উপজাতির আধুনিকীকরণ নাম "ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী"
ফিডেল ডি সাংমা
সব পাখির মতো কোকিলও পাখি। অথচ সব পাখির গুণ ওদের মধ্যে নেই; যেমন-
ওরা নিজেরা বাসা তৈরী করতে পারে না। অন্যের বাসায় ডিম পাড়ে। বলাই বাহুল্য-
ডিমে তা দেওয়া, বাচ্চা ফুটিয়ে মমতা দিয়ে সন্তান লালনপালন করা ওদের ভাগ্যে
জোটে না। অন্যান্য পাখির মতো তাদেরও জন্ম, মৃত্যু, আবেগ আছে; ভাষা, সুর
আছে। অদ্ভুত মাতাল করা সুর; কিন্তু ওদের এই সুর মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য
দারুনভাবে, রোমান্টিকতায় ভরা। প্রকৃতির মাঝে বসন্তকে জাগিয়ে তোলে, মানুষের
হৃদয়কে আন্দোলিত করে, প্রেমকে বাঙ্মময় করে তোলে, কোকিলের সুর ।
আদিবাসিরাও মানুষ। একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট জীব; সবার মতোই রক্ত-মাংসে গড়া।
নিজস্ব পরিবার-পরিজন, সমাজ-সংস্কৃতি, জন্ম-মৃত্যু, ভাষা-ধর্ম-কর্ম তাদেরও আছে;
আছে আবেগ, অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য আনন্দ, হাসি কান্না, মান অভিমান সব।
তবে এরা মানুষ প্রজাতির হলেও আলাদা কোন জাতি নয়; উপজাতি ( জাতির আবার
উপ হয় কি করে; এই নাম দেনেওয়ালারাই ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবেন)। ইদানিং
আবার উপজাতি নামটাকে আধুনিকীকরণ করে নাম দিয়েছেন- ক্ষদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী’।
এ জনগোষ্ঠীর লোকেরা আবার নিজেদের আদিবাসী বললে খুশি হন। বাহ! নামের কি
বাহার! আদিবাসী জনগোষ্ঠীর দৈহিক বৈশিষ্ট্য হলো- এই সব মানুষ মঙ্গোলীয়ান,
নিগ্রোয়েট, ককেশিয়েট এবং অষ্ট্রালয়েড জাতির অন্তর্ভূক্ত (বাঙ্গালীর মতো ৪টি জাতির
সংমিশ্রণে তৈরী সংকর/ পাঁচমিশালী। হাইব্রিড জাতি নয়।) এদের নাক খাটো, বোঁচা এবং
চোখ ছোট। তাই বলে খাটো, বোঁচা নাক দিয়ে নিশ্বাস কম নিতে পারেন এবং ছোট চোখ
দিয়ে কম দেখেন বলে কোন চিকিৎসক বা বিজ্ঞানী প্রমান দিতে পারেন নি। বরং জনশ্রুতি
আছে- বাঙ্গালীদের তুলনায় এদের শরীরে নাকি রোগ প্রতিরোধ মতা বেশী।
বেশ কয়েকদিন আগে আমার ৮ম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলে স্কুলথেকে শুনে এসে আমাকে জিজ্ঞেস
করলো, ‘ বাবা আমরা নাকি বাঙ্গালী জাতির মতো কোন জাতি না, ‘ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী’র
লোক; আমরা গারো কি জাতি না? তাহলে ওদের কেন ‘বৃহৎ নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী’ জাতি বলা
হয় না, কেন ওদের বাঙ্গালী জাতি বলা হয়?’
- এর উত্তর সহজ না বাবা, এর সঠিক উত্তর দিতে পারবেন এসময়ের আওয়ামী
বুদ্ধিজীবি আর আমাদের নেতানেত্রীরা...’।
সন্তানকে এইটুকু প্রশ্নের সমাধান (বা জাতি বর্ণবিভেদমূলক মনোভাবের কারণ বর্ণনা) করতে
না পারার লজ্জা আমাকে এখনও কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। হিন্দু অধ্যুসিত দেশ ভারতে মুসলমানদের
‘উপজাতি’ বা ‘ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী’ বলা হয় কি না এদেশের বাঙ্গালী জাতির লোক
ভালো বলতে পারবেন।
বাংলাদেশে বাঙ্গালী ছাড়াও আরোও ৪৫টি জাতি (আদিবাসি) আছে। আবার সব আদিবাসিদের
মধ্যেই গ্রামে, এলাকায় ছোট বড় অনেক সংগঠনের নেতানেত্রী আছেন। এমনকি আদিবাসিদের
মধ্যথেকে বড় বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যেও নেতা-নেত্রী, এমপি, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর আসনে
আছেন। জনসংখ্যা গরিষ্ঠ্য হলেও বাঙ্গালী জাতি কিন্তু একটাই। এই একটা (বাঙ্গালী) জাতি
আমাদের ৪৫টি জাতিকে দাবিয়ে রাখার জন্য, অবমূল্যায়ণ করার জন্য ১৭ কোটি যুক্তি/ধারা
চাপিয়ে দেন নি। এমন কি আমাদের ‘ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী’ বলার জন্য ৪৫টি যুক্তি/ ধারাও
নেই। লাম-সাম-যদু-মদু ধরণের হালকা খোঁড়া যুক্তি দেখিয়েই আমাদের ‘উপজাতি’ বা ‘ক্ষুদ্র
নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী’ নামটা চাপিয়ে দিল। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে, লোকজ-সংস্কৃতির
বৈচিত্র আনয়নে কি আমাদের কোনই অবদান নেই? বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের
অংশগ্রহণের কি কোন মূল্য নেই? দেশের ১৭ কোটি জনগন এবং ১৩ কোটি ভোটার কি
আমাদের বাদ দিয়ে..? তাহলে আমাদের প্রতি এমন শ্রেণী বৈষম্যমূলক আচরণ কেন? আমাদের
এই দেশেই পশুপাখি রার জন্য বিজ্ঞাপন, শ্লোগান, পোষ্টার, লিফলেট, ব্যানার, সাইনবোর্ড,
বিলবোর্ড হয়, বিশেষ দিবস উদযাপিত হয়; তবু আদিবাসিদের জন্য কিছুই হয় না, কোন দিবসও
উদ্যাপন হয় না। এটাই পরিতাপের বিষয়। আমাদের আলাদাভাবে পূর্ণ জাতির স্বীকৃতি
মর্যাদা দিলে কার কি তি হবে?
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং আদিবাসি নেতৃবৃন্দ আপনারা জবাব দেবেন কি- আপনা কেন,
কাদের জন্য নেতা নেত্রী হয়েছেন? আমাদের মতো নাদান সাধারণ জনগনকে কি করে
ভুলে যান? জনগণ অনেক প্রত্যাশা করে তাদের স্ত্রী-সন্তানদের ভাত-কাপড়ের পয়সা খরচ
করে কি আপনাদের ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচিত করেন নি? তার প্রতিদান কি এই?
আদিবাসি নেতৃবৃন্দদের কেউ কি ‘ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী’র জন্য নীতিমালা/ধারা প্রনয়ণে
জড়িত ছিলেন? .. আগে বা পরে প্রেসিডেন্ট, প্রধান মন্ত্রি বা স্বরাস্ত্র মন্ত্রনালয়ের সাথে কথা
বলেছেন? নাকি আপনাদের ব্যাক্তিগতভাবে পদমর্যাদা, দানসামগ্রী অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা
দিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে দিয়েছেন? পরেরবার নিশ্চয়ই নির্বাচনে দাঁড়াবেন? তখন আমরাও
কিন্তু জবাব চাইবো; আপনাদের মূল্যায়ণ করবো। অতএব এই কথাগুলো সেদিনের জন্য
তোলা রইলো...। আপনারা দয়া করে প্রস্তুত থাকবেন.
ফিডেল ডি সাংমা
সব পাখির মতো কোকিলও পাখি। অথচ সব পাখির গুণ ওদের মধ্যে নেই; যেমন-
ওরা নিজেরা বাসা তৈরী করতে পারে না। অন্যের বাসায় ডিম পাড়ে। বলাই বাহুল্য-
ডিমে তা দেওয়া, বাচ্চা ফুটিয়ে মমতা দিয়ে সন্তান লালনপালন করা ওদের ভাগ্যে
জোটে না। অন্যান্য পাখির মতো তাদেরও জন্ম, মৃত্যু, আবেগ আছে; ভাষা, সুর
আছে। অদ্ভুত মাতাল করা সুর; কিন্তু ওদের এই সুর মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য
দারুনভাবে, রোমান্টিকতায় ভরা। প্রকৃতির মাঝে বসন্তকে জাগিয়ে তোলে, মানুষের
হৃদয়কে আন্দোলিত করে, প্রেমকে বাঙ্মময় করে তোলে, কোকিলের সুর ।
আদিবাসিরাও মানুষ। একই সৃষ্টিকর্তার সৃষ্ট জীব; সবার মতোই রক্ত-মাংসে গড়া।
নিজস্ব পরিবার-পরিজন, সমাজ-সংস্কৃতি, জন্ম-মৃত্যু, ভাষা-ধর্ম-কর্ম তাদেরও আছে;
আছে আবেগ, অনুভূতি প্রকাশ করার জন্য আনন্দ, হাসি কান্না, মান অভিমান সব।
তবে এরা মানুষ প্রজাতির হলেও আলাদা কোন জাতি নয়; উপজাতি ( জাতির আবার
উপ হয় কি করে; এই নাম দেনেওয়ালারাই ভালো ব্যাখ্যা দিতে পারবেন)। ইদানিং
আবার উপজাতি নামটাকে আধুনিকীকরণ করে নাম দিয়েছেন- ক্ষদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী’।
এ জনগোষ্ঠীর লোকেরা আবার নিজেদের আদিবাসী বললে খুশি হন। বাহ! নামের কি
বাহার! আদিবাসী জনগোষ্ঠীর দৈহিক বৈশিষ্ট্য হলো- এই সব মানুষ মঙ্গোলীয়ান,
নিগ্রোয়েট, ককেশিয়েট এবং অষ্ট্রালয়েড জাতির অন্তর্ভূক্ত (বাঙ্গালীর মতো ৪টি জাতির
সংমিশ্রণে তৈরী সংকর/ পাঁচমিশালী। হাইব্রিড জাতি নয়।) এদের নাক খাটো, বোঁচা এবং
চোখ ছোট। তাই বলে খাটো, বোঁচা নাক দিয়ে নিশ্বাস কম নিতে পারেন এবং ছোট চোখ
দিয়ে কম দেখেন বলে কোন চিকিৎসক বা বিজ্ঞানী প্রমান দিতে পারেন নি। বরং জনশ্রুতি
আছে- বাঙ্গালীদের তুলনায় এদের শরীরে নাকি রোগ প্রতিরোধ মতা বেশী।
বেশ কয়েকদিন আগে আমার ৮ম শ্রেণী পড়ুয়া ছেলে স্কুলথেকে শুনে এসে আমাকে জিজ্ঞেস
করলো, ‘ বাবা আমরা নাকি বাঙ্গালী জাতির মতো কোন জাতি না, ‘ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী’র
লোক; আমরা গারো কি জাতি না? তাহলে ওদের কেন ‘বৃহৎ নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী’ জাতি বলা
হয় না, কেন ওদের বাঙ্গালী জাতি বলা হয়?’
- এর উত্তর সহজ না বাবা, এর সঠিক উত্তর দিতে পারবেন এসময়ের আওয়ামী
বুদ্ধিজীবি আর আমাদের নেতানেত্রীরা...’।
সন্তানকে এইটুকু প্রশ্নের সমাধান (বা জাতি বর্ণবিভেদমূলক মনোভাবের কারণ বর্ণনা) করতে
না পারার লজ্জা আমাকে এখনও কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। হিন্দু অধ্যুসিত দেশ ভারতে মুসলমানদের
‘উপজাতি’ বা ‘ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী’ বলা হয় কি না এদেশের বাঙ্গালী জাতির লোক
ভালো বলতে পারবেন।
বাংলাদেশে বাঙ্গালী ছাড়াও আরোও ৪৫টি জাতি (আদিবাসি) আছে। আবার সব আদিবাসিদের
মধ্যেই গ্রামে, এলাকায় ছোট বড় অনেক সংগঠনের নেতানেত্রী আছেন। এমনকি আদিবাসিদের
মধ্যথেকে বড় বড় রাজনৈতিক দলের মধ্যেও নেতা-নেত্রী, এমপি, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীর আসনে
আছেন। জনসংখ্যা গরিষ্ঠ্য হলেও বাঙ্গালী জাতি কিন্তু একটাই। এই একটা (বাঙ্গালী) জাতি
আমাদের ৪৫টি জাতিকে দাবিয়ে রাখার জন্য, অবমূল্যায়ণ করার জন্য ১৭ কোটি যুক্তি/ধারা
চাপিয়ে দেন নি। এমন কি আমাদের ‘ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী’ বলার জন্য ৪৫টি যুক্তি/ ধারাও
নেই। লাম-সাম-যদু-মদু ধরণের হালকা খোঁড়া যুক্তি দেখিয়েই আমাদের ‘উপজাতি’ বা ‘ক্ষুদ্র
নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী’ নামটা চাপিয়ে দিল। দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে, লোকজ-সংস্কৃতির
বৈচিত্র আনয়নে কি আমাদের কোনই অবদান নেই? বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের
অংশগ্রহণের কি কোন মূল্য নেই? দেশের ১৭ কোটি জনগন এবং ১৩ কোটি ভোটার কি
আমাদের বাদ দিয়ে..? তাহলে আমাদের প্রতি এমন শ্রেণী বৈষম্যমূলক আচরণ কেন? আমাদের
এই দেশেই পশুপাখি রার জন্য বিজ্ঞাপন, শ্লোগান, পোষ্টার, লিফলেট, ব্যানার, সাইনবোর্ড,
বিলবোর্ড হয়, বিশেষ দিবস উদযাপিত হয়; তবু আদিবাসিদের জন্য কিছুই হয় না, কোন দিবসও
উদ্যাপন হয় না। এটাই পরিতাপের বিষয়। আমাদের আলাদাভাবে পূর্ণ জাতির স্বীকৃতি
মর্যাদা দিলে কার কি তি হবে?
রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং আদিবাসি নেতৃবৃন্দ আপনারা জবাব দেবেন কি- আপনা কেন,
কাদের জন্য নেতা নেত্রী হয়েছেন? আমাদের মতো নাদান সাধারণ জনগনকে কি করে
ভুলে যান? জনগণ অনেক প্রত্যাশা করে তাদের স্ত্রী-সন্তানদের ভাত-কাপড়ের পয়সা খরচ
করে কি আপনাদের ভোট দিয়ে প্রতিনিধি নির্বাচিত করেন নি? তার প্রতিদান কি এই?
আদিবাসি নেতৃবৃন্দদের কেউ কি ‘ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠী’র জন্য নীতিমালা/ধারা প্রনয়ণে
জড়িত ছিলেন? .. আগে বা পরে প্রেসিডেন্ট, প্রধান মন্ত্রি বা স্বরাস্ত্র মন্ত্রনালয়ের সাথে কথা
বলেছেন? নাকি আপনাদের ব্যাক্তিগতভাবে পদমর্যাদা, দানসামগ্রী অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা
দিয়ে মুখে কুলুপ এঁটে দিয়েছেন? পরেরবার নিশ্চয়ই নির্বাচনে দাঁড়াবেন? তখন আমরাও
কিন্তু জবাব চাইবো; আপনাদের মূল্যায়ণ করবো। অতএব এই কথাগুলো সেদিনের জন্য
তোলা রইলো...। আপনারা দয়া করে প্রস্তুত থাকবেন.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন