন, প্রচলিত অর্থনৈতিক বিধি-ব্যবস্থার পরিবর্তন। বর্তমান অর্থাবস্থার সীমাবদ্ধতা ও ব্যর্থতার জায়গাগুলো যুবসমাজের নিকট সহজ সরল ও স্পষ্ট করে তুলে ধরা দরকার। তখন অবশ্যই এ যুব সম্প্রদায় নতুন কিছু সন্ধানে আগ্রহী হবে এবং একটা না একটা পথ ঠিকই খুঁজে নেবে। মানুষের সাথে মানুষের সংহতি স্থাপনের জন্য মানুষকে পারস্পরিক স্বার্থে গোষ্ঠীবদ্ধ করার লক্ষ্যে সমবায়ভিত্তিক আন্দোলন জোরদার করা যেতে পারে।

৭) ধনী-গরীব, ধর্মীয় সম্প্রদায় বিভেদ না করাঃ
সেবা শুধু দরিদ্রদের জন্য, সুবিধা শুধু ক্যাথলিক বা ব্যাপ্টিস্টদের জন্য এরকম ভাবাটা সত্যিকারভাবে যে কোন সেবা প্রতিষ্ঠানের জন্য মুক্তমনের পরিচয় বহন করে না, তেমনই স্বাধীনভাবে কর্মকাণ্ড সম্পাদনের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই বাঁধাগ্রস্ত করে। ধনীরা চায় সমাজে শ্রমিক শ্রেণী না থাকলে তাদের খামারে কাজের লোকের অভাব হবে, সমাজে গরীব শ্রেণী থাকুক, তাতে তাদের মাতব্বরী ক্ষমতা দেখানো যায়- এরকম কথা সকল সমাজে প্রচলিত। যদিও আমাদের মান্দি সমাজে তেমনটা খুব একটা শোনা যায় না। তবুও, যেহেতু আমরা ক্যাথলিক, ব্যাপ্টিস্ট, সাংসারেক এবং অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায় একই সমাজে একসাথে বসবাস করি, সেহেতু প্রতিষ্ঠান যে সম্প্রদায়ই করুক, যেহেতু আমরা গারো/মান্দি, সেহেতু এসকল প্রতিষ্ঠানের সেবা হওয়া চাই সার্বজনীন। তা নাহলে, কাজে ও কথায় একে অপরকে অসহযোগিতা, কুপরামর্শ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের পুরো কার্যক্রমকে বাঁধাগ্রস্ত করতে তুলতে পারে এবং কাজের সফলতাকে বিলম্বিত করে তুলতে পারে। ফলে প্রতিষ্ঠানের ডোনারদের দেখানোর মত উল্লেখযোগ্য কিছুই থাকে না।

উপসংহারঃ
কর্মসংস্থান বলতে আমাদের সমাজে চাকুরি কেন্দ্রিক কর্মসংস্থানকেই প্রাধান্য দিতে অভ্যস্থ হয়ে উঠেছি। এ যুব সমাজ তথা ছাত্র তরুণদের জ্ঞান বিকাশ ও দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের ব্যক্তি জীবনকে উন্নত করার জন্য জন্য সংগঠিত করার কোন বিকল্প নেই। আমরা সেই দিকে একদমই খেয়াল করছি না। শুধু গারো জাতি বলে কথা নয়, কম বেশি এশিয়ার প্রায় সব জাতিই এবং বিশেষ করে এদেশের আদিবাসীরা শিক্ষা, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছে। আমাদের মধ্যে কেউ কেউ ব্যাক্তিগতভাবে কিছুটা এগিয়ে গেলেও জাতিকে সার্বিকভাবে উন্নয়ণ করতে তা যথেষ্ট নয়। তাই, যদি ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজ তথা দেশকে টেকসই উন্নয়নের আওতায় আনতে হলে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে এক যোগে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের আশৈশব শোনা এবং বিভিন্ন বই পুস্তকে পড়া “জাতিগতভাবে গারো ছেলেরা পিতৃগৃহে অবস্থানকালে উদাসীন, পরিশ্রম বিমুখ ও পরনির্ভরশীল...” এমন জাতীয় ধ্যানধারণা ত্যাগ করতে হবে এবং কাজেও তা প্রমাণ করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আপনি আমি যত ভালো কাজ বা উন্নয়ন করতে যাই না কেন, তাতে শুধুমাত্র বিদ্যা বুদ্ধি থাকলেই হয় না, সাথে আর্থিক অবস্থাও ভালো থাকতে হয়, তাহলেই আপনি আমি সফল। আর এমন সফল ব্যক্তিকেই মানুষ যথার্থ মূল্যায়ন এবং সম্মান করে। আপনার আমার সকলের কর্মময় জীবনে এমন মূল্যায়ন এবং সম্মান লাভ করুন এবং সকলেই সফল ব্যক্তি হোন- আমার পক্ষথেকে এটাই কামনা, আমেন।