আমরা কেমন বাবা মা?
ফিডেল ডি সাংমা
-------------------------
বেশ কিছুদিন ধরে সোনার বাংলাদেশের পরিবেশ থমথমে ভাব। বাংলার গ্রাম, শহর, নগর, বন্দর, পথ-ঘাট সবই নিথর; নিস্তব্ধ। ফুল ফোঁটা এবং পাখিরাও যেনো সুর, গাইতে ভুলে গেছে। মুছে গেছে লক্ষ-কোটি মানুষের মুখের আনন্দ, হাসি। মানুষের চোখের জল যেনো মেঘ-শিশির হয়ে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে আছে। সব মিলিয়ে বিষয়টা পূরো দেশবাসির জন্য কতখানি মর্মান্তিক কতখানি হৃদয়বিদারক অভাবনীয়। কারণ একটাই- আমাদের প্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ আজ আমাদের সাথে নেই। কিন্তু রেখে গেছেন তাঁর পরিবারে এবং অগণিত ভক্তের হৃদয়ে অসীম শুণ্যতা।
হুমায়ুন আহমেদের অবধানের পর তাঁর ভক্তকুলের আহাজারি এবং লেখা লেখি বহুগুণে বেড়ে গেছে। কত সহস্র লোক কত কী যে লিখলেন, এখনও লিখে চলেছেন সেসব নির্দিষ্ট করে বলা সত্যিই কষ্টকর। তার মধ্যথেকে বেশ ক’দিন ধরে এই লেখকের লেখাথেকে একটা উদৃতি নিয়ে পত্রিকা এবং ফেইসবুকে বেশ হৈ-চৈ, আলোচনা, সমালোচনা চলছে। সবার জ্ঞাতার্থে উদৃতিটা আমি উল্লেখ করতে চাই। ছোট মেয়ে শিলার অতীতে “বাবা তুমি একজন ভালো মানুষ” বলার কাহিনী স্মৃতিচারণ করে তিনি লিখেছিলেন, “আমি বললাম, আম্মা! পৃথিবীতে অসংখ্য খারাপ মানুষ আছে, একজনও খারাপ বাবা নেই’। ... এখন মনে হয় শিলাও বুঝে গেছে, পৃথিবীতে খারাপ বাবাও আছে, যেমন আমি’। (উল্লেখ্য- লেখকের পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন-এর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক চুকে যাওয়ার পরে মেয়ে শিলার বান্ধবী ও অভিনেত্রী শাওনের সাথে বিবাহ হয়। সেসাথে তিন মেয়ে নোভা, শিলা বিপাশা এবং ছেলে- নুহাশের সাথেও দূরত্ব বেড়ে যায়।) লেখক সম্ভবত নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করেই উক্তিটা করেছিলেন। উদৃতিটা পড়তে পড়তে আমার ভেতরও প্রশ্ন জাগছে, আমার সন্তানদের কাছে কি ভালো বাবা হতে পেরেছি, কিংবা মা...? কারণ আমার বিশ্বাস, আমরা কেউ খারাপ বাবা-মা হতে চাই না; অনুশোচনা করতে চাই না...
কোন মানব শিশু জন্ম হওয়ার পর সর্ব প্রথম যে দুটি শব্দের সাথে পরিচিত হয়; তা হলো বাবা এবং মা। বাবা এবং মা এই দুটি শব্দ প্রতিটি সন্তানের কাছে শুধু শব্দই নয় ...ওদের পৃথিবী ৷ শব্দ দুটোর সাথে আমরা সবাই এত বেশি পরিচিত যে অন্য কোন শব্দের সাথে তুলনা চলে না। এ শব্দ দ'টোর সাথে আমাদের প্রত্যেকের জীবন নিবিড়ভাবে জড়িত। বাবা মা হওয়া যেমন সৌভাগ্যের; তেমনি সন্তানকে তার চাহিদা অনুসারে স্নেহ, মায়া, মমতা, ভালোবাসা, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধাদি দিয়ে লালন-পালন করার মহান দায়বদ্ধতাও রয়েছে। যারা এই দায়িত্ব সুন্দর সুশৃংখল ভাবে পালন করেন, তাদেরকেই আমরা বলি আদর্শ বাবা-মা। বাংলায় প্রবাদ আছে, ‘সন্তান জন্ম দিলে জন্মদাতা হওয়া যায় কিন্তু বাবা বা মা হওয়া যায় না’। উক্তিটার পক্ষে বিপক্ষে হাজার হাজার যুক্তি, উদাহারন দেওয়া যায়। কিন্তু আমার মতো নগন্য ব্যাক্তি সে যুদ্ধে যেতে চাই না, পারবোও না।
ইদানিং খবরের কাগজ খুললেই লোমহর্ষক নির্যাতন, গুম, হত্যা ইত্যাদির সব খবর চোখে পড়ে। এর মধ্যে ভ্রুণ হত্যার কথা নাইবা বললাম; পিতা বা মাতা কতৃক সন্তানদের খোঁজ খবর না নেওয়া, নির্যাতন, গুম, হত্যা, বনে-জঙ্গলে বা রাস্তায়-ড্রেনে ফেলে দেওয়া, পতিতা পল্লীতে, দালালদের কাছে বা শহরে- বাসায় বিক্রি করা কিংবা শিশু শ্রমে বাধ্য করার মত অজস্র ঘটনার কাহিনী শুনি। যে কোন সমাজ, রাষ্ট্র, আইন-আদালত কিংবা সুস্থ্য মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ সকলেই বলবেন, এটা অবশ্যই খারাপ, জঘন্যতম একটা কাজ। পক্ষান্তরে সন্তানদের কাছে কি ওই কাজগুলো ভালো হতে পারে...? যারা এই জঘন্যতম কাজগুলো করেন না; তাঁরা অবশ্যই ভালো বাবা এবং মা। কিন্তু যারা করেন? ওই কাজগুলোর কারণে কোন বাবা-মা কি সন্তানদের কাছে বাবা-মা ভালো হতে পারে...? কখনই না। যারা এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে এই সব লোকেরাও কিন্তু তাদের অথবা কারোর না কারোর বাবা এবং মা । আমরা যারা বাবা-মা, আসুন গভীর ভাবে ভেবে দেখি, আমরা কেমন বাবা মা? আজকের যুবক যুবতি কিংবা হবু বাবা মায়েরা আসুন ভেবে দেখি, আমরা কেমন বাবা মা হতে চাই...?
ফিডেল ডি সাংমা
-------------------------
বেশ কিছুদিন ধরে সোনার বাংলাদেশের পরিবেশ থমথমে ভাব। বাংলার গ্রাম, শহর, নগর, বন্দর, পথ-ঘাট সবই নিথর; নিস্তব্ধ। ফুল ফোঁটা এবং পাখিরাও যেনো সুর, গাইতে ভুলে গেছে। মুছে গেছে লক্ষ-কোটি মানুষের মুখের আনন্দ, হাসি। মানুষের চোখের জল যেনো মেঘ-শিশির হয়ে আকাশ বাতাস ভারী হয়ে আছে। সব মিলিয়ে বিষয়টা পূরো দেশবাসির জন্য কতখানি মর্মান্তিক কতখানি হৃদয়বিদারক অভাবনীয়। কারণ একটাই- আমাদের প্রিয় কথা সাহিত্যিক হুমায়ুন আহমেদ আজ আমাদের সাথে নেই। কিন্তু রেখে গেছেন তাঁর পরিবারে এবং অগণিত ভক্তের হৃদয়ে অসীম শুণ্যতা।
হুমায়ুন আহমেদের অবধানের পর তাঁর ভক্তকুলের আহাজারি এবং লেখা লেখি বহুগুণে বেড়ে গেছে। কত সহস্র লোক কত কী যে লিখলেন, এখনও লিখে চলেছেন সেসব নির্দিষ্ট করে বলা সত্যিই কষ্টকর। তার মধ্যথেকে বেশ ক’দিন ধরে এই লেখকের লেখাথেকে একটা উদৃতি নিয়ে পত্রিকা এবং ফেইসবুকে বেশ হৈ-চৈ, আলোচনা, সমালোচনা চলছে। সবার জ্ঞাতার্থে উদৃতিটা আমি উল্লেখ করতে চাই। ছোট মেয়ে শিলার অতীতে “বাবা তুমি একজন ভালো মানুষ” বলার কাহিনী স্মৃতিচারণ করে তিনি লিখেছিলেন, “আমি বললাম, আম্মা! পৃথিবীতে অসংখ্য খারাপ মানুষ আছে, একজনও খারাপ বাবা নেই’। ... এখন মনে হয় শিলাও বুঝে গেছে, পৃথিবীতে খারাপ বাবাও আছে, যেমন আমি’। (উল্লেখ্য- লেখকের পারিবারিক দ্বন্দ্বের কারণে প্রথম স্ত্রী গুলতেকিন-এর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক চুকে যাওয়ার পরে মেয়ে শিলার বান্ধবী ও অভিনেত্রী শাওনের সাথে বিবাহ হয়। সেসাথে তিন মেয়ে নোভা, শিলা বিপাশা এবং ছেলে- নুহাশের সাথেও দূরত্ব বেড়ে যায়।) লেখক সম্ভবত নিজের কৃতকর্মের জন্য অনুশোচনা করেই উক্তিটা করেছিলেন। উদৃতিটা পড়তে পড়তে আমার ভেতরও প্রশ্ন জাগছে, আমার সন্তানদের কাছে কি ভালো বাবা হতে পেরেছি, কিংবা মা...? কারণ আমার বিশ্বাস, আমরা কেউ খারাপ বাবা-মা হতে চাই না; অনুশোচনা করতে চাই না...
কোন মানব শিশু জন্ম হওয়ার পর সর্ব প্রথম যে দুটি শব্দের সাথে পরিচিত হয়; তা হলো বাবা এবং মা। বাবা এবং মা এই দুটি শব্দ প্রতিটি সন্তানের কাছে শুধু শব্দই নয় ...ওদের পৃথিবী ৷ শব্দ দুটোর সাথে আমরা সবাই এত বেশি পরিচিত যে অন্য কোন শব্দের সাথে তুলনা চলে না। এ শব্দ দ'টোর সাথে আমাদের প্রত্যেকের জীবন নিবিড়ভাবে জড়িত। বাবা মা হওয়া যেমন সৌভাগ্যের; তেমনি সন্তানকে তার চাহিদা অনুসারে স্নেহ, মায়া, মমতা, ভালোবাসা, খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধাদি দিয়ে লালন-পালন করার মহান দায়বদ্ধতাও রয়েছে। যারা এই দায়িত্ব সুন্দর সুশৃংখল ভাবে পালন করেন, তাদেরকেই আমরা বলি আদর্শ বাবা-মা। বাংলায় প্রবাদ আছে, ‘সন্তান জন্ম দিলে জন্মদাতা হওয়া যায় কিন্তু বাবা বা মা হওয়া যায় না’। উক্তিটার পক্ষে বিপক্ষে হাজার হাজার যুক্তি, উদাহারন দেওয়া যায়। কিন্তু আমার মতো নগন্য ব্যাক্তি সে যুদ্ধে যেতে চাই না, পারবোও না।
ইদানিং খবরের কাগজ খুললেই লোমহর্ষক নির্যাতন, গুম, হত্যা ইত্যাদির সব খবর চোখে পড়ে। এর মধ্যে ভ্রুণ হত্যার কথা নাইবা বললাম; পিতা বা মাতা কতৃক সন্তানদের খোঁজ খবর না নেওয়া, নির্যাতন, গুম, হত্যা, বনে-জঙ্গলে বা রাস্তায়-ড্রেনে ফেলে দেওয়া, পতিতা পল্লীতে, দালালদের কাছে বা শহরে- বাসায় বিক্রি করা কিংবা শিশু শ্রমে বাধ্য করার মত অজস্র ঘটনার কাহিনী শুনি। যে কোন সমাজ, রাষ্ট্র, আইন-আদালত কিংবা সুস্থ্য মানসিকতাসম্পন্ন মানুষ সকলেই বলবেন, এটা অবশ্যই খারাপ, জঘন্যতম একটা কাজ। পক্ষান্তরে সন্তানদের কাছে কি ওই কাজগুলো ভালো হতে পারে...? যারা এই জঘন্যতম কাজগুলো করেন না; তাঁরা অবশ্যই ভালো বাবা এবং মা। কিন্তু যারা করেন? ওই কাজগুলোর কারণে কোন বাবা-মা কি সন্তানদের কাছে বাবা-মা ভালো হতে পারে...? কখনই না। যারা এই ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে এই সব লোকেরাও কিন্তু তাদের অথবা কারোর না কারোর বাবা এবং মা । আমরা যারা বাবা-মা, আসুন গভীর ভাবে ভেবে দেখি, আমরা কেমন বাবা মা? আজকের যুবক যুবতি কিংবা হবু বাবা মায়েরা আসুন ভেবে দেখি, আমরা কেমন বাবা মা হতে চাই...?
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন