“অহনার নীল কষ্ট” এবং আমার অনুভূতি
যাঁরা জাত কবি; তাঁরাই ভাবুক। তেমনই নিজের কাব্যিক আবেগ, অনুভূতি দিয়ে পাঠকদেরও ভাবাতে চান। এখানেই ভাব-কবির কাব্যিক-সার্থকতা। ভাবনার জগতে ক্ষনিক বিচরণ করার মত কবি বা পাঠক কোনটাই নই আমি। তবে কবিতা পড়ে কিছু ভাবতে বাধ্য করলো এ “অহনার নীল কষ্ট” কাব্যগ্রন্থের স্রষ্টা কবি লুই চিরান। না চাইলেই কি আর থাকা যায়! ভাবতে বাধ্য হয়েছি কবির কাব্য পংতিগুলো দেখে-
“ইচ্ছে হলে, বিবর্ণ বসন্তের একদিন শুনে নিও
আমার সেদিনের প্রেমগীত; গেয়েছিলে তুমিও”। (বিবর্ণ বসন্ত)।
এভাবে আরও বলেছেন-“তুমি যে বিন্দু নিয়ে ভাবছো, শোন তবে,
ঠিক সেখানটায়ই আমিও আছি,
বিশ্বাস না হয় ছুঁয়ে দেখো এই শূন্যস্থান,
নিবিড়ভাবে; অনুভবে”। (শূন্যস্থান)
কবি লুই চিরান সুদূর ফ্রান্সে দীর্ঘদিন ধরে অবস্থান করছেন। যেখানে সনেট কবি মাইকেল মধুসুদন দত্ত নিজের বিখ্যাত কবিতাগুলো রচনা করে বাংলার কাব্য জগতে স্মরনীয় হয়ে আছেন। জীবিকার তাগিদে কবি লুই চিরানও তেমনই নিঃসঙ্গ জীবন যাপন করছেন। তাঁর এ নিঃসঙ্গ জীবনে প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে এবং একান্ত আপনজনকে কাছে না পাওয়ার ক্ষনিকের শুন্যতাবোধ; তিনি কবিতার ভাষায় প্রকাশ করেছেন এভাবে-
“পাখিরা নীড়ে ফিরে গোধূঁলিমাখা সন্ধ্যায়
ফেরা হয় নি আমার, আর বুঝি হলো না,
তোমার হৃদয়ে- আমার আপন ঠিকানায়”।“ (অধরা)
আবার আকুতি জানিয়ে তিনি বলেন-“জলে ভাসিয়ে দিয়েছিলাম কাগজের নৌকা
মন মোহনায় ভিড়বে; তোমার ঠিকানায়,
না, ভিড়েনি কোথাও। এখন আমি একা”। (ঠিকানা)
কবি লুই চিরানের এ কাব্যগ্রন্থের সব কবিতাই প্রেমের কবিতা। তিনি প্রেমকে ভালবাসেন; তেমনই বিরহের অনুভূতিকেও সাদরে গ্রহণ করার মানসিকতা রাখেন, বিরহের কষ্টকে প্রেমের মত করেই উপভোগ করতে চান। তাই এই কবিকে বলা যায়; তিনি বিরহেরও কবি। তাঁর এমন কষ্ট বেদনার অনুভূতিগুলোর সরল প্রকাশ পেয়েছে এমন অনেকগুলো বিরহী কবিতায়; এভাবে- “না পাওয়ার বেদনাকে কখনো সুখ ভেবো না
আত্যাভিমানী নীল কষ্ট আমারই; তুমি চেও না”। (অহনা'র নীল কষ্ট)
“আমার ভেতরে যন্ত্রণার কীটগুলোগুলো,
কষ্টভুক; কান্না পিপাসু, দূরত্ব খুঁজে না,
নির্ণয় করে না, ভালোবাসার সত্তা”। (মাপকাঠি)
কবি নিজের জীবনে ঘটে যাওয়া প্রেম, বিরহ, দুঃখ, বেদনার আবেগ-অনুভূতিকে “ভালোবাসার সত্তা” হিসাবেই প্রকাশ করতে চেয়েছেন “অহনার নীল কষ্ট” কাব্যগ্রন্থে। এ কাব্যগ্রন্থের কবিতাগুলো পড়ে আমি অবাক হই নি। কারণ আমামার দৃঢ় বিশ্বাস ছিলো, এ কবির কাব্যিক অন্তরথেকে এমন হৃদয়গ্রাহী অনুভূতির প্রকাশ হবেই।
সুপ্রিয় পাঠকবৃন্দ, এ কাব্যগ্রন্থ পাঠে আপনাদের কাব্যানুভূতিকে কিছুটা হলেও সমৃদ্ধ করতে সক্ষম হবেন বলেই আমার বিশ্বাস। আমি কবি লুই চিরানের উত্তরোত্তর সাফল্য কামনা করছি…
ধন্যবাদান্তে-
ফিডেল ডি সাংমা
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন