শুক্রবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০১২

আলোর পথে পা বাড়ালো রিনা


আলোর পথে পা বাড়ালো রিনা

রিনা একটি ছোট্ট মেয়ের নাম, ছোট্ট একটি স্বপ্নের নাম। রিনা; মানুষের জীবন সংগ্রামের, চেতনার নাম। অথচ গ্রামীণ সহজ সরল জীবনের কাছে, কুসংস্কারে চাপে, অসচেতনার কাছে হারিয়ে যেতে বসেছিলো এই রিনা। কিন্তু এই রিনাই আজ “আলোকিত মধুপুর”-এর সদস্যদের স্নেহ, ভালোবাসায় আলোর পথে পা বাড়িয়েছে।
.
বিগত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিদিনই “আলোকিত মধুপুর” ফেসবুক গ্রুপ-এ “৫ম শ্রেনীর রিনার বাল্যবিবাহ” এবং "রাত পেরুলেই রিনার বিয়ে"; “বাংলানিউজ  টোয়েন্টিফোর.কম”-এ “২৬ সেপ্টেম্বর রিনার আক্তারের বিয়ের আয়োজন সম্পন্ন”; এবং “মধুপুরবাসী ফেসবুক গ্রুপ”-এ  “মধুপুরে আবার বাল্যবিবাহ” শীর্ষক সংবাদগুলো প্রকাশ হওয়ার সাথে সাথে মধুপুরের ২টি ফেইসবুক গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয় এবং দেশ-বিদেশথেকে একের পর এক ফোন এবং মন্তব্যগুলোতে ফেসবুকে গ্রুপের পক্ষথেকে মেয়েটিকে রক্ষা করার অনুরোধ আসতে থাকে। “আলোকিত মধুপুর” ফেসবুক গ্রুপ এডমিনদের প্রত্যক্ষ ভুমিকা এবং স্থানীয় প্রশাসনের আন্তরিক হস্তক্ষেপের কারণে বাল্যবিবাহের বিষাক্ত ছোবল হতে রক্ষা পেয়েছে ৫ম শ্রেণীর মেধাবী ছাত্রী রিনা আক্তার। এ অসহায় মেয়েটির বাড়ি মধুপুর থানা, অরোনখোলা ইয়নিয়নের মাগন্তি নগর গ্রামে।.
৮ অক্টোবর, সোমবার বেলা ২টার সময় “আলোকিত মধুপুর”-এর এডমিনবৃন্দ গ্রুপের ঘোষিত অনুযায়ী রিনাকে তার স্কুলে এসএমসি সভাপতি কাবিল উদ্দিনের সভাপতিত্বে “শিক্ষা বৃত্তি” কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মধুপুর উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ জুলফিকার আলী, স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জুলহাস উদ্দিন, আলোকিত মধুপুর ফেইসবুক গ্রুপের সমন্বয়ক সামিউল আলম, বাংলানিউজের মধুপুর প্রতিনিধি এস.এম শহীদ, রিনার বাবা মনছুর আলী, মা কাকলী বেগম এবং সকল ছাত্রছাত্রী। মাগন্তিনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে এবার পিএসসি পরীক্ষা লিখেছে। “আলোকিত মধুপুর” ফেসবুক গ্রুপের পক্ষথেকে রিনাকে এস,এস,সি পর্যন্ত পড়াশুনার দায়িত্বভার গ্রহণ করা হয়েছে।
.
গত ৮ ডিসেম্বর আলোকিত মধুপুরের সমন্বয় সামিউল আলমের সাথে রিনা আক্তারের সাক্ষাতে রিনা তার অনুভুতি জানায়। “আমার গরীব বাবামার পক্ষে আমার লেখাপড়ার খরচ চালানো সম্ভব হতো না; তাই তো ওরা আমাকে বিয়ে দিতে চাইছিলো। এখন আপনারা আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, আমি খুব খুশী হয়েছি। এখন আমার স্বপ্ন  একটাই; ডাক্তার হওয়া। আপনারা আমার জন্য দোয়া করবেন”। মেয়েটি স্কুলে ফিরে আসতে পেরে তার চোখে মুখে যে আনন্দের ঝিলিক দেখেছি; তা ভাষায় প্রকাশ করার মত নয়। আর তার ক্লাসের বান্ধবীরাও রিনাকে ক্লাসে ফিরে পেয়ে খুব খুশি হয়েছে।
.
কোন কোন কর্ম থাকে যা মানুষের ভেতরে আজীবন আলো ছড়ায়.. ভালো কাজের প্রেরনা মানুষকে কতটা স্পিড এনে দিতে পারে, তাই আলোকিত মধুপুর” ফেসবুক সদস্যদের আগ্রহ এবং কাজের মাধ্যমে তা প্রমানিত হল। আজ এই গ্রুপের সকল মেম্বারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। এই ভাবেই দেশ ও জাতি এগিয়ে যাক, এটাই প্রত্যাশা।
.
তথ্য প্রদান: সামিউল আলম সুলতান, এস এম শহীদসম্পাদনা- ফিডেল ডি সাংমা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন