আবির্ভাব ম্যাগাজিন এবং আমার অনুভূতিঃ
ফিডেল ডি সাংমা
আবির্ভাব; একটি ম্যাগাজিনের নাম। আবির্ভাব; একটি ম্যাগাজিনের আবির্ভাব। সাহিত্য-জগতে শত সহস্র ম্যাগাজিনের ভিরে আরও একটি নতুন ম্যাগাজিন। যে পত্রিকাটির বাহ্যিক অবয়ব প্রচ্ছদ দেখেই পাঠকদের মন ভরে উঠবে, পড়তে আগ্রহী হয়ে উঠবেন। আমাকে এই সুন্দর ম্যাগাজিনটি পড়ে অনুভূতি লিখার জন্য আমাকে অনুরোধ করা হয়েছে। লেখার এ দায় মুক্তির জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
‘আবির্ভাব’ সদ্য ভূমিষ্ঠ গারো সাংকৃতিক সংগঠন ‘অভ্যুদয়’-এর প্রথম সাহিত্য পত্রিকা। এই সাহিত্য পত্রিকাটি খুললেই প্রথম যে লেখাটি চোখে পড়বে তা হচ্ছে প্রকৌশলী, সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ত্ব ও লেখক দিগন্ত সরকার রচিত ‘সৃষ্টি তত্ত্বের অসারতা বনাম বিবর্তন তত্ত্বের সাফল্য’ প্রবন্ধটি। প্রাচীন পৃথিবীর লোকগাঁথায় এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণথেকে পৃথিবী ও প্রকৃতির সৃষ্টিতত্ত্বগুলো সুখ-পাঠযোগ্য হয়েছে। ইহুদী, ইসলাম ও খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ থেকে উদৃতি দিয়ে ৬দিনে পৃথিবী, স্বর্গ, নরক সৃষ্টিতত্ত্বটি আধুনিক বিজ্ঞানের সৃষ্টিতত্ত্বের সাথে যৌতিকতায় সাংঘর্ষিক বলে লেখক অনেক গুলো উদাহারন উপমার উল্লেখ করেছেন। যে লেখা বা আলোচনাগুলো পড়লে ধর্ম মৌলবাদীদের বিশ্বাসে এবং মনে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করতে পারে। ঠিক তেমনই বৈজ্ঞানিক যুক্তিগুলোর বিপরিতেও বিস্তর আলোচনাগুলো পাঠকদের কাছে পাঠযোগ্যভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। কোন ব্যাখ্যা বা যুক্তিগুলো কে কি ভাবে গ্রহণ বর্জন করবেন তা পাঠকদের উপর নির্ভর করবে। বৈজ্ঞানিক কথাবার্তা আমার কাছে বরাবরই কেমন করকরে, নিরস মনে হতো; কিন্তু এই লেখায় আমার মত অনেকেই সৃষ্টিরহস্য সম্পর্কিত সাহিত্যের রস আস্বাদন করতে পারবেন।
ক্ষুরধার লেখক ও প্রাবন্ধিক সরোজ ম্রং গারোদের খাদ্যাভ্যাস, মিথ সম্পর্কে অত্যন্ত চমৎকার প্রবন্ধ পাঠকদের উপহার দিয়েছেন তাঁর ‘গাইকা মাংস কেজি ৫০ রূপিয়া লেকিন কুত্তাকা মাংস ১৫০ রুপিয়া’ নামক প্রবন্ধে। তিনি এই প্রবন্ধের শুরুতে আক্ষেপ করে বলেছেন, “এ পর্যন্ত যে সকল তথাকথিত লেখক,গবেষক ও ঐতিহসিকগণ গারোদের জীবন ও খাদ্যাভ্যাস নিয়ে তথ্য উপস্থাপন করেছেন সে সব তথ্যের সিংহ ভাগই ভিত্তিহীণ, ভুল ও বিভ্রান্তিকর। তাঁরা গারোদের (এমনকি অন্যান্য আদিবাসীদের) খাদ্য সংস্কৃতি নিয়ে এমন কুরুচিপূর্ণ, নোংরা ও বিকৃত তথ্যের অপব্যাখ্যা দিয়েছেন, মনে হয় যেন এই গারোরা অজানা কোন ভিন গ্রহথেকে নেমে আসা দৈত্য- দানব, ভয়ংকর রাক্ষুসে প্রজাতির বা স্বভাবের”। বাংলাদেশের ইতিহাস, সাহিত্য সংস্কৃতির প্রামান্য দলিল বাংলাপিডিয়া সহ বিভিন্ন লেখক, গবেষকদের বিভিন্ন গবেষণালব্ধ পুস্তক, ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্য-পুস্তক এবং বিভিন্ন পত্র পত্রিকার এই সমস্ত বিভান্তিকর তথ্য দিয়ে রেখেছেন। এ লেখক এসব ভূয়া তত্ত্ব ও তথ্যের সংশোধনের গুরুত্বারোপ করেছেন। আমার মনে হয় ‘আদিবাসী ফোরাম’ উদ্যোগ নিতে পারে। তাঁরাই দেশ বিদেশের বিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ের মাধ্যমে সংশোধন, পরিমার্জনের উদ্যোগ নিতে পারেন বলে আমার বিশ্বাস।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আদিবাসী মুক্তিযওদ্ধারা এখনোও অনেকটা ইতিহাসের অন্তরালেই রয়ে গেছেন। কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও কলেজ শিক্ষক জনাব শফিউদ্দিন তালুকদার তাঁর ‘আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা’ প্রবন্ধে এমন অনেক গারো মুক্তিযোদ্ধাদের নাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু মাত্র মোট পাঁচজন আদিবাসী গারো মুক্তিযোদ্ধা মাতিয়াস সাংমা, নিকোলাশ মারাক, শিমন সাংমা, দিপার্শন ঘাগ্রা, ধীরাজ মারাক এবং প্রদীপ তজু; উনাদের স্বাধীণতার যুদ্ধে দুঃসাহসিক অংশগ্রহনের কাহিনী এবং এই স্বাধীন বাংলাদেশে বাস করেও তাদের পরিবারের চরম দূর্দিনের পরিনতির কথা প্রাঞ্জলভাবে ভাবে উপস্থাপন করছেন। আরো অনেক গারো মুক্তিযোদ্ধা আছেন তাদের বর্তমান অবস্থাও তদ্রুপ। সরকারী বেসরকারীভাবে এই মুক্তিযোদ্ধাদের যথাসাধ্য সম্মান-মর্যাদা প্রদানের দাবী রাখেন। তাদের পরিবারের চরম দূর্দিনের সাহায্য সুবিধা প্রদানের জন্য লেখক জোড় সুপারিশ করেছেন।
মধুপুর শালবনবাসী গারোদের কাছে খুবই পরিচিত একটি নাম, পাভেল পার্থ। যিনি প্রবন্ধকার, সাংবাদিক ও গবেষক। তিনি বহুবার গারো অঞ্চলে এসেছেন, তাদের সাথে থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছেন এবং দেশ বিদেশের দরবারে আন্তরিকতার সাথে বন ও মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। এমনিই আরেকটি অধিক মূল্যবান, গবেষনাধর্মী, বলিষ্ঠ লেখা উপহার দিয়েছেন ‘গারোদের বন নির্ভর অভিজ্ঞতায় প্রাকৃতিক শালবনের উদ্ভিদ বৈচিত্র্য মূল্যায়ন ও রাষ্ট্রের বিরোধী উদ্যোগ’ শীর্ষক প্রবন্ধটি। এটিই আবির্ভাব ম্যাগাজিনের লেখাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক পৃষ্ঠা সম্বলিত নিরিক্ষা ও গবেষনাধর্মী লেখা প্রবন্ধ। এই প্রবন্ধে স্থানীয় জনগোষ্ঠ্যী ও আদিবাসীদের সাথে স্থানীয় উদ্ভিদ প্রজাতির বৈচিত্রময় ব্যবহার বা সম্পর্কের কথা গুরুত্ত্ব সহকারে তুলে ধরেছেন লেখক মহোদয়। তিনি লিখেছেন, মধুপুর শালবনের বৈচিত্রময় উদ্ভিদ প্রজাতি স্থানীয় আদিবাসিদের জীবনকে কিভাবে প্রভাবিত করছে, কোন কোন উদ্ভিদ কি কি কাজে ব্যাবহৃত হয় ইত্যাদি।
জেমস জর্নেশ চিরান রচিত ‘হাজং ও গারো জাতিসত্ত্বাঃ রাষ্ট্রসৃষ্ট এথনিক দূর্যোগ’; শুভাশিস সিনহা রচিত ‘লোক সংস্কৃতিঃ প্রেক্ষিত মণিপুরী সমাজ’ এবং কুঙ্গ থাঙ্গ রচিত ‘বাংলাদেশের মণিপুরি সমাজঃ তাদের আদিধর্ম ও ক্ষয়িষ্ণু সংস্কৃতি’ প্রবন্ধগুলো আবির্ভাব ম্যাগাজিনের মূল্যবান নিরিক্ষাধর্মী ও আনন্দদায়ক লেখা। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই আদিবাসীরা রাষ্ট্রীয় ভাবে উপেক্ষিত। তার উপর আবার প্রাকৃতিক ও পারপার্শিক সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠ্যীর দ্বারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে নির্যাতন ও চাপের মধ্যেই বসবাস করতে হয়, সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়। এমনই পিছিয়ে পরা আদিবাসীদের অতীত, বর্তমান অবস্থা এবং এদের ব্যাক্তি, পরিবার, জাতি ও সামাজিক ভাবে নিশ্চিহ্ন হওয়ার আশঙ্কা এবং এথেকে পরিত্রাণের গুরুত্ত্বারোপ ও সমূহ সুপারিশসম্পর্কিত লেখা প্রবন্ধগুলোতে সুন্দর ভাবে উপস্থাপিত হয়ছে। স্ব-স্ব ক্ষেত্রে উক্ত লেখক তিনজনই উপস্থাপনায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন; যা পাঠ করে পাঠকগণ ভালো ধারনা লাভ করবেন এবং আনন্দও পাবেন। তাঁর সাথে ক্রাউন ম্রং এর রসাত্মকবোধের ‘কমিটমেন্ট ফোবিয়া’ লেখাও পাঠকদের আনন্দ দিয়েছে আশা করি।
আধুনিক যুগের যুবক যুবতির প্রেম-বিরহকে উপজীব্য করে লেখা হিমেল রিছিলের ‘উত্তীর্ণ অতীত’; তিতির এবং একটি ছোট্ট ছেলের মধ্যে মায়া-মমতা, বিশ্বাস- অবিশ্বাসকে কেন্দ্র করে সুপর্ণা পলি দ্রং-এর ‘ছাতা’; প্রত্যাশিত গারো যুবক (আদিত্য)-কে না পেয়ে অগারো যুবক মার্ককে বিয়ে করেও স্বজাতির প্রতি টান, মমত্ববোধ, পরিবার, মা, বাবা, ভাই-বোনের প্রতি ভালবাসাকে উপজীব্য করে গ্লোরি রুরাম-এর ‘দ্বিধা’; অবৈধ প্রেম, সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার অক্ষমতা বা আবেগকে মাত্রাতিরিক্ত প্রশ্রয় দেয়ার কুফলকে উপজীব্য করে সাইনী চেক্সী ম্রং-এর ‘ভালবাসি যারে’ এবং মদোমাতাল, উদাসীন গারো যুবক (প্রেনিশন দালবত)-এর ব্যাক্তি ও পারবারিক দৈন্য জীবন, সামাজিক কুসংস্কার এবং সাংসারিক টানাপোড়েনের কাহিনীকে উপজীব্য করে বচন নকরেক-এর ‘জাগর স্বপ্ন’ ইত্যাদি সুন্দর সুন্দর গল্পগুলো স্থান পেয়েছে এই ম্যাগাজিনে।
কবিতাগুচ্ছে স্থান পেয়েছে অনেক নবীন প্রবীণ কবিদের কাব্য। এর মধ্যে মতেন্দ্র মানকিন’এর ‘গারো মানুষের পঙক্তিমালা’; সুপর্ণা পলি দ্রং-এর বৃষ্টি; ফিডেল ডি সাংমা’র ‘চেতনা’; প্রাঞ্জল এম, সাংমা’র ‘যে দুঃখ বুঝে না সবাই’; অরণ্য ই চিরান-এর ‘বিষাক্ত ঢেউ তোমার বুকে’ সরোজ ম্রং-এর ‘স্বপ্ন ও শেকড়ের ফুসফুসে ক্যানসার’; সমিক চিসিম (শমী)-এর যৌবনের আহবান’; ইকবাল মাহমুদ’এর সাঁওতালি মেয়ের গান’; তুই মৃ’র ‘আদিবাসী’; সাগর ডিব্রা’র ‘চিন্তা’; সুবির জে’ নকরেক’এর ‘এসো যুদ্ধ করি’; টাইটাস দফো’র ‘জয়ানন্দের প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে চন্দ্রআবতী’; অন্বেষা ম্রং-এর ‘তোমাকে ভালবাসি’; হিমেল রিছিলের ‘দৃশ্য কাব্য’ ইত্যাদি সুন্দর সুন্দর কবিতাগুলো কম-বেশি সুন্দর ও পাঠযোগ্য হয়ে উঠেছে এই ‘আবির্ভাব’ ম্যাগাজিনটিতে।
আবির্ভাব ম্যাগাজিনে আরও কয়েকটি লেখা ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। যেমন- প্রথমত, ‘প্রধান শিক্ষকের কাছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের চিঠি’। এই চিঠিটি পড়লে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষকদের শিক্ষা প্রদানে উৎসাহিত করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর দ্বিতীয়ত, ‘বাঙ্গালীভিন্ন অন্য জাতিরা উপজাতি বা আদিবাসী কেন? কেন ভেন্ন জাতি নয়?’ শীর্ষক ফেইসবুকীয় সংলাপটি। এই লেখায় ফেইসবুকের অনেক বাঙালি, অবাঙ্গালি ব্যাক্তিবর্গ উপজাতি বা আদিবাসী নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে তর্ক বিতর্কের মাধ্যমে নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন।
আরো একটি মূল্যবান লেখা এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে। তা হোল- কবি ও প্রাবন্ধিক, গীতিকার, সুরকার ও শিল্পি জেমস জর্নেশ চিরানের সাক্ষাতকার পর্বটি। যিনি গারোদের মধ্যে দ্বিতীয় কবি যিনি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। উল্লেখ্য গারোদের মধ্যে কবি প্রশান্ত কুমার জ্যাম্বল সঞ্চয়ন ১, ২, ৩ নামে যথাক্রমে ১লা অক্টোবর, ১৯৯০; জানুয়ারী ১৯৯২ এবং ১৯৯৩ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। জেমস জর্নেশ চিরান তাঁর সাক্ষাতকার প্রদানের মাধ্যমে সমাজ সংস্কারক, লেখক, গবেষক, প্রকাশকদের উদ্দেশ্যে সুন্দর প্রস্তাবনা এবং উদ্যমী হওয়ার পরামর্শ রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘উদ্যোগ আশা ব্যঞ্জক হলেও লেখা সংগ্রহ ও প্রকাশনার খুব একটা যত্ন আছে বলে মনে হয় না। সাময়িকী সমূহের আঙ্গিক ও পরিধিতে আধুনিকতার স্পর্শের অভাব। অনেকের লেখায় রাতারাতি কবি ও লেখক বনে যাওয়ার অপচেষ্টা বিরক্তিকর। লেখার চেষ্টা অব্যাহত থাকলে প্রতিভার সাক্ষর রাখতে পারবেন”। উনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরস্কার প্রাপ্তি নবীন লেখকদেরও প্রেরণা যোগাবে বলেই আমার বিশ্বাস। আসুন আমরা এই সুন্দর পরামর্শ কাজে লাগানোর চেষ্টা করি।
আরো একটা লেখার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ না করলেই নয়। ‘অনলাইন’ বিভাগ; হিমেল রিছিলের লেখা অথবা সম্পাদনা “তৈরী করুন আকর্ষনীয় ফ্ল্যাশ ওয়েবসাইট”-টি। লেখার বর্ণ্না চমৎকার। যারা ওয়েবসাইট তৈরী করতে চান, তাদের জন্য লেখা কাজে আসবে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, আমিও জানতাম না; আমারও কাজে লাগবে। কিন্তু আবার মনে হলো, অনিয়মিত বা বাৎসরিক পত্রিকায় এই লেখা কেনো? আমি অনেকবার ভেবেছি, আমরা কতজন ওয়েবসাইট তৈরী করবো কিংবা ব্যবহার করবো। এই ম্যাগাজিনের পাঠকদের শতকরা দুইজনেরও তেমন কাজে লাগবে কি?
সব মিলিয়ে অনেক সুন্দর হয়েছে এই ‘আবির্ভাব’ ম্যাগাজিনটি। তারপরোও পরবর্তি প্রকাশনার জন্য আমার পক্ষথেকে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখার জন্য প্রস্তাবনা থাকবে। তা হোল-
ফিডেল ডি সাংমা
আবির্ভাব; একটি ম্যাগাজিনের নাম। আবির্ভাব; একটি ম্যাগাজিনের আবির্ভাব। সাহিত্য-জগতে শত সহস্র ম্যাগাজিনের ভিরে আরও একটি নতুন ম্যাগাজিন। যে পত্রিকাটির বাহ্যিক অবয়ব প্রচ্ছদ দেখেই পাঠকদের মন ভরে উঠবে, পড়তে আগ্রহী হয়ে উঠবেন। আমাকে এই সুন্দর ম্যাগাজিনটি পড়ে অনুভূতি লিখার জন্য আমাকে অনুরোধ করা হয়েছে। লেখার এ দায় মুক্তির জন্য আমার এই ক্ষুদ্র প্রয়াস।
‘আবির্ভাব’ সদ্য ভূমিষ্ঠ গারো সাংকৃতিক সংগঠন ‘অভ্যুদয়’-এর প্রথম সাহিত্য পত্রিকা। এই সাহিত্য পত্রিকাটি খুললেই প্রথম যে লেখাটি চোখে পড়বে তা হচ্ছে প্রকৌশলী, সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিত্ত্ব ও লেখক দিগন্ত সরকার রচিত ‘সৃষ্টি তত্ত্বের অসারতা বনাম বিবর্তন তত্ত্বের সাফল্য’ প্রবন্ধটি। প্রাচীন পৃথিবীর লোকগাঁথায় এবং বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোণথেকে পৃথিবী ও প্রকৃতির সৃষ্টিতত্ত্বগুলো সুখ-পাঠযোগ্য হয়েছে। ইহুদী, ইসলাম ও খ্রিষ্টানদের ধর্মগ্রন্থ থেকে উদৃতি দিয়ে ৬দিনে পৃথিবী, স্বর্গ, নরক সৃষ্টিতত্ত্বটি আধুনিক বিজ্ঞানের সৃষ্টিতত্ত্বের সাথে যৌতিকতায় সাংঘর্ষিক বলে লেখক অনেক গুলো উদাহারন উপমার উল্লেখ করেছেন। যে লেখা বা আলোচনাগুলো পড়লে ধর্ম মৌলবাদীদের বিশ্বাসে এবং মনে দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করতে পারে। ঠিক তেমনই বৈজ্ঞানিক যুক্তিগুলোর বিপরিতেও বিস্তর আলোচনাগুলো পাঠকদের কাছে পাঠযোগ্যভাবে উপস্থাপিত হয়েছে। কোন ব্যাখ্যা বা যুক্তিগুলো কে কি ভাবে গ্রহণ বর্জন করবেন তা পাঠকদের উপর নির্ভর করবে। বৈজ্ঞানিক কথাবার্তা আমার কাছে বরাবরই কেমন করকরে, নিরস মনে হতো; কিন্তু এই লেখায় আমার মত অনেকেই সৃষ্টিরহস্য সম্পর্কিত সাহিত্যের রস আস্বাদন করতে পারবেন।
ক্ষুরধার লেখক ও প্রাবন্ধিক সরোজ ম্রং গারোদের খাদ্যাভ্যাস, মিথ সম্পর্কে অত্যন্ত চমৎকার প্রবন্ধ পাঠকদের উপহার দিয়েছেন তাঁর ‘গাইকা মাংস কেজি ৫০ রূপিয়া লেকিন কুত্তাকা মাংস ১৫০ রুপিয়া’ নামক প্রবন্ধে। তিনি এই প্রবন্ধের শুরুতে আক্ষেপ করে বলেছেন, “এ পর্যন্ত যে সকল তথাকথিত লেখক,গবেষক ও ঐতিহসিকগণ গারোদের জীবন ও খাদ্যাভ্যাস নিয়ে তথ্য উপস্থাপন করেছেন সে সব তথ্যের সিংহ ভাগই ভিত্তিহীণ, ভুল ও বিভ্রান্তিকর। তাঁরা গারোদের (এমনকি অন্যান্য আদিবাসীদের) খাদ্য সংস্কৃতি নিয়ে এমন কুরুচিপূর্ণ, নোংরা ও বিকৃত তথ্যের অপব্যাখ্যা দিয়েছেন, মনে হয় যেন এই গারোরা অজানা কোন ভিন গ্রহথেকে নেমে আসা দৈত্য- দানব, ভয়ংকর রাক্ষুসে প্রজাতির বা স্বভাবের”। বাংলাদেশের ইতিহাস, সাহিত্য সংস্কৃতির প্রামান্য দলিল বাংলাপিডিয়া সহ বিভিন্ন লেখক, গবেষকদের বিভিন্ন গবেষণালব্ধ পুস্তক, ছাত্রছাত্রীদের পাঠ্য-পুস্তক এবং বিভিন্ন পত্র পত্রিকার এই সমস্ত বিভান্তিকর তথ্য দিয়ে রেখেছেন। এ লেখক এসব ভূয়া তত্ত্ব ও তথ্যের সংশোধনের গুরুত্বারোপ করেছেন। আমার মনে হয় ‘আদিবাসী ফোরাম’ উদ্যোগ নিতে পারে। তাঁরাই দেশ বিদেশের বিজ্ঞ ব্যক্তিদের সমন্বয়ের মাধ্যমে সংশোধন, পরিমার্জনের উদ্যোগ নিতে পারেন বলে আমার বিশ্বাস।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী আদিবাসী মুক্তিযওদ্ধারা এখনোও অনেকটা ইতিহাসের অন্তরালেই রয়ে গেছেন। কবি, প্রাবন্ধিক, গবেষক ও কলেজ শিক্ষক জনাব শফিউদ্দিন তালুকদার তাঁর ‘আদিবাসী মুক্তিযোদ্ধা’ প্রবন্ধে এমন অনেক গারো মুক্তিযোদ্ধাদের নাম উল্লেখ করেছেন। কিন্তু মাত্র মোট পাঁচজন আদিবাসী গারো মুক্তিযোদ্ধা মাতিয়াস সাংমা, নিকোলাশ মারাক, শিমন সাংমা, দিপার্শন ঘাগ্রা, ধীরাজ মারাক এবং প্রদীপ তজু; উনাদের স্বাধীণতার যুদ্ধে দুঃসাহসিক অংশগ্রহনের কাহিনী এবং এই স্বাধীন বাংলাদেশে বাস করেও তাদের পরিবারের চরম দূর্দিনের পরিনতির কথা প্রাঞ্জলভাবে ভাবে উপস্থাপন করছেন। আরো অনেক গারো মুক্তিযোদ্ধা আছেন তাদের বর্তমান অবস্থাও তদ্রুপ। সরকারী বেসরকারীভাবে এই মুক্তিযোদ্ধাদের যথাসাধ্য সম্মান-মর্যাদা প্রদানের দাবী রাখেন। তাদের পরিবারের চরম দূর্দিনের সাহায্য সুবিধা প্রদানের জন্য লেখক জোড় সুপারিশ করেছেন।
মধুপুর শালবনবাসী গারোদের কাছে খুবই পরিচিত একটি নাম, পাভেল পার্থ। যিনি প্রবন্ধকার, সাংবাদিক ও গবেষক। তিনি বহুবার গারো অঞ্চলে এসেছেন, তাদের সাথে থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন তথ্য সংগ্রহ করেছেন এবং দেশ বিদেশের দরবারে আন্তরিকতার সাথে বন ও মানুষের কথা তুলে ধরেছেন। এমনিই আরেকটি অধিক মূল্যবান, গবেষনাধর্মী, বলিষ্ঠ লেখা উপহার দিয়েছেন ‘গারোদের বন নির্ভর অভিজ্ঞতায় প্রাকৃতিক শালবনের উদ্ভিদ বৈচিত্র্য মূল্যায়ন ও রাষ্ট্রের বিরোধী উদ্যোগ’ শীর্ষক প্রবন্ধটি। এটিই আবির্ভাব ম্যাগাজিনের লেখাগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ সংখ্যক পৃষ্ঠা সম্বলিত নিরিক্ষা ও গবেষনাধর্মী লেখা প্রবন্ধ। এই প্রবন্ধে স্থানীয় জনগোষ্ঠ্যী ও আদিবাসীদের সাথে স্থানীয় উদ্ভিদ প্রজাতির বৈচিত্রময় ব্যবহার বা সম্পর্কের কথা গুরুত্ত্ব সহকারে তুলে ধরেছেন লেখক মহোদয়। তিনি লিখেছেন, মধুপুর শালবনের বৈচিত্রময় উদ্ভিদ প্রজাতি স্থানীয় আদিবাসিদের জীবনকে কিভাবে প্রভাবিত করছে, কোন কোন উদ্ভিদ কি কি কাজে ব্যাবহৃত হয় ইত্যাদি।
জেমস জর্নেশ চিরান রচিত ‘হাজং ও গারো জাতিসত্ত্বাঃ রাষ্ট্রসৃষ্ট এথনিক দূর্যোগ’; শুভাশিস সিনহা রচিত ‘লোক সংস্কৃতিঃ প্রেক্ষিত মণিপুরী সমাজ’ এবং কুঙ্গ থাঙ্গ রচিত ‘বাংলাদেশের মণিপুরি সমাজঃ তাদের আদিধর্ম ও ক্ষয়িষ্ণু সংস্কৃতি’ প্রবন্ধগুলো আবির্ভাব ম্যাগাজিনের মূল্যবান নিরিক্ষাধর্মী ও আনন্দদায়ক লেখা। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, শুধু বাংলাদেশ নয় পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই আদিবাসীরা রাষ্ট্রীয় ভাবে উপেক্ষিত। তার উপর আবার প্রাকৃতিক ও পারপার্শিক সমাজের বৃহত্তর জনগোষ্ঠ্যীর দ্বারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে নির্যাতন ও চাপের মধ্যেই বসবাস করতে হয়, সংগ্রাম করে টিকে থাকতে হয়। এমনই পিছিয়ে পরা আদিবাসীদের অতীত, বর্তমান অবস্থা এবং এদের ব্যাক্তি, পরিবার, জাতি ও সামাজিক ভাবে নিশ্চিহ্ন হওয়ার আশঙ্কা এবং এথেকে পরিত্রাণের গুরুত্ত্বারোপ ও সমূহ সুপারিশসম্পর্কিত লেখা প্রবন্ধগুলোতে সুন্দর ভাবে উপস্থাপিত হয়ছে। স্ব-স্ব ক্ষেত্রে উক্ত লেখক তিনজনই উপস্থাপনায় দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন; যা পাঠ করে পাঠকগণ ভালো ধারনা লাভ করবেন এবং আনন্দও পাবেন। তাঁর সাথে ক্রাউন ম্রং এর রসাত্মকবোধের ‘কমিটমেন্ট ফোবিয়া’ লেখাও পাঠকদের আনন্দ দিয়েছে আশা করি।
আধুনিক যুগের যুবক যুবতির প্রেম-বিরহকে উপজীব্য করে লেখা হিমেল রিছিলের ‘উত্তীর্ণ অতীত’; তিতির এবং একটি ছোট্ট ছেলের মধ্যে মায়া-মমতা, বিশ্বাস- অবিশ্বাসকে কেন্দ্র করে সুপর্ণা পলি দ্রং-এর ‘ছাতা’; প্রত্যাশিত গারো যুবক (আদিত্য)-কে না পেয়ে অগারো যুবক মার্ককে বিয়ে করেও স্বজাতির প্রতি টান, মমত্ববোধ, পরিবার, মা, বাবা, ভাই-বোনের প্রতি ভালবাসাকে উপজীব্য করে গ্লোরি রুরাম-এর ‘দ্বিধা’; অবৈধ প্রেম, সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার অক্ষমতা বা আবেগকে মাত্রাতিরিক্ত প্রশ্রয় দেয়ার কুফলকে উপজীব্য করে সাইনী চেক্সী ম্রং-এর ‘ভালবাসি যারে’ এবং মদোমাতাল, উদাসীন গারো যুবক (প্রেনিশন দালবত)-এর ব্যাক্তি ও পারবারিক দৈন্য জীবন, সামাজিক কুসংস্কার এবং সাংসারিক টানাপোড়েনের কাহিনীকে উপজীব্য করে বচন নকরেক-এর ‘জাগর স্বপ্ন’ ইত্যাদি সুন্দর সুন্দর গল্পগুলো স্থান পেয়েছে এই ম্যাগাজিনে।
কবিতাগুচ্ছে স্থান পেয়েছে অনেক নবীন প্রবীণ কবিদের কাব্য। এর মধ্যে মতেন্দ্র মানকিন’এর ‘গারো মানুষের পঙক্তিমালা’; সুপর্ণা পলি দ্রং-এর বৃষ্টি; ফিডেল ডি সাংমা’র ‘চেতনা’; প্রাঞ্জল এম, সাংমা’র ‘যে দুঃখ বুঝে না সবাই’; অরণ্য ই চিরান-এর ‘বিষাক্ত ঢেউ তোমার বুকে’ সরোজ ম্রং-এর ‘স্বপ্ন ও শেকড়ের ফুসফুসে ক্যানসার’; সমিক চিসিম (শমী)-এর যৌবনের আহবান’; ইকবাল মাহমুদ’এর সাঁওতালি মেয়ের গান’; তুই মৃ’র ‘আদিবাসী’; সাগর ডিব্রা’র ‘চিন্তা’; সুবির জে’ নকরেক’এর ‘এসো যুদ্ধ করি’; টাইটাস দফো’র ‘জয়ানন্দের প্রেমে হাবুডুবু খেয়ে চন্দ্রআবতী’; অন্বেষা ম্রং-এর ‘তোমাকে ভালবাসি’; হিমেল রিছিলের ‘দৃশ্য কাব্য’ ইত্যাদি সুন্দর সুন্দর কবিতাগুলো কম-বেশি সুন্দর ও পাঠযোগ্য হয়ে উঠেছে এই ‘আবির্ভাব’ ম্যাগাজিনটিতে।
আবির্ভাব ম্যাগাজিনে আরও কয়েকটি লেখা ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। যেমন- প্রথমত, ‘প্রধান শিক্ষকের কাছে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিঙ্কনের চিঠি’। এই চিঠিটি পড়লে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষকদের শিক্ষা প্রদানে উৎসাহিত করবে বলেই আমার বিশ্বাস। আর দ্বিতীয়ত, ‘বাঙ্গালীভিন্ন অন্য জাতিরা উপজাতি বা আদিবাসী কেন? কেন ভেন্ন জাতি নয়?’ শীর্ষক ফেইসবুকীয় সংলাপটি। এই লেখায় ফেইসবুকের অনেক বাঙালি, অবাঙ্গালি ব্যাক্তিবর্গ উপজাতি বা আদিবাসী নিয়ে পক্ষে বিপক্ষে তর্ক বিতর্কের মাধ্যমে নিজের মতামত ব্যক্ত করেছেন।
আরো একটি মূল্যবান লেখা এখানে উপস্থাপন করা হয়েছে। তা হোল- কবি ও প্রাবন্ধিক, গীতিকার, সুরকার ও শিল্পি জেমস জর্নেশ চিরানের সাক্ষাতকার পর্বটি। যিনি গারোদের মধ্যে দ্বিতীয় কবি যিনি কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেছেন। উল্লেখ্য গারোদের মধ্যে কবি প্রশান্ত কুমার জ্যাম্বল সঞ্চয়ন ১, ২, ৩ নামে যথাক্রমে ১লা অক্টোবর, ১৯৯০; জানুয়ারী ১৯৯২ এবং ১৯৯৩ সালে প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রকাশ করেন। জেমস জর্নেশ চিরান তাঁর সাক্ষাতকার প্রদানের মাধ্যমে সমাজ সংস্কারক, লেখক, গবেষক, প্রকাশকদের উদ্দেশ্যে সুন্দর প্রস্তাবনা এবং উদ্যমী হওয়ার পরামর্শ রেখেছেন। তিনি বলেন, ‘উদ্যোগ আশা ব্যঞ্জক হলেও লেখা সংগ্রহ ও প্রকাশনার খুব একটা যত্ন আছে বলে মনে হয় না। সাময়িকী সমূহের আঙ্গিক ও পরিধিতে আধুনিকতার স্পর্শের অভাব। অনেকের লেখায় রাতারাতি কবি ও লেখক বনে যাওয়ার অপচেষ্টা বিরক্তিকর। লেখার চেষ্টা অব্যাহত থাকলে প্রতিভার সাক্ষর রাখতে পারবেন”। উনার বিভিন্ন ক্ষেত্রে পুরস্কার প্রাপ্তি নবীন লেখকদেরও প্রেরণা যোগাবে বলেই আমার বিশ্বাস। আসুন আমরা এই সুন্দর পরামর্শ কাজে লাগানোর চেষ্টা করি।
আরো একটা লেখার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ না করলেই নয়। ‘অনলাইন’ বিভাগ; হিমেল রিছিলের লেখা অথবা সম্পাদনা “তৈরী করুন আকর্ষনীয় ফ্ল্যাশ ওয়েবসাইট”-টি। লেখার বর্ণ্না চমৎকার। যারা ওয়েবসাইট তৈরী করতে চান, তাদের জন্য লেখা কাজে আসবে। স্বীকার করতে দ্বিধা নেই যে, আমিও জানতাম না; আমারও কাজে লাগবে। কিন্তু আবার মনে হলো, অনিয়মিত বা বাৎসরিক পত্রিকায় এই লেখা কেনো? আমি অনেকবার ভেবেছি, আমরা কতজন ওয়েবসাইট তৈরী করবো কিংবা ব্যবহার করবো। এই ম্যাগাজিনের পাঠকদের শতকরা দুইজনেরও তেমন কাজে লাগবে কি?
সব মিলিয়ে অনেক সুন্দর হয়েছে এই ‘আবির্ভাব’ ম্যাগাজিনটি। তারপরোও পরবর্তি প্রকাশনার জন্য আমার পক্ষথেকে কিছু বিষয়ে খেয়াল রাখার জন্য প্রস্তাবনা থাকবে। তা হোল-
- যদি এই ম্যাগাজিনটি শুধুমাত্র আদিবাসী গারোদের জন্য; তবে জাতীয়তাবোধ জাগ্রত হবে, এমন লেখা আরোও বাছাই করা হোক
- লেখক লেখিকাদের অভিজ্ঞতা(বয়সভিত্তিকও হতে পারে), লেখার বিষয়বস্তু ও মান অনুসারে লেখাগুলো সাজানো হোক
- প্রবীণ লেখকদের লেখা সংগ্রহ ( যদিও প্রবীণরা লেখা দিতে উৎসাহ বোধ করেন না) এবং ছাপানো হোক
- গারোদের ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি বিষয়ক লেখা হোক
- অতীব প্রয়োজন না হলে একই লেখকের একাধিক লেখা না ছাপানো হোক
- অন্যান্য পত্র পত্রিকা বা ম্যাগাজিনের মত বিজ্ঞাপন এবং শুভেচ্ছাবানী বই জুড়ে না দেওয়া (এই ম্যাগাজিন আমি সাচ্ছ্বন্দে পড়েছি, কারণ এতে প্রায় সব বিজ্ঞাপন ও শুভেচ্ছাবানী শেষের দিকে দেওয়া হয়েছে।) ইত্যাদি।
- সর্বোপরি আবির্ভাব ম্যাগাজিনটি আমার খুবই ভালো লেগেছে। এই ম্যাগাজিনটি আমাদের গারোদের জন্য উৎকৃষ্ট, উদাহারন ও অনুকরণীয় ম্যাগাজিন হোক এটাই আমার চাওয়া। আসুন আমরা একযোগে এগিয়ে চলে আগামী সুন্দরের দিকে।
- সবাই ভালো থাকবেন ধন্যবাদ পাঠক সবাইকে এবং ধন্যবাদ সম্পাদকমন্ডলী ও কলাকুশলীবৃন্দ..
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন