আমাদের সমাজ আলোর মুখ দেখবেই
ফিডেল ডি সাংমা।
দেশ জুড়ে জাতীয় সম্পদের অসম বন্টন এবং
যাদের পুঁজি আছে, তাদের একচ্ছত্র ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় নীতি, পরিকল্পনা
এবং আইন প্রণয়ণের ফলে সামষ্টিক ক্ষমতায়ণ প্রায় অসম্ভব। সামষ্টিক ক্ষমতায়ন
বাস্তবায়িত হতে সংহতি অর্থনীতির মাধ্যমে। এই সংহতি স্থাপনের লক্ষ্যে ব্যক্তি থেকে
ব্যক্তি, ব্যক্তি থেকে সমষ্টি (এসোসিয়েশন, সমবায়), সমষ্টি হতে রাষ্ট্র সংহতি
স্থাপনের সংগ্রাম আমাদেরকে করতে হচ্ছে। এই সংগ্রাম বাস্তবায়ন
করার জন্য একগুচ্ছ সচেতন জনগোষ্ঠী বা সংগঠনের প্রয়োজন।
ব্যক্তির বিকাশ, ব্যক্তির স্বাধীনতা, বাক-স্বাধীনতা ইত্যাদি মানুষের অর্ন্তনিহিত মনস্ততাত্বিক
লক্ষ্য, যাকে বিকশিত করার নামেই চলছে ব্যক্তি প্রতিষ্ঠার অর্থনীতি, যাকে বলা হচ্ছে
উদারনৈতিক অর্থনৈতিক বিধি-ব্যবস্থা। ব্যক্তির
সামাজিক দায়দায়বদ্ধতা, মানবিকতা, পারস্পরিক নির্ভরশীলতা ইত্যাদি বিষয়গুলোও
মানুষের মনস্তাত্বিক লক্ষ্য হিসাবে কাজ করে। তাই আমাদের সমাজের প্রতিটি অভিভাবক
এবং তরুণ সমাজকে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণের মাধ্যমে বিষয়টিকে ভালো করে বুঝা
উচিত। তবেই আমাদের সমাজ আলোর মুখ দেখতে পাবে বলে আমার বিশ্বাস।
শিক্ষা,
খাদ্য নিরাপত্তা, বাসস্থান, আত্মকর্মসস্থান, সমবায় ব্যবস্থাপনা, কৃষি পণ্যের
ন্যায্যমূল্যে সরবরাহের সুযোগ প্রদান, ইত্যাদি সহ সাংগঠনিক দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা তৈরী
করা; যা যে কোন উন্নয়নকামী পরিবার ও সমাজের জন্য অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ন। এই বিষয়গুলোকে যত বেশি কার্যকরী করা যায়, ততই তরুণ ও যুব সমাজের
মধ্যে চাকরীকেন্দ্রিক যে হতাশা, তা অনেকাংশে দূর করা সম্ভব হবে। এজন্য সমাজ
উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠিত সামাজিক সংগঠন এবং এর কর্মীসহ সকলের সম্মিলিত ও
স্বতঃস্ফুর্ত অংশগ্রহনের প্রয়োজন রয়েছে।
বাংলাদেশ এবং সারাবিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক বা ঋণ লেনদেনের যে
অবস্থা তা বলাই বাহুল্য। ঘুষ ছাড়া একটি কানাকড়ি গরীব জনগণের হাতে আসাতো দূরের কথা,
ঋণের আবেদন জমা দিতেও কিছু উপরি দেওয়া লাগে। সে তুলনায় আমার জানামতে
খ্রীষ্টিয়ানদের দ্বারা পরিচালিত বিশেষ করে গারোদের দ্বারা পরিচালিত ক্রেডিট
সংগঠনগুলোতে কোন প্রকার ঘুস লাগে না। আমিও জানি, পীরগাছা থাংআনি কো-অপারেটিভ
ক্রেডিট ইউনিয়ন অত্র এলাকায় বিশেষ করে মান্দিদের জন্য ভালো কাজ করে যাচ্ছে। তাই
আমার পক্ষথেকে এই সমিতিকে আন্তরিকভাবে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। তদুপরি, ভালোরতো
শেষ নেই, তাই এই সমিতি এবং অন্যান্য সামাজিক সেবা সংগঠনগুলোর প্রতি আমার কয়েকটি প্রস্তাবনা রাখতে
চাইছি। আশা করি, প্রস্তাবগুলো ইতিবাচকভাবে ভেবে দেখবেন এবং আমাদের সকলের জন্য
উপযোগী মনে হলে প্রস্তাবগুলো বাস্তবায়ন করা যায় কিনা ভেবে দেখবেন। আমার
প্রস্তাবসমূহ নিম্নরূপঃ-
১) প্রতিটি সেবা
সংগঠন/প্রতিষ্ঠানকে যুগোপযোগী উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে উদ্যোগ
গ্রহণঃ
বিশ্বব্যাপি তথা আমাদের
দেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে উন্নয়ন বিষয়ক চিন্তা নতুন কোন বিষয় নয় এবং আমাদের
মতো পিছিয়ে পড়া আদিবাসীদের জন্যেতো নয়ই। কিন্তু উন্নয়নের চিন্তার মধ্যে আছে
বিভিন্ন জনের বিভিন্ন মত, একই মতের বিপরীতে বিভিন্ন মত, পথ বা কর্মকৌশল ভাবনা রয়েছে। তাই সমাজ উন্নয়ণমূলক
কর্মে যারা নিয়োজিত, তাদেরকে বেছে নিতে হয় নিজস্ব উন্নয়ন চিন্তা ও কর্মকৌশল।
সেসাথে জানতে হয় বিপরীত চিন্তাগুলোও। আবার ব্যক্তি এবং এলাকাভেদে
সেখানে সমস্যা ভিন্ন হতে পারে এবং এর সমাধানের জন্যেও ভিন্ন, বিকল্প উন্নয়ন বা
সমাধানের পরিকল্পনা গ্রহণের প্রয়োজন হয়। সেক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের দ্বারা
সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের কোন বিকল্প নেই। তাই প্রতিটি সেবা
সংগঠন/প্রতিষ্ঠানকে যুগোপযোগী উন্নয়নমূলক পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের দিকে
দৃষ্টি দেওয়া এবং গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যক।
২) প্রতিটি
গ্রামে দক্ষ সাব-কমিটি এবং সদস্য তৈরী করাঃ
যে কোন প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনকে সর্বস্তরে জনপ্রিয় এবং
কার্যকরী করতে হলে সহজতর যোগাযোগ প্রক্রিয়ার কোন বিকল্প নেই। আমাদের এলাকায় যে
সমস্ত সেবা সংগঠন বা ঋণদান প্রকল্পগুলো রয়েছে, সেখানে লোকবল কম। পরিকল্পনা এবং কাজ
করার মানসিকতা থাকা সত্ত্বেও পরিকল্পিত সেবা প্রাপকদের সবার কাছে পৌঁছানো সম্ভব হয়
না। এমন কতগুলো গ্রাম/এলাকা রয়েছে, একটু সেবা/ঋণ পেতে হলে আপনার প্রতিষ্ঠানে কয়েকবার
যাতায়াতে হাজার টাকা অনায়াসে চলে যাচ্ছে। অথচ এই এক হাজারটাকা দিয়ে একটা ছোট্ট
পরিবারের অনেক কিছু করা সম্ভব। তাই আমার ২য় প্রস্তাবনা হলো- প্রতিটি গ্রামের
ভোক্তা বা সেবা প্রাপকদের নিয়ে একেকটা গ্রাম কমিটি, ক্রেডিট/সংগঠনের শাখা/উপশাখা গঠন করা
যায়। পরবর্তীতে এসব শাখা/কমিটিকে উদ্বুদ্ধকরণের মাধ্যমে ভাতা দিয়ে হোক বা না হোক স্বেচ্ছাসেবক
তৈরী করে প্রশিক্ষণ দিয়ে এলাকার লোকজনকে ঋণ/সেবা কার্যক্রমে সক্রিয় হবার জন্য
উৎসাহিত করার কাজটি করানো যেতে পারে। এরকম কমিটি হলে নতুন সদস্য
গ্রহণ, বিভিন্ন সভা, প্রশিক্ষণ, ঋণ গ্রহণের নথিপত্র সংগ্রহ ইত্যাদি সহজতর হয়ে
উঠবে। তাঁদের মাধ্যমে অথবা সুপারিশে এলাকায় ঋণ কার্যক্রম কালচার করানো
সম্ভব হলে এ গ্রাম কমিটিগুলো সম্মানিতবোধ করবেন এবং কাজে দ্বিগুণ উৎসাহিত হবেন
বলেই আমার বিশ্বাস। আমার পূর্ব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, যেখানে
প্রতিষ্ঠানের সেবাদাতা এবং ভোক্তা উভয়ই অন্তত প্রতি সপ্তাহে একদিন সহজেই যোগাযোগ
রাখতে পারেন। এতে করে ঋণ প্রদান এবং উত্তোলন দুটিই সহজতর হয়ে উঠে।
৩) সমাজের সর্বস্তরে সচেতনতা প্রদানের
কর্মসূচীঃ
দেশের
বেশিরভাগ মানুষ ক্রমাগত দরিদ্র হতে দরিদ্রতর হতে থাকে এবং অল্প সংখ্যক মানুষের
হাতে সম্পদ ও ক্ষমতা কুক্ষিগত হয়। এটাই আমরা বুঝতে পারছি না অথবা জেনেও চুপ করে
আছি। অথবা বলা যায়, আমাদের সমাজে এসব
বিষয়ে আগ্রহ থাকলেও তেমন সচেতনতা নেই কিংবা সচেতনতা থাকলেও তা পারিপার্শ্বিক চাপে
বাস্তবায়ন করার মতো সক্রিয় কার্যক্রম বাস্তবায়নে অংশগ্রহণ সীমিত পর্যায়ে রয়ে গেছে।
এজন্যে দায়ী আমাদের মানসিকতা, অনিচ্ছা আমি অপূর্ণাঙ্গরূপ চেতনার। দেশের মূল
সীমাবদ্ধতা হলো – পরিবার ও সমাজের সমস্যাকে চিহ্নিত করতে না পারা এবং সমস্যা
সমাধানের লক্ষ্যে করণীয়গুলো নির্ধারণ করার দক্ষতা উন্নয়ণকে প্রাধান্য না দেওয়া। কিন্তু
আমরা ক’জন ভাবি যে, আমাদের সবাইকে সম্মিলিতভাবে দক্ষতা উন্নয়নের কর্মসূচি গ্রহণ
করে এই সমাজেই টিকে থাকতে হবে। আর তাই প্রতিযোগিতামূলক বাজারে টিকে থাকার মতো সবার গুণাবলী এবং দক্ষতার
উন্নয়ণ ঘটে, সেই জন্যই কর্মসূচি গ্রহণ করা
জরুরি। তাই উক্ত গ্রাম কমিটি বা উন্নয়ণ দলের মাধ্যমে জনগণকে বিভিন্ন ধরণের
প্রশিক্ষণ দিয়ে চেতনা প্রদানের কাজটি করা যেতে পারে।
৪)
উচ্চশিক্ষার সুযোগ দানের মাধ্যমে সমাজে দক্ষ নেতৃত্ব তৈরী করাঃ
আমাদের
ব্যাক্তি, পরিবার এবং সমাজে সমস্যা সীমাহীন। এই সমস্যাগুলোকে চিহ্নিতকরণের মাধ্যমে
সমাধান করতে হলে দক্ষ ব্যাক্তি ও নেতার কোন বিকল্প নেই। তরুণ ও যুবসমাজের মধ্যে
চাকুরিকেন্দ্রিক হতাশা দূর করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। তবে চাকুরির বাজারে প্রয়োজনীয়
দক্ষতাগুলো যদি আমাদের সদস্যদের আয়ত্বে থাকে, তবে প্রতিযোগিতায় তারা অবশ্যই এগিয়ে
থাকতে পারবে। তাই আমার প্রস্তাবনা হলো, সমাজের প্রতিটি ছেলেমেয়েদের উচ্চ শিক্ষা
গ্রহণের জন্য চলমান শিক্ষাবৃত্তি প্রদান অব্যাহত রাখা এবং আত্ম-কর্মসংস্থানের জন্য
অনুপ্রাণিত করার মাধ্যমে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় গ্রাজুয়েটদের শিক্ষাসনদের
বিপরীতে সুদমুক্ত ব্যাংক ঋণ প্রদানের ব্যবস্থা চালু রাখতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষাবৃত্তি
প্রদানকালে ছাত্র, অভিভাবকের কাছথেকে লিখিত প্রতিশ্রুতি নেওয়া যেতে পারে। প্রয়োজনে
দিক নির্দেশনামূলক প্রশিক্ষণ প্রদান এবং অন্যান্য সামাজিক সেবা সংগঠনের সাথে
উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ গ্রহণের জন্য ব্যবস্থা করে দেওয়া যেতে পারে।
৫) তরুণ, যুব সম্প্রদায়কে সংগঠিত করে উদ্যোক্তা
হিসাবে গড়ে তোলাঃ
প্রতিবছর বাংলাদেশের
বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলো হতে কত গ্রাজুয়েট চাকুরির বাজারে প্রবেশ করছে, তার সঠিক
পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। আবার প্রতিবছর সরকারি ও বেসরকারি খাত মিলে কত সংখ্যক
চাকুরি সৃষ্টি হচ্ছে, সেই পরিসংখ্যান পাওয়াও দুস্কর। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টির সঠিক
কর্মপরিকল্পনা তৈরী করা সহজ বিষয় হয়ে উঠে না। তরুণ, যুব সম্প্রদায়কে ব্যক্তি ও সামষ্টিক উন্নয়ণে
সচেতন ও কার্যকরী। কিন্তু সামগ্রিক যুবসমাজের অনেক বড় একটা অংশ অকার্যকর হয়ে আছে। এক্ষেত্রে
গ্রামে বা সমাজে গড়ে ওঠা বিভিন্ন সংগঠনের সাথে যোগাযোগ করে সেখানেও ভূমিকা রাখা
যেতে পারে। কর্মপ্রত্যাশী ছাত্র-তরুণ-যুবদের স্বেছাসেবী
প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ও পরিচালনা করার জন্য উদ্যোগী ভূমিকা পালন করার জন্য
অনুপ্রাণিত করা
যেতে পারে এবং অভিজ্ঞতা সম্পন্ন তরুন-যুবদের উদ্যোক্তা হিসাবে গড়ে
তোলার জন্য প্রতিষ্ঠান মুলধন সরবরাহের লক্ষ্যে সুদমুক্ত ব্যাংক ঋণ ব্যবস্থা চালু রাখতে পারে।
৬) সমবায়ভিত্তিক আন্দোলন জোরদার করাঃ
প্রতিনিয়ত
সমস্যার মধ্যে আমাদের বসবাস, সমাধানের প্রত্যাশা সবার। সমস্যা না চাইলেও আসে।
কিন্তু সমাধান আসে সামগ্রিক প্রচেষ্টায়। সমাধানের প্রচেষ্টায় আমরা যে যার মতো করে ভাবছি, সমাধান না পেয়ে
ক্ষুব্ধ হচ্ছি, সমস্যা নিয়ে কেউ কেউ আমাদের আলোড়িত করছেন, স্বপ্ন দেখাচ্ছেন,
কিন্তু সমাধান যা আসছে, তাতে সন্তুষ্ট হতে পারছি না আমরা। কারণ সমস্যার সমাধান
আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে না। তাই চাওয়া ও না পাওয়ার ব্যবধানটা ক্রমাগত
বাড়ছে। সমাজে ধনী ও গরিবের ব্যবধান বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য প্রয়োজন, প্রচলিত
অর্থনৈতিক বিধি-ব্যবস্থার পরিবর্তন। বর্তমান অর্থাবস্থার সীমাবদ্ধতা ও ব্যর্থতার
জায়গাগুলো যুবসমাজের নিকট সহজ সরল ও স্পষ্ট করে তুলে ধরা দরকার। তখন অবশ্যই এ যুব
সম্প্রদায় নতুন কিছু সন্ধানে আগ্রহী হবে এবং একটা না একটা পথ ঠিকই খুঁজে নেবে। মানুষের
সাথে মানুষের সংহতি স্থাপনের জন্য মানুষকে পারস্পরিক স্বার্থে গোষ্ঠীবদ্ধ করার
লক্ষ্যে সমবায়ভিত্তিক আন্দোলন জোরদার করা যেতে পারে।
৭)
ধনী-গরীব, ধর্মীয় সম্প্রদায় বিভেদ না করাঃ
সেবা
শুধু দরিদ্রদের জন্য, সুবিধা শুধু ক্যাথলিক বা ব্যাপ্টিস্টদের জন্য এরকম ভাবাটা
সত্যিকারভাবে যে কোন সেবা প্রতিষ্ঠানের জন্য মুক্তমনের পরিচয় বহন করে না, তেমনই
স্বাধীনভাবে কর্মকাণ্ড সম্পাদনের জন্য অনেক ক্ষেত্রেই বাঁধাগ্রস্ত করে। ধনীরা চায়
সমাজে শ্রমিক শ্রেণী না থাকলে তাদের খামারে কাজের লোকের অভাব হবে, সমাজে গরীব
শ্রেণী থাকুক, তাতে তাদের মাতব্বরী ক্ষমতা দেখানো যায়- এরকম কথা সকল সমাজে
প্রচলিত। যদিও আমাদের মান্দি সমাজে তেমনটা খুব একটা শোনা যায় না। তবুও, যেহেতু
আমরা ক্যাথলিক, ব্যাপ্টিস্ট, সাংসারেক এবং অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায় একই সমাজে
একসাথে বসবাস করি, সেহেতু প্রতিষ্ঠান যে সম্প্রদায়ই করুক, যেহেতু আমরা
গারো/মান্দি, সেহেতু এসকল প্রতিষ্ঠানের সেবা হওয়া চাই সার্বজনীন। তা নাহলে, কাজে ও
কথায় একে অপরকে অসহযোগিতা, কুপরামর্শ দিয়ে প্রতিষ্ঠানের পুরো কার্যক্রমকে
বাঁধাগ্রস্ত করতে তুলতে পারে এবং কাজের সফলতাকে বিলম্বিত করে তুলতে পারে। ফলে
প্রতিষ্ঠানের ডোনারদের দেখানোর মত উল্লেখযোগ্য কিছুই থাকে না।
উপসংহারঃ
কর্মসংস্থান বলতে আমাদের সমাজে চাকুরি কেন্দ্রিক
কর্মসংস্থানকেই প্রাধান্য দিতে অভ্যস্থ হয়ে উঠেছি। এ যুব সমাজ তথা ছাত্র তরুণদের জ্ঞান বিকাশ ও দক্ষতা
বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদের ব্যক্তি জীবনকে উন্নত করার জন্য জন্য সংগঠিত করার কোন
বিকল্প নেই। আমরা সেই দিকে একদমই খেয়াল করছি না। শুধু গারো জাতি
বলে কথা নয়, কম বেশি এশিয়ার প্রায় সব জাতিই এবং বিশেষ করে এদেশের আদিবাসীরা
শিক্ষা, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক দিক দিয়ে পিছিয়ে রয়েছে। আমাদের মধ্যে কেউ
কেউ ব্যাক্তিগতভাবে কিছুটা এগিয়ে গেলেও জাতিকে সার্বিকভাবে উন্নয়ণ করতে তা যথেষ্ট
নয়। তাই, যদি ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজ তথা দেশকে টেকসই উন্নয়নের আওতায় আনতে হলে
জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে এক যোগে এগিয়ে আসতে হবে। আমাদের আশৈশব শোনা এবং
বিভিন্ন বই পুস্তকে পড়া “জাতিগতভাবে গারো ছেলেরা পিতৃগৃহে অবস্থানকালে উদাসীন,
পরিশ্রম বিমুখ ও পরনির্ভরশীল...” এমন জাতীয় ধ্যানধারণা ত্যাগ করতে হবে এবং কাজেও
তা প্রমাণ করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে, আপনি আমি যত ভালো কাজ বা উন্নয়ন করতে
যাই না কেন, তাতে শুধুমাত্র বিদ্যা বুদ্ধি থাকলেই হয় না, সাথে আর্থিক অবস্থাও ভালো
থাকতে হয়, তাহলেই আপনি আমি সফল। আর এমন সফল ব্যক্তিকেই মানুষ যথার্থ মূল্যায়ন এবং
সম্মান করে। আপনার আমার সকলের কর্মময় জীবনে এমন মূল্যায়ন এবং সম্মান লাভ করুন এবং
সকলেই সফল ব্যক্তি হোন- আমার পক্ষথেকে এটাই কামনা, আমেন।